![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৈয়দ মুজতবা আলীর কালজয়ী ছোটগল্প ‘পাদটীকা’ আমাদের সমাজের একটি চিরন্তন সত্যকে বড়ই নির্মমভাবে তুলে ধরেছিলেন। এই গল্পে শিক্ষক সমাজের আর্থিক ও সামাজিক বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছিলেন পন্ডিত মাশায়ের চরিত্রের মাধ্যমে। গল্পের পন্ডিত মশায় ছিলেন একটি স্কুলের সংস্কৃত ও বাংলা শিক্ষক, যার মাসিক বেতন ছিল মাত্র পঁচাশি টাকা। আর সেই একই সময় ব্রিটিশ লাট সাহেবের তিন পা ওয়ালা কুকুরের পিছনে মাসে খরচ হতো পঁচাত্তর টাকা। এ তুলনা শুধু একটি কুকুর ও এক শিক্ষকের নয় এটি ছিল সমাজের মূল্যবোধের প্রতিফলন যেখানে জ্ঞান ও মানবগঠনের কারিগরদের মর্যাদা সব সময়ই অবমূল্যায়িত হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় আজো তাদের মর্যাদা অবমূল্যায়িত হচ্ছ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি আমল পেরিয়ে দুই দুইবার স্বাধীনতা লাভের পরও এই দেশের মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ভাগ্যের কি সত্যিই কোন উন্নতি হয়েছে? আজে কি শিক্ষকরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারেন নাকি তারা এখনো সেই পুরনো “পাদটীকা”র চরিত্রেরই উত্তরসূরি?
বাংলাদেশ আজ তথ্যপ্রযুক্তি, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির গর্বে মুখর। সরকারের গদিতে যারাই বসে তাদের মুখেই কতই না উন্নয়নের গল্প আমাদের শুনতে হয়েছে। সবার মুখে একই কথা তারা দেশকে বদলে দিবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই বদলের সুফল উন্নয়নের সুফল কি আমাদের অবহেলিত শিক্ষক সমাজ কখনো পেয়েছেন? বর্তমানে একজন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী হাতে পান গড়ে ১৪,৬২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন, বিশেষ সুবিধা, বাড়ি ভাড়া (মাত্র ১০০০ টাকা) ও চিকিৎসা ভাতা (মাত্র ৫০০ টাকা) মিলিয়ে মোটামুটি এই অঙ্ক দাঁড়ায়। অথচ আজকের ঢাকায় এক রুমের বাসার ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার নিচে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয়, শিক্ষার খরচ এই সব যোগ করলে স্পষ্ট বোঝা যায় একজন শিক্ষক বাস্তব অর্থে দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি জীবনযাপন করছেন। এই অবস্থায় শিক্ষকরা যদি সামান্য বাড়ি ভাড়া ২০ শতাংশ ও স্বাস্থ্য ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি করেন তা তো কোনো ভাবেই বিলাসী দাবি নয় বরং এই দাবি অবশ্যই ন্যায্য সঙ্গত আমার মাতে শিক্ষকদের এই দাবি তার দ্বিগুণ করা ছিল যুক্তিসঙ্গত।
যেখানে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গের একজন শিক্ষকের মাসিক সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশী টাকার প্রয় দশ লাখ টাকা আর দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপে একজন শিক্ষকের সর্বনিম্ন বেতন বাংলাদেশী টাকার প্রয় এক লাখ টাকা সেখানে বাংলাদেশে একজন শিক্ষকের বেতন একাজন সাধারণ দিনমজুরের চেয়ে ও কম যা কোন ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহনযোগ্য নয়।
গত ১২ অক্টোবর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক সমাজ তাদের দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি করছিলেন। তখন পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরাতে গেলে ধস্তাধস্তি লাঠিচার্জ এমনকি সাউন্ড গ্রেনেড পর্যন্ত নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। যারা জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলেন যাদের হাতে রাষ্ট্রের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে সেই শিক্ষকদের উপরই রাষ্ট্রের বাহিনীর লাঠি ও বোমা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরা জাতীয় হিসেবে আমদের হীনমন্যতার ই পরিচয় বহন করে। আর ঘটনা আমাদের জন্য সত্যি লজ্জা ও দুঃখজনক। আন্দোলনরত শিক্ষকরা এই ঘটনার দিন অর্থাৎ ১২ অক্টোবর রাতে শহীদ মিনারে আশ্রয় নেন। রাতভর প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে, ব্যানার মাথার নিচে দিয়ে শিক্ষকরা কাটিয়েছেন ঘুমহীন রাত এমন কি তার পরের দিনও তারা শহীদ মিনারে অবস্থান করেন সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। শিক্ষকরা বলেন তাদের দাবি না মেনে প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচির পাশাপাশি সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলবে। এ যেন এক প্রতীকী চিত্র, যেখানে স্বাধীন দেশের শিক্ষকরা মুক্ত আকাশের নিচে অবস্থান নিচ্ছেন রাজপথে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অথচ তাদের কণ্ঠস্বর পৌঁছাচ্ছে না সরকারে কান পর্যন্ত । অন্যদিকে সারাদেশের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও ক্লাস নিচ্ছেন না। পাঠদান বন্ধ রেখে আন্দোলন চালাচ্ছেন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেসবুক পোস্টে। যেন গোটা জাতি আজ এক “শিক্ষাবিহীন” অবস্থায় আর এই শূন্যতার দায় কিন্তু পুরোটা ই বর্তায় সরকারের উপর। যদি ও শিক্ষকদের এই যৌক্তিক আন্দোলনকে অনেকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর পতিত আওয়ামী লীগ শিক্ষকদের আন্দোলনের মাঝে ভর করে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য ও মরনপন চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে শিক্ষক সমাজ সব সময়ই আন্দোলনমুখর থেকেছেন। আশির দশকের শেষে জাতীয়করণ দাবি, নব্বইয়ের দশকে বেতনবৈষম্য ও এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন, ২০১০ সালে নতুন বেতন কাঠামো প্রতিটি সময়ে শিক্ষকদের দাবি এসেছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া প্রায় এক বিলম্ব, অবহেলা, ও শেষে দমননীতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে শিক্ষক যেন অর্থনৈতিক বোঝা অথচ বাস্তবে শিক্ষকের অবদানই জাতির মেরুদণ্ড গঠন করে। আমরা বারবার বলি, শিক্ষক জাতির আলোকবর্তিকা কিন্তু সেই আলোকবর্তিকার হাতে আজ নিজস্ব বাতিও নেই জ্বালানোর। মাথাপিছু আয় , রিজার্ভ এই সব নিয়ে আমরা অনেক কেচ্ছা কাহিনী শুনেছি , সেতু ফ্লাইওভার এবং কি কর্ণফুলী টার্নেলের মত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবন হলে ও বাংলাদেশে শিক্ষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই। কিন্তু কোনো দেশ কেবল অবকাঠামো দিয়ে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। উন্নয়ন মানে মানবসম্পদ উন্নয়ন যার কেন্দ্রে শিক্ষক সমাজ। যখন একজন শিক্ষক আত্মমর্যাদা হারিয়ে ফেলেন, তখন তার শেখানো মূল্যবোধও ফিকে হয়ে যায়। শিক্ষক যদি হতাশ ও অর্থকষ্টে ভোগেন, তবে তিনি কীভাবে আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবেন? একজন শিক্ষক যার মাস শেষে বাসাভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হয়, যিনি সন্তানকে মানসম্মত স্কুলে পাঠাতে পারেন না, যিনি নিজের চিকিৎসার জন্য ছাত্রদের কাছে ধার চান তিনি জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখবেন কীভাবে?
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বৈষম্যগুলির একটি হলো সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য। সরকারি শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন, পেনশন, উৎসবভাতা ও মেডিকেল সুবিধা পান। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান সীমিত অনুদান, সামান্য ভাতা, এবং অবসরের পর অপ্রতুল গ্রাচুইটি। জাতীয় বেতন কাঠামো এক হলেও সুবিধাগুলির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য প্রকট। অথচ বেসরকারি শিক্ষকরা দেশের শিক্ষার বৃহত্তর অংশ সামলে রাখেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তাদের সংখ্যা সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।নএমন বৈষম্য একটি স্বাধীন দেশে নৈতিক ও সাংবিধানিক উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য। আর সবচেয়ে বড় কথা ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আর সেই লক্ষ্যেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশের সকল শ্রেনীর মানুষ সামিল হয়ে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে হঠাতে সক্ষম হয়েছিল।
আজ শিক্ষক শুধু বেতন নয়, মর্যাদার সংকটেও ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের অবাধ আচরণ, অভিভাবকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ, স্কুল ব্যবস্থাপনার রাজনীতি সব মিলিয়ে শিক্ষক পেশা আজ একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় পরিনত হয়েছে। আজ শিক্ষকতা পেশার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এর অন্যতম কারণ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের উদাসীনতা।
শিক্ষকদের দাবি পূরণ শুধু মানবিক বিষয় নয়, এটি একটি রাষ্ট্রনৈতিক দায়িত্ব। সরকার যদি সত্যিই “ নতুন বাংলাদেশ” গড়তে চায় তাহলে তার জন্য প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্হা। সেই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্হার জন্য প্রয়োজন আধুনিক শিক্ষক। আর আধুনিক শিক্ষক তো এমনই এমনই আসবে না তার জন্য প্রয়োজন হবে শিক্ষকদের মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সম্মানিত করা। আর শিক্ষকদের মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সম্মানিত করতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের বেতন ও ভাতা বর্তমান বাজারমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় হালনাগাদ করা। সেই সাথে বেসরকারি শিক্ষক পেনশন স্কিম চালু যাতে অবসরের পর ুকজন শিক্ষকের মানবিক মর্যাদা বজায় থাকে। একই সঙ্গে শিক্ষক মর্যাদা আইন প্রণয়ন করা যেই আইনে শিক্ষককে হেনস্তা, আঘাত বা অপমান করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পাদটীকা’ গল্পে পন্ডিত মশায়ের বঞ্চনা বেদনা আমাদের হাসিয়েছে, ব্যথিত করেছে সেই সাথে লজ্জিত ও করেছে। আর ভেতরে ভেতরে প্রশ্ন তুলেছে এই সমাজের সঠিক মূল্যবোধ আজ কোথায়? যদি আজকের দ্বিতীয় স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষ গড়ার কারিগরি শিক্ষকদের শহীদ মিনারের পাদদেশে রাত কাটাতে হয় রাজপথে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয় তবে স্পষ্ট বোঝা ফুটে ওঠে আমাদের শিক্ষকেরা আজো বৈষম্যের শিকার আজো অবহেলিত এখনো সৈয়দ মুজতবা আলীর পাদটীকার সমাজ থেকে আমরা খুব একটা এগুতে পারি নাই ।
২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪৩
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ব্লগাররা রাজপথে নামবে কবে? সারাদিন এত কষ্ট করে ব্লগিং করি আমাদেরও তো একটা গতি হওয়া দরকার।
৩| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৩৮
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
ঘুষ দিয়ে যেসব বানরেরা চাকুরী কিনে, তারা আবার কিসের মানুষ গড়ার কারিগর?
৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৬:০৫
আমি নই বলেছেন: তাদের দাবী আসলে খুবই সামান্য, আমার মনে হয় মেনে নেয়া উচিৎ।
তবে, একই সাথে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের মান কঠোর ভাবে যাচাই করা উচিৎ। আমি সিউর ভাল ভাবে মান যাচাই করলে অর্ধেক শিক্ষকও টিকবেনা।
৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:০৫
কামাল১৮ বলেছেন: স্কুলের শিক্ষকরা যদি পেটের চিন্তায় ব্যস্তথাকে তবে মনোযোগ দিয়ে পড়াবে কখন।
৬| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৫
কলাবাগান১ বলেছেন: " ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ছাত্রের চেয়ে ৮৭ হাজার ৮১৪ জন বেশি ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছাত্রের চেয়ে ৫ হাজার ৯৭ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।"
আর মেয়েদের পড়ালিখা বন্ধ করা তালিবানদের সাপোর্ট দেয় জামাতিরা ...তাদের আদলে দেশ চালাতে চায়। আফগানিস্হান অলরেডি ভিজিট করে এসেছে
৭| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: শিক্ষকদেরও সমস্যা আছে। তাই বিনা দ্বিধায় শিক্ষকদের দাবী মেনে নেওয়া যায় না।
৮| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:১৬
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: মানুষ কি আসলেই গড়া হচ্ছে?
৯| ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৩২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: টিচারদের দাবির সাথে একমত কিনতু এটাও খোজ নেয়া দরকার এমপিও কলেজে এইচএসসি পাশের হার কেমন ? পড়ার মান কেন দিনে দিনে খারাপ হয় ?