![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে সবচেয়ে আগে পুরনো একটা সাইকেল কিনেছি, মাত্র ২০ ইউরো দাম। আমার সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিকার সাথে ঘনঘন দেখা হবে, শুধু এইজন্য। ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েকশ মিটার পথ মাত্র, তারপরই দেখা জার্মানিতে আমার প্রথম প্রেমের। এলবে। আমাদের দেশের পদ্মা মেঘনার কাছে একটা সরু খালের মতন, কিন্তু প্রায় ১১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। মন খারাপ থাকুক আর ভাল থাকুক, আমার প্রবাস জীবনের সব পাওয়া আর না পাওয়ার গল্প বলতে পারি এমন একজন এই এলবে নদী।
জার্মানিতে আসার পর দুই সপ্তাহ পরের কথা। সেইদিনই প্রথম নিজে নিজে একা ঘর থেকে বের হয়েছি আশপাশটা ঘুরে দেখব, এরমধ্যে বেশ খেয়াল করতে হচ্ছে চারদিকটা – আবার চিনে বাসায় ফিরে আসতে হবে। জার্মান বলতে পারি না, বুঝতেও পারি না কিছু – পথ হারালে যেন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে হলেও আবার ঘরে ফিরে আসা যায় সেইজন্য একটা কাগজে হোস্টেলের ঠিকানা টুকে পকেটে রেখেছি। দুই একটা বাড়ি পার হয়ে একটু এগোতেই দূরে বেশ উঁচুতে একটা ব্রিজ-মত কিছু দেখলাম মনে হল, সেটা দেখে কৌতূহল-বসত আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম।
আমি ঢাকার ছেলে, জন্ম থেকেই অনেক ইট-বালু, সুরকি আর সিমেন্টের সাথে পরিচয়। ঘর থেকে বেরুলে আমার চেনা জগত ছিল ইট পাথরের উঁচু বিল্ডিং, সেইসব বিল্ডিং পেরিয়ে এগিয়ে গেলে আবার বিল্ডিং। সত্যিকার প্রকৃতি আমার খুব কম দেখা হয়েছে। অনেক দূর পর্যন্ত দুচোখ মেলে কিছু দেখা যায় এমন একটা বস্তুই আমার চেনা – ছাদে শুয়ে আকাশ দেখা। সেইদিন রাস্তার শেষ বাড়িটি পেরিয়ে এগিয়ে যেতেই এক নিমিষের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী আমার সামনে উন্মোচিত হল। ব্রিজের অনেক উপর উঠে যতদূর তাকাই সুদূর বহমান আঁকাবাঁকা একটা সরুধারা। দূরের পাহাড়ের কোলে ঘন মেঘমালার ফাঁকে থেকে উঁকি দিচ্ছে মধ্যবেলার প্রখর সূর্য, চারদিকে ঝকঝকে সবুজের বন্যা – এই অসম্ভব সৌন্দর্যের মধ্যে মাথা উঁচু করে অনেকদুর পর্যন্ত নদীর দুইপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটি মনুষ্য লোকালয়, ড্রেসডেন শহর। এমন কিছু আমার জীবনে প্রথমবারের মতন দেখা। হলিউডের সিনেমাতে দেখা, কিংবা ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কেনা পোস্টারে দেখা ইউরোপের সৌন্দর্য তখন তাঁর সত্যিকার রূপ নিয়ে খুব সামনে থেকে আমার চোখ ঝলসে দিল। মনে হল আমার বুকের মধ্যে যেন এক লক্ষ প্রজাপতি উড়ে গেল।
অনেক বছর আগের কথা। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, বেশ একটা আরামদায়ক বাতাসে খুব কাছাকাছি ঘেঁষে হাঁটছি একজন মায়াবতীর পাশে। মাট্রিকের মতন ইন্টারেও ফাটাফাটি টাইপ রেজাল্ট করেছি কিছুদিন হল। বুয়েটে চান্স পাবই এমন একটা আত্মবিশ্বাস নিজের ভেতরে, ভর্তি পরীক্ষার তখনো অনেকটা সময় বাকি। নিজে ভর্তি কোচিং না করে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে একটা কোচিং সেন্টারে ইন্টারমিডিয়েটের স্টুডেন্ট পড়ানো শুরু করেছি। সেদিন কোচিংএ পড়ানো শেষ করে নিচে নামতেই দেখি দুই বছরের চেনা বান্ধবীটি অপেক্ষা করছে দরজার পাশে।
আমরা দুজন তখন খুব ভালো বন্ধু দুইজনের, এত ভাল যে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে দেখা হয় দুইজনের, কম করে হলেও দিনে একবার ফোনে কথা। না, প্রেম ফ্রেম ছিল না কিছু, শুধুই খুব ভাল বন্ধু। একসাথে বই পড়ি, গান শুনি, নিজেদের সব ভালমন্দ শেয়ার করি। কয়েক সপ্তাহ আগে মায়াবতী বলছিল কে একজন নাকি তাঁর সাথে প্রেম করতে চাচ্ছে, আবার ছেলেটাও নাকি একদম খারাপ না। ওঁর কাছে যদিও ছেলেটা ভালো একটা বন্ধুর মতনই, ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে। আমি যেহেতু তাঁর সবচেয়ে ভাল বন্ধু, তাই আমার সাথে শেয়ার করে একটা পরামর্শ নিতে চাইল।
সেই কথাই বলছিলাম – অনেকদিনের পরিচয়, কোন প্রেম-ফ্রেম নেই, “জাস্ট পিওর ফ্রেন্ডশিপ”। সেইদিন মায়াবতীর সম্ভাব্য বয়-ফ্রেন্ডের ডিসিশন দিতে গিয়ে থতমত খেয়ে গেলাম। কোন কারণ ছাড়াই কি একটা অন্যকথার প্রসঙ্গে ঝগড়ামত বাঁধালাম, খুব কাজ আছে এমন বলে চলে গেলাম বাসায়, এরপর ফোন ধরাও বন্ধ। কেমন যেন একটা ক্ষোভ নিয়ে যোগাযোগ ছাড়াই বিক্ষিপ্তভাবে কেটে গেল অনেকগুলো বিষণ্ণ দিন। তারপর সেইদিন, কোচিং সেন্টারে নিচে দেখা।
“আদনান, তুমি আমার ফোন ধরছ না কেন, আমি কি করলাম তোমার সাথে?”
কোচিং-এর ছাত্রছাত্রীরা তখন বের হয়ে আসছে, আমাদেরকে কথা বলতে দেখে কেমন যেন একটা সবজান্তা মুখের ভাব করে মুখ টিপে হাসি দিল কয়েকজন। আমি কড়মড় তাকাতেই আবার ভাবলেশহীন মুখে সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে পা দিল। আমরা হেঁটে কথা বলতে বলতে পাশের গলিতে ঢুকলাম। দুই সপ্তাহ ফোন না ধরার কোন অজুহাত ছিল না আমার, নিজে ইচ্ছে করে ঝগড়া করা, এখন সামনাসামনি উত্তর দিতে পারছি না। ও বলল, “আমি তোমার রাগ করার কারণ না জেনে আজকে বাসায় ফিরছি না।” আমরা উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে এই গলি থেকে অই গলি হাঁটছি, কারো মুখে কোন কথা নেই।
সেইদিন সন্ধ্যে হয়ে আসা কনে দেখা আলোতে পাশে হাঁটা মায়াবতীকে আড়চোখে নতুন করে দেখছিলাম। অনুভব করলাম পাশে হাঁটা এই অপরূপা মেয়েটিকে পাশ থেকে যেতে দেই কেমন করে। শুধু বন্ধু এই পরিচয়ে এঁকে ধরে রাখতে পারব না আর, চারপাশে ভাল ছেলের অভাব নেই। একটা না একটা সময় ওঁ অন্য কারো হয়ে যাবে। এই যেমন এখন হাঁটতে হাঁটতে একটা অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে, কোমল একটা উষ্ণতার ছোঁয়া। আপন ভেবে যার উপর নির্বিঘ্নে ছেড়ে দেয়া যায় সবটুকু ভার, এমন একজন হয়ে যাবে অন্য কারো প্রেমিকা! আমার চেয়ে কে তাঁকে বেশি মমতা দিয়ে ঘিরে রাখবে, কে দুঃসময়ে হাত বাড়িয়ে আগলে রাখবে? মায়াবতী কি ভাবছিল জানা হয়ে উঠেনি। হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়ালে হাতে হাত লেগে যাচ্ছিল কয়েকবার, একটা সময় অবাক হয়ে খেয়াল করলাম সেই হাত সরিয়ে নেবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না তাঁর মধ্যে। আমার বুকের মধ্যে যেন এক লক্ষ প্রজাপতি উড়ে গেল।
প্রথম দেখায় সেদিন ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে বুকের মধ্যে আরেকবার তোলপাড় হয়ে গেল। অন্য কারো মধ্যে নিজের অস্তিত্ব হারানোর একটা ভীষণ আনন্দের অনুভূতি টের পেলাম নিজের ভেতর। এলবের প্রেমে পড়ে গেলাম প্রথম দেখায়।
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে এর মধ্যে। মায়াবতীসহ আরও অনেক আপনজন ফেলে যেমন বাংলাদেশ থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম জার্মানিতে, সেইরকম একসময় সময়ের প্রয়োজনে এলবেকে পেছনে ফেলে ড্রেসডেন শহরও ছেড়ে গেলাম। মাঝে মাঝে এখনো সেই মায়াবতীকে নিয়ে অনেক শত মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে যাই চিরচেনা ড্রেসডেনে, আমার জার্মানির প্রথম প্রেমের কাছে।
সেই মায়াবতী আমাকে এরমধ্যে আরও একজোড়া মায়াবতী উপহার দিয়েছে। ওরা এলবের পাশে গিয়ে পানিতে নেমে পড়ে, আনন্দে জুতো কাপড় ভিজিয়ে ফেলে। ওদের মা ওদেরকে নিরস্তর করার বৃথা একটা চেষ্টা করে। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি ও মানুষের এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করি। অপরূপা এলবের পাড়ে আমার তিন মায়াবতীর হাস্যময় মুখগুলি দেখে মনে হয় পৃথিবীটা অনেক আনন্দের একটা জায়গা, এঁকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাই কি করে! মেয়েদের মা আমাকে দেখে বিরক্ত মুখে একবার বলে, “কি শুধু আমিই দেখব বাচ্চাদের, দেখছনা ওরা জামা ভিজিয়ে ফেলেছে, আবার না ঠাণ্ডা লেগে যায়।“
আমি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকি। শুধু মনে মনে বিড়বিড় করে বলি, “ভালবাসি”।
চলবে…
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৩
ভণ্ড বাবা বলেছেন: ২০১৪ এর winter এ মাস্টার্স করার জন্য জার্মানি যেতে চাচ্ছি। আমার চয়েস
University of Tübingen অথবা http://www.uni-jena.de/en/start.html । সাবজেক্ট ECONOMICS. Any suggestion please.
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৮
আদনান সাদেক বলেছেন: আমি হলে টুইবিঙ্গেনে যেতাম, কিন্তু ইয়েনাও খুব চমৎকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়।
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখানে দেখতে পারঃ
বিসাগ ওয়েব সাইটঃ http://www.bsaagweb.de
বিসাগ ফোরামঃ http://www.facebook.com/groups/BSAAG/
জার্মান শেখাঃ http://www.facebook.com/groups/deutsch.bsaag/
বাসস্থানঃ Click This Link
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৪৫
ভিটামিন সি বলেছেন: চলুক....
৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৫
শোভন শামস বলেছেন: জার্মানির জীবন যাপনের কথা লিখে যান।
ভাল থাকবেন
ধন্যবাদ
৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৬
সোজা কথা বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।ভালো লাগল।
৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩২
আনোয়ার ভাই বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। চালিয়ে যান
৭| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনেক ভালো লাগছে। প্লীজ চালিয়ে যান।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
আদনান সাদেক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া!
আপনি তো অনেক দিন ধরে লেখালেখি করেন, আরেকটু বলবেন কি লেখার কোন কোন যায়গায় উন্নতি করা যেতে পারে?
৮| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: হাহা! আসলে প্রথাগত লেখালেখি ব্যাপারে ধারনা খুবই কম ভাই। আপনার আর আমার লেখার ধরন বা গভীরতা প্রায় কাছাকাছিই।
লেখার সুন্দর আবেগ আছে, বর্ননা আছে। সব মিলিয়ে ভালোই। তবে এই ধরনের পোষ্টে যদি আরো কিছু ছবি দিতে পারেন, তাহলে আমরাও কিছুটা বর্নিত স্থানের স্বাদ পেতে পারি।
৯| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: এই বুঝি এলবে ? সুন্দর !!
মায়াবতীর সাথে আপনার অনুভবের বর্ণনা, কারণ ছাড়া ঝগড়া লাগিয়ে ফোন না ধরা, সেই অচেনা অনুভব প্রথম প্রেমের !! ফিলিং নস্টালজিক !!!
খুব উপভোগ করছি লেখা
১০| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
লিখাটা কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে
আরো পড়তে চাই!
১১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
নীল-দর্পণ বলেছেন: বাহ!
১২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
ডি মুন বলেছেন: খুব সুন্দর স্মৃতিচারণ
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৯
নানাভাই বলেছেন: চলুক..............।