![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আক্কাস সাহেবের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ । অফিসের সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আবার বাসার বউয়ের সাথেও খারাপ ব্যবহার করে । বউয়ের সাথে বেশী খারাপ ব্যবহার করে , কারনে করে আবার অকারনেও করে । ডালে লবন বেশী হলেও করে , কম হলেও করে । ঠিকঠাক লবন হলে মন খচরমচর করে । চিন্তা করতে থাকে কিভাবে বউরে টাইট দিবে । সেদিন দুপুরে ভাত খেতে গিয়ে দেখে মাংস পুরে গেছে , বউ হিন্দি সিরিয়াল দেখতে দেখতে ঘুমাইয়া গেছিল । এর মাঝে এই কাহিনী । বউরে ইচ্ছে মত গালাগালি দিলো , তারপর বাচ্চাসহ লাগেজ গুছাইয়া বের করে দিলো । পইপই করে বলে দিলো যে আর বাসায় আসিস না , ফালতু মহিলা । বউ চলে যাবার পর অনেক শান্তি লাগতেছিল । পিজ্জাহাটে পিজ্জা অর্ডার করে একটু ঘুম দিলো , ভাবল পিজ্জা আসতে আসতে একটু হাল্কা ঘুম দিয়ে উঠি । ঘুমাইতে ঘুমাইতে অনেক সময় হয়ে গেছে , বারবার দরজায় বেল বাজছে । উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে - এমা !! এযে ডানাকাটা পরী !!! এত সুন্দর একটা মেয়ে পিজ্জা দেলিভরীর জব করে ভাবতেই আক্কাস সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেলো । কিন্তু মেয়েটার হাতে পিজ্জা নাই । সে জিজ্ঞাস করলো - আপনি কে ? মেয়েটা বলল - আমি পরী , আপনাকে নিতে আসছি । সে ভালো করে চেয়ে দেখল , আসলেই এই মেয়ে পরী । একেবারে ডানা ওয়ালা পরী , হাতে আবার জাদুর লাঠি আছে । সে বলল - আমাকে কই নিয়ে যাবে সুন্দরী , বলেই একটা বিগলিত হাসি দিলো । উল্লেখ্য শেষ কবে সে এমন সরেস হাসি দিয়েছে মনে নাই । মেয়েটি বলল - মরার পর মানুষ যেখানে যায় , স্বর্গে । এবার আক্কাস সাহেব টাস্কি খেল , কি বলে মরে গেছে এর মধ্যে । হুম , একটু হাল্কা হাল্কা লাগছে নিজেকে , নিশ্চয়ই বউ বদদোয়া দিছে । সে যাই হোক , তারমত মানুষ মরে এই সুন্দরীর সাথে স্বর্গে যাচ্ছে এটাও কম আনন্দের না । তাড়াতাড়ি করে ব্যাংকের কাগজপত্র আর টাকা পয়সা গুছাতে লাগলো সে । পরী বলল - আরে একি করছেন ! এগুলো সাথে নিতে পারবেন না । হায় হায় !! কি সর্বনাশ ! সারাজীবন কিপ্টামী করে কত টাকা জমাইছে সে , বউরে তো ভালো কিছু কিনে দেওয়া দূরে থাক , ছেলেটাকে লুডুর কোট টা পর্যন্ত দেয় না । এই টাকা এখন সব বউ পাবে !! সে যাই হোক !! সুন্দরী পরীর সাথে স্বর্গে যাচ্ছে এই বা কম কি !! তাড়াতাড়ি রওনা দিলো সে । একটা পঙ্খিরাজ ঘোড়ার গাড়ীতে করে যাচ্ছে , মুখোমুখি সে আর পরী । জীবনে প্রথম কোন সুন্দরীর এত কাছে !! তার হৃদপিণ্ড , পাকস্থলী সব উত্তেজনায় লাফাচ্ছিল । হটাথ গাড়ী এক জায়গায় ব্রেক মারল মানে ঘোড়া লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলো ...
***
তিনটি অপরুপা সুন্দরী নারী এগিয়ে এসে বলল - স্যার এখানে একটু ওয়েট করতে হবে । আপনার সামান্য ভিসা জটিলতা আছে । আক্কাস সাহেব ভুরু কুচকে তাকালেন , যদিও এত সুন্দরী মেয়েদের দিকে এভাবে তাকানো অপরাধ । মনে মনে হাজারটা গালি আসলেও মুখে বললেন ঠিক আছে । তিনি অপেক্ষা করছেন একটা ওয়েটিং রুমে । রুমটি কাঁচের তৈরি এবং নিচে গোলাপি আকাশ দেখা যাচ্ছে । সম্ভবত এটা মঙ্গলগ্রহের আকাশ , সাত আসমানের একটা তো মঙ্গল গ্রহে থাকতেই পারে ভাবলেন তিনি । ব্যবহার খারাপ হলেও তার সাধারণ নলেজ খুব পরিষ্কার । প্রতিদিন সকাল , বিকাল , রাত এই তিনবেলা পেপার পড়েন । আগের পরীটি চলে গেছে কিছুক্ষন আগে , যাওয়ার আগে তার জন্য শুভ কামনা দিয়ে গেছে । অনেক সময় হয়ে গেছে , এর মাঝে তিন তিন বার আপেল কলার জুসও তাকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও ভিসা আসছে না । তার মনে হল - আরে , ভিসা ক্যামনে হবে , আমার পাসপোর্ট তো বাসায় ফেলে আসছি । বদ পরীটা কিছুই আনতে দেয় নাই , দু চার হাজার ঘুষ যদি দিতে হয় তাও সম্ভব না , এক পয়সাও নাই । একটু পর এক সুন্দরী এসে বলল - স্যার যমদূত আপনাকে ডাকে । যমদূতের কথা শুনে আক্কাস সাহেবের কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো , তারপর ভাবল - ধুর আমি তো মরেই গেছি হুদাই ভয় পেয়ে কাজ নাই । যমদূত দেখতে আসলেই যমের মতো । বিশাল কালা মোটা এক দানব বসে আছে গ্রানাইটের এক বেঞ্চিতে । তাকে দেখে বিরস স্বরে বলল - বিরাট ভুল হয়ে গেছে । যে আক্কাসের স্বর্গে যাওয়ার কথা ছিল সে তুই না । তোর জন্য নরকের ভিসা লাগানো আছে , কালা পাসপোর্ট নিয়া যা । আক্কাস সাহেবের মেজাজ খুব খারাপ হল । এতক্ষন সে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই , এবার আর কনট্রোল করতে পারলো না । একটা কুৎসিত গালি দিয়ে বলল - আমার সাথে এত বড় প্রতারনা !!! আমার অপরাধ কি!!! যমেরও মেজাজ খুব খারাপ হল - বলল সে - নরাধম , তোকে এত ভালো করে রিসিভ করে আনাই ভুল হইছে । যা ফেরত যা ।
***
আক্কাস সাহেব বাড়ির দরজায় বেল দিলো । কোথায় যেন কি সমস্যা হয়েছে । সে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে । বউ সিরিয়াল দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেছে , তরকারী পুড়ে ছাই । হায় হায় ! সে এখনও মরে নাই তাহলে । বউ পশ্চাৎ দেশ উল্টিয়ে ঘুমাচ্ছে , দেখেই মেজাজ খারাপ হল , ইচ্ছে করতেছে থাপ্রায়া দাঁত ফেলায়া দিতে । আহা ! কত সাধ করে কতদিন পর খাসির মাংস আনছিলেন । যাইয়া যেই না বউকে ঝাড়ি মারতে গেলেন দেখেন -ইয়াআআআ সর্বনাশ , এইটা একটা পেত্নি । কালা বিটকেল চেহারা , বড় বড় দাঁত বের করে বিচ্ছিরি হাসি দিয়ে বলল - আমি নরকের এজেন্ট তোরে নিয়ে যেতে এসেছি । বলেই খপ করে আক্কাস সাহেবের হাত টা ধরল , আক্কাস সাহেব গগনবিদারী চিৎকার দিতে থাকলেন । পেত্নী তাকে অভয় দিয়ে বলল - এত চিল্লাস ক্যান ?? তোর ১৪ গুষ্টি নরকে আছে , এত খারাপ লাগার কিছু নাই । আক্কাস সাহেব অবাক হয়ে বলল - তুমি জানলে কিভাবে ??? পেত্নী বিয়াল্লিশটা দাঁত বের করে বলল - " না জানার কি আছে । জেনেছি তোর ব্যবহারে ! কথায় বলে না ব্যবহার বংশের পরিচয় । "
***
আক্কাস সাহেব নরকের ঝাড়ুদার । ঝাড়ু মারতে মারতে চিন্তা করছেন - আহা! ব্যবহার টা আরেকটু ভালো করলেও পারতাম ...মাঝে মাঝে স্বপ্নে সেই সুন্দরী পরীকে দেখে । যদিও নরকে ঘুমানোর টাইম খুব কম ...সারাদিন খালি কাজ আর কাজ...।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪২
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার আইডিয়া। ধন্যবাদ গল্প ভালো লাগল।