নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাহালম ও জজ মিয়াদের নাটক আর দেখতে চাইনা !

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪০

জজ মিয়ার কথা আমরা মোটেও ভুলি নাই অবশ্য ভুলার ও কথা না। জজ মিয়া এমন একটি মামলায় আসামী হয়েছিলেন যে মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নারকীয় ঘটনা । যে হামলা ও মামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে রচনা করেছে একটি কলংকজনক অধ্যায় । সেই হামলা হলো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার । এই হামলার মুল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা । এই হামলায় শেখ হাসিনা প্রানে বাঁচলে ও জীবন দিতে হয় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী মিসেস আইভি রহমান সহ ২৪ জন তরতাজা মানুষকে । এই হামলার আসল অপরাধীদের আড়াল করতে তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকার জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দোষী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে । ২০০৫ সালে জজ মিয়ার স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায়, এ ছিল নিছকই সরকারের বানানো আষাঢ়ে গল্প। যেই মানুষ বোমা ও গ্রেনেডের পার্থক্য কি তা জানেন না যে জীবনে কখনো গ্রেনেড দেখেনি, যার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই সে নাকি এমন এক নিকৃষ্ট হামলার মুল আসামি ! ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর গ্রেনেড হামলাকারীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় জজ মিয়াকে। জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সিআইডির তৎকালীন তিন কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান। দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জজ মিয়াকে নিয়ে নানান ভাবে সংবাদ প্রচারের হ্য় । অব শেষে নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে সিআইডি’র দাখিল করা চার্জশিটে ২২ জনকে আসামি করা হয়। সেখান থেকে বাদ দেয়া হয় জজ মিয়ার নাম। নির্মম নির্যাতন আর অমানুষিক কষ্টে টানা ৪ বছর ২৬ দিন অন্ধকার কুঠুরিতে থাকার পর ২০০৯ সালে মুক্তির স্বাদ পান জজ মিয়া।

জাহালম টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ছেলে পাটকল শ্রমিক যার বিরুদ্ধে ৩৩টি দুর্নীতির মামলা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন । ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জাহালমকে দুদকে হাজির হতে বলা হয় দুদকের দেয়া চিঠিতে। দুদকের অভিযোগ ছিল ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত আবু সালেক নামের এক লোক, যাঁর সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট শাখায় হিসাব রয়েছে। আবু সালেকের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভুয়া ঠিকানাগুলোর একটিতেও জাহালমের গ্রামের বাড়ির কথা নেই। রয়েছে পাশের আরেকটি গ্রামের একটি ভুয়া ঠিকানা। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল জাহালমের জীবনে। জাহালম সে সময় নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। দুদকের আদেশ পালনের জন্য যথাসময়ে দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম আবার কর্মস্থলে যান। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের ওই জুট মিল থেকে জাহালমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানায় আনা হয়। এর পর জাহালমের ঠিকানা হয় কাশিমপুর কারাগার । জাহালমকে যখনই আদালতে হাজির করা হয়েছে ততোবার ই বিচারকের সামনে চিৎকার করে জাহালম বলেছেন, ‘আমি সালেক না আমি জাহালম আমি কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিইনি।’ কিন্তু দুদক ও পুলিশ জোর দিয়ে বলেছে, ‘না, তুমিই সালেক, তোমাকেই জেল খাটতে হবে। শাস্তি পেতে হবে।’কারন আমাদের দাঁত দন্থীন বাঘ দুদকে তো প্রমান করতে হবে যে না তারা খুবই কর্মঠ ও মেধাবী দেশের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কত কঠোর। সত্য কখনোই চাপা থাকেনা জজ মিয়ার সত্য ও যেমন গোপন থাকেনি জাহালমের সত্য ও আলোর মুখ দেখে দেশ এক শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোয় গত ২৮ জানুয়ারি ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। শুনানি নিয়ে আদালত জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেন। একই সঙ্গে নিরীহ জাহালমের গ্রেপ্তারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় সশরীরে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত দিন দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত), মামলার বাদী আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্রসচিবের (সুরক্ষা) প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইনসচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।আদালত দুদকের আইনজীবী ও প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করেন, যে তদন্ত কর্মকর্তারা জাহালমের নামে ভুলভাবে অভিযোগপত্র দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এরপর আদালত বলেন, ‘আপনারা অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবস্থা নিলে আমাদের হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন হবে না। আর সেটি না হলে আমরাই ব্যবস্থা নেব। জাহালমের ঘটনায় দুদক বা ব্যাংককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ শুনানিতে দুদকের আইনজীবী স্বীকার করেন, জাহালম ঋণগ্রহীতা নন। তিনি পাটকলের একজন শ্রমিক। বিষয়টি গত ডিসেম্বরে যখন তাঁদের নজরে আসে, তখনই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দুদক। কিন্তু বাস্তবে সেই গুরুত্বের কোনো লক্ষণ নেই। অবশেষে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যের বিশেষ ভুমিকায় ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ প্রায় তিন বছর কারা ভোগের পর মায়ের কোলে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ফিরেযান দরিদ্র পাটকল শ্রমিক জাহালম । আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতে যখন দুর্নীতি ও অনিয়মের শেষ নাই । ব্যাংকিং খাতের কালো বিড়ালরা প্রায় সকলেই যখন দুদকের ধরাছোয়ার বাহিরে তখন হয়তো আমাদের করিতকর্মা দুদক নীরিহ জাহালমকে আবু সালেক সাজিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমান দিতে চেয়ে ছিলেন । হয়তো সেই জন্যই জাহালমের অর্থাৎ আবু সালেকের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সকলকেই পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত ও করা হয়েছিল । যেমনটি করা হয়েছিল জজ মিয়ার বেলায় অর্থাৎ একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলার মামলার তদন্তে সিআইডির তৎকালীন তিন কর্মকর্তাকে । দুদক বড় বড় দুর্নীতিবাজকে ধরতে পারে না, কিন্তু জাহালমের মতো নিরীহ মানুষকে জেল খাটাতে পারে। এই না হলে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন! জাহালম ও জজ মিয়া আজ মুক্ত মানুষ । জাহালমকে বিনা দোষে ১ হাজার ৯২ দিন আর জজ মিয়া কে ৪ বছর ২৬ দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে জীবন পার করতে হয়েছে । এই সময় গুলি জাহালম ও জজ মিয়া ও তাদের পরিবার ও আপনজনের কেমন কেটেছে তা হয়তো আমরা কেউই অনুভব করতে পারবো না । তাদের জীবনের এই মুল্যবান সময়ের ক্ষতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ কি দিয়ে পুরন করবে ? আমরা আর কোন জজ মিয়া ও জাহালমের করুন কাহীনি নতুন করে শুনতে চাই না ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: খোঁজ নিলে এরকম বহু জজ মিয়া আর জাহালাম পাওয়া যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.