নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধ্যাত্মিক পুরুষ, ধর্মগুরু; খানকা থেকে বলছি।

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

জাকির এ মাহদিন

আমি পথিক। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। আবার শূন্যের উপর নির্মাণও করছি। এটাই প্রকৃতপক্ষে জীবন। অথবা- জীবন এমনই। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।

জাকির এ মাহদিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্র

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৪০

মানুষ হিসেবে সমস্ত মানবজাতির এমন কতগুলো মৌলিক মিল ও ঐক্য রয়েছে যাতে সবাই এক প্লাটফরমে আসতে পারে। জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্কেলে সমস্ত মানবজাতি একমত হতে বাধ্য। এটাই জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। বিরোধ মীমাংসা করা, ঐক্য সৃষ্টি করা, মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলাই শিক্ষা ও জ্ঞানের কাজ। স্বাভাবিকভাবে কে কোন ধর্মের, কে কোন দলের সেটা বিবেচ্য নয়। এমনকি জাতি হিসেবে বিভিন্ন দল, ধর্ম ও গোষ্ঠীর অতীতের ভুলগুলোও নমনীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে হবে এবং জাতির সামগ্রিক মঙ্গল অনুসন্ধান করতে হবে। মোটকথা যেসব ইস্যু ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রায় সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় সেগুলো নিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গোষ্ঠী ও বিশাল অংশের তরুণ সমাজকে এগুতে হবে। আজ বিশেষ কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রতি অন্ধ আক্রোশ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কুফল পুরো জাতি ভোগ করছে। এর থেকে আপনি আমিও খালি নই। সবাই নিজ নিজ মতবাদ ও দর্শন প্রচার করছে এবং নিজেদেরটাকেই সত্য বলে দাবি করছে। তাই ভুল-শুদ্ধ পার্থক্য করার জ্ঞান যুব সমাজেকে রপ্ত করতে হবে। অযথা বুঝে-না-বুঝে চিৎকার-চেঁচামেচি ও বিতর্কে কোন লাভ নেই।



আমাদের উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে চলবে না, এই সমাজ ভেতর থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এবং সুকৌশলে ব্রিটিশরাই কিছু মৌলিক বিতর্ক সৃষ্টি করে গেছে। এর সাথে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে আরও কিছু যোগ হয়েছে। এর একটা বিতর্ক এই, ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। মূলত ধর্ম কি, ধর্মনিরপেক্ষতাইবা কি এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চরিত্রইবা কি হবে তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার মত বুদ্ধিজীবী আমাদের দেশে নেই। এমন আলেমের সংখ্যাও কম। যে স্বল্প সংখ্যক আলেম জ্ঞানী আছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা কোণঠাসা, মিডিয়ায় উপেক্ষিত। আর দার্শনিক, সমাজতান্ত্রিক বা ইসলামি যেসব বুদ্ধিজীবী মিডিয়ায় নাচানাচি করেন, তাদের নিজস্ব কোন জ্ঞান নেই বললেই চলে। লক্ষ্য করে থাকবেন তারা বিদেশি লেখক/বুদ্ধিজীবীদের উদ্ধৃতি ছাড়া কোন কথা প্রমাণ করতে পারে না। আর এখানেই সমস্যার সূত্রপাত। অর্থাৎ এই যে ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিদিন বুদ্ধিজীবীদের মুখে খই ফুটছে, অথচ বিষয়গুলো তাদের নিজেদের কাছেও সুস্পষ্ট নয়। তাই জনগণকে কোন একক প্লাটফরমে একত্রিত করা যাচ্ছে না। সবেচেয়ে বড় কথা যে মূল বিতর্কটি নিয়ে আজকের বাঙ্গালি/বাংলাদেশি জাতি দ্বিধা বিভক্ত, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মডেল পৃথিবীর কোথাও নেই, কখনো ছিলোও না।



সুতরাং সাধারণ কোন উপায়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার বা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার পথ আপাতত নেই। তবে পথ অবশ্যই আছে, সেটা এখনও প্রকাশ না। আমরা এমন একটি দর্শন, এমন একটি আদর্শ, এমন কিছু নীতিমালা এবং এমন একজন নেতা আশা করছি, সূর্য উঠলে যেমন সবাই দেখে ও স্বীকার করে, এক্ষেত্রেও সবাই দেখবে এবং স্বীকার করবে। কোন বিতর্কিত ব্যক্তি নন। অথবা বিতর্ক উঠলেও মিলিয়ে যেতে সময় নেবে না। প্রাথমিকভাবে রাজনীতির বাইরে থেকেই তাকে আলো ছড়াতে হবে।



ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র প্রয়োগ করতে হলে সবার আগে এদেশকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, মানুষের রক্তের তাপমাত্রা মাপতে হবে। ভূমির বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে। আর এটা বিদেশি কারও পক্ষে সম্ভব না। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একাধিক বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিক পেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক, লেখক বা বুদ্ধিজীবী পাইনি। শেখ মুজিব কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? শহীদ জিয়া কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? কারণ আমাদের নিজস্ব দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীর বড় অভাব। বস্তুত ধর্মের সঙ্গে কোনও মানুষের বিরোধ নেই। ধর্ম বুঝতে পারলে ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কোনই প্রয়োজন নেই। ধর্ম নিয়ে এই সব বিতর্কগুলো ব্রিটিশদের সৃষ্টি। আমি দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে আজকের যুবসমাজকে আহ্বান করব, অন্ধতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা পরিহার করে ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য।



মূল গাছের যত্ন ঠিকমত না নিলে দ্রুত আগাছার তলে পড়ে যায়। আগাছা বাড়ে তাড়াতাড়ি, যত্ন ছাড়া, খুব সহজেই। আজ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা হচ্ছে, শিক্ষা ও সাহিত্য থেকে আলাদা করা হচ্ছে, করা হচ্ছে সমাজ ও পরিবার থেকে আলাদা। শেষে ব্যক্তিজীবন থেকেও। একজন মানুষের শরীর থেকে হাত-পা, চোখ-কান-নাক, মাথা আলাদা করার মত। তাহলে ধর্মের স্থান কোথায়? একজন বললেন সাহিত্যের সঙ্গে সাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবন ও ধর্মচিন্তা বা ধর্ম-কর্মের কোন সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন, তাহলে সাহিত্য কেন? হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর সারাদেশ তাকে নিয়ে মাতোয়ারা। অথচ তার সাহিত্য তাকেই মুক্তি দিতে পারেনি। তার স্ত্রী, তার সন্তান তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধ। তিনি নিজেও সারা জীবন এই কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছেন। অথচ ধর্ম তাদের উভয় পক্ষকে কত সহজেই এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারত। একজন পুরুষ- যদি তার পৌরুষ থাকে, তাহলে দ্বিতীয় বিয়েতে স্ত্রী অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা না। অবশ্য নারীবাদীদের কথা ভিন্ন। আমাদেরও দায় কম না। আমরা ধর্মকে সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারাতেই এ সমস্যা। এখন যে অবস্থা! সারা ক্ষেতে শুধু আগাছা আর আগাছা। ফসল কোথায়? এসব কি পরিষ্কার করার সামর্থ্য আমাদের আছে? আর যারা পরিষ্কার করবেন, তারা যদি আগাছাসমূহকেই ফসল মনে করেন তাহলে কি হবে, কি হতে পারে!



বিতর্ক কখনও শেষ হবার নয়। ফলাফল যা লাউ তাই কদু। প্রথম কথা, যারা নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে কিছু করতে যাবেন তারা পরস্পরকে কতটুকু ছাড় দিতে রাজি তা দেখতে হবে। নিজের মতের উপর অটল থাকলে কখনও কিছু হবার নয়। হলেও ভঙ্গুর। কখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিটি সদস্য পর্যন্ত প্রত্যেকেই পরস্পরকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত হয় এবং নির্দিষ্ট কারও নেতৃত্ব প্রায় বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়? দ্বিতীয় কথা, ইস্যুর অভাব নেই। তাই মৌলিক ইস্যুগুলো কি তা খুঁজে বের করে ধীরে-সুস্থে আলোচনা করতে হবে। দাওয়াতে আপনাকে ২০টা আইটেম দেয়া হল। অথচ আপনি খেতে পারবেন বড়জোর ৩টি। তখন কি করবেন? নিশ্চয় ২০টির মধ্যে ৩টি বাছাই করবেন। সুতরাং সব বিষয় আলোচনায় আসতে পারে না, আসার দরকার নেই। আসলে শেষও হবে না। (যদিও আলোচনা চলতে হবে দীর্ঘমেয়াদি, লাগাতার। বিশেষ পরিস্থিতি বা স্বাভাবিক পরিস্থিতি- সর্বাবস্থায়, পক্ষের বা বিপক্ষের- সবার সঙ্গে।) রাজনৈতিক মতবাদগুলোকে আমরা বুঝবার সুবিধার্থে ডানপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করি। আবার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থান মাপার জন্য উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত হিসেবে চিহ্নিত করি। জীবনদর্শনগুলো ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের আলোকে পর্যালোচনা করতে পারি। আবার প্রতিটিতেই চরমপন্থি, উদারপন্থি ও মধ্যপন্থি বের করতে পারি। মোটকথা এভাবে প্রসঙ্গের পর প্রসঙ্গ বাড়বেই।



একজন রাজনীতিকের সরল স্বীকারোক্তি- ‘রাজনীতিকদের কখনো বিশ্বাস করতে নেই’। সত্য ও বাস্তব কথাটি তিনি আমাদের বললেন। নিশ্চয় তার নিজের মধ্যেও এই বাস্তবতা পরিবর্তনের একটা আকাঙ্খা প্রায়ই কাজ করে, কারণ সময়ে সময়ে তারা নিজেরাও এর নির্মম শিকার হন। কিন্তু ‘পরিবর্তন সম্ভব’- এই বিশ্বাসটা মনে হয় তাদের (আমাদের দেশের বর্তমান নেতানেত্রীদের) মধ্যে কাজ করে না। তাই রাজনীতির গতানুগতিক নীতিমালাই তারা অনুসরণ করেন। রাজনীতিকরা দোষ চাপান জনগণের ওপর, আর জনগণ রাজনীতিকদের ওপর। একদল রাজনীতিক মনে করেন, যে ধারায় উন্নতি ঘটছে, দীর্ঘ একটা সময় পর আমাদের সব আশা-আকাঙ্খা পূরণ হবে। এখন শুধুই অপেক্ষা। কিন্তু আমি মনে করি এই বায়বীয় প্রত্যাশা ও সাফল্যের অপেক্ষায় না থেকে বরং অপেক্ষার সর্বোত্তম ব্যবহার হওয়া উচিত। যে হারে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, সে হারে কিন্তু উন্নতি ঘটছে না। আর মূলকথা, ‘বিশ্বাস’ ছাড়া মানবজীবন অচল, স্থবির। তাই পারস্পরিক বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই বিশ্বাসের উন্নতি ঘটায় জ্ঞান।

সব ইস্যু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কি লিখব, কাদের পক্ষে বা বিপক্ষে লিখব বুঝতে পারছি না। জানি না আমরাই (নতুন প্রজন্ম) এই অভিজ্ঞতা অর্জন করছি, নাকি প্রত্যেক প্রজন্মই একটা সময় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। অর্থাৎ এটা আগে থেকেই ঘটে আসছে, নাকি স্বাধীনতার পর এখনই বিষয়টা চরমে? যতদিন আওয়ামী লীগ একইসাথে ভারত, আমেরিকা ও সুদখোরদের দালালী করত, ততদিন আওয়ামীলীগের সমালোচনা চোখ বুঝেই করা যেত।



আজ যখন আওয়ামীলীগ আমেরিকা ও ইউনুসের কঠোর সমালোচক, তখন এর আরও কোন গুণ আছে কি না একটু খোঁজাখুঁজি করতে হয়। তসলিমা যখন একইসাথে ইসলামের বিপক্ষে এবং ইসলামবিরোধীদের বিপক্ষে কলম চালায়, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতিটা আরও সূক্ষ্মভাবে ভাবতে হয়। জামায়াত যখন এর জন্মলগ্ন থেকেই যুগপৎ ইসলামের পক্ষে এবং ইসলামের চরম শত্রুদের পক্ষে দক্ষ হাতে তীর চালায় তখন তাদেরকে ভিন্নভাবে বিচার না করে উপায় নেই। তথাকথিত সুশীলসমাজ ও বামপন্থিরা যখন বর্তমান সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা, দুর্নীতি ও নষ্ট রাজনীতির সমালোচনায় মুখর হন, ভালো লাগে। কিন্তু এরা যখন ইসলাম ও ধর্মের বিরোধিতায় অন্ধভাবে জীবন বাজী রাখে, তখন পাছায় লাত্থি মারতে মুঞ্চায়।



অনেকে যুক্তি দেখায়, "ধর্ম এত ঠুনকো না যে সামান্য কথাতেই আঘাতপ্রাপ্ত হবে।" আমি বলি কি, সাদা কাপড় এত সস্তা নয় যে, সামান্য দাগ লাগলেই তা দেখা যাবে বা ধুইতে হবে। আচ্ছা, আমাকে কেউ বলবেন, তারা বুঝে বলেন নাকি না বুঝে? যদি বুঝে বলেন, তাহলেও চিন্তা করি যাদের এত শ্রদ্ধা করি, অথচ তারা...। আর যদি না বুঝে বলেন তাহলে চিন্তা করি, আমি কোনসব বাঙ্গালীদের 'বুদ্ধি' নিয়ে এত গর্ব করি, যাদের ঘিলুতে এই সামান্য বিষয়টি ধরা পড়ে না? আমি যদি বলি শেখ মুজিবের সম্মান এত অল্প নয় যে আপনার সামান্য কথায় জাত যাবে, তাহলে কি ঠিক হবে? ধর্ম তো আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কথা হচ্ছে কারও 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত'। মানুষের অনুভূতি সবচেয়ে স্পর্শকাতর একটি অদৃশ্য অঙ্গ। চোখে সামান্য বালিকণা পড়লেই বিশাল ইট মনে হয়। যে কারণে হাদিস শরীফে মনে বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়াকে মসজিদ ভাঙ্গার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে বা যারা মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মত নির্মম নিচু কাজ করতে পারে, তারা করতে পারে না কোন খারাপ কাজটা? সুতরাং অন্যদের তো বটেই, তার বা তাদের নিজেদেরও সীমাহীন ক্ষতি থেকে বাঁচাতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব।



পরিশেষে বন্ধুবর জুনায়েদ গালিবের একটি উদ্ধৃতি টেনে লেখা শেষ করছি। ''বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ। হালকা, অগভীর, বায়বীয়, অসংবেদনশীল "বুদ্ধির" উত্পত্তি সেখান থেকেই। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা না 'টেকনিকাল', না 'থিওরিটিকাল ' - কোনটার মধ্যেই পরে না। সামগ্রিকভাবে ''জ্ঞান'' নামক আলো থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার ফলাফল এটা। আর দেশ-বিদেশে বিস্তৃত পড়াশোনা করা লোকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু তাদের অন্তরেও থেকে যায় লোভ, লালসা, ক্ষমতা, বিত্ত্, জনপ্রিয়তা ইত্যাদির প্রতি অসম আকর্ষণ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর অসম জোয়ারে, সামাজিক উন্নয়ন এর উপাদানগুলি- মানবতা, দয়া, মায়া, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে এক সময় মিলিয়ে যায়।''



অর্থনৈতিক মুক্তিই জীবনের সবকিছু নয়। উন্নত বিশ্বের অর্থনৈতিক মুক্তি সত্ত্বেও তাদের অর্থনৈতিক চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই তাদের নজর এখন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের প্রতি। তাই বর্তমান বিশ্বের যেকোন মুসলিম দেশ বিশেষত বাংলাদেশকে ইরাক-আফগানিস্তানের পরিণতি বরণ বা “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা” উড়িয়ে দেয়া যায় না। সুতরাং জ্ঞানগত বিপ্লব, একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ গঠন, সকলের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন এবং সমস্ত মানবজাতির মুক্তিই আমাদের মূলকথা। মানুষ কি চায়, তার মৌলিক (আধ্যাত্মিক) চাহিদা কি, সমস্যা ও সম্ভাবনা কি, সার্বিক মুক্তি অর্জনের পথ কি এসব আমাদের ভাবতে হবে। তর্ক-বিতর্ক, দলাদলি, হিংসা-বিদ্বেষ এসবে সময় নষ্ট আর নয়। আসুন নিজেদের সম্পর্কে সজাগ হই, পরিচয় অর্জন করি।



আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী মূলত ধর্মীয় নয়, একটা রাজনৈতিক বা রাজনীতিনির্ভর দল। এর বিশেষ লক্ষণ, আত্মশুদ্ধির প্রাধান্যে নয় বরং অন্যান্য দলের মতই ক্ষমতার মাধ্যমে সমাজ ও জাতির সামগ্রিক পরিবর্তন ও কল্যাণকামী ইচ্ছা। এই ইচ্ছাটা শুভ হলেও কর্মপন্থাটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল। কারণ ক্ষমতার মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটলেও সার্বিক মুক্তি অসম্ভব। সুতরাং ধর্মীয় দল হিসেবে দাবী করে ধর্মকে তারা যেভাবে ব্যবহার করে তা ঠিক নয়। যদিও তাদের দুর্বল তবে আপাত রঙ্গীন ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলো আজকের যুবসমাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর কতক বাস্তব কারণ আছে। যেমন (ক), আলেম-উলামাদের দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ, (খ), আন্তর্জাতিক লবিং ও অঢেল অর্থ খরচ, (গ), বিশেষ করে আজকের অন্যান্য ইসলামিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক ও দার্শনিক দুর্বলতা।



আজকের আওয়ামীলীগ-বিএনপিকে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা জামায়াতের খুব ভালভাবেই আছে, এটা বাস্তব। এর অর্থ এই নয় যে জামায়াত তুলনামূলকভাবে সঠিক পথে আছে বা এ দেশের জন্য উপকারী। আমি আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট- এসবকে এক নজরেই দেখি এবং কোনটাই সমর্থন করি না। কারণ আমার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ ভিন্ন। মৌলিক চিন্তাধারা ও চাহিদা স্বতন্ত্র। আমার দৃষ্টিতে এরা যে কারণে ব্যর্থ, সেই একই কারণ ড. ইউনুস এবং ফখরুদ্দীনের মধ্যেও রয়েছে। রয়েছে শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম কিংবা ক্বওমী ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যেও। এছাড়া তাদের মধ্যে অযোগ্যতার আরও কিছু বাড়তি কারণ রয়েছে যা ইতোমধ্যেই মিডিয়ায় জোরে-শোরে প্রকাশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.