নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান

আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গডফাদার-৭৭

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২৮

এতদিন সন্তান গর্ভে ধারণ করে অনন্যা আজকের এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিল। তার মনের মধ্যে সব সময় একটা ফুটফুটে সন্তানের ছবি ভেসে উঠছিল। অনন্যা কেবলই ভাবত তার মাতৃত্ব পূর্ণতা লাভ করছে। আজ সেই দিন সেই মুহূর্ত যখন এলো তখন তার আর আনন্দের সীমা রইল না। পুত্র সন্তানের মুখ দেখেই সে যেন আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করল মনে মনে ভাবল এতদিনের বিবাহিত জীবনে তার মনে হয় শুধু একদিনই জামাল তাকে ভালোবেসেছিল যেদিন জামালকে তার গর্ভে নতুন অতিথির আগমণের কথা বলেছিল। আজ প্র্রসব বেদনা শুরু হওয়ার কথা শুনেই জামাল সমস্ত কাজ ছেড়ে অনন্যাকে শহরের একটা অত্যাধুনিক ক্লিনিকে ভর্তি করে দিয়েছে। একটু পরেই জামাল আবার আসবে সন্তানের মুখ দেখেই হয়ত হাতে স্বর্গ পাবে তাকে ভালোবাসবে পাগলের মতো।

জামাল কেবিনে ঢুকে ছেলেকে কোলে নিয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।

অনন্যা বলল, একটু সাবধানে, ছোট বাচ্চা তুমি যেভাবে আদর করছ ব্যাথা পাবে তো।

না পাবে না, কিচ্ছু হবে না, আমার ছেলে আজ থেকে ওর হাড় মাংস সব কিছু আমি শক্ত করে গড়ে তুলব।

ছেলে হতে না হতেই স্বপ্ন দেখা শুরু করলে?

হ্যাঁ ছেলে হয়েছে শুধু স্বপ্ন দেখব কেন? আমার শ্রম, মেধা, বিষয়-সম্পত্তি সবই তো ওর জন্য, আজ থেকে ওর জন্য নতুন করে ভাবতে হবে।

অনন্যা বিনয়ের সাথে বলল, তুমি একটু আমার পাশে বসো।

জামাল নবাগত শিশুর গালে চুমু দিয়ে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর অনন্যার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অনন্যা আবেগে কয়েক মুহূর্ত চোখ বুজে রইল। জামালের ভালবাসায় সে যেন আজ স্বর্গের সুখ পেল। অনন্যা জামালের মাদক ব্যবসা, ব্যাংক জালিয়াতি, নারী কেলেঙ্কারী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সবকিছু জানে। এমন একজন সমাজের ঘৃণ্য মানুষের মনেও যে ভালবাসা থাকতে পারে অনন্যার যেন ভাবতেও অবাক লাগে। জামালের সমস্ত অতীত অপকর্ম যেন অনন্যার কাছে মিথ্যা মনে হলো। তার মনে হলো জামালের মনে কোন পাপ নাই সে একজন আদর্শ স্বামী, একজন আদর্শ পিতা।

অনন্যা জামালের একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করব, রাখবে?

বলো।

তুমি যেমন তোমার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছ তেমনি তোমার বাবা-মাও তো তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল, তাই না?

জামাল চুপ করে রইল।

অনন্যা বলল, তোমাকে না জানিয়ে আমি আব্বা-আম্মাকে খবর দিয়েছি, হয়ত এখনি এসে পড়বেন। তাঁরা না আসা পর্যন্ত তুমি একটু বসো।

না আমি বাবার সঙ্গে দেখা করব না অনন্যা আমি বরং আসি, বলে জামাল অনন্যাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল। জামাল যাবার কয়েক মিনিট পর জহির সাহেব ও ফাহমিদা এলেন সঙ্গে বড় একটা প্যাকেট।

ফাহমিদা অনন্যার মাথার কাছে বসলেন, জহির সাহেব একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন।

জহির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, বউমা কি নাম রেখেছ আমার দাদু ভাই’র?

আমরা কেন নাম রাখব বাবা? নাম তো রাখবেন আপনি।

ফাহমিদা বললেন, আমি ওর নাম রাখব।

জহির সাহেব বললেন, তোমার যা বিদ্যার দৌড়, তুমি রাখবে ওর নাম?

ফাহমিদা অয়নকে কোলে নিয়ে আদর দিতে দিতে বললেন, তুমি যা-ই বলো না কেন? আমি ওর নাম রাখলাম অয়ন, দাদু ভাই একটু হাস তো, আমার লক্ষ্মী সোনা।

জহির সাহেব দেখে মৃদু হাসলেন।

ফাহমিদা অয়নকে জহির সাহেবের কোলে দিয়ে বললেন, নাও, দাদু ভাইকে কোলে নাও, দেখ একেবারে তোমার মতো হয়েছে।

জহির সাহেব অয়নকে কোলে নিয়ে তার মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন। তার মনের মধ্যে জামালের ছবি ভেসে উঠল তিনি এমনিভাবে জামালকে কোলে নিয়ে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন। জামাল বড় হয়নি, প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন না। জামাল অনেক বড় হয়েছে এই শহরের প্রথম সারির একজন নেতা হয়েছে। তার নামে এখন সবকিছু চলে। শহরের মাদক ব্যবসা পরিচালনা, চাঁদাবাজী, বিভিন্ন অফিসের অফিসারদের উপর প্রভাব খাটিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা। জামাল অনেক বড় হয়েছে যেমনটা তিনি প্রত্যাশা করেননি। ভাবতে ভাবতে তাঁর দু’চোখ সজল হয়ে উঠল। তিনি অয়নের কপালে চুমু দিয়ে বললেন অনেক বড় হও দাদু। বিদ্যা সাগর হও, অনেক বড় জ্ঞানী হও। আকাশ ছুঁয়ে দেখ, বলতে বলতে জহির সাহেবের কন্ঠস্বর বুজে এলো। তিনি অয়নকে ফাহমিদার কোলে দিয়ে বললেন, নাও ফাহমিদা।

ফাহমিদা প্যাকেট থেকে বের করে একসেট জামা পরিয়ে দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ছেলেকে দেখে জামাল কী বলল বউমা? খুশি হয়েছ তো?

জি মা ও খুব খুশি হয়েছে।

বউমা জামাল কি এখনো দেরিতে বাসায় ফিরে? খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করে?

অনন্যা মলিন মুখে বললেন, না মা ও এখন অনেকটা ভালো হয়েছে।

জহির সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, বউমা আমি জামালকে ঘৃণা করি, কিন্তু তোমাকে খুব স্নেহ করি।

অনন্যা পূর্বের মতোই বলল, আমি জানি বাবা।

বউমা তুমি মিথ্যা কথা বললে।

অনন্যা অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলল, আমার ভুল হয়েছে বাবা।

জহির সাহেব শাসনের সুরে বললেন, বউমা আর কোনদিন মিথ্যা কথা বলবে না।

বলব না বাবা।

ফাহমিদা বললেন, তুমি সব সময় এমন কথা বল না তো, জামাল এখন ছেলের বাপ হয়েছে এখন সব ঠিক হয়ে যাবে।

জহির সাহেব রাগান্বিত স্বরে বললেন, ফাহমিদা চলো।

ফাহমিদা প্যাকেট থেকে একটা একটা করে কসমেটিক্স, জামা-জুতা এবং একটা স্বর্ণের চেইন বের করে অয়নের গলায় পরিয়ে দিলেন।

জহির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, বউমা বিহাই-বিহাইনকে খবর দিয়েছ?

জি বাবা।

বিহাই বিহাইন এলে একবার আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিও।

ঠিক আছে বাবা।

ফাহমিদা বললেন, বউমা আমার দাদু ভাইকে যেন ঠান্ডা না লাগে তুমি খাবার-দাবারের নিয়ম কানুন মেনে চলবে, আমার দাদু ভাই’র যেন কোন কষ্ট না হয়।

জহির সাহেব বললেন, বউমা আমরা আসি।

অনন্যা চোখ মুছে বলল, বাবা।

বলো বউমা।

বাবা আমি, অয়ন আপনার কাছে কি কোন দোষ করেছি?

একথা কেন বলছ বউমা?

বাবা আপনি অনুমতি দিলে আমি অয়নকে একবার আপনার বাড়ি দেখাতে নিয়ে যাব।

জহির সাহেব আর চোখে পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি অনন্যার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, লক্ষ্মী বউমা আমার, তুমি এসো বউমা, যখন মন চাইবে তখনই এসো।

জহির সাহেব ও ফাহমিদা বের হয়ে গেলেন।

চলবে...

গডফাদার-০১

প্রিয়ন্তী-০১

দাগ-০১

খুঁজে ফিরি তারে-০১

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.