কিছু ফরমালিন অমিশ্রিত সম্পর্ক ও যান্ত্রিকতা

১৩ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩

রাত সাড়ে নয়টা। কোচিং শেষ করে বাসায় আসতে আসতে সেদিন একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। ক্লান্ত থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখ ভেঙে ঘুম নেমে এল।
এমন সময় ফোনের বেসুরা রিংটোন কানে যেতেই শান্তির ঘুমটার বারোটা বাজল। হাতে নিয়ে দেখি অমি কল দিয়েছে। ধরলাম। আমি কিছু বলে ওঠার আগেই ওপাশ থেকে,
-"কিরে! কই তুই?"
-"বাসায়।"
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জবাব দিলাম।
-"ঘুমাস নাকি?"
-"নাহ! তাইরে নাইরে করি।"
হঠাত ঘুম নষ্ট হওয়ায় মেজাজ কিছুটা চড়ে আছে।
-"ওহ! তাইলে খুব ভাল। তাড়াতাড়ি তারেক মামার টঙে আয়। আমি আর রবি বইসা আছি।"
-"ধুর বেটা! ঘুমাইতাছি। এমনেই বাসায় আইতে লেট হইছে। প্রচুর টায়ার্ড। তার উপর ফোন দিয়া দিলি ঘুমটা নষ্ট কইরা। আইজকা আইতে পারুম না।"
-"আরে বাপ! আয় না। মনডা এমনেই বিশেষ ভাল নাই। বাইর হ। একটু আড্ডা উড্ডা মারি। বাইর হ।"
-"কইতাছি না আইতে পারুম না।"
-"প্লিজ দোস্ত, আয়। এমন করিস না। আয় না, প্লিজ।"
বিরক্ত হয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ওমা! বিশটা মিনিটও পার হতে পারল না হুট করে টের পেলাম ফারাক্কা বাঁধ অতিক্রম করে তিস্তার সব জল যেন আমার উপরই পড়ছে। লাফিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে। উঠে দেখি অমির হাতে জগ আর রবি খ্যাটখ্যাট করে হাসছে।
-"কিরে? স্বপ্ন দেখা শেষ?"
কোনরকমে প্রশ্নটা করল রবি। তার হাসি যেন কিছুতেই থামছে না।
-"হারামিগুলা, তোরা বাসায় ঢুকলি ক্যামনেরে?"
-"ক্যামনে আবার? দরজা দিয়া। আন্টি খুইলা দিল।"
জবাব দিল রবি। রবির কথা শেষ হতেই অমি আবার বলে উঠল,
-"এহন চল। বাইর হ। চা খামু। ওঠ।"
.....
.....
.....
সম্পর্কগুলোতে তখন ফরমালিনের মিশ্রণ ছিল না। আনন্দগুলো ছিল অকৃত্রিম।
এখন? ফেবু কিংবা মেসেঞ্জারে অকেশনালি একটা হাই বা হ্যালো দিয়েই কাজ শেষ। দায়সারাভাবে সম্পর্ক রক্ষা করার নতুন সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আনন্দ প্রকাশের জন্য রয়েছে শয়ে শয়ে স্মাইলি।
ফেবু, মেসেঞ্জার, ইন্টারনেট আমাদের অনেক উপকার করছে। পুরো বিশ্বটাকে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়।
এগুলোর কারণেই আবার আঙুল গলে ফসকে যাচ্ছে বন্ধুত্ব আর ভালবাসায় ঘেরা মধুর সব সম্পর্কগুলো।
সত্যিই ‪#‎যান্ত্রিক‬ হয়ে গেছি। আমি একা নই। সবাই।

২ টি +০/-০