![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অদ্ভুত এক প্রজন্ম আমাদের। স্বাধীনতা দিবসে শুধু স্বাধীনতার শুভেচ্ছা জানিয়েই দায়িত্ব সারতে চাই আমরা। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে কিংবা ছবি আপলোড করলেই স্বাধীনতার প্রতি আমাদের দায় শেষ হয়ে যায় না। আচ্ছা, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কতটা জানেন? যারা অশেষ ত্যাগ আর তিতিক্ষার মাধ্যমে দেশটাকে আমাদের হাতে তুলে দিল তাদের সম্পর্কেই বা কতটা জানেন? সাত বীরশ্রেষ্ঠের নাম কি গুগলে সার্চ না করে এই মুহূর্তে বলতে পারবেন? মুক্তিযুদ্ধে কতটা সেক্টর ছিল, কতজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বলতে পারবেন? যার ডাকে মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই মহান মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেই বা আপনি কতটা জানেন?
আপনি কি জানেন একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি হায়েনারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যে নৃশংসতা চালিয়েছিল সেটা পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল একটা ঘটনা। আপনি কি জানেন পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধেই মাত্র ৯ মাসেই ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা ও ২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পাকি বাহিনী এই নৃশংসতাই ঘটিয়েছিল একাত্তরে। আপনি যে পাকিস্তানিদের মুসলিম ভাই বলে বুকে টেনে নিতে চান সেই পাকিস্তানিরাই আমার বাবাকে বেঁধে রেখে আমার ভাইকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল, আমার বোনকে ধর্ষণ করে তার গোপনাঙ্গে যতপ্রকারের কষ্ট দেয়া যায় দিয়েছিল। এই পাকিস্তানেরই সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজি তার সৈন্যদের বলেছিল 'বাঙালি নারীরা সঠিক মুসলমান নয়। তাদেরকে ধর্ষণ করে তাদের পেটে সঠিক মুসলমান সন্তান দাও'। এই পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া বলেছিল '৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করো তাহলে বাকিরা আমাদের গোলাম হয়েই থাকবে!'
আপনার তো গোল্ডফিশের মেমোরি। আপনি এসব হয় জানেন না। নয়তো জেনেও স্বার্থের কারণে ভুলে আছেন। মনে রাখুন স্বাধীনতা এত সহজ ব্যাপার নয়। আপনি পরাধীনতার স্বাদ না পেলে স্বাধীনতা বুঝতে পারবেন না যদি মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা সম্পর্কে না জানেন। স্বাধীনতার চেতনাও সহজ জিনিষ নয়। আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি পাকিস্তান আর পাকিস্তানিদের ঘৃণা না করে, আপনার যদি কুখ্যাত-কুলাঙ্গার রাজাকারদের ঘৃণা করতে না পারেন, তাদের শাস্তির কথা বলতে ভয় পান, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে-জানাতে দ্বিধাবোধ করেন, বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে অস্বীকার করেন তাহলে আপনার জন্য স্বাধীনতার সুযোগ-সুবিধা নেয়া হারাম। কারণ এই ব্যাপারগুলো আমাদের স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ, বেসিক স্ট্রাকচার। এগুলো সম্পর্কে উদাসীনতা মানে আমাদের স্বাধীনতা সম্পর্কেই উদাসীনতা।
স্বাধীনতা দিবসে আনন্দ-ফুর্তি করার চেয়ে, শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে স্বাধীনতা কী, কীভাবে এল সেটা নিয়ে একটা পড়াশোনা করুন, পড়তে না পারলে যারা জানেন তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করুন, তাতেই স্বাধীনতা স্বার্থকতা পাবে।
আজকের এই মহান দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু, সাত বীরশ্রেষ্ঠ, সকল সেক্টর কমান্ডার, ৩০ লক্ষ প্রাণ হারানো শহিদ, সম্ভ্রম হারানো দু লক্ষ নারী ও নাম না জানা সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা...
©somewhere in net ltd.