নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
" মালাউন " শব্দটি গত কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া সহ নানা মাধ্যমে বিশেষ ভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে । অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই আমাদের সমাজ তথা আমাদের দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সংখ্যা গুরুদের কেউ কেউ মালাউন বলে সন্বোধন করে আসছে ।সম্ভবত ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর থেকে ই হিন্দু সম্প্রদায়কে মালাউন বলে ডাকার অভ্যাসটা তাদের ভিতর শুরু হয়েছে তার পর এটা প্রকোপ আকার ধারন করে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় । ১৯৭১ সালে পাকিস্হানী বর্বোর হায়নের সাথে আমাদের দেশের তথাকথিত ধর্মরক্ষাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়কে মালাউন বলে হিন্দু নিধনের বিশেষ অভিযানে নেমে ছিল । তার এমন অনেক প্রমান ই আমাদের জানা । এ ঘটনা আমরা আরো বেশি করে জেনেছি চলমান একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের মাধ্যমে । একাত্তরে হিন্দু-মুসলিম সবাইকে গণহারে হত্যা করে ই কিন্তু পাকিস্তানিরা বলতো "গাদ্দার মালাউন " দের হত্যাকরা হয়েছে । ২৬ মার্চ ১৯৭১ গণহত্যা চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা অধ্যাপক ড: গোবিন্দচন্দ্র দেবকে হত্যা করে। হত্যা করার পূর্বে নাকি তাঁকে মালাউন গালি দিয়ে ই সম্বোধন করা হয়েছিল । ১৯৭১ এর ১৩ই এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নূতনচন্দ্র সিংহকে নিজে গুলি করে হত্যা করেন আর ঐ হত্যার সময় ও নাকি নূতনচন্দ্র সিংহকে " মালাউন " গালি দিয়েই সম্বোধন করে ছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী । এমন কি উপস্থিত মুসলমানরা নূতনচন্দ্র সিংহের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলে তাদের ভৎর্সনা করে সাকা বলেছিল , সামান্য একটা মালাউনের মৃত্যুতে এত শোক প্রকাশ করার কি আছে।
আর বর্তমান সময়ে " মালাউন " শব্দটি বিশেষ করে আলোচনায় আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সম্প্রদায়িক নাড়কীয় তান্ডবের পর থেকে । ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় প্রশাসন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের জবাবে উত্তেজিত মৎস ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলে ওঠেন " মালাউনের বাচ্চারা বেশি বাড়াবাড়ি করতাছে "। যদি ও পরে মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন কথা বলেন নি বলে ই অস্বীকের করেছেন এমন কি চ্যালেঞ্জ ও ছুড়ে দিয়েছেন যে এমন টি প্রমান করতে পারলে তিনি মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন । মাননীয় মন্ত্রী ছায়েদুল হক কি বলেছেন না বলেছেন বা তিনি কি করবেন সে কথায় একটু পরে আসি । তার আগে জেনে নেই " মালাউন " শব্দের অর্থ ও তার সরমর্ম । মালাউন আরবী শব্দ আরবী “ملعون” থেকে উদ্ভূত যার অর্থ অভিশপ্ত অর্থাৎ আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত।আল্লাহ তালা কোন ধর্মের মানুষ সম্পর্কেই কোরানে অভিশাপ প্রদান করেনি । তবে শুধু একজনকেই আল্লাহর অভিশপ্ত বলা হয়েছে সে হল মারদুদ শয়তান । তাকেই মালাউন ঘোষণা করা হয়েছে । কেননা, সেই ইবলিস হল আল্লাহর নিয়ামত থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। তার সন্মান সুখ্যাতি সকল কিছুই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাই সে আল্লাহর অভিশাপ প্রাপ্ত। এখানে মুসলীম ব্যতিত ভিন্নধর্মীয় মানুষের কথা যদি বলা হয় তবে তা হবে সম্পুর্ণ ভূল কারন অন্যান্য ধর্মাবল্বীরা যদি এই দূনিয়াতে আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত ই হয়তো তাহলে তারা এক মুহুর্ত ও দূনিয়াতে বাঁচতে পারতো না । কারন তারা যদি আল্লাহর অভিশাপপ্রাপ্ত ই হতো তা হলে তারা আল্লাহর সমস্ত নিয়ামত থেকে ই বঞ্চিত হতো আর আল্লাহর নিয়ামত তথা আলো বাতাস খাদ্য পানি ও অন্যান উপাদান ছাড়া তো আর কারো বাঁচা সম্ভব নয় । তাই অন্যান্য ধর্মাবল্বীরা " মালাউন " এটা সম্পুর্ণ রুপেই ভূল । এবং যারা এমন টি বলছে বা বিশ্বাস করছে তারা পুরো পুরি ভুল পথে আছে বলেই আমার বিশ্বাস ।
এবার আসা যাক মন্ত্রী ছায়েদুল হক সাহেবের কথায় তিনি চ্যালেঞ্জ ও ছুড়ে দিয়েছেন যে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়দের সম্পর্কে কোন হীন মন্তব্য করেন নি । জানি না নাসিরনগর সহ সারা দেশে এমন একজন মানুষ আছেন কি যে মন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মত ? আমার যত টুকু ধরনা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহনের সৎ সহস করো ই নাই । কারন ঐ সময় মন্ত্রীর ওখানে যারা উপস্হিত ছিলেন তাদের অধিকাংশ ই ছিলেন মন্ত্রীর আস্তা ভাজন আবার কেউ কেউ ছিলেন চরম হিন্দু বিরোধী আর বাকী কেউ থাকলে ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল আওয়ামীলিগের একজন সাংসদ ও মন্ত্রীর মুখ খেকে এমন কথা বের হবে তা স্বপ্নে ও ভাবতে পারেন নি । যদি ভাবতে ই পারতেন তাহলে খাদিজার উপর হামলার যে ভিডিও মোবাইল ফোনে ধরন করেছেন তেমনি কেউ হয়তো তার মোবাইল ফোনে মন্ত্রী ছায়েদুল হক সাহেবের পুরো বক্তব্যটাই ধরন করে রাখতেন । আমি আদৌ জানি না কেউ আবার মোবাইলে ভিডিও করে রেখেছেন কি না ? তবে মন্ত্রী ছায়েদুল হক হিন্দুসম্প্রদায়দের কে " মালাউনের বাচ্চা " বলুক আর নাই বলুক তিনি যে হিন্দুসম্প্রদায় ও সংবাদ মাধ্যম কর্মীদের উপর ক্ষিপ্ত তার প্রমান আমরা দেখেছি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে ।
বাংলাদেশ একত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই যার জন্ম হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সবার ই আত্মত্যাগের ফসল আমদের বাংলাদেশ । কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্যি যে আল্লাহর এই পুরো দুনিয়ায় না হউক আমাদের বাংলাদেশে আসলেই হিন্দুরা অভিশপ্ত এরা মালাউন ।সব ধর্মের আত্মত্যাগের বাংলাদেশ এমন কোন হিন্দু আছে কি যে কোন তার পাশের কোন সংখ্যাগুরুর কাছ থেকে মালাউন গালিটি শোনেন নি ? হিন্দু সম্প্রদায় যদি বাংলাদেশে " মালাউন " বলে আখ্যায়িত হতে পারে তবে কেন আমি একজন মানুষ ও মুসলাম হিসেবে মালাউন হতে পারবো না ?
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২১
ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন বলেছেন: মানবতার জয় সবসময় ই হয় । অধমের লেখার পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০
ঢাকাবাসী বলেছেন: দুনিয়ার কোথাও এরকম হয় কি?
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৬
লাডল্লা পোলা বলেছেন: মানবতা চাষাবাদ হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম , আর অমানুষদের প্রতি রইলো কেবলই উগ্র ঘৃনার দাবানল ।
সকল ধর্মের ইতর গুলিই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে।
লেখককে ৫ প্লাস