![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অরিত্রকে আমি খুব পছন্দ করতাম , সেই কলেজের দিনগুলো থেকেই । আমার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল সে । কোচিং করতাম একসাথে , ওর হাতের লেখা ছিল মুক্তদানার মতো । অরিত্র সেন আমার ভালো বন্ধু ছিল । সে আমাকে গল্পের বই সংগ্রহ করে দেওয়া থেকে বাংলা নোট কিংবা বায়োলজি প্রাক্টিকাল খাতায় ব্যাঙ থেকে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত এঁকে দিত । চমৎকার আবৃতি করতো , আমিও মুগ্ধ হয়ে শুনতাম । সারা রাত কথা বলতাম কখনও , সারা জীবনের যত গল্প আছে টা যেন এক রাতেই শেষ করার পণ করতাম দুজন । ভোরের আলো ফুটলে যখন ঘুমে চোখ লেগে যেত অথবা যখন মোবাইল ব্যালেন্সে ভাটা পরত তখনই কেবল আমাদের কথা শেষ হত ।
অরিত্র বরাবরই ভালো ছাত্র ছিল , তাই তার এ+ পাওয়াটা সবাই খুব স্বাভাবিক চোখেই দেখল , কিন্তু আমি মেনে নিতে পারি নি আমার রেজাল্ট । বি গ্রেডে পাশ করেছি , জানি ভালো কোথাও ভর্তি হতে পারবো না । নিজের এই অসাফল্যের জন্য অরিত্রকেই দায়ী করেছি । মনে মনে শত অভিশাপ দিয়েছি কিন্তু প্রকাশ করিনি কতোটা ঘৃণা করি ওকে । বরং দুজনের মাঝে কথা বলা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলাম , মনে মনে চাইতাম সে কোথাও চান্স না পাক । আমার মতোই কোন অখ্যাত কলেজে বিএ পরুক । খুব চাইতাম আমি । কিন্তু আমার ইচ্ছে কে কাঁচকলা দেখিয়ে সে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে ভর্তি হয়ে গেলো আমার হৃদয় দ্বিগুণ আগুনে জ্বলতে লাগলো । তখনও বলি নি ওকে কতোটা ঘৃণা করি । ও প্রায়ই আমার কলেজে আসতো । এবার যদিও কোন নোটের লেনদেন ছিল না তবুও তার সারাদিনের দিনলিপি আমার কাছে প্রকাশ না করলে ওর ভালো লাগতো না । একদিন বলেই দিলো - মৌ , তোকে ভালবাসি ।
***
অরিত্রকে আমি ঘৃণা করতাম , তাও আমিও উত্তরে বলেছিলাম - ভালবাসি । দুজনের ধর্ম নিয়ে যদি বাসায় আপত্তি করে , তবে পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করবো দুজনে বলে সংকল্প করেছিলাম । আমার মিথ্যে ভাষণে ওর মনে যেন প্রেমের ছড়াছড়ি লেগে গেলো । আমি জানতাম - অরিত্র আমাকেই ভালবাসবে । এর জন্যই আমি অপেক্ষা করেছিলাম এতদিন । এবার আমিও ওর ক্যাম্পাসে যাওয়া শুরু করলাম । চাইতাম রোজ ক্লাস ফাকি দিয়ে সে আমার সাথে দেখা করুক । খুব খারাপ রেজাল্ট করুক ঠিক আমারই মতো । আমি হিংসে করতাম তাকে আর সে ?? সে আমার প্রতি এতটাই প্রসন্ন ছিল যে থার্ড সেমিস্টারে দুটো সাবজেক্টে ফেইল করলো । কেনই বা করবে না ? পরীক্ষার ঠিক আগে আমি ওকে সমুদ্র দেখার আহবান করেছিলাম । অরিত্র আমতা আমতা করে রাজী হয়ে গিয়েছিল । আমি সমুদ্র দেখেছিলাম আর সে আমাকে । আমাকে সে এতটা কাছে কখনও পায়নি , সেবার যতটা পেয়েছিল । আমি ওর শরীরের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিয়েছি , যদিও জানি সে আমার আত্মার জন্য বেশী আগ্রহী ছিল । কিন্তু তা কি করে হয় , আমার আত্মায় কেবল তার জন্য ঘৃণাই জমা রেখে দিয়েছিলাম আর কিছু নয় । আমি ওকে ব্যস্ত করতে চেয়েছিলাম , দেখতে চেয়েছিলাম ওকে কতোটা নিচে নামানো যায় । হয়ত পেরেছিলাম কারন সেরাতের পর ও খুব অনুশোচনায় ভুগত , বার বার বলেছে -" মৌ , আমার মনে হচ্ছে পাপ হচ্ছে , চল বিয়ে করে ফেলি । " ঢাকায় এসে প্রথম যে কথা বলেছিলাম - " বিয়ে কি করে হয় , তুই হিন্দু আমি মুসলিম , বিয়ে সম্ভব নয় ।" আমার উত্তরে অরিত্র থমকে গিয়েছিল , বহু মিনতি করেছে বহুদিন , আমি ছিলাম অনড় । তারপর একদিন বলে দিল - " মৌ বিদায় , তোর ধর্মের জয় হোক । "
***
অরিত্রকে আমি ভুলে গিয়েছিলাম । সত্যি বলছি একদম মনে ছিল না ওকে । সময় গড়িয়ে গিয়েছিল অনেক । আমার স্বামী নিবিড়কে নিয়ে সুখেই ছিলাম , সেই সুখের ঘরে "দোলন " এল । আমার মেয়ে দোলন , আমার পরীর বাচ্চা মেয়েটা একদিন সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পরে মাথা ফাটাল । প্রচুর রক্তক্ষরণ হল । আমি অনর্গল কাঁদছি হাসপাতালের করিডোরে দাড়িয়ে , আর নিবিড় দৌড়াচ্ছে 'বি নেগেটিভ " ব্লাডের জন্য । কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না । আমার মেয়ের জন্য দুই ব্যাগ রক্ত লাগবে । অনেকদিন পর অরিত্রের নাম্বারে ফোন দিলাম - " আমার মেয়েটা মরে যাচ্ছে অরিত্র , দুই ব্যাগ রক্ত দিবি ??? " অরিত্র বলল - " দিতে পারি যদি হিন্দুর রক্তে তোর আপত্তি না থাকে । " আমি নীরব হয়ে গেলাম । ফোন কেটে মেসেজ দিলাম - " জলদি স্কয়ারে আয় , সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি । আমি হেরে গেছি , তুই জিতে গেছিস । " অপরপাশ থেকে মেসেজ এলো - " আসছি "
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১১
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনুগ্লপটি ভাল লাগল। ভাল থাকবেন।
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১১
প্রামানিক বলেছেন: রাত জেগে সবগুলো গল্পই পড়লাম। ছোট ছোট গল্প কিন্তু খুব ভালো লাগল। আরো গল্প লিখুন, সাথে আছি। ধন্যবাদ
৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৬
সৈয়দ আবুল ফারাহ্ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। শুভেচ্ছা অফুরন্ত।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১০
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর গল্প। খুব ভালো লাগল। অনু গল্প বলে মনে হলো না।