নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান

আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যামেরার চোখ-০১

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

একজন কবিকে ঘিরে ভক্তদের একটা জটলা তৈরি হয়েছে। কবির কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, পরণে পাঞ্জাবি আর পাজামা। কবি ভক্তদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন, অটোগ্রাফ দিচ্ছেন আর টি.ভি ক্যামেরাগুলোতে চলছে বিরামহীন ভিডিও। বইমেলায় ঢুকতেই এ দৃশ্য দেখে কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সির মনটা খুশিতে ভরে গেলো, ইস্‌ এখানে এতগুলো ক্যামেরা একসাথে কবির ছবি তুলছে। আমার যদি একটা ছবি তুলতো, আমিও তো কবি। বলে তিনি তাঁর পাঞ্জাবির কুঁকুড়ে যাওয়া অংশগুলো সোজা করলো, দাড়িতে চিরুনি বুলালো।

এবার একুশে বইমেলায় আসার সময় কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি বউকে বলে এসেছেন, প্রতিদিন বিকেলবেলা মোবাইলটা তোমার কাছে রেখো গো, যখন টি.ভি’র ক্যামেরা আমার দিকে তাক করবে তখনই আমি তোমাকে ফোন করে বলবো, তুমি যেনো সেসময় মোবাইলটা দূরে রেখো না।

কয়েকমিনিট পর অটোগ্রাফ দেয়া কবি সাহেব একবার তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তাড়া করলেন, তাঁর পিছু পিছু ছুটে চললো অটোগ্রাফ শিকারী ভক্তরা, পিছনে পিছনে ছুটে চললো ক্যামেরাম্যানসহ টি.ভি সাংবাদিকরা। না কবি সাহেব আর দাঁড়ালেন না।

একজন ক্যামেরাম্যান তার ক্যামেরা, স্ট্যান্ড গুছিয়ে চলে যাওয়ার প্রস'তি নিচ্ছিলো। কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি ছেলেটির কাছে গেলেন। ভয়ে ভয়ে বললেন, বাবা আমার একটা ছবি তোলা যাবে?

ছবি তোলা মানে এটা তো স্টুডিও না, টি.ভি ক্যামেরা। এখানকার ছবি শুধু টি.ভি’তে দেখানো হয়।

রাজ্জাক মুন্সি একটু থতমত খেলেন, হ্যাঁ বাবা, বুঝেছি আমি কী বলতে কী বলে ফেলেছি বুঝতে পারিনি। মানে আমাকে একবার টি.ভি’তে দেখানো যাবে?

ছেলেটি যেভাবে তার কাজ করছিলো সেভাবে বললো, কী করেন আপনি?

আমি, আমি কবি, কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি, কবি সাহেব গর্ব ভরে বললেন।

ছেলেটি কিছুটা অবজ্ঞার সুরে বললো, এই নাম জীবনে প্রথম শুনলাম।

কবি রাজ্জাক মুন্সি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন' তাদের দলনেতা দূর থেকে জোরে ডাক দিলো, এই মন্টু তাড়াতাড়ি এসো, স্যার আসছেন। একটা ইন্টারভিউ নিতে হবে।

কবি রাজ্জাক মুন্সিও দেখলেন একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক আসছেন। সবদিক থেকে ক্যামেরাম্যান আর ভক্তরা পিঁপড়ের মতো ছুটতে শুরু করেছে। মুন্সি সাহেব তো এই সাহিত্যিকের একটা বই গত বছর কিনেছিলেন। কী এমন আহামরি লিখেন তা তাঁর জানা আছে। অথচ টি.ভি ক্যামেরাগুলো কেমন ছুটছে।

এমনিভাবে সারা মাস বইমেলায় ঘুরে ঘুরে গত বছর বইমেলায় কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি টি.ভি’র পর্দায় নিজের ছবি দেখাতে পারেননি। বইমেলা থেকে ফিরে স্ত্রীর মুখে অনেক কথা শুনেছেন। ছেলেমেয়ে প্রতিবেশীদের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। কিন' তিনি ছেড়ে দেয়ার মানুষ নন। ছোটো হোক বড় হোক তিনি কবি। কবিরা সমাজকে পথ দেখায়, কবিরা কখনো পিছু হটে না। তিনিই বা ছেড়ে দিবেন কেন?

তবে গত বছর বইমেলায় তার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। নজরুল মঞ্চে কবি-সাহিত্যিকদের বই সংগ্রহ করে সেখান থেকে একে একে সবাইকে টি.ভিতে দেখায়। কবি রাজ্জাক মুন্সিও তার একটা বই জমা দিয়েছিলেন কিন' অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে উপস'াপক বইটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, এটা কি একুশে বইমেলা থেকে পাবলিশ হয়েছে? বলে সে পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো, এটা তো একুশে বইমেলা থেকে প্রকাশিত হয়নি।

তারপর কবি রাজ্জাক মুন্সির হাতে ফেরৎ দিয়েছিলো। তখন থেকে কবি রাজ্জাক মুন্সির স্বপ্ন ঢাকার কোনো বিখ্যাত প্রকাশনা থেকে তার একটা বই বের করা, তারপর দিবেন আগামী বছর বইমেলার এরকম কোনো টি.ভি অনুষ্ঠানের উপস'াপকের হাতে। কবি রাজ্জার মুন্সির স্বপ্ন একবার কবি হিসেবে নিজেকে টি.ভি’র পর্দায় দেখাবেন, আজ যারা তাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করছে তাদের সেই তিরস্কারের জবাব সে দিয়েই ছাড়বেন।

কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি কৈশোর থেকে কবিতা লিখেন। ছন্দময় কবিতা, একসময় সবাই তাকে ছড়াকার বলতো এখন কবি বলে। সবই মুখে মুখে ডাকে, তাকে নিয়ে কোনোদিন কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, তাকে গ্রামের মানুষ কোনো অনুষ্ঠানে কোনোদিন প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথি এমনকি মঞ্চে বসারও আহবান জানায়নি। কবি নামে সবাই তাকে ডাকে কিন' তার কবিগিরি কোনো সার্টিফিকেট নেই।

কবির পুরস্কার পাঠক-ভক্ত। কবির মনে কোনো ক্ষোভ নেই। তার গর্ব এলাকার মানুষ তাকে মূল্যায়ন না করুক, দেশ একদিন তাকে মূল্যায়ন করবে, একদিন তাকে নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আলোচনা হবে, টেলিভিশনের টকশোতে মিষ্টি হাওয়া বইবে আর তা দেখে গ্রামের মানুষ যখন এই মোড়ের মধ্যে আড্ডা দিবে তখন তাদেরও চায়ের কাপে ঝড় বইবে। হয়তো সবকিছুই হবে তার মৃত্যুর পর। ক’জন গুণী মানুষ বেঁচে থাকতে তার কৃতকর্মের পুরস্কার পায়?

বইমেলা থেকে ফিরে কবি সাহেব নেমে গেলেন আগামী বইমেলায় বই প্রকাশনার প্রস'তি নিয়ে। তার লেখার বিশাল পান্ডুলিপি থেকে বাছাই করলেন প্রায় এক’শ কবিতা। রাস্তার মোড়ে, চায়ের টেবিলে, গাছের ছায়ায়, কাউকে দেখেই কবি সাহেব তাঁর কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ থেকে সেই কবিতাগুলো বের করে দেখাতে শুরু করলেন।

সেদিন বিকেলে রাস্তায় তার এক বাল্য বন্ধু আমজাদের সাথে দেখা। সেই বন্ধু তো মহাখুশি, এই কবি কেমন আছিস্‌?

ভালো। তুই?

এইতো ভালো আছি, বলে কবি আমজাদকে একরকম হাত ধরে হোটেলে নিয়ে গেলেন। চায়ের অর্ডার দিলেন। তারপর তার ব্যাগ থেকে কয়েকটা কবিতা বের করে দিয়ে বললেন, এবার একটা কবিতার বই বের করতে চাচ্ছি আমজাদ।

তুই কবিতার বই বের কর্‌বি?

হ্যাঁ। আগেও তো একটা বই বের করেছি। ও তোকে দেওয়া হয়নি, না। বলে কবি আমজাদের হাতে একটা বই দিয়ে বললেন, এটা দিনাজপুর থেকে ছাপিয়েছিলাম। এবার ঢাকা থেকে বের করবো। এখান থেকে কবিতার বই বের করলে ঢাকায় গিয়ে তেমন গুরুত্ব পাওয়া যায় না। তাই ভাবছি এবার ঢাকা থেকে বই বের করবো। কী বলিস্‌?

অবশ্যই কর্‌বি। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই টাকা-পয়সায় অনেক এগিয়েছে, কিন' যশ-খ্যাতিতে তোর মতো কেউ আগাতে পারেনি। তোকে সবাই কবি বলে জানে। একজন কবি হওয়া কি কম কথা, কবিরা তো সমাজের বিবেক জাগ্রত করে, মানুষকে জাগিয়ে তোলে।

কবির বুক গর্বে ভরে গেল।

আমজাদ চা খেতে খেতে কবিতাটা পড়ে বললো, বাহ্‌, খুব সুন্দর হয়েছে। তোর কবিতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। তোর কবিতায় বিপ্লব আছে, জাগরণ আছে, তোর কবিতা সমাজকে জাগিয়ে তোলার মতো কবিতা। দেখি আর একটা কবিতা দে দোস্ত, এবার একটা প্রেমের কবিতা দে। বলে আমজাদ চোখ টিপে হাসলো।



পান্ডুলিপি চূড়ান্ত। আগের বছরগুলোতে কেনা বইগুলো থেকে পাবলিশার্সদের ঠিকানা নিয়ে কবি আব্দুর রাজ্জাক রওয়ানা হলেন ঢাকা উদ্দেশ্যে।

চলবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.