![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজধানীসহ সারাদেশে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে ধর্ষণ-অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা। অপরাধীদের বিশেষ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে গৃহকর্মী, শিশুসহ স্কুল-কলেজে পড়–য়া তরুনী-কিশোরী শিার্থীরাও। অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে বেশ কয়েকজন শিার্থী অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ঘটনায়ই প্রকৃত অপরাধীরা ধরা না পড়ায় শিার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন শিক ও অবিভাবরাও। .
পরিসংখ্যানের বিচারে ২০১৩ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কমেছে ধর্ষণ। তবে উদ্বেগ কমেনি। বেড়েছে ধর্ষণের ভয়াবহতা। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশেেত্রই বিচার পাচ্ছে না ধর্ষিতা নারী-শিশু। এমনকী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করে ধর্ষিতাকে নিরাপত্তাহীনতায় থাকারও নজির রয়েছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে রাজধানীতে অপহরণ ও ধর্ষণসহ নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২৫ জন নারী-শিশু। জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত নির্যাতিত হন ৭৭৭ জন। চলতি মাসেও নির্যাতনের শিকার হন শতাধিক নারী-শিশু।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ওয়ান স্টপ সার্ভিসে (ওসিসি) সূত্র জানায়- ধর্ষণ, অপহরণ, মানসিকভাবে অপব্যবহার, এসিড সন্ত্রাস ও নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ৭ মাসে ঢামেকের ওসিসিতে বিভিন্ন জেলার ৩০৭৪ জন নারী-শিশু চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায়ই নির্যাতনের শিকার হন সহস্রাধীক নারী-শিশু। চলতি মাসেও চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক নারী-শিশু।
গত বৃহষ্পতিবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দরের হজ ক্যাম্প এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় দরিদ্র এক দিনমজুরের ১১ বছরের মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু। অতিরিক্ত রক্তরণের ফলে শিশুটি এখন ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগছে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
২২ আগষ্ট বিকালে ডেমরার বাঁশেরপুল এলাকায় চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় ৬ বছরের এক শিশু। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক মহরম আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৪ আগস্ট রাতে বাসার সামনে থেকে রাজধানীর তুরাগের ধউর সরকারী জুনিয়ার হাইস্কুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক হিন্দু ছাত্রীকে অটোরিক্সায় করে অপহরণ করে কয়েকজন যুবক। এসময় ওই শিার্থী ও প্রত্যদর্শীরা চিৎকার করলেও অপহরণকারীদের অস্ত্রের ভয়ে কেউ সামনে এগুতে সাহস পায়নি। এ ঘটনার ১৫ দিন পর স্কুলের যাওয়ার পথে অপহৃত হন একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির আরেক শিার্থী। অপহরণের ৩ দিন পর হিন্দু স্কুল ছাত্রীকে মুখে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তুরাগের ধউর পুলিশ চেকপোষ্ট এলাকার রাস্তা থেকে উদ্ধার করা হয়। একইভাবে গত শনিবার রাত ২টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর দুয়ারিপাড়া মোড়ে অচেতন অবস্থায় অপহরণকারীরা ফেলে যায় অন্য শিার্থীকে। পাশবিক নির্যাতনের পর ফলে যাওয়া দুই স্কুল শিার্থী তাদের স্বজনদের কাছে ফিরলেও শারীরীক ও মানসীকভাবে এখনও বিপর্যস্ত। পৃথক ২টি ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি অপহরণের সঙ্গে জড়িত একজনকেও।
১৫ আগষ্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসে পুরনো ঢাকার বংশাল এলাকায় অপহৃত হন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির দুই পাহাড়ি তরুণী। খবর পেয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ তাদের উদ্ধারে মাঠে নামে। তবে এখনও উদ্ধার হনননি পোশাককল কর্মী ওই দুই তরুণী। বংশাল থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির জানান, তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। ৬ আগস্ট ভোরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বরুঙ্গা গ্রামের এক গৃহবধূ বনানি এলাকায় লিজা-অনিক নাইটকোচের চালক রফিকুল ইসলামের লালসার শিকার হন। এ ঘটনায় বনানী থানায় রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই পোশাককর্মী গৃহবধু নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। ৩ জুলাই রাতে উত্তরায় বাসায় ঢোকার সময়ে অপহৃত হন ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী ফাতেমা। ওই ঘটনায় বাধা পেয়ে অপহরণকারীদের গুলিতে নৈশ প্রহরী লিটন নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হন ফাতেমার হবু স্বামী মাহফুজুল হক। এর কয়েক ঘণ্টা পর পাশবিক নির্যাতন করে ছেড়ে দেওয়া হয় ফাতেমাকে। এ ঘটনায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। ২০ জুন মুগদা এলাকায় বাসের ২ কিশোরী যাত্রীকে ধর্ষণ করে লাব্বাইক পরিবহনের চালক আহমেদ শেখ ও সুপারভাইজার হাসনাইন। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই ২ কিশোরী যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ফ্যানের কারখানায় কাজ করেন।
গত ২০ এপ্রিল রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে উদ্ধার করা হয় ওয়ারীর একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে। তার মা জানান, উদ্ধারের ২ দিন আগে স্থানীয় বখাটেরা তার মেয়েকে অপহরণ করে। এ ব্যাপারে তিনি ওয়ারী থানায় একটি মামলা ও র্যাব-১০ এ অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ হাতের নাগালে পেয়েও আসামিদের গ্রেপ্তার করেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ১২ জানুয়ারি উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের একটি বাড়ির পেছনের ময়লার ভাগাড় থেকে উদ্ধার করা হয় গৃহকর্মী আমেনার বস্তাবন্দি লাশ। এর ১৮ দিন পর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ির পেছনের নির্জন জায়গা থেকে আরেক গৃহকর্মি খাদিজার বস্তাবন্দি খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বেশি বেতনের চাকুরীর লোভ দেখিয়ে অপহরণকারীরা আমেনা বেগম ও খাদিজা বেগমকে ফাটে ডেকে নেয়। পরে ৫ জনে মিলে তাদের শ্লীলতাহানী করে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরিসংখ্যানের বিচারে গত দেড় বছরে সামান্য ধর্ষণের ঘটনা কমলেও ঢাকা, রংপুর ও নেত্রকোনা জেলায় সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারীরা। এই তিন জেলার পরেই অবস্থান রয়েছে দিনাজপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া গাজীপুর ও টাংগাইলের। ধর্ষণ ছাড়াও অন্যান্যভাবেও এসব অঞ্চলে নারী নির্যাতনের হার অনেক বেশি।
অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনায় সবচেয়ে কম সংখ্যক নারী আক্রান্ত হয়েছেন যথাক্রমে রাংগামাটি, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে পুলিশ সদর দপ্তরের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় প্রায় অভিন্ন চিত্র উঠে আসে।
তবে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, পরিসংখ্যানের বিচারে বছরে ৫০/১০০টি ধর্ষণের ঘটনা হ্রাস পাওয়ার ভেতর দিয়ে কার্যত পরিস্থিতির কোনও উন্নয়ন ঘটেনি। বরং দিন দিন নারীর নিরাপত্তাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। দেড় বছর কিছুটা কমলেও গত ২/৩ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ফের বেড়েছে। আর বরাবরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এসব ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করেন- এমন অভিযোগও রয়েছে। আবার অনেক সময় মতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের চাপের কারণে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হিমশিম খেতে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ঢাকা মহানগরে ১৩০ জন, রংপুরে ৬৭ জন, নেত্রকোনায় ৬৬ জন, দিনাজপুর ৫৭ জন, ঢাকা জেলা ৫৬ জন, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ৫৫ জন, গাজীপুরে ৫৫ জন, টাংগাইলে ৫২ জন, নরসিংদীকে ৪৮ জন, চট্টগ্রামে ৪৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণপ্রবণ অঞ্চলের শীর্ষে থাকা এই ১০টি অঞ্চলে এর আগের বিভিন্ন পরিসংখ্যানের এগিয়ে ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এই সময়ের মধ্যে অন্যান্যভাবে নারী সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এসব জেলায়। ঢাকা মহানগরে ৫২৭ জন, গাজীপুরে ১৭৩ জন, নেত্রকোনা ১৭৯ জন, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায়, ৮২৩ জন, রংপুরে ২৩৮ জন, দিনাজপুরে ১৮৩ জন।
অন্যদিকে, একই সময়ের মধ্যে রাংগামাটিতে ০, ঝিনাইদাহ-মেহেরপুরে ৪ জন, বান্দরবান-ফেনী-জয়পুরহাটে ৫ জন, ঝালকাঠিতে ৬ জন, সিলেটে-শেরপুরে ৭, হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে ৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পরিসংখ্যানের বিচারে এই ১১টি জেলা সবচেয়ে কম ধর্ষণ ঝুঁকিতে অবস্থান করছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে সারাদেশে ১ হাজার ১৪৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পরের বছর ২০১৩ সালে এ সংখ্যা কিছুটা কমে দাড়ায় ৯৯৮ এ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩০৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৮ জনই গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে হত্যা করা হয়েছে ২৯ জনকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন ৭ জন। গত দেড় বছরে সামান্য ধর্ষণের ঘটনা কমে আসার বিষয়টি দেখা গেছে পুলিশের পরিসংখ্যানের েেত্রও। ধর্ষণের ঘটনা সামান্য কমে আসার বিষয়টি উঠে এসেছে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের করা গবেষণাতেও।
ওই গবেষণাতে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা বেগম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, গবেষণাতে দেখা গেছে, বেশিরভাগ েেত্র দারিদ্রতা, মাদকাসক্ত, নিররতা, ও কাজের মধ্যে না থাকার কারণে ধর্ষণসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশে (বিশেষ করে উত্তর অঞ্চলে) দারিদ্রতা ও স্বারতার হার বেড়েছে। বেড়েছে সচেতনতাও। এসব কারণে ধর্ষণের ঘটনা সামান্য কমেছেও। কিন্ত সামগ্রিকভাবে ধর্ষণের চিত্র এবং নারীর নিরাপত্তাহীনতা এখনও উদ্বেকজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
চলন্ত বাসের ভেতরেও গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। গত ৬ আগষ্ট রাজধানীর মহাখালীতে বাসের ভেতরে ধর্ষণের শিকার হন এক পোশাককর্মী। ঘটনার পর থেকে বাস দেখলেই ভয় পাচ্ছেন তিনি। এভাবে যত্রতত্র ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশের সহকারি মহাপরিদর্শক (এআইজি) জালাল উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া আমাদের সময়কে বলেন, নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের েেত্র পুলিশ সবচাইতে গুরুত্বের সঙ্গে দ্রুততম সময়ে কাজ করে। একই সঙ্গে ধর্ষণ মামলার তদন্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনা তৈরিতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সন্তোষজনক না হলেও কিছুটা কমেছে ধর্ষনের ঘটনা। এভাবেই আস্তে আস্তে ধর্ষণের ঘটনা কমিয়ে আনা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
নতুন বলেছেন: কিছু ধষনকারীকে গুলিকরে মেরে ফেলাদরকার..