নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী লাঞ্ছনা ও রাষ্ট্রের দায়

১৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:০৬

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের জনসভার দিনে কয়েকজন নারীকে লাঞ্ছনার বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমে নানান ভাবে আলোচিত হচ্ছে। ঐদিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে ঢাকায় আওয়ামী লীগের জনসভাগামী মিছিল থেকে কয়েকটি স্থানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবককের দ্বারা কয়েকজন নারীর সাথে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করে লাঞ্ছনার শিকার এক ছাত্রীর ফেসবুক স্টাটাস। ফেসবুক স্টাটাসে মেয়েটি তার উপর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যি গা শিউরে উঠার মত! জানিনা মেয়েটির বর্তমান মানসিক অবস্থা কেমন? তবে মেয়েটি সহ ঐদিনের নির্যাতনের শিকার অন্যরাও যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেটা অনুভব করতে কারো কোন কষ্ট করা লাগবে না।

কিন্তু এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে টেনে অনেকেই অনেকভাবে আওয়ামী লীগের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে। তবে এ ঘটনাকে আমি রাজনৈতিকভাবে টানতে মোটেও পছন্দ করছি না। সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোন ঘৃণিত কাজ করে সংগঠনের সুনাম ধ্বংস করবে এবং জতির কাছে এক বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে এটা কোন দলের কর্তাব্যক্তিদেরই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেও দিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের বাইরে কোন কিছু যদি ঘটে থাকে তার দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। তবে এই দায় যে সরকারের তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। জনাব ওবায়দুল কাদেরও এই দায় সরকারের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সরকার ও দলের মধ্যে যেই পার্থক্যের কথা বলেছেন সেই ফারাকটি আমাদের দেশে অনেক আগেই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এখন প্রশাসন আর রাজনীতি একই সুতায় গাঁথা।

সেদিনের আয়োজন ছিল একটি রাজনৈতিক আয়োজন। এই আয়োজনে শরিক হওয়ার জন্য আগত রাজনৈতিক কর্মীদের যে কোন অপকর্মের দায় চাইলেই কাঁধ থেকে ঝেরে ফেলতে পারবেন কি আয়োজনকারী রাজনৈতিক সংগঠনটি? যেমনটি শত চেষ্টা করেও পারেনি বিএনপি-জামাত জোট তাদের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচিতে মানুষের জান-মালের ক্ষতির দায় এড়াতে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে এসে তাদের ডাকা রাজনৈতিক হিংসাত্মক জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচিতে মানুষের জান-মালের ও দেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার দায় তারা কখনোই এড়িয়ে যেতে পারবে না।

আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, ইতিমধ্যে তাদের হাতে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ এসেছে। আর ঐসব ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের অাওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে বাংলামটরের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকাটা স্বাভাবিক, কিন্তু আমাদের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য ছিল উল্টো। তাদের বক্তব্য, তাদের কাছে কোন ভিডিও ফুটেজ নেই। যদি শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করতে না পারে তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় এমন কথা বললেন সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে? যদিও ইতিমধ্যে বাংলামটর এলাকায় নির্যাতনের শিকার ঐ ছাত্রীর বাবা অজ্ঞাতপরিচয় ১৫-২০ জনকে আসামি রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। বাকিদের অনেকেই এই ব্যাপারা মুখ খোলতে নারাজ। এমনকি বাংলামটরে যে মেয়েটি লাঞ্চিত হয়েছেন, পরবর্তীতে তিনিও তার ফেইসবুকের দেয়াল থেকে স্টাটাসটি আনপাবলিক করে রেখেছেন।

এই পৃথিবীতে আমরা সবাই চাই নিজেকে ও নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখতে। নিরাপদে থাকার জন্য যে যার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমন ধরুন দেশের দুর্নীতির রাঘব-বোলাদের কথা। তারা নিজেরা নিরাপদে থাকতে দেশকে উজার করে দিয়ে বিদেশে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে নিরাপদে জীবন কাটানোর চেষ্টা করছে। যারা এই মেয়েদের লাঞ্ছিত করেছে তারা কিন্তু ঐ রাঘব-বোয়ালদেরই চেলা। আর এই রাঘবদের হাতের ইশারাতেই ঘটে নানান অঘটন, চলে প্রশাসন নামক যন্ত্র!

নিজের ও পরিবারের মানসম্মান ও জীবন রক্ষার প্রয়োজনেই হয়তো নির্যাতিতরা সবাই চুপ করে যায়। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসিতে বস্ত্রহরণের শিকার হন এক তরুণী। সেই সময় অবশ্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে মানুষ অপরাধীদের চিনতে পেরেছিল। এমনকি তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও জানতে পেরেছিল। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব এবং নির্যাতিত তরুণীর আত্মরক্ষার জন্য দেশ ত্যাগের কারণে অভিযুক্ত আসামীরা খালাস পেয়ে যান। ২০১৫ সালের পহেলা বৈশাখের দিনও আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসির পাশেই গণহারে নারীদের উপর যৌনহয়রানীর দৃশ্য, যার সুষ্ঠু বিচার তো দূরের কথা অভিযুক্ত অপরাধীরা গ্রেফতার পর্যন্ত হয়নি!

প্রতিনিয়তই আমরা কোথাও না কোথাও নারীদের নির্যাতনের নানা ঘটনা শুনে আসছি। অপরাধী যেই হোক আইন ও বিচারের উর্দ্ধে নয়, এমন ধারা যদি সত্যিকারেই বাংলাদেশে প্রবাহিত হতো তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জিত হওয়া লাগতো না। ৭ই মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অথচ সেই দিনেই সেই ভাষণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন অঘটন কোনো ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তাই একজন মানুষ হিসেবে, একজন কন্যার পিতা হিসেবে এটাই দাবি করবো, অপরাধী যারাই হোক না কেন তাদের আইনের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করে জাতিকে এই ধরনের কলঙ্কের হাত থেকে মুক্ত করা হোক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৩

বারিধারা ৩ বলেছেন: ১৯৯৯ সালে বাঁধন নামের ঐ মেয়েটির বস্ত্রহরণ যখন করা হয়, তখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, ২০০০ সালে বংশালে বিএনপি কর্মী মনি বেগমের শাড়ি প্রকাশ্য রাস্তায় পুলিশ দ্রৌপদী স্টাইলে খুলে ফেলে, তখনো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির সময়ে ক্ষমতায় কে ছিল, তা নিশ্চয়ই ভুলে যাবার নয়। আর গত ৭ই মার্চ যা হল, সেদিন তো আওয়ামী লীগের সমাবেশ উপলক্ষে ঢাকায় যান চলাচলই বিঘ্নিত হয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে ছাত্রলীগের নেতারা দৈনিক বাংলার মোড়ে অফিস করতে যাবার সময় সরকারী কর্মচারিদের প্যান্ট খুলে নগ্ন অবস্থায় রাস্তায় বসিয়ে রেখেছিল।

এর বাইরে, রাস্তায় বস্ত্র হরণ বা যৌন হয়রানির কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এই সব গুলো ঘটনার পেছনেই সরকারী দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ ছিল বলে ধারণা এবং অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.