![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুলিশে সহস্রাধিক সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই-নিরস্ত্র) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ২৭ জুলাই। দেশের ৭ বিভাগীয় সদরে একযোগে প্রাথমিক প্রার্থীদের বাছাই করা হয় এদিন। এ পদে নিয়োগের জন্য হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যে প্রাথমিক বাছাই ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৬ হাজার ৪৫৭ জন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত এসআই পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশের এসআই পদটি তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় থাকাকালীন পুলিশ বিভাগ এ পদে লোক নিয়োগ করত। ২০০৮ সালের ১১ মে পুলিশের পরিদর্শক পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণি এবং সার্জেন্ট/এসআই পদকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই প্রস্তাবনায় সম্মতি দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। কিন্তু অর্থ বিভাগ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কেবল পরিদর্শক পদটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণের বিষয়ে সম্মতি দিলেও সার্জেন্ট/এসআই পদ দ্বিতীয় শ্রেণি করার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে। পরে প্রধানমন্ত্রী এসআই পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি করার ঘোষণা দিলে অর্থ বিভাগের সম্মতি ছাড়াই ২০১২ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত এ পদে আগের নিয়মে লোক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তারা বলছেন, সংবিধানের ১৪০ নম্বর ধারা ও ১৯৭৯ সালের পিএসসির প্রবিধিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তিদের মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা করা সাংবিধানিক দায়িত্ব পিএসসির। আইন সংশোধন না করে এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনকে পাশ কাটিয়ে এক প্রকার প্রভাব খাটিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমানে এসআই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আইনের ধারা অনুযায়ী পুলিশের এসআই নিয়োগ প্রক্রিয়া আইনসিদ্ধ হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা জটিলতায় পড়তে পারেন বলেও অভিমত পিএসসির কর্মকর্তাদের। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সব আইন মেনেই এসআই নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলছে।
পিএসসি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা করার এখতিয়ার শুধু পিএসসির। ১৯৭৯ সালের পিএসসি কনসালটেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী এই পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলার বিষয়টি পিএসসির সুপারিশের আওতাভুক্ত। তাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর থেকে পুলিশ বিভাগ এই পদসহ তদূর্ধ্ব পদে লোক নিয়োগের এখতিয়ার হারায়।
অবশ্য ১৯৭৯ সালের প্রবিধিমালায় এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালকসহ বেশকিছু কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়কে ক্ষমতা দেওয়া হয়। পরে বিধিমালা সংশোধন করে পুলিশের এসআই পদটিকেও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ ছাড়াও ১৯৭৯ অ্যাক্টটি সংশোধনের কার্যক্রম নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কমিশন। কিন্তু চিঠি চালাচালি ছাড়া তা এখনো আইনে রূপ পায়নি। তবে ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা এটি বিধানে পুলিশ পরিদর্শকের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণের বিষয়ে পিএসসির সঙ্গে পরামর্শ করার আবশ্যকতা রদ করা হয়। ওই আইনের অধীনে গতবারের মতো এবারও এসআই পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির ৬ মাসের মধ্যে সংসদের মাধ্যমে সেটি বিল আকারে পাস করানোর নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো বিল সংসদে আনা হয়নি বলে জানিয়েছেন পিএসসির কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া একাধিক চিঠিতে পিএসসি প্রবিধিমালা, ১৯৭৯ সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছিল পিএসসি। পরে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পিএসসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে একাধিক চিঠি চালাচালিও হয়েছে; বৈঠক হয়েছে কয়েকবার; আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিকভাবেও জানানো হয়; কিন্তু এখনো সেটি সাংবিধানিকভাবে কোনো রূপ পায়নি। এসআই নিয়োগের বিষয়ে একটি রিটে হাইকোর্টও পিএসসির পরামর্শ নেওয়ার পক্ষে রায় দেয়।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবিধানের ১৪০ নম্বর অনুচ্ছেদও উপেক্ষিত হয়েছে। সংবিধান ১৪০ অনুচ্ছেদে বলা হয় ‘১/ কোনও সরকারি কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হইবে : (ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা পরিচালনা; (খ) এই অনুচ্ছেদের দুই দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হইলে কিংবা কমিশনের দায়িত্ব-সংক্রান্ত কোনো বিষয় কমিশনে প্রেরণ করা হইলে সেই সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দেওয়া; ২/ সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইন এবং কোন কমিশন কর্তৃক পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কোন প্রবিধানের (যাহা অনুরূপ আইনের সহিত অসমঞ্জস নহে) বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে কোন কমিশনের সহিত পরামর্শ করিবেন। কিন্তু বর্তমানে এসআই পদে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের উপরোক্ত ১৪০ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন পিএসসির ওই কর্মকর্তারা।
পিএসসির আইন কর্মকর্তা এসএম মাসুদুল হক বলেন, বর্তমানে পুলিশে এসআই পদে যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে তা আইন মেনে করা হচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রবিধিমালায় ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেহেতু পিএসসি আইন ১৯৭৯-এ সাংবিধানিকভাবে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তাই পুলিশের এসআই নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই প্রবিধিমালা মানা প্রয়োজন। ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা বিধানে পুলিশ পরিদর্শকের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণের বিষয়ে পিএসসির সঙ্গে পরামর্শ করার আবশ্যকতা রদ করার বিষয়ে পিএসসির ওই কর্মকর্তা বলেন, আমার জানা মতে, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিশেষ প্রয়োজন দেখিয়ে এটি নিয়েছে। তবে সংবিধানের সঙ্গে ওই অধ্যাদেশটি সংগতিপূর্ণ নয়। এই অধ্যাদেশের বলে তারা আপাতত নিয়োগ করতে পারে। তবে পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে তারা যে পথ অনুসরণ করেছেন কেউ যদি কখনো এই প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হন তখন নিয়োগপ্রাপ্তরা দীর্ঘ সময় পরও আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। ইতোমধ্যে এমন ঘটনায় অনেকেই আইনগত সমস্যায় পড়েছেন। ওই আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে (যদি পিএসসির পরামর্শের প্রয়োজন না হয়) সংবিধান সংশোধন করে আইন প্রণয়ন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী কোন অধ্যাদেশ সচল সংসদের অনুমোদনক্রমে ৬ মাসের মধ্যে আইন আকারে প্রণয়ন করতে হবে। আইন প্রণয়ন করা ছাড়া কোন অর্ডিনেন্স ৬ মাস পর তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। আবার যে কোন আইন করলেও তা যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তা না হলে ওই আইনও বাতিল বলে গণ্য হবে। ২০১৩ সালের ওই অর্ডিন্যান্স এখন পর্যন্ত আইন আকারে রূপ পেয়েছে বলে জানা নেই। অর্ডিন্যান্সটি আইনে পরিণত করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু তা না করেই এসআই পদে নিয়োগ করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্লানিং) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, সব আইন মেনেই এসআই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এ সংক্রান্তে সব বৈধ নথি রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। আইনগত বৈধতার বিষয়টি পিএসসিও অবগত। তারা পুলিশের এসআই পদে চাকরির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের বিষয়ে অনাপত্তিও দিয়েছেন। তারপরও কেন পিএসসি বিষয়টি আইনসিদ্ধ নয় বলছেন তা বোধগম্য নয় বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
গেজেট ঘেঁটে ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, ‘এস, আর, ও নং ৩৩৫-আইন/২০১৩/০৫.০০.০০০০.১৭০.২২.০২৫.১৩ স্মারকমূলে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিনেন্স, ১৯৭৭ (ওআরডি. নং, এলভিএলএল ওফ ১৯৭৭) এর সেকশন ৫ (এ)(আইভি) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি, অত্র মন্ত্রণালয়ের ২১ জুন, ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে জারিকৃত এস.আর.ও ২১১-এল/৮২/ইডি(আর-এলএল) এস-৫৩/৮১ রহিতক্রমে, এই মর্মে নির্দেশনা জারি করিলেন, পুলিশের ইন্সপেক্টর, এসআই (নিরস্ত্র/সশস্ত্র), সার্জেন্ট এবং টাউন সাব ইন্সপেক্টর (টিএসআই) পদসমূহের নিয়োগ এবং উক্ত পদসমূহের নিয়োগ স্থায়ীকরণের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সহিত পরামর্শকরণের প্রয়োজন হবে না।’ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনের বলেই তারা এসআই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ওয়াজিউল্লাহ বলেন, সংবিধানের যেখানে যা আছে তা মেনেই সবাইকে চলতে হবে। এটাই নিয়ম। ব্যত্যয় হলেই তা সংবিধান পরিপন্থী বলে গণ্য হবে। যেহেতু পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগে একটি জোরাল প্রশ্ন উঠেছে তাই আইন সংশোধন বা সংস্কার না করে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখলে বিতর্ক থেকেই যেতে পারে। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের কথাও বলেও এই আইনজীবী।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:১১
জিল্লুর রহমান রিফাত বলেছেন: আমাগ গ্রাম থাইক্কা ৩৭জন পুলিশের চাকরি পাইসে মাগার আমাগ গ্রামের মাত্র ১ জন ৩৬ জনই উধাও