![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
জামালের বেঁধে দেয়া সাতদিন সময়ের মধ্যে পাঁচ দিন অতিক্রান্ত হলো কিন্তু গাল পোড়া সেলিম রায়হান চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে না পারায় জামাল কিছুটা নিরাশ হলো এবং মোবাইলে গালপোড়া সেলিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করল। গালপোড়া সেলিম মৃদু প্রতিবাদ করে বলল, বস আরো দুদিন বাকি আছে আপনি দেখবেন আজকের মধ্যে ঐ বেটাকে আমি ট্রান্সফার করে দিব। আমি কথা দিচ্ছি রায়হান চেয়ারম্যানকে ট্রান্সফার করে তারপর আপনার সামনে আসব।
গালপোড়া সেলিমের দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা শুনে জামাল বলল, হ্যাঁ আমিও তাই চাই, টাকা রেডি আছে অপারেশন সাসকেসফুল হওয়া মাত্র পাবে।
জামালের বাসার অদূরে অতি সম্প্রতি একটা ক্লাব হয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের নিকট থেকে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য মহল্লায় মহল্লায় এমনি অসংখ্য ক্লাব হয়ে থাকে। নির্বাচনের পর আবার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। জামাল তার মোটর সাইকেলে শাকিলকে নিয়ে প্রথমে সেই ক্লাবে গেল তখন ক্লাবে কয়েকজন উঠতি বয়সের তরুণ বসে তাস খেলছিল। জামালকে দেখে তারা তাড়াহুড়া করে তাস লুকিয়ে ফেলল। জামাল প্রথমে সকলের নাম শুনল, একে একে সবাই নাম বলল।
জামাল জিজ্ঞেস করল, তোমাদের ক্লাবের সভাপতি কে?
জি ভাই আমি সভাপতি।
আর সেক্রেটারি?
আরেকজন তরুণ দাঁড়িয়ে বলল, আমি।
তোমরা সবাই তো আমাকে চেনো তাই না?
সবাই মাথা বাঁকিয়ে সায় দিল তারা চিনে।
আসলে গত পৌরসভার নির্বাচনে হেরে যাবার পর আমার পৌরসভায় চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছাটা একেবারেই ছিল না। জনগণের দাবি বুঝলে তো, পলিটিক্স করলে আসলে জনগণের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না। তাই দাঁড়ালাম আর কি। তোমরা আমাকে ভোট দিবে তো?
ক্লাবের সবাই পরস্পরের মুখের দিকে তাকাল।
শাহেদ আমতা আমতা করে বলল, জি ভাই।
দেখ এভাবে বললে হবে না। আর শুধু ভোট দিলেও হবে না। কাজ করতে হবে, এই ধর আমি যদি চেয়ারম্যান হই তোমাদের যে কোন প্রয়োজনে, যে কোন সমস্যায় সরাসরি আমার কাছে চলে আসতে পারবে। যেটা এখন হয়ত তোমরা পার না। দেখবে তোমরা যে কোন সমস্যায় আমাকে পাবে। তাছাড়া তোমরা তো জানো আমি পাওয়ার পার্টির জেলা শাখার জেনারেল সেক্রেটারি আমার সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পর্ক খুব ভালো। পৌরসভার উন্নয়নে পৌরসভার চেয়ারম্যান পাওয়ার পার্টির হওয়া উচিত।
ক্লাবের অনেক সদস্য জামালের কথায় সম্মতি দিল।
জামাল বলল, আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমরা যদি সম্মতি দাও তবে এই ক্লাব ঘরটা নির্বাচনী অফিস হিসাবে ব্যবহার করব অবশ্য সে জন্য তোমরা ভাড়া এবং অফিস খরচ হিসেবে দৈনিক টাকা পাবে।
শাহেদ ও হানিফের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। জামাল ক্লাবের সদস্যদের দিকে খেয়াল করল। সকলের চোখে-মুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠল।
জামাল তার পকেট থেকে টাকা বের করে শাহেদের হাতে দিয়ে বলল, তাহলে এ কথাই থাকল কাল থেকে তোমরা কাজে লেগে যাও প্রতিদিন তোমাদের এখানে আমার কর্মীদের কেউ টাকা, পোস্টার এসব দিয়ে যাবে। তোমরা তাহলে থাক। আমার অনেক কাজ তবুও তোমরা যে কোন প্রয়োজনে এলে খুশি হব বলে জামাল ও শাকিল ক্লাব থেকে বের হলো।
নির্বাচনে জামালের মার্কা গরুগাড়ি, রায়হান সাহেবের মার্কা ছাতা। জামাল ক্লাব থেকে বেরিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে কিছুদূর যেতেই তার চোখে পড়ল রাস্তার পাশে, বাড়ির দেয়ালে, সব স্থানে শুধু ছাতা মার্কার পোস্টার মাঝে মাঝে দু’য়েকটা গরুগাড়ি। জামালের মনটা খারাপ হয়ে গেল। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর বিশাল বাউন্ডারি ওয়াল ঘেরা একটা বাড়ির গেটে কয়েকটা ছাতা মার্কার পোস্টার দেখে জামাল মোটর সাইকেল দাঁড় করিয়ে কলিং বেল এ টিপ দিল।
কয়েক মিনিট পর বারো-তেরো বছর বয়সের একটা ছেলে দরজা খুলে দিল।
জামাল জিজ্ঞেস করল, কায়েস চাচা বাসায় আছেন?
জি আছেন, আপনারা ভিতরে আসেন।
জামাল ও শাকিল ভিতরে ঢুকলো।
কায়েস সাহেব বারান্দায় এসে বললেন, জামাল এসো বাবা।
জামাল ও শাকিল কায়েস সাহেবের ড্রয়িং রুমে বসল।
জামাল প্রথমে কথা বলতে শুরু করল, চাচা আপনি জানেন আমি পৌরসভার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি, আমার মার্কা গরুগাড়ি।
কায়েস সাহেব কোন কথা না বলে নীরবে বসে রইলেন।
জামাল বুঝতে পারল কায়েস সাহেব ছাতা মার্কার সমর্থক তাকে ম্যানেজ করতে সময় লাগবে।
জামাল আবার বলতে শুরু করল, চাচা রায়হান চেয়ারম্যান কয়েকবার থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন ফলে তাঁর চেয়ে যে অন্য কেউ বেশি উন্নয়ন ও পৌরসভাবাসীর সেবা করতে পারে সেটা আপনারা বুঝতে পারেননি। আমি পাওয়ার পার্টির সেক্রেটারি এবং মন্ত্রীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। রায়হান চেয়ারম্যান সাহেবকে দিয়ে যে উন্নয়ন সম্ভব হয়নি আমাকে দিয়ে তা সম্ভব।
কায়েস সাহেব সবকিছু শুনেও কিছু বললেন না, তিনি ড্রয়িং রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। কায়েক মিনিট পর তিনি ফিরে এলেন সঙ্গে কাজের মেয়ে চা-নাস্তা নিয়ে এলো।
কায়েস সাহেব বললেন, নাও বাবা আগে চা খাও।
চাচা চা খাব ঠিক আছে কিন্তু তার আগে আমার কিছু কথা আছে।
খাও বাবা চা খেতে খেতেও কথা বলা যাবে।
জামাল চা খেতে খেতে বলতে শুরু করল, চাচা আপনি আমার বাবার বন্ধু, আমি আপনার ছেলের মতো আমি আপনার ছেলে হলে আমাকে ভোট দিতেন না? আমার ভোটের জন্য কাজ করতেন না?
কায়েস সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, জামাল বলতে গেলে তো অনেক কথাই বলতে হয়।
জামাল বিনয়ের সুরে বলল, জি চাচা বলুন।
তুমি নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে কি তোমার বাবার কাছে গিয়েছিলে?
জি গিয়েছিলাম।
তোমার বাবা কি তোমাকে ভোট দিবে?
জামাল আমতা আমতা করে বলল, হ্যাঁ বাবা তো আমাকে অবশ্যই ভোট দিবে।
তোমার বাবা কি তোমার পক্ষে ভোটের ক্যানভাস করছে?
জামাল কোন উত্তর না দিয়ে নীরবে বসে রইল।
কায়েস সাহেব বললেন, দেখ বাবা আমি যতটুকু জানি তোমার বাবার সঙ্গে তোমার ভাল সম্পর্ক না বলে তোমার পক্ষে ভোটের জন্য ক্যানভাস করছে না।
জামাল যেমন নীরবে বসে ছিল তেমনি নীরবে বসে রইল।
কায়েস সাহেব বলতে শুরু করলেন, দেখ বাবা তুমি তোমার বাবা-মাঞ্চর সেবা কর না, তুমি কিভাবে আমাদের সেবা করার সুযোগ চাও?
জামালের মুখে কালো মেঘের ছায়া নেমে এলো। সে কায়েস সাহেবের কথার কোন উত্তর দিতে পারল না।
কায়েস সাহেব আশ্বাস দিয়ে বললেন, তোমাকে আমি ভোট দিব না এমন কথা বলছি না, তোমার বাবা যদি তোমাকে ভোট দেয়ার জন্য বলে তবে আমি তোমাকে ভোট দিব, তা না হলে আমি ছাতা মার্কায় ভোট দিব। আমার মনে হয় এটা শুধু আমার কথা না অনেকে তোমাকে এ প্রশ্ন করতেই পারে। তাছাড়া তোমার বাবাকে সারা শহরের মানুষ একজন সৎ এবং ভালো মানুষ বলে জানে এ নির্বাচনে জিততে হলে তোমার বাবাকে তোমার পক্ষে মাঠে নামতে হবে।
জামাল আর কোন কথা বলল না, দাঁড়িয়ে কায়েস সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ড শ্যাক করে বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন চাচা, বাবাকে আমি এ্যানি হাউ ম্যানেজ করব, বাবা আপনার কাছে আসবে, আপনি দোয়া করবেন চাচা, আমি যেন নির্বাচনে জিতে পৌরসভার চেয়ারম্যান হতে পারি, বলে জামাল এবং শাকিল কায়েস সাহেবের বাসা থেকে বের হলো।
চলবে…
গডফাদার-০১
©somewhere in net ltd.