নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নারীদের নিয়ে লিখি , আমি সংসারের গল্প লিখি , সেই সংসার নদীর মতো , প্রমত্তা জলে দুকূল ভাসায় আবার নতুন স্বপ্ন দেখায় । আমার গল্পও তাই , আমি স্বপ্ন দেখি ভালো থাকার , আমি গল্প লিখি ভালোবাসার .।.।.।।।

জাকিয়া মৌ

দুরন্ত , দুর্বার.।.।

জাকিয়া মৌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প - এক বিকেলে

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:০৯



দরজায় কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুললাম । দেখি ত্রিশ বত্রিশ বছরের এক ভদ্রলোক দাঁড়ানো , হাতে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া । চোখে চশমা , গায়ে সুয়েটার আর মুখে একটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে আমাকে বলল - হাই , এটা কি সিরাজুল হক সাহেবের বাসা ? আমি বললাম - জি , গেটে তো লেখা আছে । আপনি কাকে চান ? উনি বলল- আসলে আমাদের কালকে আসার কথা ছিল , একটা পারিবারিক ঝামেলায় আসতে পারি নাই । আমি আমান । এই নাম শুনে আমার হিন্দি সিরিয়াল - দিল মে তুফান হ্যায় এর নায়ক আমানের কথা মনে হল । বুঝলাম কালকে যে পাত্রপক্ষ আসার কথা দিয়েও শেষ মুহূর্তে আসে নাই , যাদের জন্য আমার আম্মা গোপনে দুফটা অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে এই সেই জনাব " আমান " । বললাম - আপনি আমান না অর্ধেক তা দিয়ে আমার কাজ নেই , কি বলবেন বলে বিদায় হন । ভদ্রলোক মনে হল আমার ব্যবহারে একটু হতাশ হল , বলল- বাসায় কেউ নাই ? বললাম - নেই , সবাই সকালে টাঙ্গাইল গেছে । এখানে দাড়িয়েই বলুন , আপনার ভাবসাব ভালো লাগছে না । আমান এর মুখ এবার আসলেই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো , বলল - আসলে কালকে আমরা বের হবার আগ মুহূর্তে খবর এসেছে , আমার চাচা মৃত্যুশয্যায় । তাই সবাই হাসপাতালে গিয়েছিলাম , আর সেটা ভালোভাবে জানাতে পারি নাই । আই এম সরি । এবার আমি ভালমত দেখলাম তাকে , চোখে মুখে কেমন জানি ভালো মানুষী ভাব আছে । আসলে আমি নিজেও বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলাম না । কানাডা থেকে কোন আমান না অর্ধেক এসে আমাকে দেশছাড়া করবে বিষয়টা তে মন সায় দিচ্ছিল না । তাকে বললাম - চলুন ছাদে যাই । বিকেলের রোদ পরেছে , সেই আলোতে জানতাম পাত্রী দেখায় । আমি কিন্তু পাত্র দেখলাম , ভালোই লাগছে কেন তাকে ! হায় হায় ! আমি কি করছি ! যে পর্বত প্রমান বিয়ে না করার অটল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে ছিলাম তা কি ভাঙতে যাচ্ছি । আমান সাহেব আমার দিকে ফুলের তোড়া টা বাড়িয়ে বলল - জাকিয়া , এটা আপনার জন্য । আমি ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি , ছেলেটার মুখে একটা মৃদু হাসি । ইসস , আমার মিশুটাও এভাবে হাসত । আমি তার চোখে চোখ রেখে বললাম - আপনি চলে যান , আর আসবেন না । এই ফুলও নিয়ে যান , ফুলে আমার এলারজি আছে।
***
শিথিলা বার বার ফোন দিয়েই যাচ্ছে , বের হবার জন্য তাগাদা । আমি সাজ শেষ করে কপালে কালো ছোট একটা টিপ দিলাম । সাদা ঝুমকা জোড়া খুজে পাচ্ছিলাম না এর মাঝে কতগুলো ফোন । ফোন ধরে বললাম - রেডি হচ্ছি তো । আসবো তো বলেছি । হ্যা হ্যা সাদা শাড়িটাই পড়েছি , নীল চুড়িও পড়েছি আর কিছু ?? আজ ওর সাথে ঘুরবো সারাদিন , এমনিতেও আমরা দুই বান্ধবী চান্স পেলেই ঘুরে বেড়াই । আজকে সখ হইছে তার শাড়ি পরে ইচ্ছেমত ঘুরবে । আমিও খুব সাজলাম...
***
ছবির হাটে বসে আছি । পাঁচ মিনিট আগেও শিথিলা ফোন ধরে বলেছে কাছাকাছি আছে , আসছে । আধা ঘন্টা আগেও এই কথাই বলেছে । হুট করে দেখি সেই লোকটা আমার পাশে এসে টুপ করে বসে পরল । আমিও লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম , বললাম - আপনি ? এখানে ? কি আজব ? হ্যা , আমি মানে এখানে তোমার বান্ধবী আসতে বলল ,মিনমিন করে বলল আমান সাহেব । সেই দিন যাকে কঠিন ভাষায় বহিস্কার করে দিয়েছিলাম , সে নির্লজ্জের মতো দেখা করতে এসেছে । ইচ্ছে করছে শিথিলার মাথায় থান ইট দিয়ে দুটো বাড়ি দেই । এত নাটক করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আবার অর্ধেক সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য , অথচ সে খুব ভালো মতোই জানে বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই ।
***
সাদা রঙে মেয়েদের এত মানায় আমার জানা ছিল না , অন্যদিকে তাকিয়ে বলল আমান । আমি বললাম - আপনি দেখা করতে চান ভালো কথা ,এভাবে নাটক করে কেন ? সে এবার নিশ্চুপ । আপনি কি করেন ? বললাম আমি । আমান বললেন- ব্যাঙ্কার , বিটুবি ব্যাংকে আছি , হেড অফিসে টরেন্টোতে । বললাম - হুম , আপনি দেখতে ভালো , জব ভালো করেন কিন্তু আমার সাথে আপনার যায় নাতো । আমার আশা ছাড়েন প্লিজ , বাসাতেও যন্ত্রণা দিচ্ছে । বেশ কুয়াশা পরে যাচ্ছে চারিদিকে , বিকেল সন্ধায় গড়াচ্ছে । উঠে দাঁড়ালাম ।
আমান বললেন - আমি পৌঁছে দেই । রুক্ষ স্বরে বললাম - না ।
***
আমি একা একা কিভাবে যাবো ?? আমি মিশুর দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো বলেছিলাম । ও অন্যদিকে ফিরে বলেছিল - যেভাবে এসেছ , সেভাবে যাবে । আমাকে রেলস্টেশনে একা রেখে সে হারিয়ে গিয়েছিল । আমি দেখলাম কুয়াশার মাঝে মিশে গেল সে আর আমি দাড়িয়ে রইলাম চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ...
***
" আমি শুধু তোমাকে বিয়ে করার জন্য এতদুর থেকে এসেছি , তোমাকে না নিয়ে যাবো না - আমান । " মেসেজটা ডিলিট করে দিলাম । শীতের বাতাস চোখেমুখে লেগে যাচ্ছিলো , চুলগুলো বার বার সারা মুখ ছুয়ে যাচ্ছে । আমিও একা চলছি , আমাকে কেউ একজন একা চলা শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে ।
***
নীল একটা কাতান চেয়েছিলি না ?? আপু ফোন করে বলল । আমি বললাম - হুম , কিন্তু দিলা না তো কিনে :( । আপু বলল - চল আজকে বেনারসী পল্লী যাই বিকেলে , কিনে দিব । নিজে থেকে দিতে চাইছে অফার না নিলে খারাপ দেখায় তাই বললাম - আচ্ছা । যদিও আমার দুপুরের ঘুমের উপর প্রবল ভালোবাসা তাও বিকেলে আপুর সাথে বের হলাম ।
***
আপু এদিক ওদিক না ঘুরে " গুলশান শাড়ি হাউজ " এর সামনে গাড়ি পার্ক করালো । আমি বললাম - আপু , একদামের দোকানে ঢুকব না , গলা কাটা দাম রাখবে । আমি কথা না শুনেই আমাকে টেনে টুনে নিয়ে বসাল । ভিতরে এক বয়স্ক দম্পতি শাড়ি দেখছে , বিয়ের শাড়ি । আমাদের দেখে ভদ্রমহিলা বেশ খুশি হয়ে বলল - বাবা , আমাদের ছেলের বিয়ে সামনে , এত কিছু তো বুঝি না , একটু পছন্দ করে দেবে কষ্ট করে । আমার বরাবরই ে কাজটা করতে ভালো লাগে , তাও অন্যের বিয়ের শাড়ি খুব সাবধানে দেখতে লাগলাম । এখানকার কালেকশন চমৎকার , একটা সবুজ বেনারসি খুব পছন্দ হল । তারা নিলেন । আরও ৫/৬ টি শাড়ি পছন্দ করে দিলাম , তাও নিলো । শেষে আমার নীল শাড়ি টা কিনে আসার সময় ভদ্রমহিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলেন । পুরাই অবাক হলাম আমি , কেমন জানি মা মা ভাব । আপু দেখি হাসছে উনার কান্ড দেখে । আমার হাতে একটা কোটার শাড়ি দিয়ে বলল এটা উপহার এবং নিতেই হবে । আমি তো নিবই না , কিন্তু তারা ছাড়বেনও না । শেষমেশ নিলাম ।
***
আপু শুনছো ?? - বললাম । আপু বলল - বল । এটা কি ঠিক হল বল ? অপরিচিত মানুষ এর উপহার নিলাম , আম্মা মারবে । আমিও মুখ ফ্যাকাসে করে ফেললাম । আম্মু কিছু বলবে না , উনারা আমান সাহেবের আব্বা আম্মা । তোর বিয়ের শপিং করলি হাঁদারাম , কিচ্ছু বুঝিস না , বলেই আপু হিহি করে হেসে দিলো ।। আমিও সাফ বলে দিলাম - তোমরা যাই করো না কেন , বিয়ে আমি করবো না বলে দিচ্ছি । আমার কেমন জানি অস্থির লাগছিল ।
***
"শাড়ি খুব সুন্দর হয়েছে , আমার বউকে মানাবে , তোমাকে ধন্যবাদ - আমান " । আজকে আমিও রিপ্লে দিলাম - হুম , কিন্তু সেই বৌ আমি হব না বলে দিচ্ছি কিন্তু । এই লোক এত বেহায়া কেন ???
***
পৌষের এক বিকেলে চারুকলার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম । রেশমি চুড়ি দেখে থমকে গিয়ে বলেছিলাম - মিশু আমি হাত ভরে চুড়ি পরবো । রিকশায় পাশাপাশি বসে যাচ্ছিলাম দুজন , মিশুর হাতের উপর আমার হাত । আর আমার দু হাত ভরা লাল , নীল , সবুজ রেশমি চুড়ি , বিকেলের রোদে টা কেবল চিকমিক করছে ।
***
ম্যাম , এখানে জাকিয়া মৌ নামে কেউ আছেন ?? - ছেলেটি বলল । আমি দরজার এপাশ থেকে বললাম - জি , আমি ...বলুন । " ম্যাম , আপনার একটা পার্সেল আছে । " ঠিক আছে , কে পাঠিয়েছে ? "- বললাম । ম্যাম , আমান আহমেদ । এখানে একটা সাইন করুন । পার্সেল দিয়ে ছেলেটা চলে গেলো । ভাবলাম একবার বলি এটা লাগবে না , তারপর কি মনে করে রেখে দিলাম । আমান সাহেব সত্যি আমাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে । কেকের বাক্সের মতো বাক্স খুললাম । দেখি এক বাক্স রেশমি চুড়ি আর উপরে দুটো পুতুল -জামাই বৌ টাইপ কাপড়ের পুতুল । তাতে আবার কাগজ দিয়ে সেটে দিয়েছে -তুমি -আমি । দেখেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো । ঠিক তখনই ফোনে মেসেজ এলো - " বিকেলে রেডি থেকো , পাঁচটায় বাসার নিচে থাকবো - আমান " । আমি লিখলাম - "যাবো না আমি কোথাও । আপনি মরে যান তো প্লিজ । "
***
আমি মুগ্ধ হয়ে আয়নায় তাকিয়ে আছি । চোখে ভরে কাজল দিয়েছি , কপালে নীল একটা টিপ । আমান সাহেবের মায়ের দেওয়া কমলা কোটার শাড়িটাও পড়েছি । তার পাঠানো চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি । পরবো ?? না থাক !! আজ আমি তার সাথে দেখা করবো , আখেরী দেখা যাকে বলে । হ্যা , আজ যাবো আর কোনদিন যাবো না । কেন যাবো ? আমি তো কাউকে বিয়ে করতে চাই না । কেনই চাইব ?? আমি কি আর কাউকে ভালবাসতে পারবো ? পারবো না , জীবনেও পারবো না । এই ছেলেটা কিছু শুনতে চায় না । আমি আজ তাকে সব শুনাব , আমার গল্প -মিশুর গল্প । আমার জীবনের রাজপুত্র মিশু । আজকে তাকে সব বলবোই আমি । বলবো এক শীতের রাতে মিশুর হাত ধরে আমি বাড়ী ছেড়েছিলাম , এক চিলেকোঠায় আমাদের ছোট্ট সংসার হয়েছিল । আমার প্রচন্ড ভালো বরটা হটাত নেশাগ্রস্থ হয়ে যায় । তাসের দানে হেরে যায় আমার ভালোবাসা । আরেক শীতের রাতে আমাকে স্টেশনে দাড় করিয়ে সে চলে যায় । আমার সেই রাজপুত্রকে আমি স্বপ্নে দেখি রোজ । আমার মনে হয় সে ফিরে আসবে , আমি তার বুকে ঝাপিয়ে পরবো । আমি তার গায়ের ঘ্রাণ পাই , আমি তার স্পর্শ খুজি আমার চেতনায় । সে আমার জীবনের একমাত্র পুরুষ । আমি ডিভোর্স দিতে চাইনি ওকে , বাধ্য হয়েছি । ওর চরম অবহেলা আমাকে ওর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছি । কিন্তু আমার আত্মা বলে সব ভুলে মিশু একদিন আসবে । আমি সেই দিনের অপেক্ষা করছি । আজ আমান সাহেবকে আমি সব বলবো ।
***
পাচটা বাজে । সে আসে নি ।ছয়টা বাজলো , তাও না । সাত টা বেজে গেলে বুঝলাম সে আর আসবে না । ধন্যবাদ , আমান সাহেব । তাকে আমি ধন্যবাদ দিতেই ফোন করেছিলাম । ফোনটা বেজেই যাচ্ছিল , ঠিক তখনই তার মা ফোনটা ধরল - " জাকিয়া আম্মু , তুমি কোথায় ? " ভদ্র মহিলা কাঁদছে কেন বুঝতে পারছি না । " আমি বাসায় আন্টি , কি হয়েছে ? - বললাম । " আমান বাবা আমার এক্সিডেন্ট করেছে , বাইক এক্সিডেন্ট " বলেই উনি ঝরঝর করে কেদেই যাচ্ছেন । ফোনটা এবার আমান এর বাবা নিলো - " জাকিয়া , তুমি কি আসবে মা ? । " কোথায় নিয়ে গেছেন উনাকে ? " - জানতে চাইলাম । "ইউনাইটেড এ , তুমি আসো মা , আমার ছেলে টাকে দেখে যাও । " কান্নাভেজা গলায় উনি বললেন । আমি ফোন রেখে দিলাম । কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । " আপু , গাড়ীটা পাঠাও তো " - আপুকে ফোন দিয়ে বললাম সব । " জাকিয়া , আমি কি যাবো সাথে ? " - আপু বলল । আমি বললাম - নাহ ! কেউ আসবা না । আমি একা যাবো , আজ তার সাথে আমার দেখা করতেই হবে , তার সাথে আমার অনেক কথা আছে ।
***
গুলশান এলাকায় এত জ্যাম কেন ???? আমি হাতের দিকে তাকালাম ঘড়ি দেখার জন্য । ঘড়ি পরি নি তো আজ , আমার হাত ভর্তি আজ লাল নীল চুড়ি , সব রেশমি কাঁচের চুড়ি ...আমান সাহেবের দেওয়া ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।

২| ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:২৯

মাহমুদ পিয়াস বলেছেন: তুমি মোর জীবনের ভাবনা.।.।.।.।.।।
পরের লাইন কি লেখিকা ?

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩

বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন?

নতুন পোস্ট দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.