![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথিক। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। আবার শূন্যের উপর নির্মাণও করছি। এটাই প্রকৃতপক্ষে জীবন। অথবা- জীবন এমনই। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।
আমার সমস্ত রাগ-ক্ষোভ কেন সুশীল সমাজ ও টকশোবাজদের প্রতি নিবদ্ধ হয় জানি না। ক্লাশের পেছনের বেঞ্চ থেকে উঠে আসা (একদৃষ্টিতে সত্যিকার রাজনৈতিক প্রতিভাধররা ক্লাশে একসময়ের পেছনের বেঞ্চের হওয়াই যৌক্তিক। কারণ একটা সময় লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাস্তব সমস্যা নিয়েই তাদের ভাবনা-চিন্তা আবির্ভূত হয়) আজকের অধিকাংশ রাজনীতিকদের সমালোচনায় মুখর হতে তাদের কি লজ্জা করে না? তাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত, নিজেরা কী করছেন। কেন তারা সমালোচনায়ই সীমাবদ্ধ থাকছেন, রাজনৈতিক উন্নত সংস্কৃতি গঠনের পদক্ষেপ কেন নিতে পারছেন না? প্রশ্ন করা উচিত, নিজেরা ক্ষমতা পেলে এর চেয়ে উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়বেন এর প্রমাণ কি? কেননা সুশীল সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী ও টকশোবাজ-কলামবাজদের মধ্যেও তো আমরা পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি ও কামড়াকামড়িই দেখি! অনেক রাজনীতিক যারা এখান থেকে উঠে আসা, তাদের থেকেও তো আমরা নতুন কিছু পাচ্ছি না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আসলে সুশীল সমাজ, টকশোর আলোচক ও কলামিস্টসহ সর্বশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের গতানুগতিক দোষাদুষি ও আক্রমণাত্মক সমালোচনাগুলোর মধ্যেই সমস্যা লুকায়িত। কারণ সত্যিকার সমালোচনা অবশ্যই অবশ্যই সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন আনে, আনতে বাধ্য। গঠনমূলক ও সঠিক সমালোচনার সামনে ভুলের ওপর কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, থাকার ক্ষমতা নেই, দাপট দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না।
অনেকদিন ধরে ভাবছি “সমালোচনার সমালোচনা” নামে লিখব। কিন্তু এ নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ হচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত, বুদ্ধিজীবীদের কথামত যত দোষ নন্দঘোষ (রাজনীতিক) নয়, আমরা প্রত্যেকেই এর জন্য দায়ি। কে কার চেয়ে কম দায়ি জানি না, শুধু জানি কে কার চেয়ে বেশি দায়ি। আর দায়িত্ব এড়িয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগা সবার পক্ষেই সম্ভব। কেবল সত্যিকার জ্ঞানী-গুণী ছাড়া। জাতীয় সংসদের স্পীকার যখন বলেন “আমি কেবল সংসদের ভেতরে আলোচনায় রাজি হলেই সহযোগিতা করতে পারি, বাইরে নয়”, তখন হতাশ না হয়ে পারি না। অথচ আমি মনে করি শুধু স্পীকার নন, আমার মত একজন সাধারণ নাগরিক ও তরুণের পক্ষেও সংসদের ভেতরে-বাইরে যেকোন জায়গায় আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং সরকার ও বিরোধী দলকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা আমাদের যে-কারও আছে। কিন্তু আমরা দায়িত্ব-সচেতন নই।
নাহ, সুশীল সমাজকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। যারা প্রশ্ন চায় না, তাদের প্রশ্ন করা যায় না। টকশোর স্বার্থে শুধু প্রশ্ন চাইলেই হবে না, প্রশ্ন ও সমালোচনা সংগ্রহের বাস্তব প্রমাণ দিতে হবে। আমি বুঝি না, টাকা রুজি করতে করতে একেক জনের চুল পেকে গেছে, অথচ এখনও টাকা ছাড়া তারা কিচ্ছু বুঝেন না। তারা সম্ভবত ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হয়ে গেছেন। সুতরাং প্রশ্ন করা যেতে পারে তরুণ সমাজকে। আমি তরুণদের নিয়ে আশাবাদী। তবে সমস্যা হল, সফলতা হজমের ক্ষমতা এদের কম। কি-না-কি এক শাহবাগ আন্দোলন জমিয়েছিল, তারপর তাদের আস্ফালন দেখে কে? হেফাজতও এই জায়গাটিতে হোঁচট খেয়েছে।
অনেক তরুণ দেশের এই অবস্থা দেখে চরম হতাশ। জীবন নিয়ে তারা আর আগের মত স্বপ্ন দেখে না। আত্মহত্যার ইচ্ছে প্রবল। তবে তারা নিজে মরার পাশাপাশি সমাজের আরও দশ জনকে সাথে নিয়ে মরতে চায়। ভাবটা এমন, নিজে যখন শান্তি পাইনি, কাউকে পেতেও দেব না। এ শ্রেণীর যুবকরা এখন জেল-জুলুম পরোয়া করে না। মৃত্যুকে অগ্রীম গ্রহণ করেছে। যতদিন বেঁচে থাকে সেটা মনে করে বোনাস। ধীরে ধীরে আমাদের দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র কোথায় যাচ্ছে? সমস্যা আগে দলা পাঁকায়, তারপর বিস্ফোরণ ঘটে। আজ প্রতিটি নাগরিক যে যুদ্ধংদেহি মনোভাব লালন করছে, প্রচণ্ড বিস্ফোরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র। জনগণের নীরব ভাষা সুশীল সমাজ ও চিন্তাশীলদের বুঝতে হবে। রাজনীতিকরা বুঝবেন না কারণ, তারা ক্ষমতা স্বপ্নে বিভোর।
©somewhere in net ltd.