নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফিদেল কাস্ত্রো অবিনাশী বিপ্লবীর নাম ৬শ ৩৮টি হত্যাপ্রচেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে ২৬ নভেম্বর ২০১৬ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সূর্য অস্তিমীত হলো পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নিতে হলো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মহা নায়ক ফিদেল কাস্ত্রোকে । সদ্য নব্বই পার হওয়া একজন ফিদেল কাস্ত্রো পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে ও তার আদর্শিক বিপ্লবী চেতনা কখনো পৃথিবীর বিপ্লবীদের মন থেকে মুছে যাবেনা ।” বিপ্লবীর মৃত্যু হয় বিপ্লবের মৃত্যু হয় না ” চে গুয়েভারার একটি চির স্মরনীয় বানী যিনি ছিলেন কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বিপ্লবী সঙ্গী ও ঘনিষ্ট বন্ধু ।সারাবিশ্বে মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যখন ছোট-বড় বহু দেশে জাতীয় নেতাদের হত্যা করেছে, সরকারের পরিবর্তন ঘটিয়েছে পূজিবাদের প্রচন্ড থাবায় যখন কমিউনিস্টের সূর্য ডুবতে বসেছিল ঠিক তখন কমিউনিস্ট ব্যবস্থার বৃহত্তম শত্রু বলে পরিচিত মার্কিনীদের দোরগোড়াতেই সমাজতন্ত্রের ঝান্ডা তুলে ধরে রেখেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। বিশ্বব্যাপী তার সমর্থকেরা তাকে সমাজতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতেন, যিনি জনগণের কাছে কিউবাকে অর্থৎ তার দেশ কে ফেরত দিয়েছিলেন একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে ।
ফিদেল কাস্ত্রো যার পুরো নাম ফিদেল আলেহান্দ্রো কাস্ত্রো রুৎজ জন্ম নেন ১৩ই অগাস্ট ১৯২৬ ।স্পেন থেকে কিউবাতে আসা একজন ধনী কৃষক আনহেল মারিয়া বাউতিস্তা কাস্ত্রোর অবৈধ সন্তান ছিলেন তিনি। পিতার খামারের ভৃত্য ছিলেন মা লিনা রুৎজ গনজালেজ, যিনি পরবর্তীতে ছিলেন তার পিতার রক্ষিতা। ফিদেলের জন্মের পর তার মাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেন তার পিতা। সান্টিয়াগোর ক্যাথলিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফিদেলের। পরে তিনি যোগ দেন হাভানার কলেজ এল কলেজিও ডে বেলেন-এ। তবে খেলাধুলার দিকে বেশী মনযোগ থাকার কারণে পড়াশোনায় খুব ভাল করতে পারেননি তিনি। ১৯৪০-এর দশকে হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়বার সময়ে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ।এর পর বিশেষ পরিচিতিতে আসেন প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা এবং কিউবার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সমালোচনামূলক নিবন্ধ লিখে। অনেক অর্থেই ফিদেল কাস্ত্রো বিশ্ব-ইতিহাসের একটা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে ই থেকে যাবেন বিপ্লবীদের অন্তরে ।
১৯৫৩ সালের সশস্ত্র দল নিয়ে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন ক্যাস্ত্রো। সংঘর্ষে পরাজিত হয় ক্যাস্ত্রো দল এতে জীবন দিতে হয় ৮০ ক্যাস্ত্রোর সহযোদ্ধাকে। সৌভাগ্যক্রমে জীবনে বেঁচে বেসামরিক কারাগারে ঠাঁই পান ক্যাস্ত্রো। কিন্তু কারাগারেও তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে তাকে হত্যা না করে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা। বিচারে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হলেও প্রবল জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নতুন বিপ্লবী মনোভাব নিয়ে পাড়ি জমান মেক্সিকোতে । সেখানে ১৯৫৫ জুন মাসে পরিচয় হয় আর্জেন্টিনীয় মার্কসবাদী বিপ্লবী চে গুয়েভারার সাথে । কাস্ত্রোর সাথে চে’র প্রথম সাক্ষাতে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয় এবং চে বলেন যে কিউবার সমস্যা নিয়ে তিনি চিন্তিত। সেই সময় চে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন এই আগ্রাসি তত্পরতার আশু সমাপ্তি প্রয়োজন। তারপর চে ফিদেল কাস্ত্রোর আন্দোলন দলের সদস্য হন। সেখানে চে ফিদেল কাস্ত্রো মিলে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে গুয়েভারা, জুয়ান আলমেইডা সহ একটি বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন। গেরিলারা একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। এক পর্যায় ১৯৫৯ সালের পহেলা জানুয়ারি কিউবা ছেড়ে পালিয়ে যান জেনারেল বাতিস্তা। দক্ষিণপন্থি স্বৈরাচারী শাসক ফুলগেনাসিয়ো বাতিস্তা ক্ষমতা হারান ক্যাস্ট্রোর গেরিলা বাহিনীর কাছে। ফিদেল কাস্ত্রো ১৯৫৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কিউবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আর ১৯৭৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত কিউবার জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন । অবশ্য ২০০৮ সালে স্বাস্থ্যগত কারণে ই ছোটভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভার হস্তান্তর করেন । তবে ১৯৬১ সালে কিউবা কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের প্রধান হিসেবেই রেয়ে গেছেন । ১৯৬১ সালে মার্কিন সমর্থিত বে অব পিগস অভিযানকে পরাজিত করতে পারাটা ছিল কাস্ত্রোর আরেকটি বিরাট অর্জন।
মহান বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রো শুধু কিউবা নয়, যুগে যুগে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষকে। ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট উগো চাভেস ও বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের মত নেতাদের কাছে কাস্ত্রো ছিলেন অনুপ্রেরণা । ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) চতুর্থ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও কিউবা ছিল। সেই সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন,” আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম। ”
ফিদেল কাস্ত্রোরা এই পৃথিবীতে শত শত জন্মায় না হয়তো শত শত বছর পর দুয়েটা ফিদেল কাস্ত্রোর জন্ম হয় । কিন্তু কাস্ত্রোর এই পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মনে যে মুক্তির অনুপ্রেরণা জন্ম দিয়ে যায় তা শত শত বছর ধারন করে থাকে পৃথিবীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ । আজ হয়তো ব্যক্তি ফিদেল কাস্ত্রোর অর্থাৎ মানুষ ফিদেল কাস্ত্রোর শারিরীক মৃত্য হয়েছে । কিন্তু ফিদেল কাস্ত্রোর আদর্শ তার বিপ্লবী চেতনার মৃত্যু কোন দিন ই হবে না ।পৃথিবীতে সভ্যবতা যতদিন থাকবে অশুভ শক্তির সাথে মানবতার সংগ্রাম ততোদিন ই চলবে আর মানবতার সংগ্রাম যতদিন চলবে ফিদেল কাস্ত্রোর ততোদিন ই আমাদের মাঝে তাদের বিপ্লবী আদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকবে ।
লেখক : ওয়াসিম ফারুক , কলামিষ্ট
২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৩৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
কাস্ট্রো আজীবন পার্টির প্রেসিডেন্ট থাকা ঠিক হয়নি; তিনি যদি ১৯৭০ সালের দিকে নিজকে সরকার থেকে সরিয়ে নিয়ে সবকিছুর তদারকি করতেন, কিউবা আরো অনেক ভালো করতো
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩
ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন বলেছেন: তাহলে কিউবা ও আমেরিকার পা চাটা জাতী হিসেবে থাকতো এবং কাস্ত্রো ও অনেক আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৫
রেভ বলেছেন: বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।