![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
কালা মাহাবুব হত্যাকাণ্ড মামলা ধামাচাপা পড়ে গেছে এবং মাদক ব্যবসায় জামালের একক আধিপত্য অটুট রয়েছে। জামালের ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে কয়েক মাসে জামালের মধুকুঞ্জ তৈরীর কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জামাল কিছুটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আছে। জামাল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি বেলায়েত সাহেবের সঙ্গে তার দূরত্ব ক্রমাগতই বাড়ছিল শেষ পর্যন্ত বেলায়েত সাহেব বিষয়টা মন্ত্রী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা সাহেবকে অবহিত করায় তিনি দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দল রোধ করার জন্য দু’জনকে তাঁর বাসায় নিয়ে বসলেন। মাননীয় মন্ত্রী প্রথমে বেলায়েত সাহেব কে জিজ্ঞেস করলেন, বেলায়েত বলো তো কী হয়েছে?
বড় ভাই আপনি ইলেকশনে জিতার পর থেকে জামাল ব্যবসা বাণিজ্য, বিভিন্ন সংগঠনসহ যাবতীয় নের্তৃত্ব তার হস্তগত করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ঠিকাদারী কাজসহ সব ডিপার্টমেন্টের উপর চাপ প্রয়োগ করে সব ক্ষমতা একাই কুক্ষিগত করছে। সে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের জেনারেল সেক্রেটারি, মোটর মালিক সমিতির সভাপতি। মোটর মালিক সমিতির নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তখন সে আমাকে কথা দিয়েছে এর পরবর্তী যে কোন নির্বাচনে সে অংশ গ্রহণ করবে না। সামনে চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাচন তারপর পৌরসভার নির্বাচন এখন শুনছি সে চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তারপর পৌরসভার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে। তারমানে দিনে দিনে জেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য বজায় রাখতে চাচ্ছে। আমি আজ পনেরো বছর থেকে দলের জন্য কাজ করছি, কয়েকবার জেল-হাজত পর্যন্ত খেটেছি দলে আমার অবদান আপনার অজানা নাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি কী পেলাম? দলে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ নেতারা আজ কোণঠাসা। নতুন এবং স্বার্থান্বেষী তরুণরাই আজ দলের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দল জনগণের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা হারাবে নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হবে। কাজেই দলকে শক্তিশালী করা এবং ঐক্য ধরে রাখতে হলে দলের সকল ক্ষমতা বা নের্তৃত্বের বণ্টন থাকতে হবে, বলতে বলতে বেলায়েত সাহেব আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লেন।
মাননীয় মন্ত্রী বেলায়েত সাহেবকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, বেলায়েত আমি তোমার ক্ষোভের কথা শুনলাম, দলে তোমার কন্ট্রিবিউশন অনেক, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে তুমিও অনেক হয়রাণীর শিকার হয়েছ। আসলে এদিকে আরো আগে আমার মনোযোগ দেয়া উচিৎ ছিল, বলে তিনি জামালকে বললেন, জামাল রাজনীতির ক্ষেত্রেও অনেক শেখার আছে তুমি অল্প বয়সে রাজনীতিতে অনেকদূর এগিয়েছ তারপরও অভিজ্ঞতার অবশ্যই গুরুত্ব আছে। আমি পিছনের কথা তুলতে চাই না তবে সামনে দু’টা নির্বাচন একটা চেম্বার অফ কমার্স অপরটা পৌরসভা। এতদিন আমি তোমাকে পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিন্দন্দ্বিতা করার জন্য বলছিলাম এখন বলছি তুমি যদি চেম্বার অফ কমাসের্র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কর তবে পৌরসভা নির্বাচনে বেলায়েত অংশগ্রহণ করবে, তোমাকে যে কোন একটা ছাড় দিতে হবে।
বেলায়েত সাহেব আপত্তি করে বললেন, বড় ভাই আমি অনেক ছাড় দিয়েছি কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে আমি ছাড় দিতে রাজি নই। আমি জয়ী হই আর হেরেই যাই আমি পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
জামাল আড় চোখে একবার বেলায়েত সাহেবের দিকে তাকিয়ে মাথা নত করে বসে রইল।
মাননীয় মন্ত্রী একবার জামাল ও বেলায়েত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন দু’জনে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়াই উচিত মনে করে তিনি বললেন, আচ্ছা চেম্বার অফ কমার্সের নির্বাচন কবে?
জামাল বলল, আর দু’মাস পর।
আর পৌরসভার?
আরো দু’বছর পর।
আচ্ছা ঠিক আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আরো অনেক সময় আছে তোমরা দু’জনে বিষয়টা আমার উপর ছেড়ে দাও। তবে আজ তোমাদের একটা কথা দিতে হবে।
দু’জনে মাননীয় মন্ত্রীর দিকে তাকাল।
মাননীয় মন্ত্রী বললেন, তোমরা আজ আমাকে কথা দাও নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করবে না। বেলায়েত, জামাল আমাদের জুনিয়র কিন্তু জুনিয়র হলেও অল্প দিনে রাজনীতিতে সে বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে। আমাদের উচিৎ জামালকে স্নেহ করা এবং তার দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা। আর জামাল তুমি দলের জেনারেল সেক্রেটারি হলেই যে সিনিয়রদের উপেক্ষা করবে, অসম্মান করবে এটা হতে পারে না বলে তিনি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন, জামাল এখন থেকে বড়দের সম্মান করবে বেলায়েত তোমাকেও বলছি দলে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। চল এখন বিল্ডিংয়ের শুভ উদ্বোধন করে আসি, বলে জামাল বেলায়েতসহ মাননীয় মন্ত্রী বাসা থেকে বের হলেন।
ততক্ষণে স্কুলের মাঠ লোকে লোকারাণ্য হয়ে গেছে। সবাই তাদের প্রিয় নেতা এবং মাননীয় মন্ত্রীর কণ্ঠের বক্তৃতা শোনার জন্য উৎসুক হয়ে আছে। মাননীয় মন্ত্রীর গাড়ি দেখে মাইকে সহস্র কণ্ঠে ধবনিত হলো, মাননীয় মন্ত্রীর আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।
মাননীয় মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চের দিকে রওয়ানা হলেন। মাননীয় মন্ত্রীর গাড়ি থেকে মঞ্চ পর্যন্ত দু’পাশে স্কুলের ছাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ফুল দিয়ে মাননীয় মন্ত্রীকে স্বাগত জানাল। তিনি মঞ্চে গিয়ে উঠলেন। সামনের সারিতে মাননীয় মন্ত্রী জামাল, শাকিল বসল। পিছনের সারিতে কয়েকজন প্রবীণ নেতা ও মাননীয় মন্ত্রীর সেক্রেটারি আশরাফ সাহেব বসলেন। মিটিং শুরু হলো শুরুতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বক্তৃতা দিতে শুরু করল। মিটিং চলাকালীন সময়ে এলাকার বিভিন্ন জনগণ তাদের বিভিন্ন রকমের সমস্যা, কেউবা প্রতিষ্ঠানের অনুদান কেউবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত করার জন্য মঞ্চের নীচ থেকে উপরের দিকে দরখাস্ত তুলে ধরছেন। মাননীয় মন্ত্রী আবেদন পত্র গ্রহণ করে আবেদন পত্রের উপর নির্দেশ উল্লেখ করে পিছনের সারিতে বসা আশরাফ সাহেবের কাছে দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে জামাল বক্তৃতা দেয়া শুরু করল। আজকের সভার সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় মন্ত্রী, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের সকল নেতাকর্মী, স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আমার প্রাণপ্রিয় এলাকাবাসী আস্সালামুআলায়কুম। আজ আমাদের জন্য একটা আনন্দের দিন, এই স্কুলে কয়েকমাস আগেও সব ছাত্র-ছাত্রীরা একটা ভাঙ্গা টিনের ঘরে তীব্র গরমে এক অসহনীয় পরিবেশে লেখাপড়া করত। লেখাপড়ার পরিবেশ উন্নত না হলে লেখাপড়ার মান উন্নত হয় না। একথা বুঝতে পেরে মাননীয় মন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকা বিল্ডিং নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন এবং কয়েকটা কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। আমি মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই তাঁর এই শুভ উদ্যোগের জন্য। শুধু স্কুল কলেজে বিল্ডিং নির্মাণ নয়, মাননীয় মন্ত্রী রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ এলাকার ব্যাপক উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা দেখেছেন গত কয়েক বছর যাবত আমাদের এলাকার যা উন্নতি হয়নি গত দু’বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি উন্নতি হয়েছে। এটা হয়েছে শুধু আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা এবং মাননীয় মন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে। আমার অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে এবং আপনারা অনেকক্ষণ যাবত মাননীয় মন্ত্রীর বক্তৃতা শোনার জন্য অপেক্ষায় আছেন তাই সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি।
জামালের বক্তৃতার পর পরই মাননীয় মন্ত্রী বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন তিনিও তাঁর বক্তৃতায় সবাইকে সালাম জানিয়ে বলতে শুরু করলেন, আপনাদের অনেকের হয়ত মনে আছে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এই মাঠে দাঁড়িয়ে আমি পাকা বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবস্থা করব বলেছিলাম। আপনাদের ভোটে আমি এম.পি নির্বাচিত হয়েছি এবং অবহেলিত এলাকা হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, শুধু তাই নয় আমি এই জেলার ডিস্ট্রিক্ট মিনিস্টার। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আমাকে জেলার সমস্ত উন্নয়ন দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা দেখেছেন আমাদের দেশ পরিচালনা শুরু করার মাত্র দুঞ্চবছর হয়েছে। এই দু’বছরে দেশে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। দেশে দারিদ্রের হার কমেছে। মানুষের হাতে কাজ আছে, পকেটে টাকা আছে। কয়েক বছর আগে দেশে দারিদ্রের যে চিত্র দেখা যেত আজ আর সে রকম চিত্র দেখা যায় না। যেসব রাস্তায় বর্ষাকালে যাতায়াত করা যেত না সেগুলো রাস্তা পাকা করা হয়েছে। যেসব স্কুলে কাঁচা ঘর ছিল পর্যায়ক্রমে সে সব স্কুলে পাকা বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয় দেশে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা পেলে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আপনারা জানেন উন্নয়নের এ ধারা ব্যাহত করার জন্য একটা চিহ্নিত গোষ্ঠী সর্বদাই তৎপর রয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আপনারা সচেতন থাকবেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের সঙ্গে থাকবেন। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবো। আপনারা সবাই জানেন গত দু’বছরে আপনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে আমার কাছে এসেছেন আর আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার দরজা আপনাদের জন্য সব সময় খোলা থাকবে। এমনসময় হাত তালি দিয়ে সবাই তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানালেন।
মাননীয় মন্ত্রী আবার বলতে শুরু করলেন। আজ আমি বলছি আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন আমরা যদি আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই তবে এই স্কুলের পাশে একটা কলেজ স্থাপন করব। আপনাদের ছেলে-মেয়েদের যেন আর দূর-দূরান্তের কলেজে লেখাপড়া করতে যেতে না হয়। এই বলে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
সমবেত জনতা শ্লোগান দিল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দল, জিন্দাবাদ।
চলবে...
গডফাদার-০১
প্রিয়ন্তী-০১
দাগ-০১
খুঁজে ফিরি তারে-০১
©somewhere in net ltd.