![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
কবির মোবাইল ফোনে একের পর এর ফোন আসতে লাগলো কিন্তু তিনি কারো ফোন রিসিভ করলেন না। কাকে কী জবাব দিবেন কবি। বিরক্ত হয়ে কবি মোবাইল ফোন বন্ধ করে বইমেলা থেকে বেরিয়ে গেলেন। কোথায় যাবেন কবি?
কোনো তাড়া নেই অথচ জোরে জোরে পা ফেলছেন। আজ বইমেলা শেষ, কবির বাড়ি যাওয়ার কথা। কবির এই বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল হাসি-মুখে, স্ত্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কথা বীর দর্পে, সিংহাসন জয় করে। বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের দোকানে আড্ডার সময় কথা বলার কথা ছিল বিজয়ের হাসি মুখে নিয়ে। তা আর হলো না। কবি পরাজিত, কবির চোখে-মুখে ক্লান্তি, শরীর অবসন্ন, হৃদয়ে পরাজয়ের গ্লানি।
হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটর এসে পৌঁছেছেন। এখন কোনদিকে যাবেন? একটা বাস ফার্মগেট, ফার্মগেট বলে ডাকছে। ফার্মগেট গিয়ে কবি কী করবেন? বাস ধরে মেয়ের বাড়িতে যাবেন? ছোট্ট নাতনি বলেছিলো নানু তোমাকে যখন টি.ভিতে দেখাবে তখন আমি দেখবো। আমাকে বলো কিন্তু।
মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় একটা পুরাতন মোবাইল ফোন আছে। বাসায় যে কাজের মেয়েটা আছে ওটা ওর কাছে থাকে। কবি সেই নাম্বারে ফোন করে ছোট্ট নাতনিকেও জানিয়েছেন, হয়তো ছোট্ট শিশু টি.ভি চালু করে বসেছিলো। কবি তাকে কী জবাব দিবেন?
কবি ফার্মগেটের বাসে উঠলেন না। সোজা ডান দিকে রওয়ানা হলেন। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে চলা। কবির পরনে পাঞ্জাবি-পায়জামা, কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, পাকা দাড়ি বাতাসে উড়ছে। জোরে হাঁটতে হাঁটতে একবার থমকে দাঁড়ালেন, আমি এতো জোরে হাঁটছি কেনো? কোথায় যাচ্ছি আমি? আমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। যেখানেই যাবো সেখানেই একটা অপমান আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
হাঁটতে হাঁটতে কবি কখন কমলাপুর এসে পৌঁছেছেন নিজেই জানেন না। হঠাৎ করে কমলাপুর স্টেশন চোখে পড়লো। কবি প্লাট ফরমের ভিতরে ঢুকলেন। তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন, নাহ্, আর পা চলছে না। এভাবে খেয়ে না খেয়ে আর কতোক্ষণ হাঁটা যায়। বলতে বলতে কবির চোখ গেলো ট্রেনের সময়সূচী লেখা সাইন বোর্ডের দিকে। দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে সন্ধ্যা সাতটা চল্লিশ মিনিটে। কবি স্টেশনের ঘড়িতে সময় দেখলেন। এখন সাতটা বাজে।
কবি কাউন্টারের দিকে পা বাড়ালেন। ট্রেনে ভিড় খুব, সিট নেই, কবি স্ট্যান্ডিং টিকেটই কিনেলন। ট্রেনে উঠে একটা সিটের কোণা ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন।
দ্রুতযান দ্রুত গতিতে চলছে। কবি কখনো সিটে হেলান দিয়ে আবার কখনো কোনো সিট ফাঁকা পেলে বসছেন। আর মাঝে মাঝে ডুবে যাচ্ছেন কবিতার রাজ্যে। তার মাথায় আজ অসংখ্য কবিতার ছন্দ খেলা করছে। কবির চোখে বার বার ভেসে উঠছে বছরের পর বছর বইমেলায় এসে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য।
বই প্রকাশের দিক থেকে কবি নতুন হলেও কবি হিসেবে তিনি অনেক পুরাতন। ধান ক্ষেতের মেঠোপথ, ফুটপাথ, রাজপথ সবমিলিয়ে কবির কাব্য চর্চার বয়স অনেক। এই কবিতা লিখতে গিয়ে কবি জীবনে অনেক হারিয়েছেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজন বন্ধুরা বার বার বলেছে কবি এবার সব ছাড়ো, সংসারে মনোযোগী হও, জমিজমাগুলো দেখাশোনা করো।
কিন' কবির কোনোকিছুতেই মন নেই। কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি মনে প্রাণে কবি, তার অস্তিত্বে কবিত্ব। আর যারা অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়ে সেখান থেকে কিছু টাকা খরচ করে বইমেলায় বই ছাপিয়ে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, মিডিয়া কর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে উপরে উঠেছেন তারা তো কবি না, তারা কবি সেজেছে। কবি হওয়া আর কবি সাজা তো এক কথা নয়। কবি উপরে ওঠার সিঁড়ি নয়, কবি কোনো পেশা নয়, মানুষের সুখ-দু:খ, প্রেম-ভালোবাসা, জাতির চরম দুর্দিনে জাতিকে পথ দেখানোর পথ প্রদর্শক কবি।
কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি তো কবি সাজেননি, তিনি কবি। নি:স্বার্থক একজন কবিতা প্রেমি। অথচ এই কবি বছরের পর বছর বইমেলায় পায়ের জুতা ক্ষয় করলো, এতো শত শত ক্যামেরা একবারো তার দিকে চোখ তুলে তাকালো না। না, কবি কোনোভাবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারলেন না।
ট্রেন সান্তাহার আসার পর কবি একটা সিট পেয়েছেন। সীমিত আলোতে কবি তার পান্ডুলিপি বের করে লিখতে শুরু করেছেন। তার মনের মধ্যে বিড়বিড় করা কবিতা। অনেক দিন থেকে কবি শরীরের প্রতি খুব অবিচার করছেন, ঠিকমতো খাওয়া নেই, ঘুম নেই। কবিতার বই, কবিতার বই করতে করতে তার শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। কবির শরীর শুধু ঘামছে। বুকটা খুব জোরে শব্দ করে দ্রুত গতিতে চলছে। না কবি আর সিটে বসে থাকতে পারছেন না। তিনি সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। তাঁর হাত থেকে কবিতার পান্ডুলিপিটা পড়ে গেলো।
দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দিনাজপুর রেল স্টেশনে এসে থামতেই স্টেশন প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেলো। যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ট্রেন থেকে নামতে শুরু করলো। একসময় পুরো ট্রেন যাত্রী শূন্য হলো, টোকাইরা ট্রেনের ভিতরে পড়ে থাকা উচ্ছ্বিষ্ট পানির বোতল, কারো ফেলে যাওয়া কাপড়ের ব্যাগ কুড়ানোর জন্য এসে একজন যাত্রীকে সিটে পড়ে থাকতে দেখে এক টোকাই মৃদু ধাক্কা দিতেই কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি সিট থেকে নিচে পড়ে গেলেন।
সেই টোকাই আরো দুয়েকজনকে ডাক দিলো, এই তোরা একটু এগিকে আয়তো লোকটা বুঝি মরে গেছে।
আরো কয়েক জন টোকাই এলো। তাদের একজন পুলিশকে খবর দিলো। সঙ্গে সঙ্গে কয়েক জন পুলিশ এলো তাদের মধ্যে একজন পালস দেখে জানালো, নাই।
স্টেশনে হৈ চৈ পড়ে গেলো। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে গেলো পুরো শহর। পত্রিকার সাংবাদিক এলো, টি.ভি ক্যামেরা এলো। শুরু হলো কবির ছবি তোলা। কবির পড়ে থাকা পান্ডুলিপিতে তাঁর ঠিকানা লিখা ছিলো সেখান থেকে জানা গেলো কবির পরিচয়।
কিছুক্ষণ পরেই খবর ছড়িয়ে গেলো সমস্ত মিডিয়ায়, টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠলো কবির ছবি। কবির প্রিয়তমা স্ত্রী, কবির নাতনি, কবির আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব টি.ভি’র পর্দায় দেখলো কবি আব্দুর রাজ্জাক মুন্সির ছবি।
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০১
আরজু পনি বলেছেন:
আগের পর্বগুলো না পড়ার কারণে বুঝতে সমস্যা হলো...তবে ব্যর্থতার গল্প মনে হলো !