![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রফেসর ফিঙ্গারের ক্লাসে ঝাড়ি খাওয়ার পর থেকে ব্যাপারটাকে আর সহজভাবে নিতে পারছিলাম না। শুধুমাত্র জার্মান ভাষা না জানার গাফলতির কারণে এমন অপমানিত হব এটা কখনো ঘুণাক্ষরেও মাথায় আসেনি। এমনিতে ড্রেসডেন শহরে শুধুমাত্র ইংরেজি দিয়ে চলাফেরা খুব মুশকিল, আসার পর প্রায় ৪ মাস পার হয়ে গেলেও এখনো কোন কাজ খুঁজে পাই নি – সেটার কারণও আর কিছু না, শুধু জার্মান ভাষা না বলতে পারা। দেশ থেকে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসা সবেধন নীলমণি ১৪০০ ইউরো ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। একটা কিছু কাজ না খুঁজে পেলে কি হবে ভাবতেও পারছি না। এর মধ্যে প্রফেসর ফিঙ্গারের কথা কানে বাজছে সবসময়, “জার্মান ভাষা না জানলে জার্মানিতে আসা কেন!”।
ড্রেসডেন শহরটা নাকি জার্মানির অন্য অনেক শহর থেকে বেশ সস্তা। তারপরও প্রথম দুই মাসে অগ্রিম ভাড়া দিয়ে, প্রথমদিককার এককালীন খরচগুলো মিলিয়ে হুশ করে ব্যাংক থেকে দেশ থেকে আনা টাকার অর্ধেক শেষ। একটা ল্যাপটপ কেনার অনেক শখ, পাশের রুমের ইন্দোনেশিয়ান ছাত্রের ঘরে নতুন ল্যাপটপটা দেখে চোখ চকচক করলেও এই মুহূর্তে কোন উপায় নেই। আসা সময় দেশ থেকে মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্ক, র্যাম আর একটা পাওয়ার সাপ্লাই সাথে করে আনা, জায়গার অভাবে কেসিং আনা যায় নি। এখানে এসে পুরনো একটা মনিটর যোগাড় করে টেবিলের উপর মাদারবোর্ড বিছিয়ে পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে কানেক্ট করে আমার কম্পিউটার চলে। কেসিং ছাড়া কম্পিউটার দেখে আমার হাউস মাস্টার অব্জেকশন দিল, বলল এটা নাকি বিপদজনক। আমি তাকে পাশে দাঁড়িয়ে করে বললাম দেখ আমি কম্পিউটার চালানো অবস্থায় মাদারবোর্ডের চিপসেটে হাত দিচ্ছি, কোন কিছু হচ্ছে না। ভদ্রলোক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আর কিছু বললেন না। আমার প্রথম জার্মান বন্ধু রাইমুন্ড; ও বলল একটা কেসিং কিনে নিতে, দাম নাকি বেশি না। আমি হাসি মুখে একটা ভান করি যে এক্সপার্টদের পিসি এমনই হয়। ব্যাংকের খবর রাইমুন্ডের না জানলেও চলবে।
পড়ার টেবিল ও কেসিং বিহীন পিসি
আমি যেই হোস্টেলে উঠেছি সেখানে আরও দুটো বাংলাদেশি ছেলে থাকে। ওরা কি জানি একটা জব করে, আমাকে এখনো কিছু বলছে না, কেমন জানি একটা চুপি চুপি ভাব। আমাকে বললে ওদের কাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হবে এমন কিছু কিনা কে জানে। আমাকে বলেছে কাজের খবর দিবে, এখনও পর্যন্ত অবশ্য কিছু শুনলাম না। ওরা বলেছে ড্রেসডেন শহরে বাংলাদেশীরা কখনো ইউনিভার্সিটিতে জব পায় না, বাইরে অড জব পাওয়াও খুব সহজ না জার্মান না জানলে। আমাদের শহরে আবিষ্কার করেছি অনেক টেক্সটাইলের ছাত্রছাত্রী। তাঁরা আবার সবাই অনেক টাকা স্কলারশিপ পান, তাদের বউরা তাদের সাথে থাকেন, সেই টাকাও নাকি ডাড (DAAD) দিয়ে দেয়। তাদের বাসায় প্রায়ই পার্টি লেগে থাকে। সেখানে ভালমন্দ দামি খাবার রান্না হয়, আমাদের মতন সেলফ ফাইন্যান্সের ছেলে পেলেরা সেখানে কালেভদ্রেই দাওয়াত পায়। বুয়েটে না পড়ে টেক্সটাইলে কেন পড়লাম না সেটার দুঃখে ইদানীং রাতে ঘুমাতে পারছি না। এরমধ্যে অনলাইনে প্রতীক্ষারত দেশে ফেলে আসা সদ্য বিবাহিতা বউকে প্রতিদিন সাজিয়ে বলতে হয় – হ্যাঁ, সব খুব ভাল চলছে, আর কয়েকটা দিন মাত্র। তারপরই নিয়ে আসছি তোমাকে…
বিদেশ নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল দেশে থাকতে। বুয়েটে পড়ার সময় শুধু বড়ভাইদের গল্প শুনতাম। সবাই বড় বড় চাকরি করে, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, গোগল, এ্যাপল এইসব বড় বড় কোম্পানি সবার হাতের মুঠোতে। বাবা ৩০ বছর সরকারি চাকরি করেও ব্যাংক ব্যালেন্স নেই, ঢাকা শহরে একটা বাড়ি করতে পারেননি, শুধুমাত্র ঘুষ নিতে না শেখার “অপরাধে“। পাশ করেই রিটায়ার বাবার থেমে থেমে চলা সংসারটাকে আবার গতি দিতে হবে, ১০ বছরের প্রতিজ্ঞায় বাঁধা প্রেমিকাকে ঘরে আনতে হবে সামাজিকতা সম্পূর্ণ করে – এইসব বাংলাদেশি আর অনেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরের বড় ছেলেদের মতই তখন আমার অবস্থা।
মা বলেছিল, তোর বাবা আমার জীবনের বেশিরভাগ আশা পূরণ করতে পারেনি, এবার ছেলে বড় হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বড় চাকরি করে এখন আমাদের আশাপূরণের দিন আসছে। সমবয়েসি প্রেমিকা মনে করিয়ে দিয়েছিল, পাশ করার পর পরই বিয়ে না করলে বাবা মা অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক করে ফেলবে। ছাত্রজীবনে আদর্শবাদী রাজনীতি করতে করতে ভেবেছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে একদিন দেশের জন্য একটা কিছু করতে হবে। কোথায় দেশ, কোথায় আদর্শ! পাস করে বের হব এর জন্য প্রতীক্ষায় ছিল অনেক আপনজন আর কাছের মানুষ – সেটা আগে ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি।
বাস্তবতা বুঝতে আরেকটু বাকি ছিল। বুয়েটে দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে মামা কথা দিয়েছিলেন পাশ করে বের হলে আমেরিকা যাবার প্রাথমিক সব খরচ ধার দেবেন। পাশ করার ছয় মাস বাকি, তখন মামাকে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বুঝতে পারলাম ওটা একটা কথার কথা ছিল। প্রেমিকাকে দেয়া কথা, মাকে দেয়া কথা, দেশকে দেয়া কথা, আমেরিকা গিয়ে সবকিছু পালটে দেবার স্বপ্নটা মামার একটা কথায় থমকে গেল। “এত টাকা ত এখন হাতে নেই!” অনেক লক্ষ টাকা লাগে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় যেতে, অস্ট্রেলিয়া কানাডা আর ইংল্যান্ডেরও একই অবস্থা। সেশন জটের কারণে এমনিতেই ২-৩ টা বছর বেশি খরচ হয়ে গেল পাস করে বের হতে, খুব দ্রুত একটা কিছু করতে হবে – খুব ফাটাফাটি জিপিএ না থাকায় স্কলারশিপ পাবার চান্সও নেই। এমন সময় সামনে এলো জার্মানি! টিউশন ফি নেই, থাকা খাওয়া নাকি কাজ করেই চালানো যায়। সবাই বিদেশে ইংরেজি বলতে পারে, একটা কিছু নিশ্চয়ই উপায় হয়ে যাবে। হিটলার, বরিস বেকার, স্টেফি গ্রাফ, লোথার ম্যাথিয়াস, ইউরগেন ক্লিন্সম্যান – এই ছিল তখন আমার চেনা জার্মানি। কোথায় যাচ্ছি, সেই দেশে কি আদৌ কখনও জব পাওয়া যায় কিনা কিংবা বিদেশি ছাত্রদের কাজের ওয়ার্ক পারমিট দেয় কিনা; সেই দেশের মানুষদের ফরেইনারদের সম্পর্কে কি ধারণা – এইসব প্রশ্নগুলো করারও যেমন কেউ ছিলনা, তেমনি ছিল না প্রশ্ন করার সময়টুকুও। বিদেশে গেলেই জীবনের সব হতাশা শেষ, আশেপাশের মানুষগুলো থেকে শুনে শুনে বিদেশে উচ্চশিক্ষা তখন একটা অন্য ভুবনের হাতছানি। একবার বিদেশে পাড়ি দিলেই জীবনের সব সমস্যার চাবি হাতের মুঠোয় চলে আসবে, এটা কেমন যেন মনের ভেতরে গেঁথে গিয়েছিল। হোক না সেটা আমেরিকার বদলে জার্মানি – বিদেশ বলে তো কথা।
আমাদের হোস্টেলের পাশেই এলবে নদী। মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে গেলে এলবের পাড়ে গিয়ে বসি। আশেপাশের অসংখ্য আনন্দিত মানুষের মাঝে অনেক দূরে ফেলে আসা কি যেন একটা খোঁজার বৃথা চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে যখন বেলা নেমে আসে, দূরে সূর্য ডোবার সময় ঘনিয়ে আসে আর চারদিক অদ্ভুত একটা নরম আলোয় ডুবে যায়, মনে পড়তে থাকে বহুদূরে ফেলে আসা আপনজনদের, তাদের আশা আর অনেক বছরের জমানো প্রতিশ্রুতির কথা। কেন যেন মনে হতে থাকে স্বপ্ন দেখা কত সহজ; কঠিন শুধু এই বাস্তবতার সামনে এসে দাঁড়ানো। প্রকৃতির আসহ্য সৌন্দর্যের মধ্যেও মনে হয়, বাস্তবতার সবটুকু বোধহয় দেখা হয়নি এখনও।
চলবে…
আদনান সাদেক, ২০১৩
২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০২
মশিকুর বলেছেন:
সিরিজ ভালো লাগছে। চলুক..
৩| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৪
কোলড বলেছেন: Sounds very similar to my story when I came to US in 1997 but I didnt have to deal with learning a foreign language. I'd love to know your story in Germany. Back in 90's never heard anyone going to Germany for higher education except some DAD PhD programs.
২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪০
আদনান সাদেক বলেছেন: সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ না হলে হয়তো আমরাও জার্মানি আসার কথা ভাবতাম না। সেই সময় থেকেই বলা যায় জার্মানিতে আসার শুরু আমাদের ছেলেদের।
আরেকটা ব্যপার হল, ২০০০ সাল থেকে জার্মানিতে আইটি বা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে বিশেষ গ্রিন কার্ড দেয়া শুরু হয়, এর আগে অল্প কিছু স্কলারশিপ ছাড়া এখানে জব পারমিশন কেউ পেত না।
৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
রন৬৬৬ বলেছেন: Your father’s story reminds me of my own. We don’t have land and cash balances. He retired as a DGM from Janata Bank in 1985. He was a Regional Manager in 1972 for Rajshahi Division. My mom pressed him to buy some land and keep bank balances. There were mass looting in government banking sector during ‘70s and still it is continuing. Bank Officials were involved directly. He refused to do so. My mom divorced him in 1975 (she was working with American Express Bank Ltd., Motijheel). As a broken family, we suffered lot. But somehow my step dad (he was a colleague of my mom’s in the same bank) financed our (we are three siblings) educational and living expenses. My step dad even paid my entire tuition and boarding plus air ticket for Delhi University study (1989-1992). Life goes on….. my father retired in 1985 and gone back to Daudkandi, Comilla in his own village and passed away peacefully in 1997 ( I was in Abu Dhabi, UAE). My mom died in 2007 (I was in Brisbane, Australia at that time). I finally came back from Austraia in 2011 after spending 20 years overseas. Moreover, I came with taka 70 lacs from Australia. I worked 10 years in a Bank at Abu Dhabi and I invested all the money in Australia and got returned almost double. The bottom line is I remained single and unmarried at the age of 46 (not out!). My Aunty in California will apply for my visa early next year. Unlike your maternal uncle, she is very generous. Me and my younger brother living at her flat at New Eskaton Road for 15 year free of cost!!!! She does not have children.
I have a suggestion for you. Can you find a government job in Bangladesh in engineering sector? Is it possible? If possible please go ahead for that. Just work for two years! You can apply as a migrant visa in Canada or Australia. Direct immigration with wife and children. Think about that.
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৫
আদনান সাদেক বলেছেন: আপনার পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে জার্মানিতে বেশ ভাল আছি, আর কোথাও যাবার ইচ্ছে নেই আপাতত। গল্প গুলো অনেক বছর আগের, এর মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে।
৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৫
ল্যাটিচুড বলেছেন: আপনার লিখা ভালো লাগে। পোষ্ট অনুসরণে রাখলাম।
৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬
েবনিটগ বলেছেন: apni inter kon batch?
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৪
আদনান সাদেক বলেছেন: ৯৫
৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
আনোয়ার ভাই বলেছেন: অসাধারন
৮| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ঐ রকম একটা দিশেহারা অবস্থার কথা যতই পড়ছি, আমার উৎকণ্ঠার সাথে আপনার সে সময়কার অনুভব গুলো মিলিয়ে নিচ্ছি, ভালো লাগছে পড়তে। যদিও এখন ভালো আছেন জেনে ভালো লাগছে কিন্তু ঐ খারাপ সময়টা কী করে নিজের আয়ত্বে চলে এলো জানার জন্য পরের পার্টে যাচ্ছি।
অফ টপিক - একটা ব্যাপার খেয়াল করছি, মন্তব্যের জবাব আপনি স্কিপ করে করে দিচ্ছেন। এটা হয়তো ব্যস্ততার কারণে হবে, এমনটাই ধরে নিচ্ছি।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩
আদনান সাদেক বলেছেন: আনসোশাল মানুষ, সেই জন্য এমন হচ্ছে। তবে মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না, কেউ মন দিয়ে পড়ছে এটা মনে হলে অন্যরকম একটা ভাললাগা হয়। এটাই বোধহয় লেখকের সার্থকতা।
৯| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
প্রত্যেক জীবন থেকেই শিখার কিছু আছে।
ধন্যবাদ জানালাম !
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩
আদনান সাদেক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ!
১০| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: হতাশার আঁধারের মাঝেই আশার আলো জ্বলে উঠে.......... আশাকরি সামনে সুদিন অপেক্ষা করছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭
পাজল্ড বলেছেন: চলুক।