![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন প্রকৌশলী। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ:কাব্য: ০১। ছোট্ট একটি ভালোবাসা উপন্যাস: ০২। ভ্যালেন্টাইনস্ ডে (ভালোবাসাবাসির স্মৃতিময় দিনগুলি) ০৩। অবশেষে...(অবশেষে হৃদয়ের টানে) ০৪। বন্ধন (যে বন্ধন শুধু কাছেই টানে) ০৫। স্বপ্ন (যাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে) ০৬। আঁচলে...(যাদের ভালোবাসা আঁচলে বন্দি) ০৭। গডফাদার-০১(দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি) ০৮। গডফাদার-০২ ০৯। গডফাদার-০৩ ১০। দুর্নীতিবাজের ডায়েরি (একজন দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী) ১১। দাগ (এই দাগ হৃদয়ের, এই দাগ সমাজের) ১২। প্রিয়ন্তী (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙা এক তরুণী) ১৩। তবুও আমি তোমার (একটি অসম প্রেমের কাহিনী) ১৪। খুঁজে ফিরি তারে (যে হৃদয় শুধু তাকেই খুঁজে) ১৫। সেই ছেলেটি (কিশোর উপন্যাস) ১৬। অপেক্ষা (পথ চেয়ে থাকা এক তরুণীর কাহিনী) মোবাইল-০১৭১৮১৫৭০৭৬ email:[email protected]
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে ধামইরহাটের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল গরু গাড়ি। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গরু গাড়ির স্থান দখল করেছে বাস আর স্থানীয়ভাবে যোগাযোগের স্থান দখল করেছে রিক্সা ভ্যান। গতকাল আকাশ ঢাকা থেকে বাসে ধামইরহাট আসার পর বাস স্ট্যাণ্ডেনেমে রিক্সার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু কোন রিক্সা না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়েছিল। আকাশের সামনে কিছুক্ষণ পর পর রিক্সাভ্যান এসে বলছিল, ভাইজান কোথায় যাবেন?
আকাশ বারবার করে বলছিল, যাব না।
অবশেষে আকাশ একজন ভ্যানওয়ালাকে জিজ্ঞেস করেছিল, এখানে রিক্সা পাওয়া যাবে না?
ভ্যানওয়ালা বলেছিল, ভাইজান এখানে রিক্সা পাবেন কই? গোটা উপজেলায় রিক্সা আছে একটা। সে যে এখন কোথায় গেছে কে জানে? আপনি আমার ভ্যানে উঠেন, কোথায় যাবেন আমি আপনাকে নিয়ে যাব?
আকাশ ভ্যানে উঠে বৃষ্টিদের বাসায় গিয়েছিল।
আজ সকালবেলা বৃষ্টি আর আকাশ প্রথমে রওয়ানা হয়েছে নীলাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে তারপর সেখান থেকে আলতাদিঘী। ধামইরহাট থেকে আলতাদিঘীর দূরত্ব প্রায় বারো কিলোমিটার। প্রায় তিন কিলোমিটার পর থেকেই রাস্তার দু’পাশে শুরু হয়েছে ঘন শালবন। তারপরও সকাল থেকে প্রচণ্ড রৌদ্র আর গরমে মাঠ-ঘাট খাঁ খাঁ করছলি, যেন আগুন ঝরছিল। একটা ভ্যানে মুখোমুখি দু'টা বেঞ্চ। আকাশ আর বৃষ্টি পাশাপাশি বসেছে। তাদের মুখোমুখি বসেছে নীলা। আকাশ আগে একবার গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে গিয়েছিল, নওগাঁয় তাদের গ্রামের বাড়ি বা তার ফুপুর বাড়ির কাছেই এমন সুন্দর পরিবেশ আছে। এটা তার ধারণাই ছিল না।
একটা শিয়াল দৌড়ে রাস্তা অতিক্রম করল।
আকাশ জোরে চিৎকার করে হাত তালি দিল, নীলা দেখ, দেখ একটা শিয়াল রাস্তা ক্রস করল। এমন খাঁটি গ্রাম এখনো আমাদের দেশে আছে?
বৃষ্টি মুখ আংশিক বিকৃত করে বলল, আছে, এখন তুই সেই গ্রামে।
ভেরি বিউটিফুল, আমার খুব সুন্দর লাগছে, বৃষ্টি তুই একটু নাম্, নীলা তুমিও নাম, আকাশ বলল।
সবাই নামল।
বৃষ্টি তার স্বভাবসুলভভঙ্গীতে বলল, সুন্দর তো লাগবে, এমন ছায়াঘেরা শীতল ফরেস্টের মধ্যে আমাদের দু’জনের মতো সুন্দর মেয়ে সঙ্গে থাকলে সবারই সুন্দর লাগবে।
দু’জন সুন্দর মেয়ে না, একজন সুন্দর মেয়ে।
ও নীলা সুন্দর মেয়ে আর আমি বুঝি অসুন্দর মেয়ে? ঠিক আছে তোরা যা, আমি যাব না, বলে বৃষ্টি দাঁড়িয়ে রইল।
আকাশ বৃষ্টির দু’হাত জড়িয়ে ধরল, বৃষ্টি, লক্ষ্মী বোন আমার, চল্। আমি আসলে তোকে ক্ষেপানোর জন্য অসুন্দর বলেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্লিজ, ডন্ট মাইন্ড, এবার চল্।
সবাই ফরেস্টের অনেকদূর ভিতরে চলে গেল। জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে সরু রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াল। তারপর আবার ভ্যানে চড়ে আলতাদিঘীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।
আলতাদিঘীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আকাশ ক্লান্ত হয়ে গেল। সে গাছের নীচে কয়েকটা পাতা বিছিয়ে বসতে বসতে বলল, বৃষ্টি আমি আর পারছি না, প্লিজ একটু বস্?
নীলা তোরা দু’জনে বসে গল্প কর্, আমি ঐদিকে আছি।
আকাশ মুচকি হেসে সায় দিল।
নীলা কয়েকটা গাছের পাতা বিছিয়ে আকাশের মুখোমুখি বসল।
আকাশ বলল, নীলা দেখ্ শহর থেকে কত দূরে একটা নিভৃত পল্লীতে এরকম একটা সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, খুব সুন্দর তাই না?
হ্যাঁ খুব সুন্দর।
তুমি আগে এখানে এসেছ?
না।
তোমার বাড়ির পাশে অথচ তুমি আসনি? ঢাকা শহরে যদি এরকম পুকুর থাকত তবে আমি সুযোগ পেলেই চলে যেতাম।
যেহেতু ঢাকায় এরকম পুকুর নেই তখন আর কি করা এখন থেকে সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসিও।
তোমাদের বাড়িতে?
আমাদের বাড়িতে কেন? তোমার ফুপুর বাড়িতে।
তোমাদের বাড়িতে আসলে ক্ষতি কি?
এটা ঢাকা শহর না মিস্টার যে কেউ কারো খবর রাখে না। এটা ধামইরহাট, দু'য়েকবার আসলেই পাড়ার লোকজন কানাঘুষা শুরু করবে।
আমি তোমাদের বাড়িতে আসলে প্রতিবেশীরা কানাঘুষা শুরু করবে কেন?
ঢাকা শহরে মানুষে মানুষে সামাজিক বন্ধন নেই বললেই চলে। একজন মানুষকে হাজার হাজার মানুষের সামনে ছিনতাইকারী ধরলেও কেউ কিছু বলে না, কোন ফ্ল্যাটে কোন মানুষ মারা গেলে পাশের ফ্ল্যাটের মানুষ তার কোন খবর রাখে না। ঢাকা শহরের মানুষ মানুষের বিপদেও হাত বাড়ায় না, কারো আনন্দও শেয়ার করে না। কিন্তু এখানে মানুষে মানুষে সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়, যেমন একজনের বিপদ-আপদে অন্য মানুষ ছুটে আসে তেমনি অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে।
এটা হলো সমাজের কুফল।
কুফল কেন? বলতে পার সামাজের রীতি। সমাজে বসবাস করতে চাইলে তোমাকে সমাজের কিছু রীতি-নীতি তো মানতেই হবে।
কেউ যদি না মানে?
সমাজ তাকে শাস্তি দিবে, ধিক্কার দিবে, ঘৃণা করবে।
থাক্, থাক্ বাবা আমি তোমাদের বাড়িতে আসব না, সামাজের রীতি-নীতিও ভঙ্গ করব না।
কিছুক্ষণ দু’জনে নীরব। তারপর আকাশ প্রথম নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, নীলা আর ক’দিন থাকবে ধামইরহাটে?
ক’দিন আবার, ভার্সিটি খুললেই চলে যাব।
আমি আগামী পরশুদিন ঢাকা যাব, বৃষ্টিকে আমি যেতে বলি তুমিও চল।
ভার্সিটি না খুললে আমি গিয়ে কী করব? কেউ যদি না আসে তবে আমি বা একাই থাকব কীভাবে?
বৃষ্টি দূর থেকে বলল, কি রে তোরা আস্বি?
নীলা উঠে দাঁড়াল, চল আকাশ, না গেলে ও আবার তোমাকে ক্ষেপাবে।
হ্যাঁ চল।
তিনজনে হাঁটতে হাঁটতে দিঘীর পাড়ে স্কুলের কাছে এসে দাঁড়াল। স্কুলের অদূরে ভ্যানটি দাঁড়ানো আছে, ভ্যানওয়ালা ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানছে।
নীলা একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, বৃষ্টি চল্। আজ ব্যাংক বন্ধ, বাবা বাড়িতে আছে। বাবা আমাকে ছাড়া দুপুরে ভাত খাবে না।
আতিয়ার সাহেব নীলা, আকাশ আর বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছিল।
সবাই বাড়িতে ঢুকল।
আতিয়ার সাহেব তাঁর রুম থেকে বারান্দায় বেরিয়ে এলেন, মা এসেছিস্, বৃষ্টি এসো মা, বস।
বারান্দায় ডাইনিং টেবিল বসানো আছে, আতিয়ার সাহেব সেখানে চেয়ারে বসলেন। নীলা আকাশকে তার বাবার সঙ্গে পরিচয় করে দিল, বাবা ও হচ্ছে আকাশ, তোমাকে যার কথা বলছিলাম, তোমার বান্ধবী সুলতানা মামীর ছেলে।
নীলা লক্ষ্য করেছে তার সুলতানা মামীর নাম শুনেই তার বাবা যেন মুখ কি রকম করেন? যেন কিছু একটা লুকাতে চান। নীলা আর কিছু বলল না।
আকাশ সালাম দিল।
আতিয়ার সাহেব সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার বাবা-মা কেমন আছেন বাবা?
জি ভালো।
তোমার বাবার বোধ হয় একটা প্রমোশন হয়েছে?
জি, বাবা এখন ইন্সপেক্টর।
তোমার মা কি চাকরি করছে?
না খালু।
তুমি তোমার দাদার বাড়ি যাও?
জি।
নীলা তার বাবা এবং আকাশের দিকে তাকাল। তার বাবা আকাশকে তার দাদার বাড়ি যাবার কথা জিজ্ঞেস করল কেন? বিষয়টা নীলার কাছে বিস্ময়কর বলে মনে হলো কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করল না।
আতিয়ার সাহেব বললেন, নীলা আজ তো বোধহয় পেপার পড়িস্নি, তোদের ইউনিভার্সিটি আগামী পরশুদিন খুলবে।
বাবা তাহলে তো আমাকে কালকেই ঢাকা যেতে হবে।
যেও।
চলবে...
উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ওয়েব
২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৫
ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:০৫
Sayad Pantho বলেছেন: অসাধারণ