![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
কবি ঢাকা থেকে ফেরার পর তার বই প্রকাশের কথা সবাইকে বলেছেন। যে-ই শুনেছে সেই কবির প্রশংসা করেছে, কবিকে উৎসাহিত করেছে। কবির স্ত্রীর নাম নুরজাহান বেগম। কবি বউয়ের নাম সংক্ষিপ্ত করে বেগম বলে ডাকেন। বেগম সবকিছু শুনে বললো, এতোদিনে বুঝি তুমি কবির মূল্যায়ন পেলে। তোমার কবিতা সারা দেশের মানুষ পড়বে।
কবি নুরজাহানকে এটুকুই বলেছিলেন। বই প্রকাশের সঙ্গে যে টাকার একটা বিরাট অংক জড়িয়ে আছে সেকথা কৌশলে এড়িয়ে গেছেন কিন' ক’দিন পর যখন বই প্রকাশের আনন্দ আর টাকা জোগাড় করার দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করলো তখন তার কলম একেবারে বন্ধ হয়ে গেলো।
আজকাল কবি সবসময় দুশ্চিন্তায় ছট্ফট্ করছেন। কেমন একটা অস্থিরতায় সবসময় তার কেন্দ্রীভূত চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়ে আসছে। কবির এই অস্থিরতা বেগমের চোখ এড়িয়ে যেতে পারেনি।
আগে কবি অনেক রাত পর্যন্ত লেখালেখি করতেন। রাত যতো গভীর হতো কবির কলমের গতিও ততো বেড়ে যেতো। কবি যখন লেখালেখি শেষ করে বিছানায় যেতেন তখন বেশিরভাগ দিনে বেগম ঘুমিয়ে পড়তো। কবি বিছানায় যাওয়ার আগে বেগম ঘুমিয়েছে জেনেও ডাক দিতেন, বেগম ঘুমিয়েছো?
বেগম কোনো সাড়া দিতো না।
আজ ক’দিন থেকে কবি লেখালেখি না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে আসছেন দেখে বেগম জিজ্ঞেস করলো, তুমি এতো তাড়াতাড়ি বিছানায়?
কবি কোনো কথা বললেন না।
আজ ক’দিন থেকে দেখছি তুমি লিখতে বসছো না। কী হয়েছে তোমার?
কবি তবুও কোনো কথা বললেন না।
বেগম বিছানায় উঠে বসলো, আমাদের সংসার করার কত বছর হলো বলোতো?
ত্রিশ বছর।
আমার আজো মনে আছে। প্রথম রাতে তুমি আমাকে বেগম বলে ডেকেছিলে। তারপর আমাদের এক ছেলে এক মেয়ে হলো। ওদের সামনেও তুমি আমাকে বেগম বলে ডাকতে। ওদের বিয়ে হলো। আমরা বুড়োবুড়ি হলাম তারপরও তুমি আমাকে বেগম বলে ডেকেছো।
কবি মাথা নত করে বিছানার কোণায় বসে রইলেন।
আজ ক’দিন থেকে দেখছি তুমি লিখতে বসছো না। খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুক্ষণ লেখার টেবিলে কাগজ-কলম নিয়ে কিছু এলোমেলো লিখে শুয়ে পড়ছো। আমি ঘুমাবার ভান করে শুয়ে থেকেছি তুমি আমাকে বেগম বলে ডাকবে এই আশায় কিন' তুমি সেই প্রিয় নামে আমাকে ডাকছো না। তুমি কেমন জানি অসি'র হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো। কী হয়েছে তোমার?
কবি বেগমের বাহুতে একটা হাত রাখলেন। তারপর একটা কষ্টের হাসি হেসে বললেন, বেগম কাকে বলে জানো?
বেগম না সূচক মাথা নাড়লো।
বাদশাহ্র বউকে বেগম বলে। তুমি চেহারায় বেগম বটে কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে বাদশাহ্র বউ না। আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছে আমার মতো একজন হাভাতে কবির ঘরে।
বেগম কিছুটা রেগে গেলো, তোমার এসব কথা আমি শুনতে চাইনি। কী হয়েছে তাই বলো?
কবি একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে বললেন, বেগম আমার বই ঢাকা থেকে ছাপা হবে এটা ঠিক কিন' এর সঙ্গে একটা বড় টাকার অংক আছে।
মানে?
মানে টাকা দিতে হবে।
কতো?
সে অনেক টাকা।
বলবে তো কত টাকা?
বিশ হাজার।
অ। সেজন্য কবি নিরব?
কবি মাথা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন।
সেজন্য তোমার লেখালেখি বন্ধ। কবিরা এতো তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পড়লে হয়, তুমিই বলো? তুমি যে কেমন কবি। তুমি মানুষকে আশার আলো দেখাবে, বিপদে পথ দেখাবে আর তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তবে তোমার ভক্তরা তোমার কাছে কী শিখবে, বলো?
কবি শুষ্ক হেসে বললেন, এতো টাকা আমি কোথায় পাবো?
সেজন্য ভেঙ্গে পড়ো না। তোমার জমির ধান আছে না।
তা আছে কিন্তু ধান বেচা টাকা দিয়ে বই ছাপালে সারা বছর খাবো কী?
তখন দেখা যাবে। আল্লাহ কোনো না কোনোভাবে চালিয়ে নিবেন।
প্রতি বছর অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে মেয়ে জামাই আসে শীতের পিঠা খেতে। তাদের কী হবে?
হবে। আল্লাহ সব চালিয়ে নিবেন। তাছাড়া আমার কাছে কিছু টাকা আছে।
কবির মুখ উজ্জ্বল হলো, তাই নাকি? তুমি কোথায় টাকা পেলে?
হ্যাঁ। আমি কোথায় টাকা পেলাম সেটা কোনো বিষয় না। তুমি তো মুখে মুখে বলো অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। আমার ওপর একটুও সাহস করতে পারলে না?
বেগম আসলে আমি কখনো চিন্তা করিনি তোমার কাছে কোনো টাকা থাকতে পারে।
তা করবে না তো। এখন তোমাকে একটা কথা বলি?
বলো?
তোমার বই ছাপানোর পুরো টাকাটা যদি আমি দিই?
তুমি?
হ্যাঁ আমি। অবাক হচ্ছো কেনো? আমার কাছে টাকা থাকতে পারে না?
হ্যাঁ তা পারে।
একটা টাকা দুটাকা করে জমাতে জমাতে আমার কিছু টাকা জমেছিল। তারপর সেই টাকা থেকে ছাগল, তারপর গরু কিনে ডাঙ্গাপাড়া একজনকে পালতে দিয়েছি। তোমার কবিতার বই ছাপানোর জন্য যদি টাকার প্রয়োজন হয় তবে আমি না হয় আমার সেই গরুটা বেচে দিবো।
কবি বেগমের মুখ উঁচু করে ধরলেন। বেগমের চোখ পানিতে চিক্চিক্ করছে। কবির চোখ থেকেও কয়েক ফোটা পানিয়ে গড়িয়ে পড়লো। কবি বেগমকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, বেগম, আমার বেগম।
কবির চোখে ঘুম নেই। সারারাত শুধু ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে কবিতা আবৃত্তি করেছেন। সারারাত তার কাব্যিক জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন।
কৈশোরে কবি এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলেন। কবি তাকে খুব ভালো বাসতেন। সেই কবির প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম হারানোর পর কবি কবিতা লেখা শুরু করেন। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে। সেই চল্লিশ বছর আগের স্মৃতি নিয়ে কবি তার জন্য কবিতা লিখে যাচ্ছেন। সেই কিশোরী নারী হয়েছে, নানি হয়েছে। এতদিনে বুড়ি হয়েছে নাকি মারা গেছে সে খবর কবির জানা নেই তবু তার সব কবিতা যেনো সেই নারীর উদ্দেশ্যে।
কবির আজ চোখ খুলেছে। যে নারীর জন্য কবি সারাজীবন বেগমের পাশে শুয়ে সেই নারীর স্মৃতি বুকে লালন করেছেন, বেগমকে বঞ্চিত করেছেন সেই নারীর কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ বেগম! বেগম তার পাশে শুয়ে আছে, জলজ্যান্ত এক নারী। তার কোনো দোষ নেই। এতদিন কবি শুধু একটা স্মৃতির পেছনে, মরীচিকার পেছনে ঘুরেছেন।
বেগম এতোকিছু জানে না। সে জানে কবি তার স্বামী, তার সঙ্গেই তাকে সারাজীবন কাটাতে হবে। কবির সঙ্গেই তার সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করে চলতে হবে।
না কবি আর সেই কৈশোরের নারীর কথা ভাববেন না। তিনি একবার ভেবেছিলেন তাঁর এই কবিতার বইটি সেই অনামিকার নামে উৎসর্গ করবেন। কিন' এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই কবিতার বই কবি বেগমের নামে উৎসর্গ করবেন। উৎসর্গে লিখবেন: আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, সেই মহীয়সী নারী যে সুখে-দু:খে কবির পাশে দাঁড়িয়েছে তার উদ্দেশ্যে আমার এই ক্ষুদ্র কর্ম উৎসর্গ করলাম।
চলবে...
©somewhere in net ltd.