নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জালটাকা

আমি অপেক্ষায় আছি ...................... কিছু অথবা কারও জন্য.............

জালটাকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গা কথন

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২২

বর্তমান মিয়ানমারের রোহিঙ্গা এলাকায় এ জনগোষ্ঠীর বসবাস।রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশে বাঙালি, পার্সিয়ান, তুর্কি, মোগল, আরবীয় ও পাঠানরা বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর বসতি স্থাপন করেছে। তাদের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। উর্দু, হিন্দি, আরবি শব্দও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে একটি প্রচলিত গল্প রয়েছে এভাবে সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা।
ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায়, এই উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বপ্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তথা বর্তমান রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। বর্তমান রোহিঙ্গারা সেই আরকানি মুসলমানদের বংশধর। এক সময় আরাকান স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। ১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন ২০০ বছরেরও অধিককাল স্থায়ী হয়। ১৬৩১ থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ১৬৬০ সালে আরাকান রাজা সান্দথুধম্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোগল শাহজাদা সুজাকে সপরিবারে হত্যা করে। এই সময় থেকেই মূলত বিরতি দিয়ে দিয়ে চলছে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন। ১৭৮০ সালে বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। তিনিও ছিলেন ঘোর সাম্প্রদায়িক ও মুসলিমবিদ্বেষী। বর্মী রাজা ঢালাওভাবে মুসলমানদের শহীদ করেন। ১৮২৮ সালে বার্মা ইংরেজ দখলে গেলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তবে ১৯৩৭ সালে বার্মার স্বায়ত্তশাসন লাভের পর সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা ব্যাপক রূপ নেয় এবং অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান শহীদ হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু মুসলমানদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন দেশের সরকার আজ পর্যন্ত তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার দেয়নি। অত্যাচার নির্যাতন ও বিতাড়নের মুখে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহুদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এরা বিশ্বের রাষ্ট্রহীন নাগরিক। ১৯৮২ সালে সে দেশের সরকার যে নাগরিকত্ব আইন করেছে, তাতে তিন ধরনের নাগরিকের কথা বলা হয়েছে। এর কোনোটির মধ্যেই রোহিঙ্গারা নেই। সরকারিভাবে তাদের সে দেশে বসবাসকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সাংবিধানিক ও আর্থসামাজিক অধিকার নেই। তারা একার্থে বন্দী। কারণ মিয়ানমারের অন্য স্থানে তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যেতে পারে না। এক সময় যে আরাকান মুসলিমপ্রধান ছিল, এখন সেখানে রাখাইন বসতি বাড়িয়ে তাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের অর্থ হলো নৌকার মানুষ, যারা সমুদ্রজলে নৌকা ভাসিয়ে মৎস্য সম্পদ আহরণ করে জীবিকা অর্জন করে।এই একবিংশ শতাব্দীতে কি পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোন জনগোষ্ঠী আছে যারা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে পারে না, আর হাসপাতালে গেলেও তাদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, তরুণ-তরুণীদের বিয়ে ও সন্তান ধারণে বাধা দেয়া হয়। শত শত বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস করলেও তাদের নাগরিকত্ব নেই। এত অত্যাচার-নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস করেছেন। বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫ লাখ। জাতিসংঘ ও ওআইসি মিয়ানমার সরকারকে এই সা¤প্রদায়িক ও জাতিগত নিপীড়ন বন্ধের আহŸান জানালেও প্রকৃতপক্ষে সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং তাদের নেতৃত্বেই চলছে হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ। প্রাণ বাঁচাতে ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধরা ছোট ছোট নৌকায় করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোও তাদের গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। মিয়ানমার ইতিহাসকে অস্বীকার করে বলছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের পরও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিবেক এখানে যেন বধির।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই বর্বর নির্যাতনের মুখেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করছে বাংলাদেশ সরকার। একদিকে নির্মম-নৃসংশতা নিয়ে সে দেশের খোদ সরকার তাদের ওপর অন্যায় অত্যাচার চালাচ্ছে। অপরদিকে ভাতৃপ্রতিম সীমান্তবর্তী দেশ বাংলাদেশও তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই মানবিক আশ্রয়টুকু তারা পেতে পারে। উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘ হাই কমিশন বাংলাদেশের প্রতি মানবিক আবেদন জানিয়েছে যে, তাদের যেন আশ্রয় দেওয়া হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ যেন ডাঙায় বাঘ এবং পানিতে কুমির- প্রবাদের মতো। তাহলে এরা যাবে কোথায়? সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের হামলায় বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি উদ্বেগ প্রকাশ করে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এরকম নিপীড়ন-নির্যাতনের পর বাংলাদেশের সরকার কি এতটাই নাজুক যে তারা সামান্য উদ্বেগটুকুও প্রকাশ করতে পারছে না! যাঁরা ভূ-রাজনীতি এবং কূটনীতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের শক্ত ভূমিকা রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের বিষয়টি নির্ভর করে। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, এই অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক রকম নিশ্চুপ হয়ে আছে। সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংগঠনের তরফ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ঘটনায় শুধুই আবেদন ও উদ্বেগের মধ্যে তাদের দায়িত্ব সীমিত করেছে। তারা অনুরোধ করেছে- মিয়ানমার সরকার যেন সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে। কিন্তু তাদের এই আহ্বান মিয়ানমার সরকারের নির্মমতার নীতিকে পরিবর্তন করতে পারবে বলে মনে হয় না । কারণ তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক বলেই গণ্য করে না। রাষ্ট্রে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার তো দূরের কথা বসবাসের অধিকারটুকু ক্রমাগত অস্বীকার করে আসছে। তারা অমানবিক মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময় এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিত্বশীল ওআইসি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তো দূরে থাকুক ‘উৎকণ্ঠাও’ প্রকাশ করছে না।


মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সমস্যার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, মিয়ানমারের প্রভাবমুক্ত করে রাখাইনকে আবার স্বাধীন আরাকানে পরিণত করতে পারলেই শুধু এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। তা না হলে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। জাতিসংঘ, ওআইসি, মুসলিম বিশ্ব ও বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হলে এবং এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেই নির্যাতনের অবসান সম্ভব।



তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.