নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত ও সংখ্যালঘুদের দায় । "

১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫

সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ বাংলাদেশ । মাঝে মাঝেই কিছু ঘটনা আমাদের সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে । প্রতিটি ঘটনার প্রেক্ষাপট প্রায় ই এক কোন এই ধর্মীয় সংখ্যালঘু যুবকের বিরুদ্ধে ফেইসবুক তথা স্যোস্যাল মিডিয়ায় ধর্মঅবমাননার আভিযোগ তার পর ধর্মের মানসম্মান রক্ষার জন্য হাজারো মানুষের মিছিল সবাবেশ এর পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ী ঘরে হামলা অগ্নিসংযোগ লুটপাট । গত কয়েক বছরে কক্সবাজারের রামু , কুমিল্লার হোমনা , পাবনার সাথিয়া, সাতক্ষীরার ফতেহপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর , ফরিদপুরের সদরপুর সর্বশেষ শিরোনাম হলো রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রাম ।

গত সপ্তাহে ফরিদপুরের সদরপুরের হাটকৃষ্ণপুর এলাকায় ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বিষ্ণু মালো নামের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবকের বাড়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় স্হানীয় ধর্মীয় উগ্রবাদীরা । এর রেশ না কাটতের গত ১০ নভেম্বর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো রংপুর সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামে । গত ৫ নভেম্বর আলমগীর হোসেন নামের এক মুদি দোকানদার টিটু রায় নামের এক হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে ধর্মঅবমাননাকর পোষ্টের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন । এর পর থেকেই স্হানীয় ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্টদের মধ্যে ফেইসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোষ্টের কথা প্রচার করে হিন্দুদের প্রতি একধরনের বিদ্বেষ সৃষ্টির পায়তারা চালানো হয় । পাঁচ দিনে যা তিল থেকে তালে পরিনত হয় । এই তালের ই বিষ্ফোরন ঘটে ১০ নভেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর । যেই টিটু রায়ের বিরুদ্ধে আভিযোগ এনে থানায় মামলা এর পর এতো কিছু সেই টিটু রায় দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ দেনার দায়ে পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ এসে স্ত্রী সহ কোন এক পোষাক শিল্পকারখানায় কাজ করছেন ।টিটু রায়ের স্বজনদের দাবি তিনি কোন লেখা পড়াই জানেন না । সংবাদ মাধ্যমে আরো যে ভয়ংকর তথ্যটি আমরা পেয়েছি তা হলো টিটু রায়ের ছবি ব্যবহার করে যে ফেইসবুক আইডি থেকে ধর্মঅবমাননার পোষ্টদেয়ার অভিযোগ আনাহয়েছে সেখানে ইংরেজিতে তার নাম টিটু রায় না লিখে মো. টিটু (এমডি টিটু) লেখা ছিল।

সম্প্রতি ফেইসবুক কতৃপক্ষের দাবী ফেইসবুকে প্রায় ২৭ কোটি ভুয়া আইডি আছে । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন একটি ফেইসবুক আইডি থেকে কে বা করা তথাকথিত ধর্মাঅবমাননাকর কি লিখলো বিচার বিশ্লেষন ছাড়াই ক্ষেপে গেল আমাদের ধর্মপ্রান মানুষ গুলি । প্রতিটি এই ধরনের ঘটনার পর দেখি হাজার হাজার মানুষ একত্রে হামলা চালায় । স্বাভাবিক ভাবেই আমার প্রশ্ন ঐ হাজার হাজার মানুষ সবাই কি ঐ পোষ্ট টি দেখেছেন নাকি কোন বিশেষ মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সাধারন ধর্মপ্রান মানুষ গুলিকে ধর্মাঅবমাননার কথাবলে উস্কিয়ে দিচ্ছে ? পূর্বের এই ধরনের ঘটনা থেকে আমরা যতটুকু শিখেছি তাতে রংপুরের এই ঘটনার জন্য কিন্ত সেখানকার হামলাকারিদের পাশাপাশি প্রশাসন জনপ্রতিনিধি রাজনীতিবিদ কেউ কম দায়ী নন । উত্তেজনাটা চলছিলো কয়েক দিন ধরেই । তবে কেন সেখানকার প্রশাসন জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিবিদ কারো মনেই রামু নাসির নগর বা সদরপুরদটনা সহ অন্য আরো ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলি আসলো না ?

ধর্ম তো এতোটাই ঠুনকো নয় যে ফেসবুকে কে কি লিখলো আর তাতেই ধর্মের অবমাননা হয়ে গেল । ধর্মের বিশ্বাসীদের তো বিশ্বাস ই ধর্ম এসেছে স্রষ্টার কাছ থেকে ।মুসলমানদের তো বিশ্বাস ই ইসলাম হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার ধর্ম যা স্বয়ং আল্লাহ মানুষের কল্যানের জন্য পাঠিয়েছেন । তাই যে বিধান স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার নিজে দিয়েছেন তার সামন্য সৃষ্টির আচরনে কি কখনো ই সেই বিধান হেয় ও প্রতিপন্ন হয় ? ধর্ম হচ্ছে মানুষকে কল্যাণ, সত্য ও ন্যয়ের দিকে ডাকার একটি পথ। আর এটাই সত্য ।এই সত্যকে যারা বিশ্বাস করেন তাদের পক্ষে কি সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টিকরা নিরীহ মানুষের বাড়ী ঘড়ে হামলা করা আগুনদেয়া ধর্ষন লুট করা কিংবা সাধারন মানুষকে হত্যা করা সম্ভব ? আজ আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রে একশ্রেনীর মানুষ ধর্মকে ব্যবহার করছে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দখল করার হাতিয়ার হিসেবে । আর এতে তারা ব্যবহার করছে আমাদের সাধারন ধর্মপ্রান মানুষদের ধর্মীয় অনুভুতি । যা আমরা দেখেছি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । হেফাজতে ইসলাম নামক তথাকথিত ধর্মীয় সংগঠনটি সাধারন মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে কাজে লাগিয়ে সমগ্র দেশে কি ভংকর পরস্হিতি ই না তৈরি করেছিল । ধর্মীয় অনভুতিকে কাজে লাগিয়ে জামাত-শিবিরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টা ও আমরা কম দেখিনি । বিভিন্ন অযুহাতে একশ্রেনীর কায়েমী-স্বার্থপরেরা ধর্মকে ব্যবহার করে আমাদের দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের জান-মালের উপর নানা ভাবে হামলা করছে । সমাজ তথা রাষ্ট্রে নানান ধরনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে যা কোন সভ্য সমাজের বাসিন্দাদের কাম্য নয় । তাই আমরা চাইবো আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির বাংলাদেশে যারাই ধরনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে রাষ্ট্র তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করবে ।

লেখক: ওয়াসিম ফারুক, কলামিস্ট

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সহমত।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: ধর্মের প্রতি ভালবাসা টাসা না আসলে জমি বাড়ি দখল করাটাই বিভিন্ন জায়গাতে মারামারির মুল উদ্দেশ্য। আগের সব জায়গাতে মারামারির মুল রহস্য সেটাই পাওয়া গেছে।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ফেসবুক ব্যবহারে আরো সচেতন হওয়া ও গুজবে কান না দেওয়া খুবই জরুরী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.