নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজলো পূজোর বাদ্দি

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫০

[গল্পটি একান্ত ব্যাক্তিগত অনুভূতি নিয়ে লেখা , দয়াকরে কোন প্রকার সাম্প্রদায়িক বা জাতীয় বিষয়ের তকমা লাগিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করবেন না।]



প্রতিবার শরৎ এলে আমার আফসোস হয় দুটি , এক আকাশে তুলতুলে মেঘ,হিমেল হাওয়া তাতে মিষ্টী রোদের মিশ্রন মনে করিয়ে দেয় পূজো আসছে আর আমি বাড়ি নেই , দুই ভোরবেলা নদী আর বিলের ধারে সাদা ধূসর কাশ ফুলের দোল মনে করিয়ে ঢাকের বাদ্দি , ছেলেবেলার সাদা কালো টিভির এন্টেনায় ধরা ডিডি ৭ এর “ছুটি ছুটি”, গুপী গায়েনের “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে”,ঋতু দার ‘হীরের আংটি’ সিনেমার পূজোর সকাল, আর ফিরে পাবো না ।
আমার বেড়ে ওঠা একটা ছোট, ছিমছাম শহরের হিন্দু পাড়ায়।প্রথম ঘটা করে পূজো দেখতে যাওয়ার কথা টা আজ মনেপড়ছে খুব। ছোটবেলায় বাবা মার কড়া শাসনে বড় হওয়া , বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে একা যাওয়া মানা, বয়স তখন কত হবে, ৫-৬ । স্কুলে পূজোর ছুটি , বাসায় বসে বসে প্রানের কমিকস পড়া , বেলা ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কখন শুরু হবে “ছুটি ছুটি”, তারপর মহালয়ার দিন ভোর থেকে সাদাকালো টিভিতে মা’র মহালয়া দেখা , পাড়ার পূজোর প্যান্ডেলে মাইকে হিন্দি গান সারাদিন।পূজো মানে তখন অব্দি আমার কাছে ঐটুকুই।
বাবা খুবই ধার্মিক মানুষ ।পূজো ,টিভি দেখা ,ঢাক ঢোল এই সব একেবারেই পছন্দ করেন না।আমার মা’র আবার বেড়ে ওঠা সেই আমারই মত হিন্দু পাড়ায়। তিনি এইসবই পছন্দ করেন, কিন্তু বাবার জন্য ভয়ও করেন। তো তখন আমাদের বাসাতে একজন হিন্দু ভদ্রমহিলা আসতেন , দৈনন্দিন কাজে মা কে সাহায্য করার জন্যে ,তাকে আমরা ‘আন্টি’ বলে ডাকতাম।
এইভাবেই প্রতিবারের মত সেবারও পূজো শুরু হয়েছে,একদিন সারা সকাল আমি আন্টির কাছে আমার স্বভাব সুলভ আচারনে পূজো সম্পর্কে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছি , আন্টি ঘস ঘস করে রান্না করছেন আর গল্প করেই যাচ্ছেন , মা দূর্গা কে, তার ছেলে মেয়ে কয় জন, স্বামি কে, ওসূর কে , কিভাবে মা দূর্গা তাকে বধ করলেন, এইসব শুনে স্বন্ধা হবার আগেই বায়না ধরলাম আমরা পুজো দেখতে যাবই , মা পড়লো বেকায়দায়, এদিকে আন্টিও সমানে আগুনে ঘি ঢালল, অবশেষে যেহেতু বাবা অফিসের ট্যুরে বাইরে গিয়ে ছিলেন এবং তাঁর আসতে রাত হবে দেখে মা রাজি হলেন।
আমরা সবাই ভালো জূতো জামা পড়ে তৈরী হলাম , আন্টী আসলেন তাঁর পূজোর নতুন শাড়ী পরে , মা বারবার করে বলে দিলেন যেন রাত ৮টার আগেই বাড়ি ফিরে আসি। আমরা বের হলাম পূজো দেখতে , নবরূপ ,টাইগার,বিজয়া, লাঠিয়াল ,আরও কিছু মন্ডপের পূজো দেখলাম এক এক করে। লাঠিয়াল মন্ডপে এক মজার কাণ্ড ঘটলো, মন্ডপের ভেতরে ঢূকে আমি আন্টির সাথে প্রথম সারিতে চলেগেলাম , সেখানে ঢাক করতালের আওয়াজ আর ধূপ ধুনোর গন্ধে ,আমি ভক্তিভাবে অভিভূত হয়ে টুপ করে মা দূর্গা কে প্রনাম করে ফেললাম , সেই দেখে পুরোহিত মশাই আমার হাতে একটা সিদূর দেয়া কলা ধরিয়ে দিলেন, আমি খেতে খেতে বাড়ি ফিরলাম বুক ভড়া আনন্দ নিয়ে । বাসায় ফেরার পর মা সব শুনে বলল “হায় হায় ,জাত গেল , তোর বাপ যেন না জানে”, মনে মনে অপরাধ বোধ জন্ম নিল, নিজের কৃত কর্মের জন্য আল্লাহর কাছে মনেমনে মাফ চাইলাম, বললাম আর কোনদিন এমনটি হবেনা।
কিছুদিন পর বাবা সবই জানলেন , আমার কাছথেকে না , মা’র কাছ থেকে , বাবা শুনে হাসতে হাসতে শুধু বললেন “তওবা, তওবা", বাবার হাসি দেখে মনে সাহস পেলাম , মনে হল আল্লাহ্‌ ও মনে হয় আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এরপর বহু পূজো এসেছে জীবনে , বহুবার সাদা শাড়ী লাল পাড়ের প্রেমে পড়েছি, ঢাকের তালে নেচেছি, ধূপের গন্ধে তন্ময় হয়েছি , তারপর আমার শহর ছাড়ার পর থেকে আর কিছুই নেই। এবার দুই আফসোসের সাথে আরও যোগ হয়েছে নতুন আফসোস , যেখানে আছি সেখানে শরৎ ই নেই। মূঠোফোনে আজ শ্যালক কে জিজ্ঞেস করলাম পূজো কবে ? সে বলল ‘কি জানি , ৩ তারিখে মনেহয় ...’।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: যার যার ধর্মবিশ্বাস তার তার কাছে , তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । পোষ্টে ভালোলাগা রইল +

ভালো থাকবেন ভ্রাতা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.