নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খন্দকার ইয়াসীন পাভেল

খন্দকার ইয়াসীন পাভেল

খন্দকার ইয়াসীন পাভেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেকেন্ড হোম কালচার: স্বদেশির কাঁধে বিদেশি প্রেতাত্মা

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৩


গত কয়েক বছর ধরেই সেকেন্ড হোম প্রকল্প দেশে একটি আলোচিত বিষয়। বাংলাদেশে বসবাস করতে করতে যারা বিরক্ত হয়ে গেছেন বা দেশটা যাদের কাছে একঘেয়ে লাগে তারা বিদেশে গিয়ে সেকেন্ড হোম বানান। মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যঠহু, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশগুলোর কিছু এলাকা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশিদের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই সেকেন্ড হোম ওয়ালাদের মধ্যে কেউ রাজনীতিক, কেউ শিল্পপতি, কেউ সাবেক সামরিক-বেসামরিক আমলা। গত ২৫ মার্চ দেশের বহুল প্রচলিত একটি দৈনিকের শিরোনাম হয়েছে , বিদেশে সেকেন্ড হোম নিয়েছেন এমন ৬৪৮ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুই সংস্থা। ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পত্রিকাটির রিপোর্টে আরও বলা হয়, এ তালিকাভুক্তদের মধ্যে রাজনীতিক আছেন ৩৮৩ জন এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী আর ব্যবসায়ী ২৬৫ জন। তালিকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সংখ্যাও আলাদা করা হয়েছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে ২৮৭ এবং বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ৯৬ জনের বাংলাদেশের বাইরে সেকেন্ড রয়েছে।
এই সেকেন্ড হোম প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মালয়শিয়া। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশিরা মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম কর্মসূচির আওতায় বিনিয়োগ করা শুরু করেছেন। সেখানকার সরকারের দেওয়া তথ্যানুসারে, গত এক যুগে সেখানে সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫ জন বাংলাদেশি। তাদের প্রত্যেককে মালয়েশিয়ায় ১০ বছরের জন্য নন-মালয়েশিয়ান হিসেবে ভিসা নিতে কমপক্ষে প্রায় ১ কোটি টাকা করে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় করতে হয়েছে। সে হিসেবে শুধু মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। এটি বৈধ পথে সেকেন্ড হোম বেছে নেওয়াদের তালিকা। কিন্তু অবৈধ পথে, হুন্ডি ইত্যাদির মাধ্যমে যাঁরা সেখানে বা অন্যত্র সেকেন্ড হোম খুঁজে নিয়েছেন, তাঁদের সংখ্যা হয়তো জানা যাবে না।
মালয়শিয়া পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ওয়েব সাইট সূত্রে জানা যায়, ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের আমলে মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পের জন্য আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৪২৯টি। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনাকারী সেনাসমর্থিত জরুরি সরকার। সে সময়েও মালয়শিয়ায় নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন ২১৭ জন। তাদের পর ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার। এই সময়ে সেকেন্ড হোম প্রকল্পের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ৩৫৯টি। অতএব এই পরিসংখ্যানের পর কোন দলই নিজেদেরকে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে না।
এ এলাকার সম্পদ পাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আজ থেকে দুইশ বছর আগে ইংরেজরা বনিকের বেশে এই উপমহাদেশে এসে যখন আমাদের শাসন করা শুরু করে তখন থেকেই আমাদের সম্পদ পাচার হওয়া শুরু হয়। ইংরেজরা ছিলো প্রকৃতই বিদেশি স্বার্থান্বেষী, দস্যুতাপরায়ণ বেনিয়া জাতি। তাদের মূল সরকার ছিলো ব্রিটেনেই। সেখান থেকেই নিয়োগ দেওয়া হত বড় লাট, ছোট লাট, বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তা (আমলা) ইত্যাদি হিসেবে। তারা এদেশে এসে বাণিজ্য, শাসন-শোষণ, লুটপাট কোরে সম্পদ হাতিয়ে নিজেদের দেশকে উন্নত করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানিরাও এর চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল না। তারাও আমাদের রক্ত শোষণ করে তাদের দেশে সম্পদ পাচার করেছে। এ দেশে মানুষের স্বার্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ন্যায্য অধিকার থেকে করেছে বঞ্চিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানিদেরকে এদেশ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করার পর বাঙালি জাতি ভাগ্য পরিবর্তণের আশায় বুক বেধেঁছিল। কিন্তু বিধিবাম। ইংরেজ এবং পাকিস্তানিরা এ দেশ থেকে চলে গেলেও তাদের প্রেতাত্মাগুলো আজও ভর করে আছে দেশের অনেক রাজনৈতিক হর্তাকর্তা, রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের উপর। তারা একটু অর্থ-কড়ি উপার্জন করে একটু জাতে উঠতে পারলেই দেশের সম্পদ পাচার করতে মরিয়া হয়ে উঠে। এই শ্রেণির মানুষগুলি নিজেরা রাজনীতির মঞ্চে, টিভি টকশোতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেশপ্রেমের বুলি আউড়ালেও, স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে রাজনীতি, দলাদলি, মারা-মারি, ছুরি চালানো, বোমা ফাটানোর মত কাজকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বৈধতা দান করলেও তাদের নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে ঐসব দেশীয় স্কুল-কলেজগুলোতে পড়া-লেখা করান না, ছাত্র-রাজনীতিতেও জড়িত হতে দেন না। তারা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ কামান কিন্তু নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে বেশি টাকা-পয়সা ব্যয় করে পড়া-লেখা করান বিদেশের স্কুল-কলেজগুলোতে। ইংরেজরা যেমন তাদের শাসনকালে নিজেদের দেশ থেকে বেড়িয়ে আসতেন তেমনি সরকারি কর্মকর্তারা কিছুদিন পর পর সম্ভব হলে সরকারের কোষাগার খালি কোরে বিদেশভ্রমণ কোরে আসেন। এদেশীয় শিল্পকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র থেকে বিদেশি ভাষা, শিল্পকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে বেশি ভালবাসেন। আড্ডায়, কথা-বার্তায়, উদাহরণে তাদের মতবাদ, চালচলনের প্রশংসা করেন এবং এরা ওসবের হুবহু কপি কোরে সেগুলোরই প্রয়োগ করতে চান। এগুলিই তাদের প্রগতিবাদিতা আর দেশপ্রেমের পরিচয়! আজকে আমাদের সমাজের যারা উচ্চপর্যায়ের বাসিন্দা, তারা আমলাই হোন আর রাজনীতিকই হোন, তাদের মধ্যে আর লুটেরা বর্গি, ঠগি, ইংরেজ, ফিরিঙ্গি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ওরা যেমন ছিলো এরাও ঠিক একই রকম। সুতরাং গায়ের রঙে এদেশীয় হোলেও তারা চরিত্রগত দিক থেকে প্রকৃত অর্থেই বিদেশি। তারা কেবল বিদেশিই নয়, তারা এদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতায় লিপ্ত। সুতরাং এরকম বিশ্বাস ঘাতকদের ব্যাপারে দেশবাসীর সাবধান হওয়া একান্ত জরুরি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.