নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
""শিকড় "
অনেক্ষন হলো পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়িতে বসে আছে রিয়া।কাজলের সাথে আজ প্রথম দেখা হবে। অথচ ওর আসার নাম গন্ধ ও নাই। মেজাজটা তেড়ে আছে,প্রথম দিনই এই অবস্থা। দু'জনেরই আজ নীল রঙের ড্রেস পরার কথা । আমি তো বসে আছি নীল শাড়িতে, কিন্তু আশেপাশে তো কাউকে এই রঙের পাঞ্জাবীতে দেখতে পাচ্ছিনা। প্রায় আধা ঘন্টা বসে আছে রিয়া। চ্যাটিং করার সময় কি মিষ্টি মিষ্টি কথা আর এখন দেখ লোকটার কি অবস্থা । বাবার সাথে আজ ওকে দেখা করাব বলে এসেছি, অথচ ওনার কোনো পাত্তাই নাই। বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই দেখলো কেউ একজন ওর ছবি তুলছে। মুখে মাস্ক,মাথায় ক্যাপ,চোখে সানগ্লাস, পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবী। এমনিতেই মেজাজ খারাপ, তেড়ে এলো রিয়া। ' এই, কে আপনি পারমিশন না নিয়েই আমার ছবি তুলছেন? ' ভদ্রলোক ক্লিক ক্লিক করেই চলেছেন। পাশ থেকে একজন এসে রিয়াকে সমর্থন করলো। " তাইতো, আপনি ওনাকে বিরক্ত করছেন কেন?' অতি উৎসাহি আরও একজন এসে ধমকের সুরে বললো, 'মানে মানে কেটে পরেন, তা না হলে বিপদ হবে।' ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ তখনও চলছিলো ।এবার একজন ঘুসি মারতে এগিয়ে আসতেই... " রিয়া আমি কাজল' দ্রুত বলেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো কাজল। অপ্রস্তুত হয়ে গেলো রিয়া ও। এ আমি কাকে দেখছি? ছোট্ট একটা মোবাইল স্ক্রিনে ওর এমন সৌন্দর্য বুঝতেই পারিনি। আমার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি হ্যান্ডসাম। মনে মনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো রিয়া।এখন মনে হয় বাবাকে রাজি করানো খুব একটা কঠিন হবেনা। কোথায় পাবে এমন একজন সুপুরুষ বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার? " হা করে কি দেখছ,চলো ক্যান্টিনে যাই।' মুচকি হেসে বললো কাজল। ' জ্বি ' রিয়ার গলায় প্রশান্তির সুর। পাশের লোকদের বললো, ' ধন্যবাদ আপনাদের, উনি আমার পরিচিত , প্রথমে চিনতে না পেরে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ক্ষমা করবেন।একটু যেন অনুনয় ঝরে পরলো রিয়ার কন্ঠে। পাশ থেকে কেউ একজন যেতে যেতে বললো, ' ভাই মেয়েদের এইসব মেয়েলি প্যাচ আল্লাহ ও বুঝতে পারবেনা,চলেন আমরা যাই।'
'
নীল রঙে তোমাকে দারুণ মানিয়েছে। আমার ভাবনার থেকেও অনেক বেশি ' লাজুক ভংগী করলো কাজল। ' তুমি ও আমার কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম, তবে কথা মতো নীল পাঞ্জাবি পরলে আমাকে এতো ক্ষন অপেক্ষা করতে হতোনা। একটু যেন অভিমান ঝরে পরলো রিয়ার কন্ঠে। ' দু'জনেই হেসে উঠলো। চায়ের কাপে মনোনিবেশ করলো ওরা। কিছুক্ষণ চুপচাপ। ' কিছু বলছনা যে' একসাথে বলে উঠলো দু' জন। আবার হাসি। এবার কাজল বললো, ' সব কথা তো চ্যাট করতেই শেষ। ' নীল পাঞ্জাবি পরলে তো তুমি খুব সহজেই চিনে ফেলতে আমায়।এভাবে আমাদের প্রথম দেখাটাকে স্মরণীয় করে রাখা হতো না,এই আর কি'। ' একটু হলেই তো গনধোলাই খেতে।কাল পত্রিকার পাতায় বিরাট করে হেডিং আসত- "পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়িতে এক মেয়ের সাথে গুন্ডামী করতে গিয়ে প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার গণধোলাইয়ের স্বীকার " মিটিমিটি হাসছিলো রিয়া। ' কার এতো সাহস যে তোমার বয়ফ্রেন্ডের গায়ে হাত দেয়' বলেই হাসতে লাগলো কাজল। ' এখন চলো তোমাকে নিয়ে ঘুরবো, খাব,সিনেমা দেখব।' ' কিন্তু তোমার তো আজ বাবার সাথে দেখা করাব কথা,এমনই তো কথা ছিলো। ' ' কাল গেলে হয়না? ' না,বাবা কি মনে করবে বলো,তাছাড়া তোমাকে ও ছোট করতে পারবো না।' অনুনয় ঝরে পরলো রিয়ার কন্ঠে। ' তাহলে চলুন জনাবা,শ্বশুর আব্বাকে মহা মূল্যবান সাক্ষাৎটা দিয়েই আসি' হাসতে হাসতে ওরা বেরিয়ে এলো। বিরাট ব
বড়ো সাজানো গোছানো ড্রইংরুমের এক কোনে বসে রায়হান সাহেব পত্রিকা পড়ছিলেন।রিয়া ঢুকেই বললো, 'বাবা কাজলকে নিয়ে এসেছি,তোমরা কথা বলো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।' ' আচ্ছা মা, যা। কাজল বস বাবা,কেমন আছ তুমি?' ছেলেটা দেখতে তো দারুণ হ্যান্ডসাম। মেয়েটার পছন্দ আছে বলতে হবে। কার মেয়ে দেখতে হবে না। হ্রদয় মাঝে যেন একটু প্রশান্তি ছুঁয়ে গেলো রায়হান সাহেবের। ' এখানে কে কে আছে তোমার? ' ' এখানে আমার কেউ থাকেনা ' ' সবাই বুঝি লন্ডনে থাকে, এখানে কি তাইলে শুধু রিয়ার জন্য এসেছ? ' একটু মুচকি হেসে বললেন রায়হান সাহেব। ' না আংকেল, রিয়ার জন্য এসেছি এটা ঠিক, তবে প্রতি বছরই আমাকে একবার আসতে হয়। ' জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাকালেন রায়হান সাহেব। কাজল আবার বলতে লাগলো, 'এখানে ২০ জন টোকাই বাচ্চাদের নিয়ে "পথশিশু বিদ্যানিকেতন " নামে আমি একটা স্কুল পরিচালনা করি,কারণ আমি নিজে ও একজন টোকাই ছিলাম।এক ইংরেজ ভদ্রলোক আমাকে ছোট বেলায় লন্ডনে নিয়ে পিতৃ স্নেহে মানুষ করেন।আমার পরিবার বলতে... কাজলকে কথা শেষ করতে না দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন রায়হান সাহেব। ' কি তুমি টোকাই, উফফ! রিয়া এটা কি করলো ।
এমন একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করলো যার কোনো বংশ পরিচয়ই নাই,রাস্তার টোকাই, জাস্ট ভাবতে পারছিনা। যার শিকড়েরই অস্তিত্ব নেই, সে ভবিষ্যতে কেমন হবে বুঝব কিভাবে। অসম্ভব, এ হতে পারেনা। তুমি চলে যাও।আমার মেয়ের সামনে কোনোদিন আর আসবেনা।' উত্তেজিত রায়হান সাহেব রাগত স্বরে কথাগুলো বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন। রিয়া ড্রইংরুমে ঢুকেই কাজলকে বললো, ' কি ব্যাপার বাবাকে দেখলাম খুব রেগেমেগে উপরে চলে গেলেন। কি হয়েছে কাজল? ' আমি যে টোকাই ছিলাম, সেটা ওনাকে বলনাই কেন, তুমি তো সবই জানতে। তোমার বাবার আদরের রাজকন্যার সাথে আমার মতো টোকাই ছেলের কোনো সম্পর্ক হতে পারে না রিয়া।ক্ষমা করে দিও,আসি।'
হতভম্ব রিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই কাজল দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো। আমি তো বুঝতেই পারিনি যে, এ প্রসঙ্গটা এই বয়সে এসে এখন উঠতে পারে। তাই তো বাবাকে বলার প্রয়োজন ও মনে করিনি। কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো। নিজের মনেই বিরবির করতে লাগলো রিয়া। পরদিন রাজা বাজারের ছোট্ট একটা গলি পেরিয়ে রিয়া যখন "পথশিশু বিদ্যানিকেতনে " এসে পৌছলো,ততক্ষণে কাজল বেরিয়ে গেছে। এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলো একজন বয়স্ক লোক স্কুলের পাশে ছোট্ট একটা রুম পরিস্কার করছে।বোঝা গেলো ঢাকায় আসলে কাজল এখানেই থাকে। ওকে দেখে বললো, ' কারে চান আফা' কাজলের কথা জিজ্ঞেস করতেই লোকটা বললো, 'স্যারকে এখন ফোনে ও পাইবেন না। উনি ভার্সিটির কাজে গেলে ফোন বন্ধ রাখেন।আপনি একবার ফোন করে দেখতে পারেন।' ' না,পাচ্ছি নাতো।' 'অপেক্ষা করেন, কাজ শেষ করে নিজেই ফোন দিব।' এই বলে লোকটা নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। বারবার রিয়া ফোনে চেষ্টা করতে লাগলো। না,কিছুতেই ধরছেনা। চিন্তিত রিয়া অনেক ক্ষন অপেক্ষা করে বেরিয়ে এলো। পরদিন আবার এসেই দেখলো কাজল সুটকেস গোচাচ্ছে। রিয়াকে দেখে ও না দেখার ভান করলো। ' চলে গিয়ে ও কি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে? তুমি যখন কাল রাগ করে চলে আসছিলে,মনে হচ্ছিলো - কি যেন হারিয়ে ফেলছি। আমি বাবার একমাত্র মেয়ে, আর বাবা আমাকে অনেক ভালো বাসেন,কিছুতেই আমার কথা ফেলতে পারবেনা। বাবা এমনই, হঠাৎ ই রেগে যান,দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে। তোমাকে ছাড়া আমি একদম মরে যাব কাজল। তুমি যে তোমার শিকড়কে ভুলে যাওনি এই ব্যাপারটাকে আমি শতবার স্যালুট জানাই,ক'জন পারে নিজের দুঃখের অতীতকে গর্বের সাথে উপস্থাপন করতে? এবার একটু নরমাল হও প্লিজ...বাবাকে আমি ঠিকই ম্যানেজ করে নিব।তুমি চিন্তা করোনা। 'একটানা কথাগুলো বলে অসহায় দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়া। কাজল মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এতোক্ষন রিয়ার কথাগুলো শুনছিলো। সত্যিই এই মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে।মনে মনে বললেও মুখে বললো, ' যদি না পার? ' 'তা'হলে বাবার সামনেই সুইসাইড করবো।' নিজের তর্জনি রিয়ার ঠোঁটে চেপে ধরে কাজল বললো, 'আর কোনো দিন এসব বলবেনা। কাল তোমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় আমার ও মনে হয়েছিলো, মহা মূল্যবান কিছু একটা পিছনে ফেলে যাচ্ছি' বলেই কাজল রিয়ার দুইহাত ধরে ওকে বিছানার পাশে বসালো। ' তাহলে তুমি আজ যাচ্ছ না তো? ' জিজ্ঞাসু দৃষ্টি রিয়ার। ' না, যাচ্ছি না ম্যাডাম, যাব যখন দু'জন একসাথেই যাব। একলা রেখে গেলে বৌ না হতেই যদি অকালে মরে টরে যাও, তখন আমার কি হবে? 'উচ্ছ্বসিত কাজল মিটিমিটি হাসছিলো। রিয়ার চোখে ও প্রশান্তির ছায়া। ' কথা বলো না, বাবা ফোন দিয়েছে। ' ' হ্যালো বাবা,কি বলবে বলো।' কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো রিয়া। ' কাজলকে নিয়ে বাসায় চলে আয় মা, প্লিজ... ফোন রেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে কাজলের দিকে তাকিয়েছিলো রিয়া। কাজলের চোখেও ছিলো নির্ভরতার ছায়া।
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৫:৩৬
জিনাত নাজিয়া বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৩ রা মে, ২০২২ রাত ১০:৩৩
বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর তবে সাদামাটা।
লিখুন আরো।
৪| ০৭ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০০
জিনাত নাজিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ বিজন রয়
৫| ০৯ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রথম দেখা হওয়ার দিনই বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া? বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না? কথা যখন হলোই, প্রথম আলাপে টোকাই পরিচয় দেওয়া বেশি জরুরি ছিল?
প্লট ভালো তবে অতি নাটকীয় হয়ে গেছে।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৪৮
অধীতি বলেছেন: প্লট সুন্দর কিন্তু লিখতে বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন। লেখাটায় আরো সময় দিলে ভাল হত।