নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ছাত্র৷ সারাজীবন ছাত্রই থেকে যেতে চাই৷ আমি সকলের কাছ থেকে শিখতে চাই৷ এবং যা শিখেছি তা শিখাতে চাই৷

যুবায়ের আলিফ

যুবায়ের আলিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস: উম্মতের বিদ্বান শিক্ষক

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:২০



আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রসিদ্ধ সাহাবি এবং চাচাতো ভাই। তিনি হিজরতের তিন বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই খুব অল্প বয়সেই তিনি ঈমান আনেন।মক্কা বিজয়ের পূর্বে তিনি তার পিতা-মাতার সাথে হিজরত করেন।

ইবনে আব্বাস ছোট থেকে জ্ঞান প্রেমী ছিলেন। তিনি জ্ঞানার্জনে নিবেদিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুধাবন, মুখস্থকরণ ও অধ্যয়ন করার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। বড় হয়ে তিনি পবিত্র কুরআনের তাফসির ও সুন্নাতের বিধান সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান লাভ করেন। মুসলিমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তার কাছে ইসলামের বিধিনিষেধের ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করতে আসত।

তাকে কুরআনের দোভাষী বলা হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য এই দুআ করেছিলেন যে, "হে আল্লাহ তাকে ধর্মীয় জ্ঞান দ্বারা অলংকৃত করুন।"— বুখারী।

আল্লাহর কিতাব এবং আল্লাহর রাসুলের সুন্নাতের বিস্তৃত জ্ঞানের কারণে তিনি বিদ্বান শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। বর্ণিত আছে, তিনি একবার মসজিদে নববী তে ইতিকাফে থাকাকালীন সময় একজন লোক জীর্ণশীর্ণ চেহারায় তার নিকট আসেন। লোকটা ইবনে আব্বাস থেকে এমন সাহায্য চায়। যখন আবদুল্লা ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু জুতা পরে বের হয়ে গেলেন। লোকটি তাকে জিগ্যেস করল, " আপনি যে অবস্থায় ছিলেন তা কি ভুলে গেছেন?" অর্থাৎ আপনি ইতিকাফে আছেন, এই অবস্থায় মসজিদ ছেড়ে বের আপনার জন্য বৈধ না। ইবনে আব্বাস বললেন, "না,আমি ভুলিনি।" তিনি বলেন, "আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাতে চায় এবং তা করতে সক্ষম। সেটা তার জন্য দশ বছর ইতিকাফে থাকার থেকে উত্তম। আর যে ব্যক্তি কেবল একদিনের জন্য ইতিকাফে বসে এবং এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। অতঃপর আল্লাহ তাকে তিনটি খাদ দিয়ে জাহান্নাম থেকে পৃথক করেন, যা পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্ব থেকেও বেশি।”
— তাবারানি, আল-বায়হাকি ও আল-হাকিম

তিনি তার সাথী মুসলিমদের ভালবাসতেন এবং তাদের চাহিদা পূরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, "আল্লাহর ইচ্ছায় বার বার হজ্জ করার চেয়ে একটা মুসলিম পরিবারে দেখাশোনা করা আমার কাছে বেশি প্রিয়। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মুসলিম ভাইদের উপহার দেয়াও আমার কাছে অধিক প্রিয়।"

উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তার বৈঠকে ইবনে আব্বাস কে নিকটে আসন দিতেন। উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার সকল বিষয় নিয়ে ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর সাথে আলোচনা করতেন। তিনি তরুণ হওয়া সত্ত্বেও তার মত বিবেচনা করতেন। এজন্য মুহাজিরগণের মধ্যে কেউ কেউ উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর সমালোচনা করতেন। তারপর তিনি বলেন, "আজ আমি আপনাদের এমন কিছু দেখাব যা দ্বারা আপনারা তার শ্রেষ্ঠত্ব জানবেন।" তিনি উপস্থিত সকলকে জিগ্যেস করলেন সূরা নাসরের প্রথম আয়াত সম্পর্কে, "যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।"

তাদের মধ্যে একজন বলল, "এই সূরায় আল্লাহ তাআলা সাহায্য এলে এবং আমাদের বিজয় সূচিত হলেই যেন আমরা এইরূপ করি। মহান আল্লাহর গুণগান গাওয়ার জন্য এবং তার নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমাদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বললেন,"হে ইবনে আব্বাস! তুমি বল।" তিনি বললেন, " এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুলকে তার মৃত্যুর সম্পর্কে জানিয়েছেন। অন্য কথায়, এটিই আপনার মৃত্যুর নিদর্শন: সুতরাং এর জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা করে আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। " —বুখারী, আহমদ, তিরমিজি

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার সম্পর্কে বলেন, "আমি ইবনে আব্বাসের চেয়ে বেশি বোধগম্য, অধিক যুক্তিসঙ্গত, অধিক জ্ঞানী ও অধিক সহনশীল কাউকে দেখিনি। আমি দেখেছি যে উমর সর্বদা তাকে বিপজ্জনক অবস্থায় ডেকে পরামর্শ নেন। চারপাশে বদরি সাহাবি থাকা সত্ত্বেও তার কথা অধিক বিবেচনা করতেন।"
আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন, "যারা বেঁচে আছেন তাদের মধ্যে ইবনে আব্বাস হজ্জ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত।"

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু রাতে নামাজে দাঁড়াতেন, কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং আল্লাহর ভয়ে প্রচুর কান্নাকাটি করতেন।

তিনি নম্র স্বভাবের ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসুলের সাহাবিদের যথাযথ সম্মান দিতেন, প্রশংসা করতেন এবং শ্রদ্ধা করতেন। একদিন জায়েদ বিন সাবেত তার উটটি চালাতে চাইলেন, অবিলম্বে তিনি তা তার সামনে নতজানু করলেন। তাতে জায়েদ বললেন, তুমিই কি উটটি আমার সামনে নতজানু করেছ, হে আল্লাহ রাসুলের চাচাতো ভাই?! ইবনে আব্বাস বললেন, এরূপই আমাদেরকে আমাদের সর্দারদের প্রতি আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু মহানুভব ও মুক্তহস্ত ছিলেন। একবার আবু আইয়ুব আনসারী বসরায় গেলেন যখন ইবনে আব্বাস সেখানকার গভর্নর ছিলেন। ইবনে আব্বাস তাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, আপনি আল্লাহ রাসুলের সাথে যা করেছিলেন (স্বাগত জানিয়েছিলেন) এখন আমিও আপনার সাথে তা করব। তিনি তাকে উত্তম আপ্যায়ন করেছিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু সিফফীনের যুদ্ধে হজরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর বাহিনীতে ছিলেন।

ইবনে আব্বাস ৬৭ হিজরি তে মৃত্যু আগমন করার আগ অবধি ইবাদত ও জ্ঞানার্জনে লিপ্ত ছিলেন। সত্তর বছর বয়সে তিনি মদিনা থেকে তায়েফ গমন করেন। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াহ তা জানাযায় ইমামতি করেন এবং তাকে তায়েফে সমাধিস্থ করার সময় বলছিলেন, "আজ এই উম্মতের একজন আল্লাহ সচেতন ব্যক্তি মারা গেলেন।"

ইবনে আব্বাস রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি প্রায় ১৬৬০ টা হাদিস বর্ণনা করেছেন।সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে থেকে তিনি একজন অন্যতম জ্ঞানী, এবং বহু আইনত মতামত তার ব্যক্তিগত যুক্তির উপর নির্ভরশীল, যা তাকে অন্যান্য সাহাবীদের থেকে পৃথক করে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:২৯

নীল আকাশ বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। উনি সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। প্রায় সব বিষয়েই উনার বর্নিত হাদিস পাওয়া যায়।
লেখা পছন্দ হয়েছে। আপনাকে অভিনন্দন রইলো। এই ধরণের লেখা আরও লিখুন।
শুভ কামনা রইলো।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:৫৮

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ইবনে আব্বাস সম্পর্কে জানলাম।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২০

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ। অন্যদের সম্পর্কেও জানবেন ইনশাআল্লাহ।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শিক্ষণীয় বিষয় । জানলাম তথ্য।

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২০

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০০

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: লেখায় প্লাস :)

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৪

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: দুঃখিত আমি আপনার মন্তব্য বুঝতে পারিনি।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৮

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: ওহ হো, সরি !

আগের কালে, প্লাস মাইনাসের একটা ব্যাপার ছিল, এখন মাইনাস নাই, শুধু "ভালো লাগা" আছে। সেইটাকেই আমি প্লাস আকারে বুঝিয়েছি। দেখবেন ভালো লাগার লিস্টে আমার নামও আছে :D

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৯

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: জ্বী, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.