নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগুনের ধোঁয়ার আড়ালে কি লুকিয়ে আছে গভীর ষড়যন্ত্র?

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৪

মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে রাজধানীর মিরপুরের পোশাক শিল্প কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৬ জন নিহত হন। এরপর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকার অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে । এর রেশ না কাটতেই গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। একই দিনে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলী মোড়ে অবস্থিত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই সব ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদের ধ্বংস যেমন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি জন্ম দিয়েছে এক গভীর প্রশ্নের। সেই প্রশ্ন হলো এই ঘটনাগুলো কি নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি বৃহত্তর কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত? বিশেষত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ধারাবাহিক এসব অগ্নিকাণ্ড নতুন করে ভাবাচ্ছে সমগ্র জাতিকে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয় এক নতুন অধ্যায়। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত হয় প্রায় দুই হাজার মানুষ, আহত ও পঙ্গু হয় বিশ হাজারেরও বেশি। সেই আন্দোলনের প্রবল জোয়ারে পতিত হয় শেখ হাসিনার সরকার। পনের বছরের একচ্ছত্র ক্ষমতার মসনদ ছেড়ে বাংলাদেশের দীরতম ও ভয়ংকর স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে প্রভু নরেন্দ্র মোদির দেশ ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর অধিকাংশ মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, আমলা, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকে আশ্রয় নেয় ভারত আবার অনেকে ইউরোপ ও আমেরিকায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই একমাত্র ঘটনা যেখানে গনঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র প্রধান থেকে মসজিদের ইমাম ও পালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই আকস্মিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র এখনো শেখ হাসিনার শাসনকালের প্রভাবমুক্ত হয়নি। প্রশাসন, পুলিশ, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার ভেতরেও রয়ে গেছে পুরোনো দোসরদের জাল।

শেখ হাসিনার আমল ছিল বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের দীর্ঘতম কলো অধ্যায়। গণতন্ত্রহীন প্রশাসনিক একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও ক্ষমতা এক পরিবার ও দলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। এই সময়েই তৈরি হয় লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতির সাম্রাজ্য। ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি, মেগা প্রকল্পে কমিশন, ঠিকাদারি কারসাজি ও প্রবাসে অর্থপাচারের এক ভয়াবহ চক্র। এই অর্থের সিংহভাগ পাচার হয় বিদেশে। আজ শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের হাতে সেই অবৈধ সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাশকতা বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সময় ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অভূতপূর্ব প্রভাব বিস্তার করেছিল। সীমান্ত হত্যা, তিস্তা চুক্তি অমীমাংসিত থাকলেও, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পেয়েছিল জ্বালানি, অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধায় একচ্ছত্র প্রাধান্য। যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতার খুটি ও পাকাপোক্ত করেছে। হাসিনার পতনের পর সেই প্রভাব ধসে পড়ে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ কূটনীতি অনুসরণ করতে শুরু করে। এর ফলে দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে স্পষ্ট অস্বস্তি দেখা দেয়। যা ইতোমধ্যে আমার ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ও দেখেছি। ভারতের নরেন্দ্র মোদির পালিত বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিনিয়ত ই বাংলাদেশ বিরোধী নানা প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে সেই সাথে ভারতীয় সরকার ও । অনেক বিশ্লেষক ই মনে করেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ভিতর নানান অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি অন্যতম ইন্ধন জোগাচ্ছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। আর এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা র। ভারতের চিন্তা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে যে কোন ভাবে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারলে ভারত আবারও তার হারানো প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে । অতএব, ধারাবাহিক এই সকল অগ্নিকাণ্ডকে ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ও দেখাটা মোটেও ভুল হবে না । যেখানে ভারত বাংলাদেশকে নানান ভাবে চাপে রেখে নীতিগত ছাড় আদায়ের চেষ্টা চালাবে এটাই ভারতের এই মুহুর্তে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বর্তমান কূটনীতি ।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো প্রশাসনিক কাঠামো পুরোপুরি বদলাতে পারেনি। শেখ হাসিনার আমলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্ক আজও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়। রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলোয় তাদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ এবং রাষ্ট্র এখনো অনেকাংশে তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। ফলে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরেই দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা। অনেকের মতে, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে বসে থাকা শেখ হাসিনার দোসরদের পরিকল্পনাতেই ঘটছে এইসব অঘটন। এর ভয়াবহ ফলই আমরা দেখেছি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যেখানে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে দশ হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা দেশের অর্থনীতিতে এক বিরাট ধাক্কা।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, শাহজালাল বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অগ্নিকাণ্ডের সময়কাল ও প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এগুলো ঘটেছে এমন সময়ে যখন আদালতে শেখ হাসিনা ও তাঁর গুম-হত্যার সহযোগীদের বিচারের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে। সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক এই সময়েই দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শেখ হাসিনা, তাঁর দোসর ও বিদেশি মিত্ররা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ব্যাংক লুটের ঘটনার নায়ক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ সম্প্রতি দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই অর্থই দেশে নানান নাশকতার ঘটনায় ব্যবহার হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব কেবল সম্পদ ধ্বংস নয় এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীর আস্থা নষ্ট করে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই বাস্তবতাকেই ব্যবহার করছে রাষ্ট্রবিরোধী ও বিদেশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী।

বিমানবন্দরের আগুনে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত উৎস চিহ্নিত করা যায়নি। একটি বিশেষ মহল অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের শুরুতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বাঁধার সৃষ্টি করে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে ফায়ার সেফটি নীতিমালা উপেক্ষিত ছিল, অথচ তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। এসব প্রশ্ন এখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার সময়কার নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অনেকে এখনো প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। ফলে তদন্তের গতি ধীর, তথ্য বিভ্রান্তিকর, আর দায় নির্ধারণ অস্পষ্ট রয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনুসের সরকার গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আন্তরিক থাকলেও প্রশাসনিক বাস্তবতায় নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উপদেষ্টা পর্যায়ের অনেকে এক-এগারো সরকার বা শেখ হাসিনার আমলের সুবিধাভোগী ছিলেন। তৃণমূল আন্দোলনের প্রতিনিধিদের অনেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গা থেকে দূরে রয়েছেন। এই ব্যবধান ব্যবহার করছে পুরোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে এক ধরনের ‘দ্বৈত আনুগত্য’ যেখানে কেউ সরকারের আদেশ মানছে, আবার একই সঙ্গে নাশকতাকারীদের সঙ্গেও গোপন যোগাযোগ রাখছে বলে ও আমার মনে হয়। বর্তমান সময়ের ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড কেবল ভবনের আগুন নয় এটি রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা, জনগণের আস্থা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ওপরও আঘাত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ যখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার পথে এগোচ্ছে, তখনই নাশকতা, গুজব ও অগ্নিসন্ত্রাস মাথাচাড়া দিচ্ছে। এই ধারা যদি এখনই রোধ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিণতি দেখা দিতে পারে।

রাষ্ট্রের শত্রু শুধু সীমান্তের বাইরে নয়, প্রশাসনের ভেতরেও তাদের আস্তানা তৈরি হয়েছে। তাই প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাবশালী দোসরদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের অনুসন্ধান ও জব্দে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা জরুরি। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ছিল জনগণের রাষ্ট্রগঠনের অঙ্গীকার। সেই শক্তিকেই কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার—কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, জনগণের স্বার্থে। অগ্নিকাণ্ডের আগুন নিভে যেতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও প্রশাসনিক উদাসীনতার আগুন যদি জ্বলতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশ আবারও অনিশ্চয়তার গহ্বরে নেমে যাবে।

আজ দরকার সত্যিকারের জবাবদিহি যেখানে অপরাধী তার দল বা পরিচয়ে নয়, অপরাধের দায়ে বিচার পাবে। দরকার সাহসী রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব—যেখানে বিদেশি প্রভাব নয়, জনগণের স্বার্থই হবে নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রবিন্দু। যতদিন শেখ হাসিনার দোসরদের তৈরি অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক জাল সম্পূর্ণভাবে ভাঙা না যাবে, ততদিন দেশের ওপর থেকে এই আগুনের ধোঁয়া সরবে না। বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তে নেওয়া সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে—আমরা কি নতুন প্রভাতের পথে যাব, নাকি পুরোনো দোসরদের আঁধারে আবারও হারিয়ে যাব।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ২:৫৮

সুলাইমান হোসেন বলেছেন: সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.