নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজনীতি কি বা কাকে বলে তা আমাদের আম রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ কত টুকু জানেন এই নিয়ে আমার যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শহর নগর গ্রামের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ই আপনি খুজে পাবেন রাজনৈতিক নেতা। গত কিছু দিন আগে আমি ঢাকার শহরের কামরাঙ্গির চর এলাকায় একটি বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম ওখানে আমার পরিচিত একজন বেশ কয়েক জন সাংগ পাংগ নিয়ে বসা। যিনি নিজের নাম ও সঠিক ভাবে উচ্চারন করতে পারেন কি না তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি নাকি ওখানকার বর্তমান সরকারি দলের একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিশাল দায়িত্বে। যেহেতু ঐ নেতা বয়সে আমার অনেক ছোট ও দীর্ঘদিন আমাদের বাসার কাজে নিয়োজিত ছিল তাই আমি তাকে তুই বলেই ডাকি। প্রথম দেখায় ই কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর যখন জানতে চাইলাম কি করা হয়? তিনি গর্ব সহকারে বললেন বড় ভাই আপনাদের দোয়া এখন রাজনীতি করি। আমি কিছু না বলেই কয়েক মুহুর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলাম। আর ভাবলাম এই যদি হয় আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের অবস্হা তা হলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যতই দ্রুত গতিতে ই চলুক না কেন রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আসলে রাজনীতি কাকে বলে বা রাজনীতির সংজ্ঞা ই বা কি? বার্নার্ড ক্রিক দাবি করেন যে, "রাজনীতি হল নীতিমালার একটি স্বতন্ত্র রূপ, যার দ্বারা মানুষ নিজেদের পার্থক্য মিটিয়ে ফেলার জন্য, বৈচিত্রময় আগ্রহ ও মূল্যবোধ উপভোগ করার জন্য এবং সাধারণ প্রয়োজনের বিষয় পরিচালনায় সরকারি নীতি তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিলেমিশে কাজ করে " প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আড্রিয়ান লেফ্টউইচ সংজ্ঞা দেন যে, "রাজনীতি সমাজে ও সমাজসমূহের মধ্যে সমবায়, মতবিনিময় ও দ্বন্দ্বের সকল কাজের জন্ম দেয়, যার দ্বারা মানুষ তাদের জৈবিক ও সামাজিক জীবনের উৎপাদন ও প্রজননের নিমিত্তে মানবীয়, প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহার, উৎপাদন ও বন্টনের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করে" আর ডেভিড ইস্টনের মতে, "এটি হল কোন সমাজের জন্য মূল্যবান বিষয়গুলোর কর্তৃত্বপূর্ণ সুষম বন্টন"। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনীতিকে যে ভাবেই বর্নানা করুক না কেন আমাদের দেশের বেলায় এর সংজ্ঞা সম্পুর্ন ভিন্ন আমাদের দেশে গত কয়েক যুগের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতি হলে নিয়ম নীতি না মেনে নিজের অবৈধ অর্থ ও পেশী শক্তির মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়া নিজের হীন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল ই রাজনীতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। যার হাজারো প্রমান বিদ্যমান। নিজেদের সেই কায়েমি স্বার্থ হাসিলের জন্য যে যেই ভাবেই পারছেন রাজনৈতিক দলগুলিকে ব্যবহার করে আসছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর থেকেই আমাদের দেশে পচনের রাজনীতি শুরু। তার পর আশির দশকে তৎকালীন স্বৈরাচার সরকার গুলি তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে রাজনীতিতে হেন অপকর্ম নাই না করেছেন। চোর ডাকাত মদাকব্যবসায়ী চোরাকারবারি সবার ই ঠাই হয় রাজনীতিতে। নব্বইয়ে এরশাদের পতনের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল ও টিকিয়ে রাখার জন্য ঐ একই ধারা চলতে থাকে। দেশের রাজনীতি নতুন করে চলে যায় সন্ত্রাসী লুটেরা ও কালো টাকার মালিকদের হাতে। রাজনীতিতে শুরু হয় ব্যবসা। রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে যায় রাজনীতি। আর যেই প্রবীনরা ও রাজনীতিতে লেগে থাকেন তাদের ও একটি বিরাট অংশ পরিনত হন ব্যবসায়ীতে।
বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী যেই ভাবেই হউক দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। বর্তমানে এই আওয়ামিলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মী এর অঙ্গসংগঠন সহযোগী সংগঠন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের নামে যে কত সংগঠন তা সম্ভব কারোই জানা নেই। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে নামসর্বস্ব " লীগ " ব্যবহার করা সংগঠনের সংখ্যা নাকি তিন শতাধিক তবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও তাঁতী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন রয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ। এ ছাড়া অঙ্গ সংগঠন হিসেবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব), মহিলা শ্রমিক লীগসহ কয়েকটি সংগঠন আছে আওয়ামী লীগের। দলের গঠনতন্ত্রে লীগ নামে আর কোনও সংগঠনের ভিত্তি নেই।
গত কয়েক দিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘লীগ’ নামে নতুন আরও দুটি ‘সংগঠন’ ঘুরাঘুরি ঈদ শুভেচ্ছা ও সদস্য সংগঠনের বিজ্ঞাপন দেখছিলাম । এগুলো হলো ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ ও ‘জনসেবা লীগ’। ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ যার সভাপতি হিসেবে দেখানো হয়েছে একজন সমালোচিত বির্তকত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর যিনি নিজেকে জনদরদী ঘোষনা দিয়ে নিজের নামের আগে সিস্টার জুড়ে দিয়ে নিজেকে অনেক উচ্চতার আসনে বসানোর চেস্টায় লিপ্ত। গত বছর যখন দেশে করোনার মহামারি শুরু আমাদের পোষাক শ্রমিকদের নিয়ে যখন পোষাক শিল্পের মালিকেরা নানা ভাবে টানা হেচরা শুরু করে নানান বির্তকের জন্ম দিচ্ছিলেন ঠিক তখন এই হেলেনা জাহাঙ্গীর তার ফেইসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসে তিনি শ্রমিকদের প্রভু সেজে গেলেন। অতি উৎসাহের সাথে বলে ফেললেন তিনি নাকি শ্রমিকদের খাওয়ান ও ভরনপোষণ করেন। ঠিক একই সময় করোনা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের নাজেহাল অবস্হায় দেশের মানুষ যখন বিধ্বস্ত এর মাঝে রিজেন্ট ও জেকেজির দুর্নীতিতে সারা দেশের মানুষ যখন স্তম্ভিত তখন ই তিনি জিকেজির চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর সাথে তার ছবি ফেইসবুকে প্রকাশ করে ও সাবরিনার অপকর্মের সাফাই গেয়েছেন। এর আগে সংবাদকর্মীদের সচিবালয়ে প্রবেশের পরিচয় পত্রকে তিনি খেলার ছলে নিয়ে ও কম সমালোচিত হন নি। তখন ঐ পরিচয় পত্রের ছবি নিজের ফেইসবুক পেইজে পোস্ট করে লিখেছিলেন এই পরিচয় পত্রের কাজ কি তা তিনি নাকি নিজেই জানেন না কেউ তাকে উৎসাহিত করেছেন আর তিনি নিয়ে নিয়েছেন। এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানকে নিয়ে মন্তব্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক বির্তকীত ব্যক্তি সেফাত উল্লা ওরফে সেফুদার সাথে লাইভ চার্ট পোস্ট এবং সম্প্রতি বোট ক্লাব সহ বিভিন্ন ক্লাবের সাফাই গেয়ে হেলেন জাহাঙ্গীর একজন বহুল সমালোচিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত যিনি তার দীর্ঘ ফেইসবুক স্ট্যাটাটে কোথায় কিভাবে দাড়ি কমার ব্যবহার করতে হয় বা আদৌ করতে হয় কি না তাই জানেন না । তার পর ও অদৃশ্য কারনে তিনি আওয়ামীলীগের নারী বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামিলীগের উপদেষ্টা ও। অতি সম্প্রতি তার বিতর্ক কর্মকান্ডে জন্য তাকে আওয়ামীলীগের নারী বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামিলীগের উপদেষ্টা থেকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন। এই রাজনৈতিক সংগঠনটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য এর নাম "আওয়ামী লীগ" করা হয়। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ও অত্যাচার নির্যাতন সহ্যকরে ১৯৭১ এই রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে ই পৃথিবীর বুকে নতুন মানচিত্রের জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে প্রায় স্ব পরিবারে নৃশংস হত্যার পর আবার আওয়ামিলীগের জন্য শুরু হয় প্রতিকূল পরিবেশ। যদি মৃত্যুর আগে জাতির জনক ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং জাতীয় লীগ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামের একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠন করেন। যাই হউক জাতির জনকের মৃত্যুর পরে আওয়ামিলীগকে আবার ১৯৭১ পুর্ববর্তী ঐ প্রতিকূল অবস্হার মধ্যদিয়ে পার হতে হয়। কারন খন্দকার মোশতাক ও তার বিশেষ কিছু ই জাতির জনকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অধিষ্ঠিত হয়। আর এখনকার অনেক বাঘা বাঘা নেতা সেদিন শীত নিদ্রায় সময় পার করছিলেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বা জোহরা তাজউদ্দীনের মত কত জন সেদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে জীবন বাজী রেখে প্রতিবাদী হয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন? ১৭ মে ১৯৮১ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর ই বা কত জন সেদিন তার দিকে সহযোগিতার হাত বড়িয়েছেন? সেনাশাসকদের সাফারিসুট টেনে অনেকেই সেদিন মন্ত্রী এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন ও হয়েছেন। আজ সেই সুবিধা ভোগী অতিথি পাখিদের ভারে বঙ্গবন্ধু নৌকা আজ প্রায় ডুবতে বসেছে। যদি ও রাজনীতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। অথচ আজ সেই মুল নীতি থেকে অনেক পথ দুরে সরে গেছে বাংলাদেশের মুক্তির নেতৃত্ব দেওয়া সেই আওয়ামী লীগ। এক সময় যারা বঙ্গবন্ধু তার পরিবার ও আওয়ামী লীগের নাম শুনলেই নাকি গোসল করে আসতেন তারা আজ বঙ্গবন্ধুর আর্দশের নিবেদিত প্রান। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় নিজ সুবিধা রক্ষায় সবাই যেন আজ আওয়ামীলীগার। আওয়ামিলীগকে আজ এক শ্রেনী যেন ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত করেছে যার ইচ্ছে বিভিন্ন জোরে এখানে দোকান খুলে বসছে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। পুর্বের সরকার পরিচনায় বিএনপি ও এই বৃত্তের বাহিরে ছিল না। আজ বাংলাদেশের সাধারন মানুষের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের সম্পর্কে জন্ম নেওয়া বিরূপ ধারণা সত্যি কষ্টকর ও বেদনা দায়ক যা আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে গভীর অন্ধকার দিকে নিয়ে যাবে। তাই আমাদের রাজনৈতিক দলের আর্দশবান নেতৃত্বের উচিত যত দ্রুত সম্ভব তাদের দলের ভিতর সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চর্চার মাধ্যমে দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে দলকে জঞ্জাল মুক্ত করে দেশের মানুষের ভিতর রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জন্ম দেওয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:২৬
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: বোবার দেশে বোবা থাকাই উত্তম, নতুবা কথা বলার অপরাধে- প্রতিবন্ধী হিসাবে চিকিৎসা ণিতে হবে; আর সেই চিকিৎসা দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
আপনার ভাবনা তুলে ধরবার জন্য ধন্যবাদ।