নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইউসুফ সোহেল

ইউসুফ সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের দেয়া আগুনে বিষ্ফোরিত হলো বিশ্ব

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৭

চারিদিকে ‘ফাঁসি চাই’ ‘ফাঁসি চাই’ শ্লোগান দিচ্ছে আবাল বৃদ্ধ বনিতারা। কি হলো, কেন হলো ? মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী পলাতক আসামি বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির রায় দেয়ার কিছু দিনের মাথায় একই অপরাধে অভিযুক্ত কাদের মোল্লাকে মঙ্গলবার দুপুরে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নম্বর আদালত। এই রায় ঘোষণার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ল সারাদেশ। তবে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৪১ বছর পর রাস্তায় নেমে জনগণের রায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রথম দুঃসাহস দেখিয়েছিল সেদিন অকুতভয়ী ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের করুন পরিনতির কথা মাথায় এলেও তারা শুধু মাত্র একটি ম্যাসেজ ‘এই রায় মানা যায় না, দেশের মাটি, মা-বোনের ইজ্জতকে এভাবে অপমানিত হতে দিতে পারি না, রায়ের প্রতিবাদ জানাতে আমরা যাচ্ছি শাহবাগ চত্বরে (নতুন প্রজন্ম চত্বর), রায় মন পুত না হলে এসে পরুন প্রতিবাদ জানাতে’ ফেসবুক, টুইটার ও মোবাইলের মাধ্যমে এতটুকু তথ্য সরবরাহ করে তারা নেমে পড়েন রাস্তায়। এই ম্যাসেজ এক-দুই করে ছড়িয়ে পড়ে সব খানে।



তখন বিকাল ৫ টা, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তারা (ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট) বাঁশিতে (ম্যাসেজ) ফুঁ দেওয়া মাত্রই বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ আত্মারা গণদাবী আদায়ের জন্য পিল পিল করে আসতে থাকেন শাহবাগ চত্বরে। এরই মধ্যে গণ আন্দোলনের পরশ ছড়িয়ে পড়ে পাড়া থেকে মহল্লা হতে হতে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। এদিকে ব্লগারদের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি পায়ে সামান্য ভয় কিছু সংশয় নিয়ে যোগ দেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবাধিকার, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, আইন পেশাজীবি, চিকিৎসক, সুশীল সমাজের কর্মী এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা ছাড়াও দল মত নির্বিশেষে স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী থেকে বয় বৃদ্ধ নারী-পুরুষ এমনকি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। ৭ থেকে ২২ এখন লাখ ছাড়িয়ে কোটি কোটিতে পরিণত হয়েছে রায়ের বিপক্ষের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। সারা দেশের অলি-গলি ছাড়িয়ে সুদূর আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, অষ্ট্রেলিয়া ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন অপরাজেয় বাঙালিরা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রতিবাদী জনতা শাহবাগের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন মিছিল সমাবেশ। জনতার আন্দোলনে টানা তৃতীয় দিনেও তাদের একটিই দাবী, যাবজ্জীবন কারাদন্ড নয়, কাদের মোল্লাকে দিতে হবে ফাঁসি।



চিহ্নিত ঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে প্রায় ৫০ ঘণ্টার টানা বিক্ষোভ চালিয়ে আসছেন হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত, ভোর কিংবা সকাল-সর্বক্ষণই কখনও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, কখনও জর্জ হ্যারিসন, আবারও কখনও বা নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা। হাজারো তরুণের কণ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন স্লোগানের একই সুর-‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’। এদিকে দাবি আদায়ের লক্ষে শুক্রবার বিকাল ৩টায় ডাক দেওয়া হয়েছে মহাসমাবেশ। জনতার ঢল দেখে সেদিন দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম হবে বলে বিশ্বাস সূর্যসন্তান ব্লগারদের।



প্রজন্ম চত্বরে দিন-রাত চলা এই গণ জারণের তৃতীয়দিনেও কাক ডাকা ভোর থেকে স্লোগানে স্লোগানে শুরু হয় সমাবেশ। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নানা শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সংহতি জানাতে যানজট, রোদ-ধুলা উপেক্ষা করে কখনো গাড়িতে, কেউ পায়ে হেটে ঝাঁকে ঝাঁকে সাধারণ মানুষ আসতে থাকেন ঘোষণা মঞ্চের ধারে। শহীদের রক্ত-আপোসরফা করে না, এসো ভাই এসো বোন-গড়ে তুলি আন্দোলন, জ্বালো জ্বালো-আগুন জ্বালো, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই-কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়-কাদের মোল্লার ঠাঁই নাই, কাদের মোল্লার কবর হবে-পাকিস্তানের মাটিতে, রাজপথের সংগ্রামে-কথা হবে স্লোগানে’ এমন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এছাড়াও, ফাঁসির দাবি নিয়ে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী, ছাড়তে হবে দুনিয়াধারী’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘৭১-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘৭১-এ বেঁচেছিস, এবার তোরা বাঁচবি না’ ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করো-শাহবাগে অংশ নাও ‘কাদেরকে ফাঁসি দাও-না হয় আমাকে’ নিজ খরচে এরকম অসংখ্য স্লোগান সংবলিত বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড ফেস্টুন হাতে আর গলায় ঝুলিয়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। সেখানে চলে গণসংগীত, উদ্দীপনামূলক আবৃত্তি-বক্তৃতা। টাকার লোভে কিংবা রিরানী খাওয়ার জন্য নয়, স্বপ্রণোদিত হয়েই সকলে আসেন প্রাণের দাবী বাস্তবায়নের আশায়।



ঘোষণামঞ্চ থেকে সকালেই বলা হয়, আমরা আবারো নতুন দিনে নতুন উদ্যমে আমাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি শুরু করলাম। যতোদিন কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না আসবে, ততোদিন আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা শাহবাগ ছেড়ে না যাওয়ার প্রত্যয় ঝরে প্রতিবাদের অগ্রভাগের নেতাদের কণ্ঠে। তাদের কণ্ঠে কেবল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিই নয়, উচ্চারিত হচ্ছে জামায়াতকে রাজনৈতিক ভাবে নিষিদ্ধ করার দাবিও। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক কুটচালের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে তরণদের কণ্ঠে। এ গণ আন্দোলনে শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হলেও ধীরে ধীরে এ আন্দোলনে একাতœ হয়েছে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। মানব বেষ্টনী তৈরির সঙ্গে সঙ্গেই সকল আন্দোলনকারীরা সম্মিলিত শপথ পাঠ করেন,‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় না নিয়ে ঘরে ফিরে যাবো না’।



শাহবাগ নতুন প্রজন্ম চত্বরের এই আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়েছে ভিনদেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদেরও আলোড়িত করছে এই আন্দোলন। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের রায়ের প্রতিবাদে ও মৃত্যুদ-ের দাবিতে মঙ্গলবার লন্ডনে প্রতিবাদ সমাবেশের পর দাবি মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ৩৩টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সাপোর্ট ক্রাইম ট্রাইবুনাল মোর্চা। এছাড়াও শুক্রবার শাহবাগ মহাসমাবেশের দিন ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন ব্রিটেন প্রবাসীরা। একই দিন বিকেল ৬টায় উদীচী, নারী দিগন্ত, যুব ইউনিয়ন ও সিপিবি ‘সলিডারিটি উইথ শাহবাগ স্কোয়ার’ নামে সমাবেশ ও প্রতিবাদী গানের অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে পূর্ব লন্ডনে। এদিকে, বৃহস্পতিবার দাবি মিছিলের সমর্থনে ইতোমধ্যে ফেইস বুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।



যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে রিকশা চালক কাদের মিয়া জানান, ‘রায়ের কি ওইবো জানি না, তয় আমার মনে কয় দেশটার এবার কিছু হইবো’। তারুণ্যের উদ্দীপনা যেন ছুঁয়ে গেছে তাদেরও। আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন সাইফুল আজিজ, অসংখ্য প্রবাসীদের মতো তারও একটাই দাবী যাবজ্জীবন নয় ফাঁসী চাই কাদের মোল্লাসহ সকল মানবতা বিরোধী অপরাধীদের।



একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালে। পরে ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে। ২০১২ সালের মে মাসে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে তার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। শুরুতে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন ছিল। পরে তা ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ঢাকার মিরপুরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ। এসব অপরাধের বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। এসব অপরাধের প্রমাণ দেখাতে ও বর্ণনা করতে ট্রাইব্যুনালে মোট ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ভাসানচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামে জন্ম আব্দুল কাদের মোল্লার। গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত স্বপরিবারে ঢাকায় থাকতেন তিনি। আমিরাবাদের গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার বড় ভাই ইব্রাহিম মোল্লা ও ছোট ভাই মইন উদ্দিন মোল্লা।



তারুন্যের এই উদ্দীপনার মেলায় একাত্মতা প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আশার বাণী শুনিয়ে বলেন, আপনারা রাজপথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আর আমরা আদালতে সংগ্রাম করে যাচ্ছি। আশা করি এ সংগ্রামে বিজয়ী হবো। কাদের মোল্লার মামলায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুনে আশান্বিত হয়েছি সকলে । তিনি ছাড়াও এই রায়ে সন্তুষ্ট নন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দুঃখ প্রকাশ করে জানান, একাত্তরের মু্ক্িতযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়াই সবার দাবি, তাদের ফাঁসি ছাড়া আর কী রায় হতে পারে ? আন্দোলনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও তাদের সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।



ফেসবুক, টুইটার ও নানা গণমাধ্যমের বন্ধুদের সহায়তায় নজির বিহীন সাড়া মিলেছে এই আন্দোলনকে বেগবান করতে। তথ্যপ্রযুক্তির যোগাযোগ মাধ্যমে রেকর্ড সংখ্যক চ্যাটিং হয়েছে গণ আন্দোলন শুরুর পর। তবে এসব কিছুই হয়েছে ...............

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.