নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবানু (গল্প)

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০৯

প্রফেসরের সারাটা জীবন ছকে বাঁধা। তিনি নিজেও জানেন না ঠিক কবে থেকে তিনি এই ছকে বাঁধা পড়েছেন।তাঁর সকাল শুরু হয় ঘড়ির এলার্মের তীক্ষ্ণ শব্দ শুনে,ঠিক সকাল ৬:৩৭ মিনিটে তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে পরেন, ঘড়ি ধরে তিন মিনিট তিনি জানালার সামনের চেয়ারে বসে এক গেলাস পানি খান,এর পর প্রাকৃতিক কাজ,গোসল শেষ করেন ও বাইরে যাওয়ার পোশাক পরেন ১০ মিনিটে,এরপর ১০ মিনিটে তার সংক্ষিপ্ত সকালের নাশতা করেন পাউরুটি আর জ্যাম দিয়ে, ঠিক সকাল ৭:০০ টায় বাসা থেকে বের হয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে,বাসা থেকে বের হয়ে ১৫ মিনিটের হাঁটা পথ,তারপর বাসস্ট্যান্ড, ৭:১৫ তে বাস। বাস তাঁর বিভাগের সামনে তাঁকে নামিয়ে দেয় ৭:৪৫ শে,বিভাগের সদর দরজা থেকে কফি মেশিন পর্যন্ত যেতে তাঁর লাগে ৩ মিনিট, তারপর পয়সা দিয়ে এক কাপ কাফি নিতে তাঁর সময় লাগে ২মিনিট,কফি হাতে নিয়ে তিনি তাঁর অফিস কামরার সামনে পৌঁছান ৭:৫৫ তে, কামরায় ঢুকে নিজের চেয়ারে বসে ৮:০০ পর্যন্ত তিনি কফি খান, এরপর হাতে একটা বই নেন,৮:২৫ শে তিনি ক্লাশ রুমের উদ্দেশ্যে বের হন, ৮:৩০ থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত তিনি পরপর দুইটি লেকচার দেন,১০:৩৫ শে তিনি ওয়াশ রুমে যান,১০:৪০ শে বের হন,১০:৪৫ শে তিনি তাঁর অফিস কামরাতে আবার ফিরে আসেন, আবার একটা বই হাতে নেন, ১২:৩০ শে ক্যান্টিন থেকে তাঁর জন্য খাবার আসে, তিনি ১৫ মিনিটের খাবার বিরতি নেন,তারপর দুপুর ১:৫৫ পর্যন্ত বই পড়েন এবং যথারীতি ১:৫৫ তে তিনি ক্লাশ রুমের উদ্দেশ্যে বের হন, ২:০০ থেকে ৪:০০ তিনি পরপর দুইটি লেকচার দেন,৪:০৫ এ তিনি তাঁর অফিস কামরাতে আবার ফিরে আসেন, এই ৪:০৫ থেকে ৫:০০ টা পর্যন্ত একটা ব্যাতিক্রমি কাজ তিনি করেন প্রতিদিন। তাঁর অফিসের কামরার জানালা দিয়ে,সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামটা দেখা যায়, সেখানের রানিং ট্রাকে একটা ১৩ বছরের কিশোরী মেয়ে দৌড়ায় প্রতিদিন, প্রফেসর একটা দূরবীন চোখে লাগিয়ে মেয়েটিকে লক্ষ করেন ঠিক ৪:০৫ থেকে ৫:০০ টা পর্যন্ত।



৫:০০ টায় তিনি রুম থেকে বের হয়ে চিঠির বাক্স থেকে যাবতীয় চিঠিগুলি নিয়ে হাঁটা দেন, ৫:০৫ এ তিনি কফি মেশিনের কাছে যান,আবার কফি নিয়ে ঠিক ৫:১০ এ তিনি তাঁর বিভাগের সদর দরজার সামনের বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হন,দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে তিনি ৫:১৫ র বাসের জন্য অপেক্ষা করেন।৫:৪৫ শে বাস তাকে তাঁর বাসার কাছের বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিলে তিনি হেঁটে তাঁর বাসায় পৌঁছান ৬:০০ টায় ,বাসায় ফিরে তিনি জামাকাপড় ছেড়েন,ঠিক ৬:০৫ তিনি গান ছেড়ে দিয়ে এক গেলাস পানি হাতে জানালার পাশের চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসেন, একটু একটু করে পানি খান চোখ বন্ধ করেই, এইভাবে ৭:৩০ টা পর্যন্ত তিনি ঝিম মেরে পড়ে থাকেন, ৭:৩০ শে গান বন্ধ করে রাতের খাবারের ব্যাবস্থা শুরু করেন, ৮:০০ টায় রাতের খাওয়া খেতে বসে ১৫ মিনিটে খাওয়া শেষ করেন তিনি। ৮:১৫ থেকে ৯:৫৫ পর্যন্ত তিনি পড়ার টেবিলে প্রতিদিনের চিঠিগুলি পড়ে দেখেন, জরুরী চিঠির সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখেন, তাঁর মার চিঠির উত্তর একটু বড় হয়।এরপর ৯:৫৫ তে তিনি টয়লেটে যান দাঁত ব্রাশ করেন,শব্দ করে পেশাব করেন, দুইটি কড়া ঘুমের ঔষধ খান,তারপর ১০:০০ টায় ঘুমোতে যান।প্রতিদিন একই রুটিন,ব্যাতিক্রম নেই। ছুটির দিন গুলি তিনি কাটান নিজের কাজগুলি একই সময়ে করে এবং বাকি সময়টুকু বাজার,চিঠি পোস্ট এবং বই পড়ে,ছুটির দিন তিনি গান শোনেন না। এই ছকে বাঁধা, আবেগহীন ৪৫ বছরের জীবনে তিনি একা,তাঁর মা থাকেন একটি গ্রামে, স্কুলে বাচ্চাদের পড়ান।মা ছেলের মধ্যে যোগাযোগ শুধু চিঠিতেই।



শুক্রবার রাত ৮:১৫। নিয়মিত প্রফেসর প্রতিদিনের চিঠিগুলি নিয়ে বসেছেন তাঁর পড়ার টেবিলে, তেমন কোন জরুরী চিঠি নেই আজকে, তবুও একটা একটা করে খাম খুলে তিনি দেখছেন পর্যায়ক্রমে,এক সময় তাঁর হাতে উঠে এল একটা হলুদ ছোট,মোটা আর্ট পেপারের খাম,অন্য চিঠির খাম গুলির থেকে এইটির আকার ভিন্ন।খামের অপরে কোন ঠিকানা লেখা নেই, খামটি খুলতেই বের হল একটা পোলারয়েড রঙিন ছবি। ছবিটি হাতে নিয়ে প্রফেসর ভালোভাবে দেখল,ছবিটি একটি মেয়েলি কাঁধের,শুধু নগ্ন বাম কাঁধ,ফর্সা নগ্ন কাঁধের ওপর ইঞ্চি তিনেক একটা গোল হালকা সবুজ বলের মত টিউমার,তাতে অসংখ্য ছোট ছোট রন্ধ্র,প্রতিটি রন্ধ্র থেকে হলুদ হলুদ অণ্ডোদ্গত কীট মুখ বের করে আছে,ক্যামেরা টিউমারটির দিকে ফোকাস করা।সাথে সাথে ঘৃনায় প্রফেসরের গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেল,তাঁর মাথা হালকা হয়ে শরীর খিঁচুনি দিয়ে উঠল,তাঁর সম্পূর্ন শরীর রীরী করতে থাকল ঘৃনায়, শরীর কাঁপতে আরম্ভ করল, সাথে সাথে সে ছবিটি ছুঁড়ে ফেলে দিল। চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে প্রফেসর মেঝেতে পড়ে গেল,তাঁর মাথা বন বন করে ঘুরছে,গায়ের সমস্ত লোম খাড়া হয়ে আছে,সারা শরীর চুলকাচ্ছে,পেট ঘেঁটে যাচ্ছে। কোনমত টলতে টলতে তিনি টয়লেটের দিকে গেলেন, কোমডে মূখ দিয়ে হরহর করে বমি করলেন,ক্রমাগত বমি করেই চললেন একটানা,এক সময় পীত বমি বের হতে শুরু হল, বমি শেষ হলেও, শরীর কাঁপা আর চুলকানো বন্ধ হল না, তবে মাথা ঘোরা বন্ধ হল,তিনি দাঁড়িয়ে কাপড় খুলে, শাওয়ার ছেড়ে অনেকক্ষন গোসল করলেন।প্রফেসর চোখে অন্ধকার দেখছেন, টলতে টলতে গিয়ে বিছানায় চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলেন,তিনি কিছুতেই সেই ছবির কথা ভুলতে পারছেন না, চোখ বন্ধ করলেই ছবিটা ভেসে উঠছে,সাথে সাথা শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে শরীর খিঁচুনি দিচ্ছে, শরীর রী রী করছে,একটু পর পর তিনি সারা শরীর দুইহাতে পাগলের মত চুলকাচ্ছেন।রাতে প্রচন্ড জ্বর এল প্রফেসরের, আস্তে আস্তে তাঁর কাছে সব কিছু অন্ধকার হয়ে এল,এক অদ্ভুত অসুস্থতা তাঁকে চেপে ধরলো যেন,তিনি অজ্ঞান হয়েগেলেন।



গভীর সবুজ জঙ্গলের ভেতরে একটা গাড় হলুদ রঙের রানিং ট্র্যাক,প্রচন্ড শীত কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক,প্রফেসর দেখলেন সেই ১৩ বছর বয়সের কিশোরী একটা হালকা সবুজ রঙের ট্র্যাক স্যুট আর হলুদ রঙের কেইডস পরে দৌড়াচ্ছে রানিং ট্র্যাকে,প্রফেসর নিজেকে আড়াল করার জন্য একটা ঘন ঝোপের আড়ালে লুকালেন। কিশোরী দৌড়াচ্ছে , প্রফেসর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দূরবীন দিয়ে দেখছেন,একসময় কিশোরী কুয়াশার সাথে মিলিয়ে গেল।প্রচন্ড ঠান্ডায় যখন প্রফেসরের শরীর কাঁপতে আরম্ভ করল, তখন তিনি লক্ষ করলেন তিনি সম্পূর্ন উলঙ্গ, আচমকা তাঁর বাম কাঁধে কিছু একটা কাঁটার মত বিঁধল, বিষাক্ত যন্ত্রনায় তিনি কোঁকাতে লাগলেন,তাঁর সারা শরীর ঘামতে আরম্ভ করলো।



প্রফেসর চীৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন,দেখলেন ঘামে বিছানা ভিজে গেছে,অনুভব করলেন তাঁর জ্বর ছেড়েছে,মাথা হালকা লাগছে,শরীর দূর্বল। আচমকা তিনি আবিস্কার করলেন তাঁর বাম কাঁধে একযায়গায় তীব্র যন্ত্রনা,ভীষন চুলকাচ্ছে।তিনি দ্রুত উঠে বাথরুমের আয়নায় বাঁকা হয়ে নিজের বাম কাঁধ দেখলেন এবং ভয়ে শিউরে উঠলেন।তাঁর বাম কাঁধে একজায়গায় ইঞ্চি তিনেক একটা গোল হালকা সবুজ চাকার মত হয়ে আছে, যায়গাটা তীব্র যন্ত্রনা করছে এবং ভীষন চুলকাচ্ছে।





হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগ, এক চেয়ারে সিরিয়াল নিয়ে প্রফেসর বসে আছেন, যন্ত্রনায় তাঁর মুখ বিকৃত হয়ে আছে, কিছুক্ষন পরপর তিনি তাঁর বাম কাঁধ চুলকাচ্ছেন। ভেতর থেকে একজন নার্স এসে তাঁকে ডাকতেই তিনি চমকে তাকালেন। নার্স বললেন, “ আপনি ভেতরে যান।”, প্রফেসর কাঁধ চুলকাতে চুলকাতে ভেতরে গেলেন।



ভেতরে সাদা ধবধবে টেবিলের পেছনে ফর্সা ধবধবে একজন মোটা ডাক্তার বসা,তিনি যে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ তা যেন তাঁর গায়ের চামড়া দেখলেই বোঝা যায়।চোখের সোনালী ফ্রেমের রিডিং গ্লাসের ওপর দিয়ে তাকিয়ে তিনি প্রফেসর কে ভালোভাবে দেখলেন,তারপর এজম্যাটিক টানে টেনে টেনে বললেন, “আপনি কিসে ভয় পেয়েছেন বলেনতো?আপনার ব্লাড টেস্ট , স্কিন টেস্ট রিপোর্ট সব নরমাল,গায়ে চুলকানি বা পাঁচড়া কিছুই নেই, আবার ইদানীং কোন এলার্জী প্রদায়ক খাবারও খাননি বলে আমার এসিস্টান্ট কে বলেছেন। ঘটনাটা আমাকে আরেকবার খুলে বলুন কিছুই লুকাবেন না,একেবারে শুরু থেকে বলুন।” প্রফেসর ভাঙা গলায় বললেন “আপনার এসিস্টান্ট কে তো আমি সব বলেইছি, আবার কি?” ডাক্তার বললেন “আমি আপনার মূখ থেকে শুনতে চাইছি,আবার বলেন।” প্রফেসর আবার সবকিছু বললেন, শুধু আগের বারের মত এবারও স্বপ্নের কথাটা এড়িয়ে গেলেন।সবশেষে যোগ করলেন “যখনই চোখে ঐ ছবিটা ভাসছে তখনই গা রী রী করছে আর শরীরে খিঁচুনি দিচ্ছে।”বলেই প্রফেসর কয়েকবার খিঁচুনি দিয়ে উঠলেন। সবশুনে ডাক্তার গম্ভীর মূখে প্রফেসরের বাম কাঁধের নির্দিষ্ট স্থানটি টিপে দেখলেন,তারপর ঠোট চেপে বললেন “সবই বুঝলাম,তবে আমার মনেহয় আপনি একবার মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান,আমি লিখে দিচ্ছি,কারন আপনি যেখানে যন্ত্রনা দেখাচ্ছেন এবং সবুজ বলছেন সেখানে আপনার আচড়ের দাগ ছাড়া অস্বভাবিক কিছুই নেই এবং আমরা এই ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত।”



প্রফেসর কাঁধ চুলকাতে চুলকাতে দরজা ঠেলে, ভাঙা গলায় বললেন “আসবো?”, টেবিলে বসে থাকা একজন জীর্ন বৃদ্ধ একটা ফাইল থেকে মাথা তুলে থাকালেন, তাঁর চোখ গুলি অনেক বড় বড়,তীক্ষ্ণ দৃষ্টি,মুখে দাঁড়ী,ঠোটের একপাশে সিগারেট,অদ্ভুত ব্যাপার হল সিগারেটটা জ্বালানো নেই,মনরোগ বিশেষজ্ঞ রাশভারী গলায় বললেন “ভেতরে আসুন,ঐখানটাতে সোজা হয়ে দাঁড়ান,আমার দিকে তাকান এক দৃষ্টিতে।” একবার ধমকের সুরে বললেন “কাঁধ চুলকাবেন না!,মূখ স্বাভাবিক করুন।” তারপর তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে প্রফেসর কে পর্যাবেক্ষন করতে করতে প্রশ্ন করে চললেন,যন্ত্রনায় কাঁতর প্রফেসর একটার পর একটা উত্তর দিয়ে গেলেন।

“বিয়ে করেননি কেন?”

“হয়ে ওঠেনি।”

“ঘুমের ঔষধ কতদিন খাচ্ছেন?”

“৪ বছর।”

“কোন আত্মীয়? মেয়ে বন্ধু?”

“শুধু মা আছেন,গ্রামে থাকেন।”

“নেশা করেন কোন? হেরোইন,এলএসডি?”

“না।”

“সমাজে মেলামেশা কম?”

“হাঁ”

“আর অসমাজে? মানে খারাপ মেয়েদের সাথে মেলামেশা বা ছেলেদের?”

“না”

“যৌন উত্তেজনা হয়?”

“হাঁ”

“তা মেয়ে না ছেলে? ”

“মানে?!”

“মানে যৌন উত্তেজনা কি ছেলে দেখলে হয় না মেয়ে দেখলে? ”

“...মেয়ে”

“স্বপ্ন দেখেন?”

“না”

“শুচিবায়ু আছে?”

“না,তবে পরিষ্কার থাকতে অভ্যস্ত”

“ছেলেবেলার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা?”

“মনে নেই”

মনরোগ বিশেষজ্ঞ একটা কালো কাপড় দিয়ে প্রফেসরের চোখ শক্ত করে বাঁধলেন, তারপর হাতে একটা আলপিন নিয়ে,বললেন “আমি আপনার শরীরে পিন ফুটাব,আপনি বলবেন আমি কোথায় ফুটাচ্ছি”

মনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসরের বাম কাঁধে পিন ফুটালেন।

““ব্যাথা লাগে? কোথায়?”

হাঁ,বাম কাঁধে,তীব্র ব্যাথা!”

এবার মনরোগ বিশেষজ্ঞ পিন ফুটালেন না, আবার জিজ্ঞেস করলেন,

““ব্যাথা লাগে? কোথায়?”

হাঁ,বাম কাঁধে,তীব্র ব্যাথা!”



তারপর মনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসরের চোখ খূলে দিয়ে নিজের জায়গায় ফেরত গেলেন।লেকচার দেয়ার ভঙ্গি করে বললেন “আমি আপনার ফাইল সবটুকু পড়েছি,আপনি কাল ঐ ছবিটি আর যে ঘুমের ঔষধ খান তা নিয়ে আমার কাছে চলে আসুন,তারপর কথা হবে, আমার ধারনা আপনি আপনার কথা পুরোটা বললেননি,কোন কিছু গোপন করছেন,আমি দুটি ঔষধ দিচ্ছি রাতে ভরপেট খেয়ে তারপর খেয়ে নিবেন,আপনার নিয়মিত ঘুমের ঔষধ খাবেন না,কাল সকালে দেখা হবে, বিদায়।



রাত ৮:১৫ , প্রফেসর সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খূঁজছেন ছবিটা,পাচ্ছেন না।তাঁর শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, থেকে থেকে খিঁচুনি দিচ্ছে,গায়ের লোম খাড়া হয়ে আছে,শরীর কেঁপে জ্বর আসছে,কাঁধে বিষাক্ত যন্ত্রনা,চুলকানোর জন্য হাত বাম কাঁধে দিতেই তিনি একটু গোটা ফোলা অনুভব করলেন,সাথে সাথে পড়ার টেবিলের কাছে গেলেন, হলুদ খামটা আগের জায়গাতেই খোলা অবস্থায় রাখা আছে,তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবার খোঁজা শুরু করলেন ছবিটি।



সকাল ৬:৩৭, প্রফেসর নিজেকে আবিস্কার করলেন বরফ শীতল মেঝের ওপর উপর হয়ে পরে থাকা অবস্থায়,তার মূখ দিয়ে লালা ঝরছে,বাম কাঁধে বিষাক্ত যিন্ত্রনা,আগুনে পোড়ার মত জ্বলে চুলকাচ্ছে আর শীরশীর করছে,শরীর খিঁচুনি দিচ্ছে এখনও,হাতটা তাঁর বাম কাঁধের ঐ যায়গায় দিতেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি,দৌড় দিয়ে গিয়ে বাথরুমে আয়নার দিকে বাম কাঁধ ঘুরিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেলেন তিনি...তাঁর বাম কাঁধের ওপর ইঞ্চি তিনেক একটা গোল হালকা সবুজ বলের মত টিউমার,তাতে অসংখ্য ছোট ছোট রন্ধ্র,প্রতিটি রন্ধ্র থেকে হলুদ হলুদ অণ্ডোদ্গত কীট মুখ বের করে আছে,সেগুলি জীবিত,থেকে থেকে নড়ছে।

কাজাং,২৩/০৮/২০১৪









মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৪

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভয়ংকর

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:১৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: শেষটা কেমন অসম্পুর্ন মনে হোল। গল্পের প্লট ভাল লেগেছে।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৩

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: একই বিকেলে ভিজে যায় নীল আকাশ মালয় সাগর পৃথিবীতে সব কিছুই কি সম্পুর্ন হয়?

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৪৪

শান্তির দেবদূত বলেছেন: ভয়াবহ গল্প, গতিশীল, লেখার স্টাইল সাবলিল, কাহিনী চমকপ্রদ; সবমিলিয়ে খুব ভালো মানের একটা গল্প পড়লাম। শুভেচ্ছা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.