নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুপগঞ্জের লাশের কান্না ও আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা।

১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১০:০১

বাংলাদেশে কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যু এটা আবার নতুন কি! সাধারন হিসেবে এরা শ্রমিক আর এই শ্রমিকদের কত টুকু মানুষ হিসেবে গন্যকরা হয় এটা ই বড় প্রশ্ন? গত বছর করোনার শুরুতেই আমরা দেখেছি আমাদের দেশের পোষাক শিল্পের মালিকদের শ্রমিক নামক প্রানীদের নিয়ে নানান খেলা। পোষাক কারখানার কোন এক বহুরুপী মালিক তো তার ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে বলেই ফেললেন তারা নাকি শ্রমিকদের পালেন পোষেন। তার অর্থ কি দাড়ায়? এখন ও দেশ যখন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বেসামাল তখন ও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে পোষাক কারখানা গুলি। শ্রমিকরা ও পেটের তারনায় জীবনকে তুচ্ছ ভেবে ছুটছে কর্ম ক্ষেত্রে। অথচ সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেকটি কারখানা মালিকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিকদের আনা নেওয়া করে কারখানা খোলা রাখতে পারবে। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে ই কথাগুলি বলছি। কারন আমি ও একজন শ্রমিক। গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের আওতাধীন হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত হয়। কারখানার ছয় তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন । কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কি করণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সবমিলে এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। সব চেয়ে বেদনাদায়ক হলো মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ও অনেক শ্রমিক ই পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু অসহায় পরিবারের সদস্যরা তাদে প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে পুরো ই ব্যর্থ হয়েছেন কারন অগ্নিকান্ড শুরু হওয়ার পর ই কারখানা প্রবেশ ও বাহিরের গেইট গুলি তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কারখানা কাজ করা অধিকাংশ ই নাকি ছিল শিশু শ্রমিক। স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী উদ্ধার করা প্রতিটি মৃতদেহ ই একেকটি কয়লার টুকরো। তার পর ও ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে নাকি মৃত ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হবে। সজীব গ্রুপের কারখানার ঘটনায় বিস্তারিত আসা আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরের ঘটনা একটু স্মরন করার চেস্টা করি। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই কম আর কম হবেই না বা কেন প্রতিনিয়ত ই এত ঘটনা ঘটছে এর কয়টাই বা মনে রাখা যায়। তাই কোন ঘটনার ই তেমন কোন প্রতিকার হয় না বলেই ঘটনার তলে চাপা পরছে ঘটনা। সেই দিন আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় আগুনে পুরে ১১২ জন শ্রমিক কয়লা হয়ে গিয়েছিলেন। পরে সেই লাশগুলো উদ্ধার করে নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সারি সারি করে রাখা হয়। স্বজনরা সেই দিন তাদের প্রিয়জনের মরা মুখটি ও দেখতে পারেন নি। মৃত শ্রমিকদের স্বজনদের আহাজারিতে সেদিন ভারি হয়ে গিয়েছিল নিশ্চিন্তপুরের আকাশ বাতাস। তবে সেই কান্না মিশে গেছে আকাশে আর বাতাসে ই । সেই কান্না কোন ভাবে স্পর্শ করতে পারেনি আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা কর্তাব্যক্তিদের। তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় আগুনে ঘটনার পর যখন আমাদের দেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যম এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন উত্তাল তখন ও আমরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসনকে ব্যাপারটাকে তেম গুরুত্ব সহকারে নিতে দেখিনি। সরকারের কাছেও ঐ ঘটনার তেমন গুরুত্ব ছিল বলে আমার মনে হয় নাই । তাই তো তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় কোনো ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট করে আসামি না করে একটি যেনতেন মামলা হয়েছিল। পুলিশ বলেছিল, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের আসামি করা হবে। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন ও আলোর মুখ দেখেনি। সেই ঘটনার বিচার ও আজ পর্যন্ত হয়নি। ঠিক একই ভাবে সজীব গ্রুপের কর্নধার মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও বলেছেন, " আগুনের ঘটনার দায় তিনি নেব না। এটা নিতান্তই একটি দুর্ঘটনা। জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর গিয়ে আগুন লাগাই নাই। অথবা আমার কোনো ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে, এই দায় আমার না। " হাসেম সাহেব একদম সত্য কথা বলেছেন তিনি তো আর আগুন লাগাননি তার কারখান। শ্রমিকদের অবহেলায় কারনে আগুন লাগতে পারে তা ও মেনে নিলাম । কারন কারখান থাকলে শ্রমিক থাকবে শ্রমিক থালে শ্রমিদের অবহেলাও থাকতে পারে। সর্বোপরি কারখানা থাকলে অগ্নিকান্ডে সহ যে কোন অঘটনা ঘটবে এটা স্বাভাবিক। তবে কোন কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্হা থাকবে না বা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ভিতরে অবস্হানরত শ্রমিকদের দ্রুত বের হওয়ার জন্য কোন জরুরি সিঁড়ি থাকবে না। সর্বোপরি শ্রমিকদের নিরাপত্তা কোন ব্যবস্হা থাকবে না এমন কি অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনের মুল ফটক বন্ধকরে দিবে তা তো হতে পারে না। তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এত শ্রমিকের মৃত্যুর পর ও আমরা একই কাহিনী শুনেছি আট তলা কারখানা ভবনে ছিল না কোন অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্হা ছিলা কোন জরুরী ভিত্তিতে বের হওয়ার কোন সিঁড়ি বা দরজা এমন কি অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাতের পর ই নাকি কারখামার মুল ফটক তালাবন্ধ করে শ্রমিকদের আটকে দেওয়া হয়েছিল। তাই তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে হুবহু মিল আছে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানার অগ্নিকান্ডের ঘটনার।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলী নিমতলী ট্র্যাজেডির কথা ও আমরা সবাই ভুলে গেছি। ঐ দিন এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জন তরতাজা মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল। হয়তো অনেকেই বলবেন কিভাবে ভুললাম প্রতিবছর তো ঐ দিনটি আসলে সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে নানান প্রতিবেদন হয়। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞরা তখন সরকারের কাছে ১৭টি সুপারিশ পেশ করেছিলেন, যার প্রথম সুপারিশ ই ছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্হান থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়া। বাকি ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ওপর। কিন্তু, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ আজো নেয়া হয় নাই বলেই গত ২৩ এপ্রিল ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের নীচতলায় রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকেই জীবন দিতে হয়েছে আবার কেউ আগুনে দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন । এর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়ানক আরেক অগ্নিকাণ্ডের জীবন দিতে হয়েছিল ৭৮ জন মানুষকে । কারণ ঐ এলাকার প্রতিটি বাড়ীতেই ছিল সেই রাসায়নিক গুদাম । ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৪১ জন। ঘটনার পর জানা যায়, এই কারখানা ভবনের ইমরাত নির্মাণের যে লে-আউটের অনুমোদন নিয়েছিল, তা তারা কোন ভাবে অনুসরণ করেনি। ছিল না কোন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্হা বা জরুরী নির্গমন সিঁড়ি। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার অদূরে কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগলে ১৩ জন মারা যান। ঐ ঘটনার পর জানাজায় ঐ কারখানার কোন অনুমতি না নিয়েই কোন আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই কার্যকর চালাচ্ছিলেন। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ২২তলা ভবন এফআর টাওয়ারে আগ্নিকান্ডে ২৬ জনের মৃত্যু হয়৷ পরে জানাজায় রাজউক থেকে ১৮ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ২২ তলা হয়ে স-গৌরবে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে দাড়িয়ে ছিল এফআর টাওয়ার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলংকময় ঘটনার নাম রানাপ্লাজা তথাকথিত দুর্ঘটনা । বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা। এ দূর্ঘটনায় প্রায় বারোশত জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। রানাপ্লাজার ঘটনার পর সারা পৃথিবী পমন শোকাহত হয়েছিল তার পর ভেবেছিলাম আমাদের সরকারে কর্তাব্যক্তিদের ভিতর হয়তো মানবতা জাগ্রত কিন্তু তা না হয়ে আমরা দেখেছি ভিন্ন চিত্র। রানাপ্লাজা ধসের দিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচি ছিল আর এই ভবন ধসের দায় বিএনপির কাধে চাপানোর জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছিলেন , ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' যদি এই কথা বলে দেশের মানুষের কাছে হাসির পাত্রে পরিনত হয়েছিলেন তিনি। পরে যদিও অনেক নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার করা হয় রানাপ্লাজার মালিক সোহেল রানাকে। এর পর থেকে সোহেল রানা এখনো কারাগারে বন্দি। রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের সহযোগিতার জন্য দেশ বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন সহযোগিতার বেশির ভাগই নাকি চলে গেছে রাঘব বোয়ালদের পেটে। অসহায় শ্রমিকদের ভাগ্য সেই নির্মম পরিহাসের ই শিকার। সজীব গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ্যক্টিভিষ্টরা খুবই সজাগ। আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিপরিচিত মুখ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ফেইসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার লাইভে তিনি এই ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা ও কম করেন নাই । তার লাইভের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, " এই সেজান জুস নাকি পাকিস্তানি প্রডাক্ট। পাকিস্তান একাত্তর সালে যন্ত্রণা দিয়েছে, এখনও যন্ত্রণা দিচ্ছে। " আমার মোটেও বোধগম্য নয় কেন ব্যারিস্টার সুমনের এমন মন্তব্য। এই সেজান জুস পাকিস্তানি পন্য হলে ও এর পরিচালনার দায়িত্বে বাংলাদপশের ই মানুষ। তাই পন্যের কোন তো আর দোষ হতে পারে না। রানাপ্লাজার মালিক কিন্তু আওয়ামীলীগের ই একজন ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার আপব্যবহার করেই একজন সাধারন সোহেল রানা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে সরকারের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে রানাপ্লাজা গড়ে তুলে ছিলেন। তাজরীনের মালিক সহ এমন সব ঘটনায় যেসব ব্যক্তিরাই জড়িত তারা কেউই ভিনদেশী নন।

স্বাভাবিক ভাবেই একটি কারখানা স্হাপনের আগে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কতৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্নধরনের ছাড়পত্র নিয়েই কারখানা কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এবং একটি কারখানায় কিছুদিন পর পর সেই সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো পরিদর্শন করে সব ঠিকঠাক আছে কি না তার তদারকি করা। তারমধ্যে বিশেষ করে রয়েছে কল-কারখানা পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তর, ফায়ার ব্রিগেড, পরিবেশ অধিদপ্তর এমন কি বিশ্বের উন্নত দেশে স্বাস্থ্য বিভাগ ও কারখানর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে থাকেন। তবে সবচেয়ে বড় পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের দেশে প্রত্যেকটি দুর্ঘটনা ঘটার পর ই জানা যায় নানান ত্রুটির কথা। লঞ্চ ডুবলে ঘটনার পর জানা যায় লঞ্চের অনুমোদন নেই। ভবনে আগুন লাগলে জানা যায় অনুমোদন নেই। গাড়ি দুর্ঘটনার পর জানা যায় ফিটনেস নেই ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই । কারখানায় দুর্ঘটনার পর জানা যায় ওখনে কারখানার অনুমতি নেই কারখানর ভিতরে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্হা নেই। অথচ তদারকের দায়িত্বে থাকা নানা কর্তৃপক্ষ কিন্তু ঠিকই আছে!সজীব গ্রুপের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আমরা জানতে পারলাম কারখানা পরিদর্শক নিয়মিত প্রতিবেদন দিয়ে গেছেন ফ্যাক্টরি চালানোর উপযুক্ত বলে।অনেকগুলো লাইসেন্স ইতিমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়েছে কিংবা ছিলই না গত কয়েক বছর। তার সাথে আগেই তো বলেছি ঐ কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্হা ও জরুরি নির্গমনেরবও কোন রাস্তা ছিল না। আমাদের দেশের শ্রম আইনে দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর জন্য ক্ষতি পুরন মাত্র ২ লাখ টাকা। যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। যদিও রানাপ্লাজা ঘটনার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটি ১৭-২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ প্রদানের সুপারিশ করেছিলেন। জীবনের ক্ষতিপূরণ কখনোই অর্থ দিয়ে মোটেও সম্ভব না। তার পর ও যদি সেটা কোন দুর্ঘটনা হয় তা হলে হয়তো মেনে নেয়া সম্ভব। কিন্তু যদি সেটা কোন ইচ্ছাকৃত অবহেলায় স্বার্থ রক্ষার জন্য হয় তা হলে সেটা কখনোই দুর্ঘটনা নয় সেটা অবশ্যই হত্যাকান্ড। কিন্তু আজো আমাদের দেশে এই সকল হত্যাকান্ডের কোন বিচার হয় নি। কারন এর সাথে জরিত দেশের রাঘব বেয়ালেরা আর ঘটনার শিকার হন তথাকথিত মানুষের নামের শ্রমিকেরা। সজীব গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যদি ও ইতোমধ্যে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম সহ আট জনকে গ্রেফতার করে পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনার জন্য কি শুধু তারাই দায়ী? না মোটে ও না। যাদের দায়িত্ব ছিল কারখানার সমস্ত কিছু ঠিক আছে কি না তা সঠিক ভাবে তদারকি করা। তারা কিন্তু সেই দায়িত্ব
মাসোহারার বিনিময়ে কাগজে কলমে পালন করলেও বাস্তব চিত্র ছিল তার উল্টো। তাই এই ঘটনার জন্য সজীব গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তারা যেমন দায়ী তাদের চেয়ে ও বেশি দায়ী সে খানকারর কলকারখানার পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক ও ফায়ার ব্রিগেডের যারা দায়িত্বে ছিলেন যারা কারখানার ভিতরের সম্পুর্ন নিরাপদ কর্মপরিবেশ আছে কি না তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে যারা ছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে সব সময় ই ঐ সকল দুর্নীতিগ্রস্হ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষার চেস্টা করা হয়। পুর্বের ঘটনার থেকে আমরা এই ঘটনার ও ভবিষ্যৎ ও ধারনা করতে পারি। বড় জোড় সপ্তাহ খানেক আমাদের আবেগ কিছুটা কাজ করবে। এর আবার নতুন কোন ঘটনার চাপায় পরে যাবে এই ঘটনা। তবে যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হবে ততো দিন পর্যান্ত আমাদের এমন যন্ত্রণাদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হতেই হবে।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১১:৩১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বড় জোড় সপ্তাহ খানেক আমাদের আবেগ কিছুটা কাজ করবে। এর আবার নতুন কোন ঘটনার চাপায় পরে যাবে এই ঘটনা। সপ্তাহ খানেক! কাল সকালেই দেখবেন ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে মিছিল হচ্ছে, যাবতীয় মিডিয়া এই নিয়ে নাচানাচি করবে, আরেকটা ইস্যু না পাওয়া পর্যন্ত !!!

২| ১১ ই জুলাই, ২০২১ রাত ১:৩৫

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বড়োকর্তাদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট প্রদান করা হোক। শুধু গ্রেপ্তার দেখিয়ে ও পরবর্তীতে আইনের মারপ্যাচে এদের বেগম পাড়া বা মালয়েশিয়ায় পালিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া যায় না কিছুতেই। এই ধরণের চরম মর্মান্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মৃত্যুর সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানই পারে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.