নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নারীদের নিয়ে লিখি , আমি সংসারের গল্প লিখি , সেই সংসার নদীর মতো , প্রমত্তা জলে দুকূল ভাসায় আবার নতুন স্বপ্ন দেখায় । আমার গল্পও তাই , আমি স্বপ্ন দেখি ভালো থাকার , আমি গল্প লিখি ভালোবাসার .।.।.।।।

জাকিয়া মৌ

দুরন্ত , দুর্বার.।.।

জাকিয়া মৌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প – আঁধার

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২

শীতের রাতগুলো জানি কেমন ! জোরে ফ্যান ছেড়ে দেওয়া যায় না , দিলে অন্তত পাশের ঘরের শব্দ এত জোরে কানে আসতো না । আমি কানে বালিশ চেপে ধরি , ঘুম আসে না আমার । চোখ দিয়ে পানি পরে । আমার চোখে অসুখ , ডাক্তার বলেছে নাকি চোখের রগ শুকিয়ে যাচ্ছে । আমি নাকি অন্ধ হয়ে যাবো । অবশ্য আস্তে আস্তে সবকিছু ঘোলা দেখা শুরু করেছি । আমার সাত বছরের মেয়ে তৃষাকেও ঠিক মতো দেখতে পাইনা । কিন্তু ওর গায়ের গন্ধ টের পাই , অনেক দূর থেকে । এখন মেয়ে আমার গায়ে গা লাগিয়ে আছে , ঘুমালে ওর গা দিয়ে কেমন জানি একটা মিস্টি গন্ধ বের হয় । আমি বুঝি । আমার মেয়েটা অনেক সুন্দরী , আমার মত । তাই ভয় হয় । এই সুন্দরের কারনে পনের বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেলো ওর বাবার সাথে । বাবার আপত্তি ছিল , কিন্তু মা শুনল না । ভাইরাও তাল দিলো , বিয়ে হয়ে গেলো । আমার রুপ দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অস্থির , এই মেয়েকে বাহিরে বের করা যাবে না । ডাকাতের চোখে পরবে , বেশী বেশী সুন্দর । আমার আর স্কুল কলেজে যাওয়া হয়নি । প্রথম মেয়েটা পুকুরে ডুবে যখন মরল তখন সাজ্জাদ আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসলো গ্রাম থেকে , আমি তখন সতেরো । প্রতিবেশীরা কেউ কেউ ওকে পরামর্শ দিলো – “ তুমি তো বাসায় থাকবা না , বউ কই না কই চলে যাবে , তাড়াতাড়ি আরেকটা বাচ্চা নাও । “ আমার তৃষা এল দুনিয়ায় । আমি খুব ভাবতাম আমার মেয়েকে আমি অনেক পড়াবো , অনেক অনেক । ও কখনও কারো উপর নির্ভর করবে না । কিন্তু হায় , যখনই আমার মেয়েকে পড়ানোর শিখানোর সময় আসলো , আমার চোখ নষ্ট হয়ে গেলো । আমার তৃষা বুঝে মায়ের কষ্ট , নিজে নিজে পড়ে ও । কাউকে বিরক্ত করে না । সাজ্জাদকেও না , বরং কেমন জানো ভয় পায় । সে যখন আবার বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আসলো , তখন দৌড়ে আমাকে এসে বলল – ‘আম্মা , বাবা যেন কা কে নিয়ে এসেছে “ । প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে বউ দেখতে এলো । কেউ কেউ আমার ঘরে ঢুকে আফসোস করলো , কেউ ওকে চামার বলল । আবার পাশের ঘরে গিয়ে বলল – আহা ! বেচারার কি দোষ , বউটা কানা হয়ে গেছে , এভাবে কি সংসার চলে ।। আমার ভাসুররা আসলো – ওকে খুব বকল , যাবার সময় বলে গেলো চিন্তা না করতে ...তাদের বংশের ছেলেরা দুই বউ সমান চোখে দেখে । আমার ভাইয়েরা আসলো না , মোবাইল করে বলল – তোর তো চোখ খারাপ , কাজে কামে সুবিধাই হবে , বোনের মতো থাকবি । বলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল । কিন্তু আমি তো বাচি না , আমি তো মরি প্রতিদিন । মানুষের একটা ইন্দ্রিয় দুর্বল হলে অন্যগুলো নাকি বেশী সচল হয় । মধ্যরাতে আমি যখন পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা শব্ধগুলো শুনি আমার মনে হয় আমি বধির হলেই যেন ভালো । এই শীতের রাতে জোরে ফ্যান ছেড়ে দেই , আমার মেয়েটা শীতে কাঁপে । কাঁপুক , সেতো মেয়ে ...তাকে কত যন্ত্রণা সইতে হবে ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৮

ঋতো আহমেদ বলেছেন: যদিও মন খারাপ হয়ে গেছে পড়ে .. ভাল লিখেছেন। শুভ কামনা ।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫

জাকিয়া মৌ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ।

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১০

প্রামানিক বলেছেন: শেষের কথাগুলোয় অসহায় নারীর আত্ম বেদনা ফুটে উঠেছে। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.