![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
পান্ডুলিপি পাঠানোর এক মাস হলো। ইমরুলের কথামতো কবি সঙ্গে টাকাও পাঠিয়েছেন। ইমরুল বলেছিলো ফেব্রুয়ারি মাসের এক তারিখে মেলায় বই উঠবে। সে অনুযায়ী কবি ফ্রেবরুয়ারি মাসের এক তারিখে ঢাকায় এলেন। কবিকে দেখে ইমরুল একটু থতমত খেলো, অ আপনি এসেছেন?
কবি মৃদু হেসে বললেন, জি ভাই।
ইমরুল মুখ কালো করে বললো, আপনাকে এতো করে বললাম পান্ডুলিপি আগে পাঠান। এখন কম্পিউটার, কম্পোজ আর বাইন্ডিংখানায় যা ভীড়।
কবি কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলেন, বিনয়ের সঙ্গে বললেন, টাকা জোগাড় করতে করতে দেরি হয়ে গেলো। বুঝেনই তো একজন গরীব কবির পক্ষে বিশ হাজার টাকা জোগাড় করা কতো কঠিন।
হুম। আপনি কবে এসেছেন কবি ভাই?
এই তো আজই। বাস থেকে নেমে সোজা আপনার এখানে এলাম।
আসার আগে আপনি যদি একবার ফোন করে আসতেন। আসলে বইমেলা এক তারিখ থেকে হলেও মেলা জমতে জমতে প্রথম সপ্তাহ পার হয়ে যায়। আপনি আরো পরে এলেও পারতেন।
কবি ভয়ে ভয়ে বললেন, ইমরুল ভাই আমার বইয়ের খবর কী?
ইমরুল মাথা নিচু করে কথা বলছিলো সেভাবেই বললো, ক’দিন দেরি হবে ভাই।
কবি আমতা আমতা করে বললেন, ইমরুল ভাই এক তারিখে না হোক, সাত তারিখে তো হবে?
ইমরুল মিনমিন করে বললো, এই মনে করুন বই বের হতে হতে দশ তারিখ।
দশ তারিখ!
সেজন্যই তো বললাম আপনি আরো পরে এলে পারতেন।
আচ্ছা যাহোক, আপনি তাড়াতাড়ি করুন। আমি ঢাকায় থাকবো। একটু তাড়াতাড়ি করুন ভাই। সবাইকে বলে এসেছি তো।
দিনাজপুর থেকে এসে এতো দিন থাকবেন?
হ্যাঁ প্রতি বছরই তো থাকি। আজ প্রায় বিশ বছর হলো, আমি প্রতি বছর বইমেলায় আসি। প্রায় পনেরো দিন থাকি, এবার আমার বই আসবে এবার না হয় পুরো মাস থাকবো।
আচ্ছা থাকুন।
কবি কিছুক্ষণ ইমরুলের সামনে বসে রইলেন তারপর চেয়ার থেকে উঠলেন।
কবির মেয়ে-জামাই আশুলিয়ায় একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে। সেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। কবিও তাদের বাসায় উঠেছেন। প্রতিদিন সকালবেলা মেয়ে-জামাই গার্মেন্টসে চলে যায়, কবি তার একমাত্র নাতনিকে নিয়ে আশুলিয়া ঘুরে দেখেন তারপর নাতনিকে রেখে বিকেলে চলে আসেন বইমেলায়। বইমেলা ঘুরে দেখেন, লেখক কুঞ্জে বসেন, নজরুল মঞ্চের আশে-পাশে ঘুরে বেড়ান।
নজরুল মঞ্চে প্রতিদিন টেলিভিশন ক্যামেরায় লেখক-কবিদের প্রকাশিত বই, তাদের ইন্টারভিউ দেখানো হয়। কবি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন আর ভাবেন একদিন তাকেও এভাবে দেখানো হবে। তিনি ফোন করে বেগমকে জানাবেন, তাঁর বন্ধু-বান্ধব যাদের বই ছাপানোর কথা বলেছেন তাদের বলবেন, তার মেয়েকে বলবেন, মেয়ে-জামাই হয়তো দেখতে পারবে না কিন' তারা জানবে, তাদের সঙ্গে আর যারা ভাড়া থাকে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখবে। তার নাতনি টি.ভি’তে নানাকে দেখবে। সবাই খুব খুশি হবে।
এবার বুঝি কবির স্বপ্ন পূরণ হবে। দেশ-বিদেশে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। কবিরা তো টাকা-পয়সা চায় না, ভোগ-বিলাসিতা চায় না নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়, গোটা দুনিয়ার মানুষকে পৃথিবীতে তার আগমনের কথা জানাতে চায়, পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকতে চায়।
আজকাল করতে করতে মেলা প্রায় শেষ হতে চললো কিন' কবির বই প্রকাশিত হলো না। ইমরুল আজকাল আজকাল করে দিন পার করে। ইমরুল একদিন বলে আপনার বই ছাপাখানায় তো আরেকদিন বলেন বাইন্ডিং খানায়। কবি বিরক্ত হোন, কবির দু’চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়ে কিন' ধৈর্য ধরেন।
অবশেষে কবির বই মেলায় এলো সাতশ তারিখ বিকেলে। বইমেলায়। কবি তখন বইমেলায় ইমরুলের পাশে বসেছিলো।
ইমরুল কবির হাতে একটা বই তুলে দিয়ে মৃদু হেসে বললো, এই নিন বই হে কবি। আপনার অমর সৃষ্টি।
কবি বইটা হাতে নিলেন। কাঁচা বই, এখনো বাইন্ডিংয়ের আঠা শুকায়নি।
তারপরও নিজের লেখা বই হাতে পেয়ে কবির বুক ভরে গেলো। কবি বই হাতে পেয়েই বেগমকে ফোন করলেন, হ্যালো।
হ্যাঁ কী খবর বলো? কেমন আছো তুমি?
ভালো। বলে কবি আনন্দে গদগদ কণ্ঠে বললো, বই হাতে পেয়েছি। তুমি টি.ভি’র সামনে বসো আমি নজরুল মঞ্চের দিকে যাচ্ছি। বলে কবি একটা বই নিয়ে নজরুল মঞ্চের দিকে গেলেন কিন' ততক্ষণে নজরুল মঞ্চে বই জমা নেয়া শেষ হয়ে গেছে। কবি নিরাশ হয়ে ফিরে এলেন।
পরদিন মেলার শেষ দিন। তিনটা বাজতে না বাজতেই কবি কয়েকটা বই নিয়ে নজরুল মঞ্চে হাজির হলেন। হ্যাঁ, আজ বই নেয়া শুরু হয়েছে। কবিও তাঁর বইটা জমা দিলেন। কবি বেগমকে ফোন করে টি.ভি’র নাম বললেন, বন্ধু-বান্ধবদের ফোন করে জানালেন। টি.ভি’র ক্যামেরা ম্যান তার ক্যামেরা স্ট্যান্ড করলো, উপস'াপক ট্রায়াল দিলো, হ্যালো, মাইক্রোফোন টেস্টিং হ্যালো।
কবির মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা আবৃতি করার অভ্যাস আছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে তাঁর কোনো জড়তা নেই। তিনি কী বলবেন মনে মনে সাজিয়ে নিলেন, কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন আপনমনে রিহার্সেল দিলেন।
অনুষ্ঠান শুরু হলো। কিন্তু কবি লক্ষ্য করলেন তার বই সিরিয়ালের শেষে দিকে। তিনি কিছুটা অবাক হলেন। তিনি তো সবার আগে বই জমা দিয়েছেন। তিনি উপস্থাপকের পাশে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে একে একে উপস্থাপকের হাতে তুলে দিচ্ছে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন।
বার বার কবির এমন আচরণ দেখে ছেলেটি কিছুটা বিরক্ত বোধ করলো। একটা স্যাগমেন্ট শেষ হওয়ার পর ছেলেটি বললো, আপনি বয়স্ক মানুষ এতো অধৈর্য হলে চলে। আমরা তো সবাইকে দেখাবো।
কবি বইয়ের দিকে তাকালেন, হ্যাঁ তার বই আছে আর দু’টা বইয়ের পরে। কবি মনে মনে প্রস'তি নিলেন। আর একজন, কবির বুক একটু হলেও কাঁপছে, ভয়ে নয়, আবেগে, আনন্দে।
এখন একজনের ইন্টারভিউ হচ্ছে তারপরই কবির ইন্টারভিউ। ঠিক কবির ইন্টারভিউ’র আগ মুহূর্তে ভিড় ঠেলে একজন স্বনাম ধন্য সাহিত্যিক এগিয়ে আসতেই টেলিভিশনের উপস'াপক স্যার স্যার বলে সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার এবার আপনার কী বই এসেছে?
সাহিত্যিক সাহেব লম্বা এক বিবরণ শুরু করলেন। তার ইন্টারভিউ নেয়ার পরপরই উপস্থাপক সমাপ্তি ঘোষণা করলেন।
চলবে...
©somewhere in net ltd.