নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিটা মানুষের কিছু কিছু মৌলিক অধিকার থাকে যা পুরন করা কখনো রাষ্ট্র আবার কখনো সমাজের দায়িত্ব। কিছু কিছু মানুষের সেই অধিকার কখনো রাষ্ট্র আবার কখনো বা সমাজ বঞ্চিত করে। জন্মের পর প্রতিটি শিশুই তার মা- বাবার পরিচয়ের পাশাপাশি একটি ধর্মীয় পরিচয়ে বড় হয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা-বাবার ধর্মীয় পরিচয়েই পরিচিতি পায় প্রতিটি শিশুর ধর্ম । ঠিক তেমনি মৃত্যুর ক্ষেত্রে অর্থাৎ মৃত্যুর পরে ও প্রতিটি ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই । স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে আমাদের সমাজের প্রতিটি ধর্মে বিশ্বাসী মানুষই কি মৃত্যুর পর ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী শেষকৃত্য ভাগ্যে জোটে? না মোটে ও না। যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজের যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের ভাগ্যে মৃত্যুর পরে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে শেষকৃত্য ভাগ্যে জুটেনি। মৃত্যুর পর যৌনকর্মীদের শরীরে ভারী পাথর বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় না হয় যৌনপল্লীর পাশেই কোথাও মাটিচাপা দেওয়া হয়। এটা শুধু যৌনকর্মীদের বেলায় ই নয়, ট্রান্স জেন্ডার মানুষদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুর পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে জটিলতা আছে আমাদের এই সমাজে। বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি আইন অনুযায়ী বৈধ। হিউম্যান রাইট ওয়াচের প্রকাশিত তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৪টি বৈধ যৌনপল্লী আছে এবং সেখানে প্রায় ২০ হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী হলো রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। এই যৌনপল্লীতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার যৌনকর্মীর বসবাস থকলে ও তাদের জীবন যাত্রার মান সম্পুর্ণ অমানবিক। আমাদের সংবিধান স্বীকৃত সমস্ত মৌলক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে তারা যেমন আন্দোলন করে যাচ্ছেন পাশাপশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একট্টা। এসব আন্দোলনের মুখেই বেশ কয়েক বছর আগে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর পাশেই একটা জায়গা দেওয়া হয়েছিল যৌনকর্মীদের দাফনের জন্য। তবে কোন যৌনকর্মীর মৃত্যু হলে তাকে গোসল জানাজা কাফন না দিয়েই শুধু মাটি চাপা দেওয়া হতো। তবে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে যৌনকর্মেদের শেষকৃত্য করার দাবীর আন্দোলন যৌনকর্মীদের বহুদিনের। সাম্প্রতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে মাদক, জোর করে দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের সংগঠন “ অবহেলিত নারী ঐক্য “ এর নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভা চলাকালে খবর আসে যৌনপল্লীর প্রবীন বাসিন্দা হামিদা বেগমের মৃত্যুর। হামিদা বেগমের মৃত্যুর খবরই যৌনকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন আরো বেগবান হয়। দাবী আদায়ের আন্দোলন আর আবেগ দুটাই হামিদার ভাগ্যকে প্রসন্নিত করে। যৌনকর্মীরা মৃত হামিদা বেগমের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে শেষকৃত্য সম্পন্নের দাবী জানান। গোয়ালন্দ থানার ওসি জনাব আশিকুর রহমান তাঁদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে মৃত হামিার জানাজা, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করেন। যদি ও প্রথমে স্হানীয় ইমাম সাহেব জানাজার নামাজে ইমামতি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য ওসি সাহেবের অনুরোধে ইমাম সাহেব জনাজার নামাজে ইমামতি করতে সম্মত হন। হামিদা বেগমের জানাজায় প্রায় শ’দুয়েক মুসল্লি শরিক হয়ে জানাজার নামাজ আাদায় করে হামিদার দাফন সম্পন্ন করেন । পরে হামিদা বেগমের কুলখানিতে ও শত পাঁচেক মানুষের অংশগ্রহণের কথা আমরা শুনেছি। যৌনকর্মীদের দাবী ও ওসি আশিকুর রহমানের সহযোগিতায় একজন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ নিজস্ব বিশ্বাসকেন্দ্রিক প্রথার মধ্য দিয়ে জীবনের শেষের আনুষ্ঠানিকতা পাওয়ার যে অধিকার তা প্রতিষ্ঠিত হলো। হয়তো বা অনেকের ই প্রশ্ন জাগবে প্রশাসনের উপস্হিতির কারনেই হয়তে ইমাম সাহেব হামিদার জানাজায় ইমামতি করতে সম্মত হয়েছেন। না এটা আমি মোটে ও বিশ্বাস করি না। মুসলমান অর্থাৎ ইসলাম ধর্মামলম্বীদের জন্য কোন মুসলমানের মৃত্যু হলে তাকে শরীয়ত মোতাবেক দাফন করা ফরযে কেফায়া যা সমাজের জন্য আবশ্যকীয় পালনীয়। যদি সমাজের কিছু লোক তা পালন করেন তা হলে তা পুরো সমাজের পক্ষ থেকে আাদায় হয়ে যায়। আর যদি তা সমাজের কোন মানুষ ই পালনে ব্যর্থ হয় তা হলে এর জন্য পুরো সমাজ ই দায়ী থাকবে। যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন তারা এক বাক্যেই বলবেন পাপ পুর্নের হিসাব নিবেন সৃষ্টিকর্তা আর পরকালের বিচারের ভার ও তারই উপর। এই দুনিয়ার কোন মানুষের ই পাপ পুর্নের বিচারের অধিকার সৃষ্টিকর্তা দেন নি। তার পর ও আমরা সমাজের মানুষ অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে সেই বিচার করি বা করছি।
যদি প্রশ্নটা এমন হয় একজন নারী কোন স্বার্থে তার ইজ্জত বিক্রি করে অর্থাৎ যৌন ব্যবসা বেছেন নেন? উত্তরটা একদম সোজাসাপ্টা যৌনপল্লীর প্রতিটি বাসিন্দাই কোন না কোন ভাবে জীবন জীবিকার প্রয়োজনেই বেছে নেন এই পেশাটি। আর যৌনবৃত্তি পৃথিবীর আদিম পেশার একটি। আমাদের তথা কথিত সভ্য সমাজ কি কোন ভাবেই নারীদের এই পেশা থেকে ফিরিয়ে এনে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে? না মোটে ও না বরং অন্ধকার যৌনপল্লীর ঐ বাসিন্দাদের বেশ্যা বলে গালি দিতে মোটেও দ্বিধা বোধ করে না। অথচ তথাকথিত এই সভ্য সমাজের কোন না কোন পুরুষ ই ঐ বেশ্যাদের খদ্দর। সভ্য সমাজের কাছে বেশ্যা বলে যারা পরিচিত তারা ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে ও যদি মৃত্যুর ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে শেষকৃত্য না পায় তা হলে সভ্য সমাজের বেশ্যাদের ঐ খদ্দরেরা মৃত্যুর পরে কিভাবে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে শেষকৃত্য পায়? আমরা তো দেখি না সমাজের প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর সুদ ধর্ষক খুনি কোন অপরাধী কে মৃত্যুর পর পাথর বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় কিংবা মাটি চাপা দেওয়া হয়। এমন কি ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত মানুষটাকে ও ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। তবে কেন কার স্বার্থে এক জন যৌনকর্মীর মৃত্যুর পর তার এই করুন দশা হবে? তাই হয়তো মানিক বন্দোপাধ্যায় সব কিছু বিবেচনা করেই তার পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে “ ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না” বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা সবাই বিশ্বাস করেন সৃষ্টি কর্তার উপস্থিতি সব খানেই।
গোয়ালন্দ থানার ওসি জনাব আশিকুর রহমানের সহযোগিতায় হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তাকে শেষকৃত্যের মাধ্যমে শেষ বিদায় দেয়া হয়েছে তা সত্য একটি মানিকতার পরিচয় বহন করে। এই জন্য গোয়ালন্দ থানার ওসি সহ সকল সদস্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। আর কোন যৌনকর্মীকে মৃত্যুর পরে যেন পাথর বেঁধে নদীতে না ডুবতে হয় আট কোন যৌন কর্মীকে যেন মৃত্যুর পর কাফন জানাজা ছাড়া মাটি চাপা না দিতে হয়। হামিদার মত প্রত্যেক যৌনপল্লীর প্রতিটি যৌনকর্মীর ই মৃত্যুর পর তার বিশ্বাসের ধর্মীয়রীতিনীতি মেনে শেষকৃত্য হবে এমন টাই প্রত্যেক মানবিক মানুষের চাওয়া।
২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪২
জগতারন বলেছেন: গোয়ালন্দ থানার ওসি জনাব আশিকুর রহমানের সহযোগিতায় হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তাকে শেষকৃত্যের মাধ্যমে শেষ বিদায় দেয়া হয়েছে তা সত্য একটি মানিকতার পরিচয় বহন করে। এই জন্য গোয়ালন্দ থানার ওসি সহ সকল সদস্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। আর কোন যৌনকর্মীকে মৃত্যুর পরে যেন পাথর বেঁধে নদীতে না ডুবতে হয় আর কোন যৌন কর্মীকে যেন মৃত্যুর পর কাফন জানাজা ছাড়া মাটি চাপা না দিতে হয়। হামিদা বেগমের মত প্রত্যেক যৌনপল্লীর প্রতিটি যৌনকর্মীরই মৃত্যুর পর তার বিশ্বাসের ধর্মীয়রীতিনীতি মেনে শেষকৃত্য হবে এমন টাই প্রত্যেক মানবিক মানুষের চাওয়া।
সহমত !!!
এই পোষ্ট দাতা জ্বনাব ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন-এর প্রতি আমার অভিন্দন রহিল।
৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: হামিদা বেগমের মতো অবস্থা যেন আরো কার না হয়।
৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:১০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালোবাসা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৩০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: কবর থেকে থেকে মৃত্যুর চেতনা ছাড়া আর কোনকিছু জাগ্রত হওয়ার কোন অবকাশ নেই।