![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনে মনে দোয়া পড়তাম আমি। ইস এই সামনের রিক্সায় যেন আমাকে উঠানো হয়। রিক্সা পার হয়ে যেতো। আমার ভাইয়েরা আমাকে নিয়ে কেবল হেটেই চলতো। হে আল্লাহ, হে দয়াল প্রভু, আমার ভাইদের আমাকে নিয়ে সিনেমা হলে ঢোকার তৌফিক দান করো। আমার ছোট মন রীতিমত প্রার্থনা করতো । মনে মনে টস করতো এই খাম্বার সারি যদি বিজোড় হয় তবে সিনেমা দেখা হবে। আর যদি জোড় হয় তবে না। এক দুই তিন...
সারিসারি রিক্সা দাড়ানো। বিল্ডিংয়ের গা জুড়ে সিনেমার পোস্টার। সুন্দর সুন্দর নায়িকার মুখ। বন্দুক হাতে নায়ক ঘোড়ায় চড়ে আছে । ভিলেনের হিংস্র মুখে লোভনীয় ঘটনার হাতছানি। রেস্তোরাগুলোয় গরম গরম সিঙারা, জিলাপি.. শহর সবসময়ই আমোদ-ফুর্তির একটা বিষয় বলে আমার মনে হতো।
সিরাজগঞ্জ ছোট্ট শহর। কিন্তু আমার কাছে মনে হতো প্রকান্ড বড়। আমার গ্রামের বাঁশঝাড়ের ছোট্ট মন এখানকার এক্সিবিশনের আলোয় এসে চক্কর খেতো।
ইলিয়ট ব্রীজের রাস্তাটার মোড়টাই অদ্ভুত। কি সুন্দর একটা রাস্তা শুন্যে উঠে যাচ্ছে ক্রমশ। সেই বড় পুলের উত্তর পাশে একটা ছাপাখানা। সেই ছাপাখানায় কাজ করতো আমার মামা। কাজী ফেরদৌস। কাজিনদের সাথে গিয়ে মামার ছাপাখানার গোল ছাপমারার মুদ্রা যন্ত্র হা করে দেখতাম। আমার মামা হয়তো তখন কাজ করতে করতে ক্লান্ত। ঐ ছোটবেলাতেও বুঝতাম। যন্ত্রটা বিস্ময়ের হলেও আমার মামা কোন বিস্ময়কর কাজ করতেন না। সামান্য শ্রমিকের অবহেলা মাখানো মুখ তার। এখন মামার কথা মনে হলেই আমার অমল কান্তির কথা মনে পড়ে। অমলকান্তির মত মামাও অন্ধকার এক ছাপাখানায় কাজ করেন। কি মায়ময় মুখ ছিল তার। মিস্টি হাসির মধ্যে লুকাতেন সচ্ছল সংসার চালাতে না পারার সমস্ত ব্যর্থতা।
প্লিজ মামা, ছাপাখানা ছেড়ে বেরিয়ে এসো। আজ আমরা সারাদিন রিক্সায় ঘুরবো। গরম গরম সিঙারা জিলাপি খাবো। তারপর দুই মামা ভাগ্নে মিলে সিনেমা দেখব। দেখ না, এক নায়ক কেমন করে একাই সব ভিলেনকে মেরে ফেলে। আমরা কোন একদিন ঠিক নায়ক হবো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২৯
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম। দারুণ ছুঁয়ে যাওয়া একটি লেখা।

ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা রইল