নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাল লাগে (ছোট গল্প)

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০০

যুবক বসে আছে তার কল্পনার বারান্দায়, আজ রবিবার ছুটির দিন,অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে এই বারান্দায় বসতে তার ভাল লাগে।নিজের এক কামরার ফ্লাটটাতে কামরার ভেতরে আলো,বাতাস খুব কমই খেলা করে,কামরার গুমট ভাবটা সারাদিন পরিশ্রমের পর শুধুই ঘুম পারাতে ওস্তাদ।



আজ একটু বেশই বেলা হয়েছে, বেলা গড়িয়ে খাড়া দুপুর, যুবকের বারান্দার সামনে একটা রাস্তা,ছুটির দিন বলে রাস্তা ফাঁকা,যুবকের দৃষ্টি রাস্তার ওপারের ফুটপাথের ওপর লাম্পপোষ্টের দিকে,ভাল শীত পড়েছে,দুপুরে মিষ্টি রোদ আর সাগর থেকে বয়ে আসা লোনা বাতাসে যেটুকু উষ্ণতা চামড়ায় লাগে তাতে আরাম পাওয়া যায় বেশ। লাম্পপোষ্টের গোঁড়ায় একটা কালো পলিব্যাগ বাতাসে ঘুরপ্যাঁচ খাচ্ছে,একটা ছোট সাদাকালো বিড়ালছানা সেটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,পলিব্যাগের সাথে সাথে নিজেও একটু পর পর মাথা দুলাচ্ছে।ফুটপাতের ঐপারে, বিশাল খেলার মাঠে কেউ নেই,রোদে সবুজ ঘাস চকচক করছে।



‘ঘুমঘুমুরির’ মাঠ পার হয়ে,যুবক এসে উপস্থিত হল বড় দেয়ালে ঘেড়া একতালা বাড়িটার সামনের সদর দরজায়, চারিদিকে গ্রীষ্মের দুপুরের খাঁ খাঁ নিরবতা,সবাই যেন ঘুমে, ঝাওয়াল বাতাস আর রোদের তাপে গাছ গুলি বাউলের মত মাথা নাড়ছে,কৃষ্ণচূড়ার পাতাগুলি থিরথির করে কাঁপছে, সদর দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পুরান কায়দায় যুবক দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকল।



ইট বাঁধানো রাস্তা দিয়ে কিছু দূর হেঁটে যেতেই সে দেখতে পেল, ৪-৫ বছরের এক ছেলেকে,মার কাপড় দিয়ে মাথায় বাঁধা পাগড়ী,পিঠে ঝোলানো ঝালর,কোমরে বাঁধা কাপড়রে একটা একহাত খড়ি গোঁজা,একটা ধোলা পাজামা,যেটা পায়ের মোজার মধ্যে গোঁজা,পায়ে চটি।ছেলেটা এক মনে জবা ফুল তুলছে,ছেলেটাকে দেখে যুবক একটু লুকিয়ে গেল সাবধানে,অনুসরন করতে লাগল ছেলেটাকে, ফুলগুলি তুলে নিয়ে ছেলেটা চলে গেল বাড়ির পেছনের জঙ্গলে, তারপর একহাতে ফুল আর অন্য হাতে কাগজের ঠোঙ্গায় একটা মড়া বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে ছেলেটা ঢুকে পড়লো কলাগাছের জঙ্গলে,যুবক কিছুটা দূর থেকে সব লক্ষ করতে লাগল।



ছেলেটা মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে একটা শক্ত খড়ি দিয়ে ছোট্ট কবর খুঁড়ছে, পাশে রাখা জবা ফুল আর মড়া বিড়ালের বাচ্চা,কবর খোঁড়া শেষে খুব যত্ন করে মড়া বিড়ালের বাচ্চাটাকে সে কবরে শোয়াল,তারপর ভালোভাবে মাটি চাপা দিয়ে,যে খড়ি দিয়ে মাটি খুঁড়ছিল সেটা কবরের মাথার কাছে খাড়া করে পুঁতে দিলো আর কবরের ওপরে জবা ফুল গুলি বিছিয়ে দিলো।পাশাপাশি এইরকম আরও তিন চারটা ছোট ছোট কবর আছে,যুবক লক্ষ করলো।



এরপর ছেলেটা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন প্রার্থনা করলো আর বিড়বিড় করে কি যেন বলল,তা যুবকের কানে এলনা।ছেলেটার প্রার্থনা শেষ হলে সে পাশের একটা পুরানো কবর আর একটা খড়ি দিয়ে খুঁড়তে শুরু করলো,সেটা থেকে ছোট ছোট হলদেটে হাড় বেড় করে,পিঁপড়া ঝেড়ে পরিষ্কার করে, ঐ কাগজের ঠোঙ্গায় রাখলো, তারপর ঐ ঠোঙ্গাটা কোমড়ের ট্যাঁকে গুঁজে দিল।যুবক মুগ্ধ হয়ে ছেলেটিকে দেখে চলেছে,ছেলেটি ফুরফুরে মেজাজে বড়ই গাছতলায় গেল,একটা পাকা দেখে বড়ই মুখে দিয়ে দৌড় দিয়ে চলে গেল দক্ষিন দিক বরাবর,যুবকও গেল তার পেছন পেছন।



গাছের আড়াল থেকে যুবক দেখলো,ছেলেটি একটা বড় পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে, গাছ ভর্তি কাক শুধু কা কা করছে,কারনটা একটু পরে বোঝা গেল, পেয়ারা গাছের ডালে একটা ছোট খাঁচায় একটা কাকের বাচ্চা বন্দি,কর্তা কে বুঝতে বাকি রইল না যুবকের।এবার ছেলেটা বড় একটা ভাঙ্গা গাছের ডাল হাতে নিলো,যেটার মাথায় এর প্রশাখাগুলি অনেকটা শিং এর মত,শক্ত করে একহাতে ডালটা নিয়ে অন্য হাত উচু করে চিৎকার করে অর্থহীন কোন ভাষায় কাকগুলিকে তিরষ্কার করতে লাগলো,কাকগুলি ভয়ে একসাথে কা কা করতে করতে ঝাঁক ধরে উড়ে গেল,ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে যুবকের মনেহল যেন এই মৃত দুপুরের কোন কালো যাদুকর।ছেলেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে দুইহাত তুলে বিজয়ের হাঁসি হাসল কিছুক্ষন,তারপর ঝেড়ে দৌড় দিলো পশ্চিমের আম বাগানের দিকে, যুবক তাকে অনুসরন করতে লাগল ধীর গতিতে।



আমবাগান পার হয়ে বাগানের মাঝখানে বড় বড় গাছে ঘেড়া একটা বিশাল পুকুর,পুকুরের পানি কাকের চোখের মত কালো,যুবক দেখলো ছেলেটা এক এক করে তার সব পোশাক খুলছে আর পুকুর পাড়ের মাটিতে রাখছে খুব সাবধানে,যেন খুবই মুল্যবান পোশাক, সম্মানের পোশাক,প্রায় উলঙ্গ হওয়ার পর সে তরতর করে পুকুর পাড়ের একটা গাছে উঠে গেল,গাছের যে ডালটা পুকুরের দিকে ক্ষানিকটা বাড়ানো তার শেষ মাথায় গিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে দুইহাত উপরে তুলে যেন তার অদৃশ্য কোন বন্ধু কে চিৎকার করে বললঃ

‘রমাকান্ত......আমি ডুব দিচ্ছি,সাহস থাকে তো আমাকে ধর!’

এরপরই ছেলেটা ঝপাং করে লাফ দিয়ে দিলো পুকুরে,ডুবে গেল চোখের পলকে,তাকে কেন্দ্র করে পুকুরে গোল তরঙ্গ তৈরী হলো,ক্ষানিক বাদে মাঝ পুকুরে সে আবার ভেসে উঠলো, আর হাহাহাহা করে টানা হেঁসে চলল,তার হাঁসির শব্দ নিস্তব্ধ দুপুরের খোলা পুকুরে প্রতিধ্বনি তুলতে লাগলো,যুবক তার হাতের তলায় ঠান্ডা কিছু স্পর্শ করলো।



বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে,ঠান্ডা বাতাস বইছে,তুষাড় পরছে অল্প অল্প,তার হাতের নিচের লোহার রেলিংটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

সামনের রাস্তা ফাঁকা,ল্যাম্পপোষ্টে আলো জ্বলেছে,ল্যাম্পপোষ্টের নিচে কালো পলিব্যাগটার ওপর একটুকরো তুষাড় পড়েছে,ওটা আর নড়ছে না,বিড়ালে বাচ্চাটাকে আর আশেপাশে দেখা গেল না,সামনের মাঠটা কে আস্তে আস্তে ঘিরে ধরছে অন্ধকার।

১৯/০৮/২০১৪,কাজাং

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১০

আপেক্ষিক বলেছেন: বাহ সুন্দর লেখা। তবে প্যারা প্যারা করে লিখলে আরো ভাল হত। :)

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪৯

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ইন্টারেস্টিং।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:৪০

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। ভালো লাগা রইল।

৪| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩০

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.