![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পথিক। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। আবার শূন্যের উপর নির্মাণও করছি। এটাই প্রকৃতপক্ষে জীবন। অথবা- জীবন এমনই। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তার জীবদ্দশায় পাগল, যাদুকরসহ অনেক কিছুই বলা হয়েছে, পাওনাদার গলা পেঁচিয়ে ধরেছে, তার বিছানা নাপাক করেছে, মসজিদে প্রশ্রাব করেছে, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে মুসলমানরা সর্বোচ্চ সংখ্যক এবং সংগঠিত ও শক্তিমান থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্য অবমাননা ও পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। মক্কার পবিত্র কাবাগৃহের অভ্যন্তরের ৩৬০টি মূর্তিতে মক্কা বিজয়ের আগে কোনো আঁচর দেননি। আজ সে আদর্শ কোথায়? যারা যুক্তি দেখান এদেশের ৯০% মুসলমান, কিন্তু কোন্ সূত্রে মুসলমান জানতে পারি? মসজিদে যান শতকরা কত ভাগ? যারা যান তাদের ওযু-গোসল, রুজি-রোজগার কতটুকু ঠিক আছে? আর আমরা সাধারণ জনগণকে কতটুকু সময় এ ব্যাপারে দিতে পারছি? ইনবক্সে এক ভাই জানতে চেয়েছেন কয়েক পর্যায়ের ‘সেক্স’ নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ। যেন তিনি এ সম্পর্কে নাস্তিকদের প্রশ্নের ‘সমুচিত’ জবাব দিতে পারেন। তাছাড়া তার সঙ্গে সম্পর্কিত একজন মুসলমান ভাইকে নাস্তিকদের কবল থেকে তিনি বাঁচাতে চান। আমি তাকে বলেছি, “এ জাতীয় প্রশ্ন তার মধ্যে কেন এলো সেসবের প্রেক্ষাপট জানতে হবে। সাধারণত এ ধরণের প্রশ্নের অধিকার সবাই অর্জন করে না, তাই উত্তর দেয়ারও আবশ্যকতা নেই।” তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বলতেই আমি তাকে অনুরোধ করেছি। কেননা এরচেয়েও অনেক প্রয়োজনীয় বিষয়ই আমাদের অজানা রয়ে গেছে।”
তিনি আমাকে এক নাস্তিক পাগলের “দীর্ঘ প্রলাপ” পাঠিয়েছেন। আমি প্রথমত তাকে বলব, সচরাচর আমরা যে অহঙ্কারি ও কথিত বিজয়ের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নাস্তিক/কাফেরদের সঙ্গে বিতর্ক করি, সেই দৃষ্টিভঙ্গিই ইসলাম সমর্থন করে না। নাস্তিক/কাফের নয়, আপনি প্রথমে সবাইকে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখতে চেষ্টা করুন। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে দেখুন। তার সম্মান, আত্মমর্যাদা, স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গিকে মূল্যায়ন করুন। তার ভাষা, পরিবেশ, পারিবারিক, শিক্ষাগত ও পরিবেশগত বিষয়গুলো বুঝতে চেষ্টা করুন। তারপর দেখুন তার প্রতি আপনার অন্তরে কোনো সহমর্মিতা বোধ করেন কি না। যদি করেন, তাহলে তার অনেক কিছুই আপনাকে হজম করতে হবে। এই যোগ্যতা না থাকলে সরে যান। দয়া করে ইসলাম সম্পর্কে তার মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করবেন না। কোরআনের বক্তব্য উপস্থাপনকারীকে কোরআন সরাসরি কি কি নির্দেশ দেয় তা খুঁজে বের করুন। “আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরে বিচ্ছিন্ন না হওয়া, প্রবৃত্তির আনুগত্য না করা, ধর্ম বা কোরআনকে জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম না বানানো, ক্রিয়া না হলেও অন্তত প্রতিক্রিয়া যেন না হয় সেই হেকমত বা কৌশল অবলম্বন করা, তাদের উপাস্যদের গালি না দেয়া যেন তারা আমাদের উপাস্যদের গালি দেয়া থেকে বিরত থাকে ইত্যাদি বহু শর্ত আছে।
আপনি আমাকে যে প্রলাপটি পাঠিয়েছেন, আমি নাস্তিকদের আখড়া খ্যাত “আমার ব্লগ ডটকমে” লিখি। এ জাতীয় বহু লেখা সেখানে অহরহই আসে, পড়ার প্রয়োজনবোধ করি না। কারণ আমি জানি ওরা সর্বোচ্চ কী বা কতটুকু বলতে পারে। তাছাড়া দেশ-বিদেশে ওদের যারা মৃত-জীবিত গুরু- বার্ট্রান্ড রাসেল, মার্ক্স-লেনিন থেকে শুরু করে আহমদ শরীফ-প্রবীর ঘোষ-টবির ঘোষ সব ভাজা। সুতরাং ওদের লেখা আর কী পড়ব? তবুও মাঝে-মধ্যে দেখি, জবাব দেয়ার কোনো তাড়না বোধ করি না। কারণ ওরা ময়না পাখির বুলির মতো একই কথা বারবার বলে। যা বলে সে সম্পর্কে ওদের না আছে জ্ঞান, না আছে অভিজ্ঞতা, আর না আছে যোগ্যতা বা অধিকার । সুতরাং এ বিষয়ে বললেও তাদের বুঝার সামর্থ নেই। তাদের সঙ্গে ধর্ম বা ধর্মের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই আসে না, (কেউ একান্তে জানতে চাইলে ভিন্ন কথা) কারণ এর প্রাথমিক শর্তই তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা চলতে পারে “মানুষ” নিয়ে, আমাদের “বর্তমান বিভিন্ন সমস্যা” নিয়ে। সমস্যার উৎপত্তি, মানবিক সীমাহীন চাহিদা, মানবিক স্বভাবগত সমস্যা- এসব নিয়ে। বিশেষ করে “সমস্যার উৎপত্তি, মানবিক সীমাহীন চাহিদা, মানবিক স্বভাবগত সমস্যা”- এসবের তারা কি সমাধান দেয় বা আদৌ দিতে পারে কি না তা তাদের কাছ থেকে জানা যেতে পারে। মূলত তারা এ ব্যাপারে কোনো সমাধান দিতে পারে না। যে সমাধান তারা দেয় সে সম্পর্কে প্রশ্ন করুন, আটকে যাবে। যে উন্নয়নের কথা বলে সে উন্নয়ন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দেখিয়ে দিন, এরপর জিজ্ঞেস করুন ওইসব কথিত উন্নত দেশগুলো মানবিক অসংখ্য সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পেরেছে কি না, মানুষের চূড়ান্ত চাওয়া-“শান্তি” পেয়েছে কি না? এভাবে বাস্তবতা ও যৌক্তিক দিক থেকে আলোচনা করুন, যদি আলোচনা করতেই চান। তারা আটকে যাবে। আমি একদিকে যেমন ধর্ম সম্পর্কে তাদের খিস্তি-খেউরগুলোকে বলেছি পাগলের প্রলাপ, অন্যদিকে বলেছি আমরা মুসলমান হিসেবে তাকে সর্বশ্রেষ্ঠসৃষ্টি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা, তাদের শিক্ষা ও ভাষা বুঝতে চেষ্টা করা, আত্মসম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা, তাদের বিরোধী বক্তব্যগুলো হজম করা।
কেউ এখানে স্ববিরোধিতা দেখতে পারেন, কিন্তু আসলে তা নয়। তাদের বক্তব্যগুলোর (ধর্ম সম্পর্কে তীব্র ঘৃণা, অযৌক্তিক আক্রমণ-আচরণ-উচ্চারণগুলো) দিকে মোটেও তাকানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাদের প্রতি যত্নশীল হোন।
আর ভাবতে পারেন তাদের পক্ষ থেকে ওসব হিংসাত্মক আক্রমণ, তীব্র ঘৃণা, অসংলগ্ন বক্তব্য ও অযৌক্তিক প্রশ্নগুলোর কারণ কি? আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের কি কি সমস্যার কারণে আজ বিশ্বের একদল মানুষ আমাদের প্রতি এমন আচরণ করছেন? মূলত কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের প্রতি, আলেমদের প্রতি, নবীর ওয়ারিশগণের প্রতি যেসব সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে, সেসবে পৃথিবীর সমস্ত বামপন্থি, বুদ্ধিজীবী, নাস্তিক ও অন্যান্য বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব যেমন আছে, তেমনি আমাদেরও যথেষ্ট চিন্তা ও ভয়ের কারণ আছে। তাই যে-কারও অযৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা যে ‘ইসলাম’ ‘ইসলাম’ করি এর মানে কি? বর্তমান সরকার যে ‘গণতন্ত্র’ ‘গণতন্ত্র’ করছে, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা”, ‘আইনের শাসন’ ইত্যাদি বলে চেচাচ্ছে- এর মানে বুঝলেই ইসলাম নিয়ে আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচির অর্থ পরিস্কার হবে। বস্তুত যখন নির্দিষ্ট বিষয়টির চূড়ান্ত অভাব ঘটে এর ধারক-বাহকদের মধ্যে, তখনই এভাবে চিৎকার করতে হয়। একটি লেখায় প্রশ্ন তুলেছিলাম যে, “ইসলাম ইসলাম করে বা প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে ইসলামের লেভেল পরিয়ে ইসলামিস্টরাই ইসলামকে আলাদা করে ফেলছে। যেমন ইসলামি কলেজ, ইসলামি দল, ইসলামি টিভি, ইসলামি অমুক-তমুক ইত্যাদি। আমার কথা হচ্ছে, প্রকৃতই যদি ইসলাম জীবনের সবকিছুকেই বেষ্টন করে রাখে, তাহলে ইসলামকে আলাদাভাবে এসবের সঙ্গে জুড়তে হবে কেন? কেউ চাইলেও তো এর বাইরে যাবার সুযোগ নেই, মুখে উচ্চারণ করুক বা না করুক। আমি কি আমার মুসলিম বাবাকে ইসলামি বাবা বলে ডাকব, মাকে ইসলামি মা? তা না হলে কি আমার ‘বাবা’ বা ‘মা’ ডাকটি ইসলামি হবে না?”
সেদিন দেখলাম এক ব্লগে কে না কে আহমদ শফী সাহেবের বিরুদ্ধে ছোট্ট একটি পোস্ট দিয়ে বিষোদ্গার করেছে। আর এটা আমাদের অনেকে প্রচার করেছেন। ওলীপুরির আইডি থেকেও দেখলাম প্রচার করতে। কেন? বেচারা এটা দিয়েই তো টপে। এতে অন্যরা এসব করতে আরো উৎসাহিত হয়। আমরা না পারি এর যৌক্তিক প্রতিবাদ করতে, আর না পারি এসব সামলাতে। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। কেউ কেউ আছেন নিয়মিতই এ জাতীয় নাস্তিকদের নিয়ে লিখেন। এতে তিনি যে তাকে কি পরিমাণ সহযোগিতা করছেন, এটা বুঝারও ঘিলু নাই। সত্য এলে মিথ্যা আপনা থেকেই দূরিভূত হয়। কোরআনে এসবকে মাকড়সার জালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, মাত্র ঝাড়ুর একটা হাল্কা বাড়ি, সব ধূলিস্মাৎ। আর আমরা কি না… ওদের প্রচার করতে করতে নিজেদের কাজের খবর নেই। গতানুগতিক ধারার ওয়াজ-নসীহত, মাদ্রাসায় পড়ানো-ইমামতি- এসব নিয়ে আজ ভাববার সময় এসেছে। আজ আমরা জামাতের বিরুদ্ধে কথা বলছি, কিন্তু এই জামাতে ইসলামি গড়ে ওঠেছে ওলীপুরী-আমিনী-হবীগঞ্জী সাহেবদের নাকের ডগায়। তারা কেন এতদিনেও এর যথাযথ মোকাবেলা করতে পারেননি? আর আমরা তরুণ কওমিরা যদি এ ধারা থেকে বেরুতে না পারি, আমরা কি পারব তাদের মোকাবেলা করতে? কক্ষণও না।
নাস্তিক, বামপন্থি, একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী, ধর্মবিদ্বেষী এবং আদর্শ-উদ্দেশ্যহীন মেয়েছেলেদের কথায় কর্ণপাত করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাই তাদের অযৌক্তিক প্রশ্নগুলোও এড়িয়ে চলতে হবে। এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ নেই। কারণ সত্য বিষয়টি অনুসন্ধান ও জানার কোনো ইচ্ছেই তাদের নেই।
©somewhere in net ltd.