নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

Adiós, maestro!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

দিনটি ছিলো শুক্রবার, অনেক ভোরবেলা একবার ঘুম ভেঙে ছিলো আমার বৃষ্টির ফোটা পড়ার শব্দে, বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়েছিলাম তলপেট খালি করতে,ফেরার সময় বারান্দায় গিয়ে আকাশের অবস্থা দেখেছিলাম,ঘন কালো মেঘে ঢাকা ছিলো আকাশ।প্রকৃতির বিষন্নতা আমার মনকে খুব তারাতারি স্পর্শ করে ফেলেছিল সেই দিন। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে মন আমাকে স্থির করাল যে ,আজ সবকিছুই অবহেলা করা যায়, ঘনকালো মেঘে ঢাকা এক আকাশ বিষন্নতা মনে নিয়ে আবার বিছানায় ফেরত গিয়েছিলাম আমি, তারপরের বৃষ্টির মতই আমার দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমেছিলো মুষলধারে। অনেক বেলায় ঘুম ভেঙেছিল ফোনের শব্দে আর ফোনের ওপর প্রান্তে নিয়মিত কন্ঠে আমার স্ত্রী বলেছিলো,Gabriel Garcí¬a Márquez মারা গেছেন,হঠাত করে কোন দুঃখ আঘাত করেছিলো না আমাকে, এক ধরনের সহজাত বিস্ময়ে আমি শুধু বলেছিলাম ‘কি?’,তারপর ফোন রেখে বারান্দা গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি অনেক্ষন,লক্ষ করে ছিলাম ভোরের সেই বিষন্নতা তখনও কেটে যায়নি। আমি অনুভব করেছিলাম এক পূরান অনূভুতি, ঠিক যেমন হয়েছিলো প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার দিনটিতে, ওই দিন আমি দুঃখ পেয়েছিলাম কিনা জানিনা, তবে আমি খবরটা বয়ে বেড়াচ্ছিলাম আর আমার বিয়ের বাজার করছিলাম,সব কিছু ছিলো খুব স্বাভাবিক আর ভিতরে হাহাকার টা ছিলো প্রচুর, হাহাকারটা ছিলো প্রিয় কোন শিক্ষক বা বন্ধুকে হারানোর মত, যাকে কখনো চোখে দেখিনি বা কথা হয়নি,শুধুই গল্প পড়েছি অনেক,অনেক,কোনটা খারাপ লেগেছে, কোনটা খুবই ভালো,কিন্তু পড়েছি ,পড়েছি তাঁর লেখাকে ভালোবেসে,তাঁর লেখার ধাঁচের যাদুবলে বিমহিত হয়ে। Gabriel Garcí¬a Márquez এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন নয় ,শুধুই খবরটা বয়ে বেড়ানো । তাঁর ’লেখার ধাঁচের যাদুবল’, তাঁর লেখার ‘বিষন্নতা’ যেকোনভাবেই হোক আমার নিজের ভিতরের বিষন্নতাকে স্পর্শ করেছিল নগ্ন ভাবে, আমি তখন সবে কৈশোর পাড় করেছিলাম,মনে হয়েছিলো তাঁর সাথে আমি পাড়ি দিয়েছিলাম নিঃসঙ্গ ১০০ বছর,আমার ভাল বা খারাপ লাগেনি, আমার বিষন্ন লেগেছিলো,তাঁর গল্পগুলি আমার কল্পনাকে করে তুলেছিলো বন্য,আর এই বন্য কল্পনা গুলি আমার মনেকে বিষন্নতার মেঘে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারত ঠিক ঐ শুক্রবার সকালের মত। কোন এক ঐশ্বরিক কারনে আমি ঐ বন্য কল্পনা আর বিষন্নতার দাস হয়ে গিয়েছিলাম।এক একটা বই দীর্ঘদিন ধরে পড়তাম আমি,কারন বই গুলো দ্রুত পড়ে শেষ করতে পারতাম না ,আর বইয়ের শেষ দিকে নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করতাম ‘হায়!আমি কি করে এই বই শেষ করতে পারবো?’কারন আমি জানতাম,বই গুলি শেষ হয়ে গেলে আমার ভিতরের বিষন্নতাকে একা রেখে, ঐ বন্য কল্পনা গুলি ঘুমিয়ে পরবে মাতালের মত আর এই বিষন্নতা আমাকে তাড়া করে ফিরবে ডানা মেলা বাজপাখির মত,তার তীক্ষ্ণ আওয়াজ আমার হৃদয়কে ফালাফালা করে দেবে দিনে রাতে। আমি আর একটা বই এ হাত দিতাম ভয়ে ভয়ে শুধুই ঐ বন্য কল্পনা গুলিকে জাগানোর জন্য,তাতে করে বিষন্নতা গুলি সঙ্গী ফিরে পেত ঠিকই কিন্তু তাদের সংখ্যা ও বাড়তো অনেক। তাঁর লেখাই আমাকে শিখিয়ে ছিলো কি করে বিষন্নতা কে বয়ে বেড়াতে হয় আর ভালোবাসতে হয় নিজের ভেতরের ‘হাহাকার’ কে। শুক্রবার সারাদিনটিও আমি স্বভাবিকভাবে কাটিয়ে ছিলাম ,শুধু বয়ে বেড়িয়েছিলাম এক আকাশ ভড়া বিষন্নতা যা এসেছিলো ঐ ভোরবেলায় কালো মেঘেরগুলির সাথে করে।

"It always amuses me that the biggest praise for my work comes for the imagination, while the truth is that there's not a single line in all my work that does not have a basis in reality. The problem is that Caribbean reality resembles the wildest imagination."

--Gabriel García Márquez

১৯/০৪/২০১৪,কাজাং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.