![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপ্রিল ১০, ২০০২।
স্থান: জার্মান ভাষার পরীক্ষাকেন্দ্র, ড্রেসডেন ইউনিভার্সিটি, জার্মানি।
পরশুদিন মাত্র জার্মানিতে পা দিয়েছি। ভিসা সময়মত পেলেও সনদপত্র জনিত কিছু জটিলতার কারণে কয়েকটা দিন দেরী হয়ে গেছে দেশ ছাড়তে। প্রথমদিনে ড্রেসডেনে পা দেবার পর আমাকে রেলস্টেশন থেকে পিক-আপ করেছে দুইটা ইন্ডিয়ান ছেলে। আমার কোর্সে কোন বাংলাদেশী ছেলে পেলে নেই। থাকার কথাও না। খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই কারো – জার্মানে মাস্টার্স করতে আসে, তাও আবার প্রায় কোন ভাষা না শিখেই! ৯ তারিখ সকালে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ড্রেসডেনে আসার পরই ইন্ডিয়ান ছেলেটা বলল ১০ তারিখ ল্যাংগুয়েজের কি একটা পরীক্ষা আছে, সেইটার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে কে কে মাস্টার্সের কোর্স শুরু করতে পারবে। এই পরীক্ষা ভাল না হলে ভাষার কোর্সে ভর্তি হতে হবে নিজের পয়সা খরচ করে, আসল মাস্টার্স শুরু করা যাবে পরের বার সেই পরীক্ষা পাস করে তবেই। এই পরীক্ষা আবার প্রতি ৬ মাস পর পর হয়, নতুন সেমিস্টারের শুরুতে।
ইন্ডিয়ান যে ছেলেটির ঘরে রাত কাটিয়েছি, সে পরীক্ষা দিচ্ছে না। ও বলেই দিয়েছে, এই পরীক্ষা পাশ করা সম্ভব না ওর পক্ষে। যদিও সে আরও ছয় মাস আগে এসেছে এখানে। আমার জার্মান শুনে মুখ টিপে হেসে বলেছে, আমি খালি খালি সময় নষ্ট করতে যাচ্ছি। পরীক্ষা পাস করার কোন সম্ভাবনা আমার নেই, কিন্তু সমস্যাটা অবশ্য অন্য জায়গায়। সাথে করে আনা ১৪০০ ইউরো দিয়ে আর যাই হোক ল্যাংগুয়েজ কোর্স করার পয়সা হবে না। আপাতত ফেল করা নিশ্চিত ভবিষ্যৎবানী নিয়েই পরীক্ষা দিতে বসে গেছি।
পরীক্ষার হলে আমার ঠিক পাশে বসেছে অসম্ভব ফর্সা একটা মেয়ে। তার দিকে তাকিয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসল, মেয়েটার সমস্ত শরীর থেকে যেন নরম একটা আলো বের হচ্ছে। তার সোনালী চুলগুলো রাতের অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে নিশ্চয়ই। আমাদের দেশে অনেক মেয়েরাই একটু গায়ের রঙ উজ্জ্বল হলে মাটিতে আর পা পড়েনা। এই মেয়েটার পাশে বসলে তাদের কালো পরীর মতন লাগার কথা। সেই উজ্জ্বল আলোতেও আমার বর্তমান বাস্তবতার খুব পরিবর্তন অবশ্য হল না। আপাতত পরীক্ষায় ফেল করতে যাচ্ছি, তারপর ল্যাংগুয়েজের টাকা নাই। ভাষার পরীক্ষা পাস না করে মাস্টার্স করার স্বপ্ন আপাতত শিকেয় উঠিয়ে রাখতে হবে। তারপর একসময় দেশে ফেরত যেতে হবে, তখন আর এই ফর্সা মেয়ের গল্প মনে করে পেট চলবে না।
প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে শুধু নামটা লেখা ছাড়া আর কিছু মাথায় এলো না। হাতে ধরা কাগজে অসংখ্য পিপীলিকার পথচলা, হায়ারোগিফ্লিক্স কনসেপ্টটা মনে হল যেন জার্মান ভাষা থেকেই এসেছে। প্রশ্নই বুঝতে পারছি না, উত্তর দেব কি। দেশে থেকে আসার আগে বিশ্বাস করতাম, যত বাঁধা বিপত্তি আসুক না কেন জীবনে, মনের জোর থাকলে ঠিক পার হয়ে যাব। এখন বুঝতে পারছি, সবসময় মনের জোর দিয়ে কিছু হয় না। নটরডেম কলেজে থাকতে স্ট্যাটিস্টিকের স্যার বলেছিলেন, আদনান, তুমি একদিন অনেক বড় হবে। বিপদে পড়লে বিশ্বাস হারিয়ো না নিজের উপর থেকে। সবসময় পজিটিভ ভাবার চেষ্টা করবে, দেখবে একটা না একটা উপায় ঠিক বের হতে যাবে। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে চুপচাপ স্যারের কথা ভাবছিলাম আর পজিটিভ কিছু ভাবার চেষ্টা করলাম। খেয়াল করে দেখলাম জার্মানিতে আসার পর থেকে মাত্র দুই দিনেই কয়েকটা ভাল ঘটনা ঘটেছে। এমনকি স্বপ্নেও আগে ভাবিনি – এমন দুটো ঘটনা পর্যন্ত ঘটে গেছে আসার প্রথম দিনেই।
প্রথমদিন ফ্রাঙ্কফুর্টে যখন নামি, ট্রেনের জন্য অনেকটা সময় ফ্রাঙ্কফুর্টের বিশাল রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম। ভোর ৪ টা থেকে প্লাটফর্মে বসে আছি, সকাল ছয়টার ড্রেসডেনের প্রথম ট্রেনের অপেক্ষায়। পায়ের এলিফ্যান্ট রোড থেকে কেনা নকল রেবক তখন তার কোয়ালিটি জানান দিচ্ছে। তাপমাত্রা বোধহয় ৪-৫ ডিগ্রি, এত ঠাণ্ডা জীবনে কখনো পাইনি। বাইরে বসে থেকে একটু পরেই মনে হল, আমার পা যেন বরফ হয়ে গেছে। অনেকক্ষন চেষ্টা করে দেখলাম, কোনভাবেই পায়ের একটা আঙ্গুলও নড়ানো যাচ্ছে না। বঙ্গ বাজারের কেনা জাম্বুস জ্যাকেট দেখে কেউ কেউ মাঝে মাঝে একটু আড়চোখে তাকাচ্ছে – সেটা বেশ টের পাচ্ছি। কেনার সময় দোকানদার বলেছিল, ইউরোপের লোকজন নাকি বঙ্গে এসে এইসব উঁচু মাপের জিনিস কিনে নিয়ে যায়। আশপাশে অবশ্য কাউকেই দেখলাম না এরকম জোব্বা টাইপ বিশাল জ্যাকেট পড়ে ঘুরে বেড়াতে। আমার সাথে নিউমার্কেট থেকে কেনা দুটো বিশাল আকৃতির সুটকেস। দোকানদার বলেছিল, “লাইফটাইম গ্যারান্টি স্যার, আপনার ছেলেও ব্যবহার করতে পারবে।“ আপাতত প্লেন থেকে নেমে লাগেজ পেয়ে খেয়াল করেছি একটা সুটকেসের চেন ছিঁড়ে গেছে। অন্যটার ছয়টা চাকার মধ্যে একটা চাকা টানার সময় সবসময় অন্যদিকে ঘুরে থাকছে। অবশ পায়ে কোনমতে দুইটা সুটকেস নিয়ে প্লাটফর্ম পর্যন্ত এসেছি, এখনও দুই ঘণ্টা বাকি ট্রেনের।
স্টেশনের আয়তনের তুলনায় চারদিকে মানুষজন খুব কম, সেটা অবশ্য ভোরবেলা বলে কথা। দেশ থেকে আসার আগে শুনেছিলাম, ফ্রাঙ্কফুর্টে নাকি অনেক বাংলাদেশী। দুই ঘণ্টা কিছু করার নেই, আমি খুব অস্বস্তি নিয়ে আশেপাশের মানুষের কথা কান পেতে শোনার চেষ্টা করছি, যদি বাংলা শোনা যায় – এই আশায়। খুব ক্ষুধা পেয়েছে, প্লেন থেকে নামার ঠিক আগে আগে রাতের খাবার দেয়া হয়েছিল, একটু পরেই জার্মানিতে পোঁছাব – এই উৎকণ্ঠায় খেতে পারিনি ঠিকমতো। খাবার দোকানপাট বলে তেমন কিছু এখনও খোলেনি স্টেশনে, শুধু কয়েকটা অটোম্যাট দেখতে পাচ্ছি কি সব হাবি জাবি চকলেটের ছবিসহ। সুটকেস দুইটার ওজন কম করে হলেও ৭০ কেজি, বিমান বাংলাদেশে আসার বদৌলতে ইচ্ছেমত ওজন আনা গেছে। এখন সেই ভারি সুটকেস টেনে যে আশে পাশে খাবার খুঁজতে যাব, সেই সাহসও হচ্ছে না। তারমধ্যে একটা সুটকেস আবার সামনে টানলে অফ স্পিনের মত টার্ন পাশে চলে যায়। আপাতত পেটে খিদে নিয়ে দুই বিশাল সুটকেস আগলে নিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় করছি।
“আপনে বাংলাদেশের নাকি?” একদম খাঁটি সিলেটী ভাষায় কেউ যেন কিছু একটা বলল।
এই লোকটাকে দূর থেকে মেঝে পরিষ্কার করতে দেখেছিলাম অন্য একটা প্ল্যাটফর্মে। বাংলাদেশী না ইন্ডিয়ান বুঝতে পারি নি। আমাদের কথা জমে গেল একটু আলাপেই, শুধু বাংলা বলতে পারছি – এই আনন্দে মনটা ভরে গেল। লোকটা আমার মুখ দেখেই কিভাবে যেন বুঝতে পারল আমার ক্ষুধার কথা। বলল এখানে অটোম্যাটগুলোতে শুধু ছাইপাঁশ মিষ্টি জিনিস থাকে- দামও অনেক বেশী। তার নাইট ডিউটি থাকে বলে সে খাবার বাসার থেকে নিয়ে আসে। একটু পরেই আমরা বেঞ্চিতে বসে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ডাল ভাত ভাগাভাগি করে খেলাম। লোকটার একটু তাড়া ছিল, সব মিলিয়ে আধ ঘণ্টাও হয়নি, চলে গেল। জার্মানিতে আসার প্রথম প্রহরে এত আন্তরিকতা অপেক্ষা করছিল আমার জন্য এটা ভাবিনি একদমই।
লাইপজিগে আমাকে একবার ট্রেন বদলাতে হবে, এর জন্য মাঝে ২০ মিনিট সময় আছে। ৭০ কেজির বাক্স পেটরা নিয়েও এই সময়ের মধ্যেই ট্রেন বদলে নিতে পারব নিশ্চয়ই। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ছেলেটার সাথে কথা হয়েছে পাশের সহযাত্রীর মোবাইল ফোন থেকে, ওকে বলে দিয়েছি কখন আমি নামব ড্রেসডেনে। তারপরও একটু একটু টেনশন হচ্ছে, পেটের ভেতরে কেমন একটা খালি খালি অনুভূতি। যদি কিছু একটা ঝামেলা হয়ে যায়, যদি ট্রেন লেট করে, যদি ওই ছেলেটা আসতে দেরী করে… আমার এখনও কোন রুম ঠিক হয়নি, গিয়ে কোথায় থাকব সেটাও তখনো জানিনা।
পথে হঠাৎ লাউডস্পিকারে ঘোষণা এলো- ট্রেন পনের মিনিট মত লেট, তবে পরের কানেক্টিং ট্রেন পাওয়া যাবে। মাঝে ২০ মিনিটের জায়গায় এখন অবশ্য আর মাত্র ৫ মিনিট সময় থাকবে। এরা এত দ্রুত ঘোষণা দেয় যে সবকিছু ঠিকমত বুঝে উঠতে পারিনি। আমার পাশের একজন জার্মানের সাথে পরিচয় হল ট্রেনে বসে, ভদ্রলোক কোলনে থাকেন। অফিসের কাজে লাইপজিগ যাচ্ছেন। আমাকে লাউডস্পিকারের ঘোষণাটা বুঝিয়ে বললেন। আমাকে একটু নার্ভাস দেখে ভরসা দিলেন, লাইপজিগে ৪ নম্বর প্লাটফর্মে নেমে ৫ নম্বরে গিয়ে ড্রেসডেনের ট্রেন বদলাতে হবে, খুব সহজ একটা ব্যাপার। ভদ্রলোককে আমার দুইটা সুটকেসের গল্প তখনো বলা হয়নি। হাতের বাইসেপগুলো টেনে হালকা ব্যায়াম করতে আরম্ভ করলাম, ৫ মিনিটে ৭০ কেজি ওয়েট লিফট এবং নতুন ট্রেনে ওঠা। অন্য কোন ট্রেনে উঠে না পড়লেই হয়!
আজ অনেক বছর এখানে থাকার পর জানি জার্মানিতে প্লাটফর্মগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ১ ও ২ নম্বর লাইনের জন্য আসলে একটাই প্লাটফর্ম, ঠিক একইভাবে ৩ ও ৪ থাকে একসাথে। ৪ নং প্লাটফর্মে নেমে তিন মিনিট কেটে গেল এটা বুঝতে যে, আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একটা টানেলের ভেতর দিয়ে পাশের ৫ নং প্লাটফর্মে যেতে হবে। মড়ার উপর ঘড়ার ঘা-র মতন আবার সেখানে কোন লিফট নেই (সাধারণত জার্মানির সব আধুনিক ষ্টেশনেই প্লাটফর্ম বদলানোর জন্য লিফট থাকে, লাইপজিগ ষ্টেশনকে পরবর্তীতে নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে, প্রতিটা প্লাটফর্মেই এখন লিফট আছে। ২০০২ সালের পুরনো অবস্থা এখন আর নেই!)।
আমি একটা সুটকেস উপরে রেখে অন্য সুটকেসটা টেনে নিচে নামালাম। আবার এক দৌড়ে উপরে উঠে গিয়ে পরেরটা নামালাম। একবার ভয় হল, আবার কেউ সুটকেস নিয়ে চলে যায় যদি। সিঁড়িটা অনেক দীর্ঘ- কম করেও ৩০টা ধাপ হবে। দুইবার উঠে নেমে আমার গা ঘেমে উঠল। ৫ নম্বরের সামনে এসে দেখলাম আবার সেই ৩০ ধাপের সিঁড়ি, এইবার উপরে তোলার পালা। প্রথম সুটকেস উঠানোর পর দেখলাম ট্রেন ছাড়ি ছাড়ি করছে। পরেরটা উঠাতে উঠাতে নিশ্চিত মিস করব, এরপর কি হবে ভাবতে ভাবতে গলাটা শুকিয়ে এল। এমন সময় অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, অন্য সুটকেসটা নিয়ে কে যেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আগন্তক হুড়োহুড়ি করে আমাকে দুই সুটকেসসহ ট্রেনে তুলে দিল।
আমি ঢুকতেই ট্রেন ছাড়ল, দরজার কাচের ভেতর দিয়ে বাইরের সেই সহৃদয় মানুষটির দিকে তাকালাম। আগের ট্রেনে পরিচিত হওয়া সেই ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে হাত নাড়ছেন। চেনা নাই জানা নাই, কই ভাবছিলাম নিচে রাখা সুটকেসটা একা পেয়ে কেউ আবার নিয়ে যায় কিনা। আর সেই অজানা সহযাত্রী আমাকে ট্রেনটা মিস হতে দিল না। আমার চোখদুটো এক অজানা ভাললাগায় আদ্র হয়ে উঠল। কেউ যেন পেছন থেকে আমাকে উদ্দেশ্য করে একটা কিছু বলল। পেছনে ফিরে দেখলাম, একজন জার্মান ভদ্রলোক আমার সুটকেস দুটো দেখিয়ে জানতে চাইছে কোন সাহায্য লাগবে কিনা। আমি চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করলাম, প্রথম প্রহরে কাঁদতে নেই!
জার্মান ভাষার প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু না লিখতে পেরে বোকার মতন বসে আছি। পাশের মেয়েটা দক্ষ হাতে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই অনেক বছর ধরে জার্মান শিখে এসেছে। আসবে নাই বা কেন, জার্মান ভাষায় মাস্টার্স পড়তে হলে ভাষা তো লাগবেই। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরে তাকাই। এপ্রিলের এই সময়টাতে দেশে থাকলে কি চমৎকার রোদ থাকতো, আর এখানে আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ। চারদিকে কি একটা বিষণ্ণ পরিবেশ, কোথাও একটু সূর্যের দেখা নেই। একটু চিন্তা করে মনে হল আসার পর থেকে এখনো একবারও সূর্যের দেখা পাইনি। ইন্ডিয়ান ছেলেটা বলেছে, “এখানে সূর্য নাকি কমই দেখা যায়, সব সময় মেঘলা মেঘলা ভাব, এইজন্য নাকি জার্মানদের মুখে হাসি কম।“
বাইরে তাকিয়ে কোথাও কোন আলোর রেখা নেই। চারদিক কেমন আশা শুন্য অন্ধকারের মতন, ঠিক আমার এখনকার মতন অবস্থা। মন শক্ত করে ভাল একটা কোন অতীত ঘটনার কথা মনে করতে চেষ্টা করতে থাকি। এর থেকেও খারাপ আর কি ঘটেছে জীবনে পরিক্ষার হলে বসে?
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে, ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। বাংলার প্রস্তুতি খুব খারাপ। শুধু খারাপ বললে ভুল হবে, কোন প্রিপারেশন নেই নি বললেই চলে। বইয়ের বাঁধাধরা গল্প ও তার বাঁধাধরা উত্তর পড়তে ভাল লাগত না। সবাই সাজেশন পড়ে, অনেক স্যারের কাছে গিয়ে প্রাইভেট পড়ে। সেইসব স্যার-ম্যাডামদের অনেক মোটা মোটা নোট পত্র ফটোকপি করার জন্য সবাই লাইন দিয়ে থাকে, এইসব ছাড়া নাকি ভালো ফলাফল করা যায় না। কেন যেন সাহিত্য নিয়ে অন্যরকম একটা ফিলসফি ছিল। এইসব নকল নকল সাজানো কথাবার্তা মুখস্থ করতে ইচ্ছে হত না। আমাদের কলেজের বাংলা পরীক্ষায় ফলাফল ভাল হচ্ছিল না বেশীরভাগ ছাত্রের, বিশেষ করে যারা বাংলা সারের নোট ফলো করছে না – আমিও তাদের দলে। কেমন একটা জিদ চেপে যাচ্ছিল। একবার চোখমুখ বুজে কলেজের ত্রৈমাসিক পত্রিকার জন্য একটা লেখা লিখে ফেললাম, বেনামে। বন্ধুরা নিশ্চিত পচাবে, কি দরকার!
আমাদের স্ট্যাটিস্টিক স্যার কলেজের সেই পত্রিকার সম্পাদক। উনি মোটা বেত না নিয়ে ক্লাসে আসেন না, তাঁর ভয়ে আমরা এমনিতেই একটু তটস্থ থাকি। তিনি একদিন ক্লাসে এসে পত্রিকার ছাপানো একটা লেখা দেখিয়ে হুমকির স্বরে বললেন, কে লিখেছে এই লেখা! তাঁর অন্য হাতে ধরা সেই পাকানো বেত। আমি ভয়ে মুখ নিচু করে বসে আছি। আমার প্রিয় বন্ধুটি আমাকে দেয়া কথা না রেখে স্যারের সামনে লেখক পরিচয় ফাঁস করে দিল। আমি ধরণি দ্বিধা হবার প্রার্থনা নিয়ে দাঁড়ালাম। সারের রাগী মুখটা এক ধরনের তৃপ্তির হাসিতে ভরে গেল। বললেন, খুব ভাল লিখেছ, লেখা চালিয়ে যাও। সারের কথায় আমি একধরণের সাহস পেলাম। এমনকি খেয়াল করলাম, অনেক সহপাঠীরা এসে বাহবা দিয়ে গেল। আমি লেখা চালিয়ে গেলাম, তবে পত্রিকা ফত্রিকার জন্য নয়, সম্প্রতি প্রেমে পড়া এক মহীয়সীর মন জয় করার লোভে। সেই সময়কার লেখা অসংখ্য চিঠির মন ভুলানো কথায় অনেক বছরের অনেক ঝড় বাদলে এখনো অটুট রয়ে গেছে তাঁর সাথে গড়ে ওঠা সম্পর্ক নামের জটিলতম মানবিক বিষয়টি।
ভাবছিলাম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা। বাংলা বইটা শুধু গল্পের মতন করে পড়া। পরীক্ষার হলে বসে সাহিত্য চর্চা শুরু হল। যেমন ইচ্ছে তেমন করে সাজিয়ে লিখে গেলাম, কলেজে ভাল মার্ক পাইনি, এখানেও ভাল পাবার সম্ভাবনা নেই, ফেল তো করাবে না আশা করি। দ্বিতীয় পত্রে কোন রচনা মুখস্থ করলাম না, প্রতিবারই এক একটা সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে টপিক থাকে। আমি সেটা নিয়ে ইচ্ছেমত লিখে গেলাম পরীক্ষার হলে। ব্যপারটা খুব নতুন কিছু ছিল না। ক্লাস সিক্স থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য ছিলাম, সেখানে বই পড়ে প্রতি বছরের শেষে একটা পরিক্ষামত দিতে হত। সেখানে সাজেশন বলে কোন ব্যপার ছিল না, শুধুমাত্র মনের ভাব প্রকাশ করাই মুখ্য।
সবাই বাংলা পরীক্ষার হল থেকে বের হবার পর আলোচনা করছিল কোন স্যারের সাজেশন কেমন কাজে লাগলো এই নিয়ে। আমি চুপ করে থাকলাম, কোন রচনা না পড়েই বিশ পাতা লিখে দিয়ে এসেছি – এইসব গাঁজাখুরি গল্প করলে কেউ বিশ্বাস করবে না। বরং আঁতেল বলে চালিয়ে দিতে পারে।
ইন্টারের রেজাল্টের পর মার্কসিট আনতে গেলাম কলেজে। রেজাল্ট আগেই বের হয়ে গেছে, চার বিষয়ে লেটারসহ স্টার-মার্ক, আপাতত সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো শেষ। যে কোন কারণেই হোক, বাংলার মার্ক নিয়ে একটু আগ্রহ ছিল। কলেজে গিয়ে দেখি আমাদের স্ট্যাটিস্টিকের সেই স্যারের হাতে মার্কসিট, এবং যথারীতি সেই পাকানো বেত। স্যারের সামনে বিশাল একটা লাইন। নটরডেম কলেজে এমনিতেই দল বেঁধে ভাল ছাত্র, আমাদের গ্রুপ সেভেনে স্ট্যাটিস্টিকের বদৌলতে অনেক ছেলেপেলে ভাল ভাল মার্ক পেয়েছে। মার্কসিট হাতে নিয়ে সবাই স্যারকে সালাম করছে পা ছুঁয়ে। আমি একটু পিছনে দাঁড়িয়ে, টেস্ট পরীক্ষায় মাত্র ৬১০ পেয়েছিলাম, আর যাই হোক ভাল ছাত্রের লিস্টে আমার নাম নেই। সবাই ৮০০/৮৫০ নম্বর নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে দেখে একটু ঈর্ষা হল। স্যারের হাত থেকে মার্কসিট নেবার সময় খেয়াল করলাম তাঁর মুখটা একটু যেন গম্ভীর, একটু কি দেরী করছেন আমাকে নম্বরখানা দিতে? এত কি আছে দেখার! হঠাৎ করে স্যার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সবাই একটু অবাক, আমিও ব্যতিক্রম নই। স্যারের হাত থেকে শিট নিয়ে নম্বর দেখে আমার চোখ ছানাবড়া, কেমন করে নয়শ’র বেশী পেলাম, যোগে ভুল ফুল হয়েছে নিশ্চয়ই! বাংলার নম্বর দেখে প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো, মাত্র তিন নম্বরের জন্য লেটার মার্ক মিস!
বাইরে কি একটু সূর্য দেখা দিল? পরীক্ষার বিশাল বড় হল রুমটা এক চিলতে আলোতে আলোকময় হয়ে গেল। আমার পাশে বসা মেয়েটার গায়ে একটু সূর্য পড়তেই চারদিক যেন ঝলমল করে উঠল। প্রথম প্রহরে জার্মানির মাটিতে পা দেবার পর প্রথম সূর্যোদয়। উজ্জ্বল সেই আলোক শিখার মধ্যে মানবীয় আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপেক্ষা করে আমার চোখে পড়ল অন্য কিছু একটা। মেয়েটার পাশে তার ভরাট করে ফেলা প্রথম পর্বের উত্তরপত্র অবহেলায় পড়ে আছে, চোখ বড় বড় করে খেয়াল করলাম – সব উত্তরগুলো দেখা যাচ্ছে। মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নপত্র। ধুকধুক বুকে আড়চোখে তাকিয়ে দুই মিনিটের মধ্যে আমার প্রথম পাতার উত্তর দেয়া শেষ হয়ে গেল। ঈশ। যদি অন্য উত্তরের পাতাটা পাশে রাখতো! আমি নকল করছি, এটা কি মেয়েটা টের পেয়ে গেল! আমার দিকে একবার মুখ কুঁচকে তাকিয়ে উত্তর পাতাটা উল্টো করে দিল, আর আশা নেই তাহলে। শুধু এই কয়েকটা মাল্টিপল চয়েস দিয়ে পাশ হবে না। আমি মেয়েটার দিকে করুণার চোখে তাকিয়ে আছি, আরেকটু যদি দেখতে দেয়। দেখলাম আমাকে আর পাত্তা দিচ্ছে না। আমি একটা কাগজে লিখলাম, “প্লিজ হেল্প মি, আই নিড টু পাস দিস এক্সাম, আদারওয়াইজ আই অন্ট বি এবল টু পে দ্যা ল্যাংগুয়েজ কোর্স। গিভ মি ওয়ান চান্স প্লিজ! আই প্রমিজ, আই উইল লারন জার্মান!”
২০১২ সালের কথা। হঠাৎ করে একদিন সেই ফর্সা মেয়েটার সাথে স্টুটগারটের কোন এক সুপারমার্কেটে দেখা। মেয়েটার গালে কেমন যেন ছোপ ছোপ কাল দাগ পড়েছে। আমি অনেক বছরের পুরনো পরিচিত ইউয়ানকে দেখে চমকিত হলাম। ইউয়ান মা হতে যাচ্ছে, মুখের কাল দাগের রহস্য বুঝলাম ওর বেঢপ পেট দেখে। সে আমার দিকে তাকিয়ে আলোকিত হাসি হাসল, পরিচয় করিয়ে দিল ওর হবু সন্তানের গর্বিত বাবার সাথে। ওর জার্মান স্বামীকে দেখে পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছিল। ইউয়ান বলল আমাদের সাথেই নাকি ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, অন্য ক্লাসে ছিল। আমরা বসে কফি খেলাম, অল্প সময়ের পরিসরে অনেক বছর আগের স্মৃতি গুলো ফিরে ফিরে আসছিল। ওরা চলে যাবার সময় ওর জার্মান বর বলল, “আদনান, তুমি কি এখানে জন্মেছ? তোমার জার্মান শুনে সেইরকম মনে হচ্ছে।“
আমাকে বিব্রত বোধ করতে দেখে ইউয়ান একটু প্রশ্রয়ের মৃদু হাসি হাসল। স্পষ্ট মনে পড়ে গেল, এই হাসিটা দশ বছর আগে কোথাও দেখেছিলাম- আশাহীনতার অন্ধকারে এক চিলতে আশার আলোকবিন্দুর মতন, জার্মানিতে আমার প্রথম প্রহরে।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩২
আদনান সাদেক বলেছেন: প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা কখনই নেয়া হয়নি। সার্টিফিকেটে এখনও এ১।
২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৭
ধানের চাষী বলেছেন: অসাধারণ ভাই !
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৭
আদনান সাদেক বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৮
পেইচিং বলেছেন: অনেক কিছু মনে পড়ে গেলো।
প্রায় ৫০ কেজি নিয়ে এসেছিলাম চীনে। কিভাবে যে আমি এই পথ বয়েছি, ভাবলে এখনো গা শিউরে উঠে। বিদেশে আসলে যতটা ওজন স্বাচ্ছন্দে বহন করা যায় ততটাই নিয়ে আসা উচিত।
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৯
আদনান সাদেক বলেছেন: কথাটা আসলেই দরকারি
৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
ল্যাটিচুড বলেছেন: সিম্পিলি অসাধারণ ........
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৬
আদনান সাদেক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!
৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫
ফারজানা৯৯ বলেছেন: দান লেরনেন সি এস। ভাল করে জার্মান শিখুন। এদেশে জার্মান না শিখলে ভাত নাই
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩২
আদনান সাদেক বলেছেন: আপনি আসলে আমার লেখাটা মন দিয়ে পড়েন নাই
তবে কথা সত্য বলেছেন।
৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫১
ক্যপ্রিসিয়াস বলেছেন: আদনান ভাই, চমতকার একটি লেখা । ১২ বছর ধরে অনেক কিছুইতো করলেন ,আপনার প্রোফাইল থেকে পেলাম।
Education
Bangladeshi Student and Alumni Association in Germany
Bangladeshi Student and Alumni Association in Germany
Administrator · 2011 to present
Rieha Automotive Software Service
Rieha Automotive Software Service
CEO & Founder · Leonberg, Germany · 2011 to present
Stuttgart Cricket Eagles e.V.
Stuttgart Cricket Eagles e.V.
Founder, President · Leonberg, Germany · Oct 20, 2009 to present
German Cricket Board
German Cricket Board
Press Secretary · Stuttgart, Germany · Feb 2012 to Dec 2013
Robert Bosch
Robert Bosch
Softwaretest concept design & integration · Abstatt · Oct 2009 to Mar 2011
Robert Bosch
Robert Bosch
Project Leader · Mar 2008 to Aug 2009
Altran Technologies
Altran Technologies
Consultant · 2005 to 2008
AMD
AMD
Design Engineer · 2003 to 2005
প্রস্ন হল তার পরেও কি আর একাডেমিক জার্মান ভাষার সার্টিফিকেটের দরকার আছে ? আর কিইবা শেখার বাকি আছে?
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০১
আদনান সাদেক বলেছেন: অনেক কিছুই শেখার বাকি ছিল, সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা তোমার কাছ থেকেই শিখলাম।
৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২০
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: দূর্দান্ত। +++।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
আদনান সাদেক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!
৮| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯
সোজা কথা বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে।টক ঝাল মিষ্টি মিশ্রিত ছিল।মুখস্তকে না বলার গুণটা খুব বেশি ভালো লেগেছে।
৯| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭
আদনান সাদেক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!
মুখস্তকে "না"!!
১০| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
আহমেদ আলিফ বলেছেন:
জীবন যুদ্ধের গল্প শোনতে ভালো লাগে!
প্লাস+++
১১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩
ডি মুন বলেছেন: খুব ভালো লাগলো
১২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০০
ডি মুন বলেছেন: এ১ কোর্সে ভর্তি হয়েছি কিছুদিন হলো। দেশের এই অবস্থায় ক্লাস তেমন হচ্ছে না। কেমন যেন একটা গুমোটের মধ্যে দিন কাটছিলো।
আপনার লেখাগুলো পড়ছি। সত্যি বলতে ভীষণ ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আশাকরি নিয়মিত লিখবেন, আর কোন উপদেশ/পরামর্শ থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
[email protected]
অনেক অনেক শুভকামনা রইলো
১৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভালো লাগছে আপনার এ পোস্ট গুলো পড়তে। নিঃসন্দেহে সে সময়ে একটা অচেনা পরিবেশে ভালো সময় কাটে নি। এখন সেই স্মৃতিচারণ নিশ্চয়ই আপনাকে আনন্দ দিচ্ছে !
১৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩
নিমপাতা১২ বলেছেন: আমার মত অলস লোকেরা অনেক উদ্দেপনা পাবে আপনার লেখা পড়ে
১৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৬
সোহানী বলেছেন: আপনার এ জার্মান লিখাগুলো চোখ এরিয়ে গেছে আমার। অপর্ণা মম্ময় এর কল্যানে লিখাগুলো পড়লাম। অসাধারন বিশ্লেষন। যদিও আমি স্টুডেন্ট নয় ট্যুরিস্ট হিসেবে ভিজিট করেছি তারপরও বঙ্গবাজার আর ব্যাগের কাহিনী কিন্তু একই। আমি ড্রেসডানে প্রায় ২০ দিন ছিলাম।
আপনি অনেক ভাগ্যবান প্রথমদিনই একজন বাঙ্গালী ভাই পেলেন !!!! আমার ভাগ্য অবশ্য অতো ভালো ছিল না। +++++
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:০৩
আদনান সাদেক বলেছেন: ড্রেসডেন শহর ভাল লেগেছে নিশ্চয়ই, ছবির মতন সুন্দর একটা শহর। ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৭
ফারজানা৯৯ বলেছেন: গুট গেশ্রিবেন। উন্ড হাভেন জি শোন টেষ্টডাফ গেশাফ্ট? এফ ইষ্ট নিষ্ট সো আইনফাক। আবার সি শাফেন ডাস। আলেস গুটে।