নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক পাঠ্য বই

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৭

কয়েক দিন ধরে ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পুরানো সংবাদ নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এর “ পাঠ্যবইন থেকে সরে যাচ্ছে অমুসলিম কবি- সাহিত্যিকদের নাম “। যদিও ঐনসময় দেশে প্রায় প্রতিটি অসাম্প্রদায়িক সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়েছিল। তার পর ও সেই সমালেচনা তেমন কাজে আসেনি। ১৯৪৭ সালে ভারত – পাকিস্হানের ভাগ ধর্মের ভিত্তিতে হলে ও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের বাংলাদেশ জন্ম অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মধ্যদিয়ে । যুগ যুগ ধরে আমাদের বাংলাদেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের একই ঘটের জল খেয়ে বেড়ে উঠেছি একে অপরের সুখ দুঃখের সঙ্গী হয়ে বসবাস করছি । একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও ধর্ম বর্ণের বিভেদ ভুলে দেশমাতৃকার অস্তিত্ব রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন বাজি রেখে সবাই ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। এরই ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছি বিশ্বমানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। তবে যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীন মাতৃভূমি পেয়েছি। আজ স্বাধীনতার চার যুগ পরে এসে সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা আজও ধুকে ধুকে মরছে। ব্যক্তি স্বার্থের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই সাম্প্রদায়িক চেতনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কোন কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতা তথা ধর্মকে পুঁজি করে নিজেদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত আবার কেউ অসাম্প্রদায়িকতার কথা মুখে বললেও কাজে পুরো উল্টো টা ই করে যাচ্ছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ যাদের নেতৃত্বে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে বরাবারই আমারা জেনে আসছি তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের বিশ্বাস থেকে অনেক দূরে।রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি আমাদের ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী গোষ্ঠী জামাত-ইসলাম এর সাথে জোট করার জের হিসেবে প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ গুলি কখনোই তাদের সমর্থন করেনি। কিন্তু ক্ষমতার মোহ আওয়ামীলীগ কে ও অন্ধ করে দিয়পছে। ২০০৬ এর আমারা দেখেছিলাম আওয়ামীলীগ কে শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেবের সাথে চুক্তি করতে। তার পর যখন এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে তখন আওয়ামীলীগ সেই চুক্তি বিচ্ছেন করে তাদের সাথে। আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে হেফাজতে ইসলাম। অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতা মন্ত্রী এমপি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ শফি সাহেবের দরবারে হাজির হন দোয়ার জন্য তার মতবাদ আজ সর্বজন গ্রহনযোগ্য। কিছু দিন আগে আল্লামা শফি সাহেব আমাদের স্কুল- কলেজ গুলিকে জেনার বাজার বলে অবহিত করেছেন। সেই সাথে তিনি মানীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপদেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেই ভাবে লেখা পড়া করেছেন সেই ভাবে আমাদের মেয়েদের ও স্কুল কলেজে শিক্ষার ব্যবস্হা করা হয়। আমার জানা মতে মননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করেছেন ঐ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ আধুনিক হয়েছে কিন্তু নষ্ঠ হয় নি। আমার প্রশ্ন কেন আমার শিক্ষা ব্যবস্হা ও নারীদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শফি সাহেবের এত জ্বালা। দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় যেই ধরনের অপকর্ম হয় ও হচ্ছে তা নিয়ে কি আল্লামা শফি সাহেবরা একবার ও মুখ খুলেছেন? বাংলাদেশের মাদ্রাসা গুলিতে জোরপুর্বক শিশুদের উপর চালানো হয় যৌন নির্যাতন। এমন কি প্রতিনিয়ত সংবাদম্যমের শিরোনাম হয় মাদ্রসার শিক্ষক দ্বারা ছাত্র বা ছাত্রী ধর্ষন বা বলকার কিংবা ধর্ষন বা বলদকারের পর হত্যা । গত বছর ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের যৌন প্রস্তাবে বাজী না হয়ে আইনের আশ্রয় চাওয়ার গায়ে আগুন ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যাকরা হয় এই ঘটনায় সারা দেশে তোরপাল শুরু হলেও চুপ ছিলেন আল্লামা শফি গংরা। মাদ্রাসা গুলিগুলিতে শিশুদের উপর যেই ভাবে যৌন শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালানো হয় তার অধিকাংশ ই আমরা অবগত নই। মাদ্রাসার ছাত্রদের অধিকাংশ ই আসা এতিম গরীবপরিবারের থেকে ছোট ছোট বাচ্চারা। আজ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের নামে ইসলাম ধর্মের যে ভুল ব্যাখা ও বিকৃতি হচ্ছে সেই ব্যাপারে আমাদের মুসলমান সমাজ ও আলেম সমাজ চুপ হয়ে। কিন্তু যখনি শরীয়ত বয়াতী তার গানের আসরে ধর্মের অপব্যাখা দিলেন তখন দেশের একদল ধর্মব্যবসায়ী এর প্রতিবাদে মাঠগরম করে শরীয়ত বয়াতীকে গ্রেফতার করাতে বাধ্য করানো হয়। এমন কি সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ও জায়গা করে নেয় শরীয়ত বয়াতী। অথচ আজ বাংলাদেশের তথাকথিত খ্যাতনামা আলেমদের ওয়াজে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবী ও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা্যাচ্ছে তথাকথিত ঐ সকল আলেমদের। যাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ও আমাদের প্রশাসনের শত শত কর্মী। অথচ এই নিয়ে আমাদের সরকার ও প্রশাসন একেবারেই চুপ।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বরাবরই সাম্প্রদায়িকতা প্রাধান্য পেয়ে আসছিল। কোমলমতি শিশুদের পাঠ্য বই সাম্প্রদায়িকতার মূল শিকার। শিশুদের পাঠ্য বইয়ে আমরা যেমন দেখেছি “ঋ” তে ঋষি বাক্য শিরধার্য “ঈ” তে “ঈশ্বর কে বন্দনা করো”, তেমনি দেখছি “ও” তে ওড়না চাই, “ঈ” তে ঈদ ইত্যাদি। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠ্য বই থেকে হিন্দু ধর্মের লেখকদের নানান প্রবন্ধ বাদ দেয়া। যেমন নবম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য সংকলন’ থেকে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পালামৌ’ ও জ্ঞানদাসের ‘সুখের লাগিয়া’, ভারতচন্দ্রের ‘আমার সন্তান’, লালন শাহের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সাঁকোটা দুলছে’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’, আলাওলের ‘হামদ’, আব্দুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’, গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ ও কাজী নজরুল ইসলামের ‘উমর-ফারুক’।অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘রামায়ণ-কাহিনি’ বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সপ্তম শ্রেণির বাংলা বই সপ্তবর্ণাতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লাল ঘোড়া’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে হবীবুল্লাহ বাহারের ‘মরু ভাস্কর’। অন্যদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণির দ্রুতপঠন আনন্দপাঠ থেকে শরৎচন্দ্রের ‘লালু’ ও সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের যারা সম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী তদের জন্য তো প্রত্যেকটি ধর্মেরই ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্হা চালু আছে। তারা চাইলে তাদের সন্তানের সেখানে শিক্ষার ব্যবস্হা করে পারে। আমাদের স্কুল কলেজের অসাম্প্রদায়িক পাঠ্যব্যবস্হা নিয়ে তাদের এত মাথা ব্যাথা কেন? যেখানে আমদের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার মূল চেতনাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া সেখানে কেন অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধুকে ধুকে মরছে? শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দাবি মেনে নিয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে অমুসলিম ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে।



হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ একটি মহাশক্তি হিসেবে দাড়িয়ে আছে। ২০১৩ সালে ৫ মে সমগ্র ঢাকা শহরে এক নারকীয় তান্ডবের মাধ্যমে তাদের শক্তি পরীক্ষা দেখিয়েছেন। যদিও সেদিন সরকার সু-কৌশলে হেফাজতে ইসলামকে তাড়াতে পেরেছেলেন কিন্তু তাদের সেই তান্ডবের ভয় সরকার আজও মন থেকে মুছতে পারেনি। সেদিন হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ১৩ দফা সম্বলিত একটি দাবি নামা দিয়েছিলেন। সরকার ক্রমান্বয়ে তাদের সে দাবি পূরণের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের মতো আমারও ধারণা। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই বড় নিয়ামক। যেকোন মূল্যে দেশ ও জাতীর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতেই হবে। তাই আমরা নানা সময় জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতা হারানো রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে শুনেছি ওমুকের ওমুক দাবি আমরা পূরণ করিনি বলে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আমাদের ক্ষমতা থেকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমাদের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলিকে নানা সময় তাদের সমস্যাগুলি নিয়ে ক্ষমতাধর বিদেশী রাষ্ট্রগুলির কর্তাব্যক্তিদের কাছে নালিশ ও করতে দেখেছে অথচ তারা মুখে শিকার করছেন আমরা জনগণই নাকি সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস!আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই চায় ইসলামিক রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠিকে যে কোন মূল্যে খুশি রাখতে। তার জন্য বিএনপি আালী আহসান মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামীকে মন্ত্রী বানিয়েছে আর আওয়ামীলীগ হেফাজতে ইসলামকে খুশি রাখতে রেলের জমি সহ নানা কিছু দিয়ে তাদের প্রায় সকল দাবী মেনে নিয়ে প্রাণপন চেষ্টা করছেন হেফাজতে ইসলামকে খুশি রাখতে।
এই মুহূর্তে আমাদের দেশে সহ সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই অন্যতম সমস্যার একটি হলো জঙ্গিবাদ তথা ধর্মীয় উগ্রবাদ। আমাদের সরকারও তার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী জীবন বাজি রেখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্হান নিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম সহ বিভিন্ন ইসলামিক দল ও গোষ্ঠীর দাবি অনুযায়ী সরকার শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে সহজপাঠের নামে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভুক্তি ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর অপকৌশল লিপ্ত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। আমরা চাইবো আমাদের শিশুরা উদার, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে বড় হবে। যদি তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে ধর্মীয় বৈষম্যে শিক্ষা দেয়া হয় তা হলে আমাদের শিশুরা কখনোই অসাম্প্রদায়িক উদার মনোভাব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে বড় হতে পারবে না।


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হচ্ছে লেখাটা আগে কোথাও পড়েছি।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৪২

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: যোজন বিয়োজন সময়ের দাবি কিন্ত সেই যোজন বিয়োজন যদি আমাদের চুলকানি হয় তাহলে আসুন আমরা সবাই মিলে আন্দোলন গড়ে তুলি যাতে কোন মোসলমানে লেখা গল্প কবিতা কোন পাঠ্যবইয়ে না থাকে।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৪৭

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন বলেছেন: এমন ই একটি লেখা এর আগে ও আমি লিখেছিলাম যা কয়েক টি পত্রিকা সহ ব্লগে প্রকাশ হয়ে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.