![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
____ ছেলেটি জেগে আছে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটি____
একই সাথে পড়ত তারা দুইজন-ছেলেটি সাইন্সে , মেয়েটি কমার্সে। মেয়েটি ছিল খুব সুন্দর আর ছেলেটি ঠিক উল্টা । অবিশ্বাস্য হলেও সত্য দুই জনের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। তারপর থেকে আনন্দেই কাটতে থাকে তাদের দিন
। HSC কমপ্লিট করার জন্য কলেজ়ে ভর্তি হওয়ায় দুইজনের মধ্যে দেখা হওয়া অনেক কমে যায়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিদিন ৪-৫ বার করে ফোনে কথা বলত তারা। মাঝে মধ্যে ঘুরতেও যেত বসুন্ধরা সিটিতে। খাবার জন্য সবসময়েই তারা একই দোকানে (BFC) বসত। মেয়েটি প্রতিবার গুণে রাখত কতবার খেতে আসল। শেষবার যখন এসেছিল মেয়েটি বলেছিল সেটি ছিল ৩১ তম , ছেলেটির স্পষ্ট মনে আছে সেটা। ছেলেটি বুঝত না ঠিক কেন গুণে রাখত মেয়েটি। একবার জিজ্ঞাসা করলে মেয়েটি জ্ঞাণীর মত বলে , “পরে বুঝবা”। কে জানে ? মেয়েটি হয়ত আগেই বুঝতে পেরেছিল।।
একবার ঘুরতে মেয়েটির তার বান্ধবীদের কাছে ধরা খেয়ে যায় । সেই থেকে সে আর খুব একটা ঘুরতে যেতে চায় না । ছেলেটি খুব জোর করলে যায় । এমনই ঘুরতে গেছে একদিন , সেদিন ছিল কিছুটা মেঘলা । তেমন একটা রোদ নেই , হাল্কা বাতাস । সবমিলিয়ে পরিবেশটা দারুণ ছিল । রিক্সা করে সারাদিন ঘুরল তারা , খুব মজা করল , আইসক্রিম খেল
। (আইসক্রিম আর চকলেট ছিল মেয়েটির খুব পছন্দের । মেয়েটি আইসক্রিম খেত আর ছেলেটি দেখত ।) । বিকেল বেলা বাড়ি ফিরে যায় তারা । কোচিং ফাঁকি দিয়ে এমন কত যে ঘুরেছে তারা তার কোন ইয়ত্তা নেই ।
তাদের মধ্যে খুব একটা ঝগড়া হত না । মেয়েটি সব সময়ই প্রেমিক যা চায় তার উলটা করত। তাই মাঝে মধ্যে ছেলেটি মন খারাপ করত এই যা । অবশ্য একই কাজ ছেলেটিও করত । তবে মন খারাপ করলে কিংবা রাগ করলে তারা ঠিকই একে অপরের রাগ ভাংগিয়ে দিত অথবা হাসির কিছু বলে মন ভাল করে দিত । রাত জেগে কথা বলা তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল । কমপক্ষে ৩ ঘন্টা কথা বলা চাই ই চাই । পরের দিন কলেজ থাকুক আর না থাকুক । ছেলেটির মোবাইলের ব্যলেন্স শেষ হয়ে গেলে মেয়েটি ফোন দিত ।
গাড়িতে চড়ার ক্ষেত্রে মেয়েটির সামনের সিটে বসা চাই ই চাই । নিজেদের গাড়ি থাকায় এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল । সামনের সিটে বসে সে কলেজে যেত । দেখতে দেখতে HSC এসে পরে । মাত্র ৩ মাস বাকি । ২ জনই সিদ্ধান্ত নেয় এখন থেকে অনেক বেশি করে পড়বে আর কথা বলবে কম । কিন্তু কোন ভাবেই ২ ঘন্টার নীচে কথা বলে থাকতে পারে না তারা । তবুও প্রিপারেশনটা ভালই হচ্ছিল । নিয়মিত স্যারদের বাসায় মডেল টেস্ট দিত তারা । দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এল । আর মাত্র ২ দিন বাকি । মেয়েটা খুবই চিন্তিত কারণ ছেলেটির খুব জ্বর
! পরিক্ষার আগে অবশ্য ছেলেটি সেরে উঠে । ইংরেজি ১ম পত্রের দিন ছিল ছেলেটির জন্মদিন । পরিক্ষার মধ্যে জন্মদিন ছিল বলে তাদের কোন প্লানিং ছিল না । সারারাত জেগে পড়াশুনা করায় পরিক্ষা দিয়ে আসায় ছেলেটি ২ টায় বাসায় এসে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে । ঘুম ভাংগে সন্ধ্যা ৭ টায়
মোবাইলের আওয়াজে । ১৫৪ টা মিসকল !!! সাথে সাথে কলব্যাক করল সে । ওপাশ থেকে ঠান্ডা গলায় মেয়েটি বলল ঃ “নীচে নাম” । ছেলেটিতো পুরাই অবাক ! তড়িঘড়ি করে নীচে নামল সে । দেখে বাসার নীচে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রেমিকা । হাতে গিফট
।
যতই পরিক্ষা থাকুক প্রেমিকের বার্থডে বলে কথা ! দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে ১ টি টাকাও পকেটে নেই ছেলেটার । মেয়েটি জোর করে তাকে kfc তে নিয়ে গেল । সব বিল দিল মেয়েটি এমনকি বাসায় ফিরার রিক্সা ভাড়া পর্যন্ত দিয়ে দিল । এমনি করে চলে যাচ্ছিল দিনগুলা । ভালই যাচ্ছিল সবমিলিয়ে ।
অবশেষে HSC পরিক্ষা শেষ হল । মেয়েটির অনেক দিনের শখ মালয়শিয়া বেড়াতে যাবে । ঠিক করল সবাই মিলে বেড়াতে যাবে মালয়শিয়া । সেখান থেকে কানাডাতে খালার বাসায় । যাওয়ার আগের দিন সারা রাত কথা বলল ২ জন । মন খারাপ ২ জনেরই । সকালে যাওয়ার আগে মেয়েটি আবার ফোন দিল । একটি নাম্বার দিয়ে বলল সেটা তার খালাতো বোনের নাম্বার । কোন দরকার হলে যেন বোনকে ফোন দেয়।
১১ টায় ফ্লাইট ছিল । সকাল ৯ টায় রওনা দিল তারা । এরপর ২ দিন কোন কথা হল না । হওয়ার কথাও ছিল না । ৪ দিন পর অনেক কষ্ট করে কিভাবে যেন মেয়েটা ছেলেটাকে ফোন দিল । জাস্ট ২ মিনিট কথা বলল তারা । ভাল আছে জানিয়ে এবং ছেলেটি কেমন আছে জেনে রেখে দিল । জানাল পরের দিন সারাদিন ঘুরবে গাড়িতে করে ।
পরের ২ দিন ২ জনের কোন কথা হয় না । ৩ দিন পর ফোন দেয় ওর বোন । জানায় ওরা রোড অ্যাক্সিডেন্ট করেছে , ড্রাইভার মারা গেছে , মেয়েটি ছিল ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটে । সে এখন হাসপাতালে । বিশ্বাস করতে পারে না ছেলেটি , আবার জিজ্ঞাসা করে সে কি হয়েছে
।দোয়া করার কথা বলে মেয়েটি রেখে দিল । এরপর ২ দিন কোন খোঁজ নেই ।
সেদিন ছিল ২৭ ই জুলাই । HSC এর রেজাল্ট দিল । মেয়েটি গোল্ডেন । সেদিনই ১১ টায় ফোন দিল খালাতো বোন । জানাল তার প্রেমিকার আর নেই ! ছেলেটি বুঝতে পারল না কি করা উচিত । কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না
।
১ মাস হয়ে গেছে । আজও ছেলেটি ভাবে তার প্রেমিকা আবার ফিরে আসবে । তাকে ফোন দিবে । কিন্তু সকাল থেকে রাত হয়ে যায় আবার রাত থেকে সকাল হয়ে যায় , ছেলেটা অপেক্ষা করে কিন্তু না মেয়েটা আর ফোন দেয় না ।
মেয়েটির ছবি দেখে দেখে ছেলেটির দিন কেটে যায় । এখন আর kfc তে যায় না সে । কার সাথে যাবে ?
~~ এটি সম্পূর্ণ সত্যি ঘটনা
©somewhere in net ltd.