![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের চেয়ে ১৭ বছরের বড় এক লোকের সাথে অবন্তির বিয়ে হয়েছে । বাসর রাতে খাটের এক কোনায় শক্ত হয়ে বসে ছিল সে । বাবা মা নেই, মামার সংসারে মানুষ হয়েছে । মামা মামী এক আধবুড়া লোক জোগাড় করে আনলও তার জন্য ভেবে চোখ ফেটে কান্না আসছিল তার । আবার এও বুঝতে পারছিল যে মামার মত অতি দরিদ্র লোকের পক্ষে আর কিবা করার ছিল । বিশাল বড়লোকের বাড়ি ঘর দেখে তার সুখের জন্যই তো তাকে বিয়ে দিয়েছে । সে খুব ভয় , সংসয় আর অনেকখানি আতংক নিয়েই স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিল । ভোর রাতের দিকে সাদিক রুমে আসলো , অবন্তি তখন প্রায় ঘুমে ঢুলছিল । সাদিক বলল- অবন্তি , তুমি ঘুমাও । আমি কাল তোমার সাথে কথা বলবো । বলে পাশে শুয়ে পড়লো , অবন্তির সে রাতে ঘুম হলও না । বিছানার এপাশ ওপাশ করে কাঁটালো ।
পরদিন সে সাদিকের কাছেই জানতে পারল সেই সাদিকের একমাত্র স্ত্রী নয় , তার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল । কিন্তু বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার প্রথম স্ত্রী কাজল মারা যায় , সাদিক যদিও আর বিয়ে করতে চায় নি । কিন্তু আত্মীয় স্বজনের চাপে করে । আসলে হয়ত সাদিকও একাকিত্তে ভুগে , কে জানে ভাব্ল অবন্তি । কিন্তু দুজনের মাঝে দূরত্বটা থেকে যায় । সাদিক লেখক মানুষ । দিনরাত লেখা লিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকে , তার স্টাডিতে কারো ঢুকা বারন । অবন্তি প্রথম প্রথম উঁকি দিত , তারপর আর দেয় না । তার সময় কাটে বাগান করে । দোতালার বেলকুনিতে কত কত গাছ লাগায় সে , পুরো বাড়ি পারলে সে তপবন বানিয়ে ফেলে । গুন গুন করে গান করে নিজের মনে । সত্যি বলতে কি এ বাড়িতে সে যেন এক স্বাধীনতা পায় । কেউ শাসন করে না, বারন করে না , তার সতের বছরের জীবনে যেন এক আনন্দময় সময় কাটাতে থাকে । অসুবিধা একটাই কথা বলার লোকের খুব অভাব , আর তার পড়তে ইচ্ছা করে । সাদিককে বলেও ফেলে একদিন সে আবার কলেজে যেতে চায় । সাদিক তাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয় , এমনকি বাসায় এক মাষ্টার ও রেখে দেয় , সেই ছেলেটির নাম তমাল ।
তমাল হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে আর এই টিউশনি টা তার জন্য অনেক দরকার ছিল । সে অবন্তিকে তাই একটু বেশীই যেন দেখে । আর অবন্তিও............। দুজনের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে । হয়ত কারো দিক থেকে বন্ধুত্তের চেয়ে একটু বেশী । তমাল আসার আগের সময়টা অবন্তির যেন কেমন অস্থির লাগে , ও তখন যেন কেমন হয়ে যায় । একটু অগোছালো , একটু এলোমেলো । সে তার ফুল গাছের সাথে কথা বলে, নিজের মনে হাসে । দূর থেকে সাদিক কিন্তু তা খেয়াল করে , শীতল চোখে । ওর কেমন জানি হিংসা হয় , একটু নয় অনেকখানি । যদিও এতদিন সে অবন্তিকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল , এখন তার মনে হতে থাকে অবন্তি খুব বেশী যেন সরে যাচ্ছে । দরকার না হলে সামনে আসে না, কেমন জানি পালিয়ে বেড়ায় ।
সাদিক সে রাতে অবন্তিকে চেয়ে বসলো । একান্ত নিজের করে , আপন করে । শোবার ঘরে ঢুকে অবন্তিকে বলল- যদি চাই , আসবে কাছে? অনেক বেশী কাছে ? আজ আমাদের ফুলশয্যা হবে । আমি কাউকে জোড় করতে পারি না অবন্তি , কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে চাই । আমি ভাবতাম আমার মধ্যে ঈর্ষা নেই , কিন্তু না। আমিও ঈর্ষাতে জ্বলি । তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না। এতটুকু না ।
সাদিক অবন্তির হাত চেপে ধরে , আমি তোমাকে চাই , ভালবাসি আমি তোমায় ।
অবন্তি আজ অবাক হয়ে স্বামীকে দেখছিল , সাদিকের এই রুপ কোনদিন সে দেখে নি । হেসে দিল অবন্তি । বলে- সত্যি তুমি এটা ? তুমি এটা বলছ? আমি যে কত কত রাত এঘরে একলা ঘুমিয়েছি , ভয় পেয়ে শক্ত হয়ে বসে থেকেছি, তোমাকে পাশে চেয়েছি , সে কথা জানো? সাদিক আমি কেবল তোমাকেই ভালবেসেছি । তোমাকেই চেয়েছি , আর তুমি কিসের আশায় দূরে থেকেছ তা কেবল তুমিও জানো ।
সাদিক বিস্ময় ভরা চোখে বলল- সত্যি? তবে কেন তমালের সাথে এত কথা বলতে? এত বেশী এলোমেলো মনভাব আমি দেখেছি তোমার মাঝে ।
অবন্তি বলল- সত্যি বলতে কি, পড়তে ভালো লাগে না আমার । একদম না । পড়তে ভয় পাই, এমনকি মাষ্টার আসলেও ভয় লাগে । আমাকে দিয়ে পড়াশুনা হবে না । মা হতে চাই আমি , নিজের ফুটফুটে একটা বাচ্চা..................। সাদিক ওর ঠোঁট বন্ধ করে দেয় , অতঃপর.......................................।।
©somewhere in net ltd.