নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান

আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গডফাদার-৮০

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৯

সকালবেলা পত্রিকার পাতা খুলতেই জামালের মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে কখনো ভাবতেও পারেনি কোন সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় নিউজ করার সাহস পাবে। অথচ তার চোখের সামনে বড় বড় অক্ষরে ভাসছে তাকে নিয়ে লেখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ’’মাদকের নেশায় ভাসছে শহর, নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ।’’ সর্বনাশা মাদকের নেশায় শুধুমাত্র শহর নয় উপজেলা শহরসহ গ্রাম-গঞ্জের যুব সমাজও আসক্ত হয়ে পড়ছে। শুধু যুব সমাজ নয় ক্রমে ক্রমে কিশোর-কিশোরী তরুণ-তরুণীরাও আসক্ত হচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরাও নেশার ছোবল থেকে মুক্ত নয়। শহরের বিভিন্ন মহল্লায় ফেন্সি কুইনরা খালা বা নানী সম্বোধনে মাদকাসক্তদের কাছে পরিচিত। শহরের প্রায় পঞ্চাশটি স্পটে এক ধরণের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অবাধে মাদক দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। মাদক দ্রব্য বহনের কাজে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে মাদকদ্রব্য বহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এ্যাম্বুল্যান্স।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে ক্ষমাতসীন দলের একজন রাজনৈতিক নেতা যার প্রথম অক্ষর ’জ’ তিনি তাঁর নিজস্ব যানবাহন ও কর্মচারীর দ্বারা মাদক ব্যবসা করছেন। পুলিশ প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থাকে মাসোহারা দিয়ে অথবা সৎ ও নীতিমান কর্মকর্তাদের অনত্র বদলি করে তিনি তার ব্যবসার পথকে নিষ্কণ্টক করেছেন। ফলে তার ব্যবসার পথে আর কোন কাঁটা নেই। উল্লেখ্য যে, মাত্র কয়েক বছর আগে তিনি সামান্য কয়েক লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তিনি কোটিপতি। টাকার জোরে তিনি শহরের সমস্ত সংগঠনের নেতা ও জনসেবার নাম করে লোক চক্ষুর আড়ালে অগণিত অর্থের মালিক হওয়ার জন্য কোমল মতি কিশোর-কিশোরীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইনের মতো বিষাক্ত মাদক, শুধু তাই নয় এমন কোন কাজ নাই যা তিনি পারেন না। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ব্যাংক জালিয়াতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ সবকিছুতেই তিনি যেন সিদ্ধ হস্ত। তার আছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা কুকর্মের বিরুদ্ধাচরণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে তার প্রতিপক্ষ দলের লালিত বাহিনীর প্রধান অথচ তদন্ত কিংবা বিচার আজো হয়নি, বিচার হয়নি হিটলার হত্যাকাণ্ডের। সবকিছুর পিছনে সেই রাজনৈতিক নেতার শক্তিশালী অদৃশ্য হাত রয়েছে। তিনি শহরের এবং দলের একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের পর শহরের একমাত্র গড ফাদারে পরিণত হয়েছেন। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে মাদকের হিংস্র ছোবল থেকে যুব সমাজ তথা সমাজের অবক্ষয় ঠেকানো সহজ হবে।

খবরটা পড়ে জামাল হিংস্র বাঘের মতো লাফিয়ে উঠল। একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তার চেম্বারের মধ্যে পায়চারী করতে থাকল। তারপর জামাল ড্রয়ার থেকে অন্য একটা মোবাইল সেট বের করে গাল পোড়া সেলিমকে মোবাইল করল।

বস।

সেলিম তুমি কোথায়?

জি বস শহরেই আছি।

জামাল জিজ্ঞেস করল, তুমি কি দৈনিক সাহসী কণ্ঠ পেপারের সাংবাদিককে চেনো?

জি বস।

তুমি কি জানো সে আমার বিরুদ্ধে একটা নিউজ করেছে?

জানি না বস।

যে হাত দিয়ে সে আমার বিরুদ্ধে নিউজ লিখেছে তার সে হাতটা আমি কেটে দিতে চাই। আজ সন্ধ্যার মধ্যে তুমি ঐ হারামজাদাকে খুঁজে বের করে মধুকুঞ্জে নিয়ে এসো, ওর নিউজ লিখার হাতটা কেটে আমি মধুকুঞ্জের টর্চার সেল উদ্বোধন করব, বলে জামাল মোবাইল অফ করল।

রাত আটটার সময় জামাল অফিস থেকে বের হয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে মধুকুঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। মধুকুঞ্জের চারিদিকে অন্ধকার আশে-পাশে দরিদ্র মানুষের বসবাস, দু’একটা বাড়িতে বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে। গাঢ় অন্ধকার, আমাবস্যার রাত মধুকুঞ্জের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে জামাল চারিদিকে একবার তাকাল, অন্ধকার নেমেছে। জামাল বারান্দায় কিছুক্ষণ পায়চারী করল। এভাবে পায়চারী করতে করতে প্রায় দু’ঘণ্টা কেটে গেল। তবুও সেলিম না আসায় জামাল সামনের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আরো কয়েক মিনিট পর দু’টা মোটর সাইকেল এসে দাঁড়াল।

জামাল দোতলা থেকে নীচে নেমে এলো।

মোটর সাইকেলের মাঝখানে বসা একজনের দু’চোখ বাঁধা, জামাল বুঝতে পারল এই সেই সাংবাদিক। জামাল সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল, সেলিম সাংবাদিক সাহেবকে আমার পিছনে পিছনে নিয়ে এসো। সম্মানের সাথে নিয়ে এসো, বুদ্ধিজীবী মানুষ দেশের সম্পদ।

জি বস, বলে সেলিম সাংবাদিক সাহেবকে নিয়ে জামালের পিছনে পিছনে সুড়ঙ্গে চলে গেল। সুড়ঙ্গের ছোট রুমটাতে সেলিম সাংবাদিক সাহেবকে নিয়ে গেল। রুমে আগে থেকেই একটা হাতল চেয়ার রাখা ছিল। সেলিম সাংবাদিক সাহেবকে চোখ বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসিয়ে চেয়ারের হাতলের সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধল।

জামাল গম্ভীরস্বরে বলল, সেলিম সাংবাদিক সাহেবের চোখ খুলে দাও।

সেলিম সাংবাদিক সাহেবের চোখ খুলে দিল। সাংবাদিক সাহেবের থুতনি উঁচু করে ধরে জামাল বলল, আপনার নাম কি যেন সাংবাদিক সাহেব?

সাংবাদিক সাহেবের সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল, তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। তিনি কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আব্দুস সালাম।

সালাম সাহেব বলুন তো আপনার নিউজে গড ফাদার নামে যাকে উল্লেখ করেছেন, আপনার সেই অদ্যাক্ষরের ’জ’ লোকটা কে?

সালাম সাহেব কোন কথা বললেন না মাথা নত করে বসে রইলেন।

জামাল প্রচণ্ড গর্জন করে বলল, বল মাগীর বাচ্চা, কথা বল।

জামাল বলল, তোর বাপের সামনে নাম উচ্চারণ করতে ভয় করছে, তাই না? লিখার সময় তো ভয় পাসনি। তোর লিখাটা বেশ অনুসন্ধানী এবং গবেষণামূলক হয়েছে। তাই তোর হাতের লিখা কেমন সুন্দর দেখার আমার ইচ্ছা করছে, বলে জামাল বলল, লিখ, বেটা তোর নামটা লিখ।

সালাম সাহেব পকেট থেকে ছোট্ট একটা প্যাডের পাতা বের করে তাঁর নামটা লিখলেন।

জামাল লেখাটা হাতে নিয়ে বলল, এটা তো ডান হাত দিয়ে লিখলি। এবার বাম হাত দিয়ে লিখ।

সালাম সাহেব বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আমি তো বাম হাত দিয়ে লিখতে পারিনা।

জামাল দাঁত কড়মড় করে বলল, সেলিম এই মাগীর বাচ্চার ডান হাতটা কেটে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখ।

সালাম সাহেব চমকে উঠলেন, তাঁর চোখে-মুখে আতঙ্ক এবং কথাবার্তায় জড়তা সৃষ্টি হলো, জামাল ভাই প্লিজ আমাকে এবারের মতো মাফ করে দিন।

জামাল সালাম সাহেবের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল, চুপ, মাফ করলাম বলেই তো এবারের মতো জানে মারলাম না, শুধু তোর লেখার হাতটা কেটে নিলাম, একথা কেউ জানলে জানে মেরে ফেলব?

সালাম সাহেবের দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। তিনি অসহায়ের মতো ফ্যাল্‌ ফ্যাল্‌ করে জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

জামাল গর্জন করে উঠল, সেলিম, অ্যাকশন কুইক।

সালাম সাহেব কান্নার সুরে বললেন, জামাল ভাই প্লিজ আমাকে এবারে মতো মাফ করে দিন।

ততক্ষণে গালপোড়া সেলিম একটা ধারলো দা বের করে সালাম সাহেবের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

জামাল গম্ভীর স্বরে বলল, সেলিম।

সেলিমের একজন সঙ্গী সালাম সাহেবের হাত টেনে ধরল, সেলিম দায়ের কোপে সালাম সাহেবের কব্জি কেটে ফেলল।

সালাম সাহেব যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন।

জামাল সালাম সাহেবের হাতের কব্জি নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ল। তারপর বলল, সাংবাদিক সাহেবের চোখ বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসো।

জি বস, বলে সেলিম সালাম সাহেবের চোখ বেঁধে তাঁকে সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে নিয়ে গেল।

চলবে...

গডফাদার-০১

প্রিয়ন্তী-০১

দাগ-০১

খুঁজে ফিরি তারে-০১

http://www.writerzillur.com

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪১

জেরিফ বিন্ আমির বলেছেন:
আপনি মনে হয় এই ব্লগে গডফাদার আর লিখবেননা। প্রবলেম নাই .. আমরাও আপনার ওয়েভ সাইটে গিয়ে পড়লামনা.. X((

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৬

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান বলেছেন: দু:খিত। আসলে গডফাদার এই ব্লগে দিবো না এমন কথা কোনোদিন বলিনি। আমার মনে হয়েছিলো গডফাদারের প্রতি আগ্রহ নেই। আপনাকে পেয়েছি আমি একজন পাঠককেও নিরাশ করি না। আবার গডফাদার চালু হবে। রূপার বিয়ে পোস্ট শেষ হওয়ার পরই। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.