নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ধৈর্য ও দারিদ্রের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নেতৃত্ব অর্জন করে। সত্যের সন্ধানী ইচ্ছাশক্তি যা তাকে অনুপ্রাণিত এবং উর্ধ্বমুখী করে। ধর্মীয় জ্ঞান হচ্ছে এমন জ্ঞান যা মানুষকে নেতৃত্ব দেয় এবং পরিচালিত করে।"
এই কথাগুলো আমাদের এক আদর্শবান পূর্বপুরুষ বলে গেছেন। তিনি হলেন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর যিনি আমাদের কাছে ইবনে কাইয়্যিম আল-জাওযিয়াহ বা ইবনুল কাইয়্যিম নামে পরিচিত।
জীবনের প্রথম দিকেই তিনি জ্ঞানার্জনের পথে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেন, জ্ঞানের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তিনি এক শিক্ষকের নিকট থেকে অন্য শিক্ষকের নিকট চলে যান। ২১ বছর বয়সে ইবনুল কাইয়্যিম তার শিক্ষক ইবনে তাইমিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। যিনি ছিলেন উম্মাহর আরেক আদর্শবান মহাপুরুষ ও তাওহিদের অতন্দ্র প্রহরী। তাদের সাহচর্য শিক্ষক জীবনের শেষ অবধি স্থায়ী হয়। ইবনুল কাইয়্যিমের সাথে ইবনে তাইমিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। তারা একসাথে বহুবার চাবুকের শিকার হন এবং কারাভোগের যন্ত্রণা সহ্য করেন। স্পষ্টতই ইবনুল কাইয়্যিম ইবনে তাইমিয়ার কাছ থেকে কিছু বিশেষ গুণাবলী অর্জন করেছিলেন। যেমন: সরলতা ও অন্যের মিথ্যাচারে বিরুদ্ধে সাহসিকতার প্রদর্শন করা ইত্যাদি। সবশেষে এই গুণাবলী উভয়ের মধ্যেই বিদ্যমান। তবে ইবনুল কাইয়্যিম কথা ও কাজে ইবনে তাইমিয়ার থেকে তুলনামূলক কম ভয়ঙ্কর ছিলেন।
অষ্টম হিজরি শতাব্দীর মুসলিম সম্প্রদায় এক অজ্ঞতা ও কলহের পরিস্থিতির সাক্ষী হয়।মুসলমানরা একে অপরের সাথে লড়াই করে, এবং প্রত্যেকে ধর্মীয় মতামত ও পাণ্ডিত্য সহ সকল ক্ষেত্রে তার কর্তৃত্ব আরোপের চেষ্টা করে যা স্থবিরতার শিকার হয়। বেশিরভাগ ধর্মীয় পণ্ডিতগণ সত্য ও জ্ঞান প্রচার অপেক্ষা রেকর্ডার হিসেবে কাজ করছিল(পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ ব্যতীত নিজের মত সকলের উর্ধ্বে দাবী করত)। তাদের নিকট তাদের শিক্ষকই ছিল প্রধান মানুষজন তাদের অনুসৃত ধর্মীয় পণ্ডিতদের জ্ঞানের উৎস ও চিন্তাভাবনাগুলোকে অন্ধের মত বিশ্বাস করত। কেবল ধর্মীয় পণ্ডিতগণই তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল।
অনুরূপভাবে ইবনে তাইমিয়া ও ইবনুল কাইয়্যিম তাদের পুরো জীবন ব্যয় করেছেন উম্মাহর অনুসরণ করা ভুল পথটি সংশোধন করার প্রচেষ্টায়। তিনি জনগণ কর্তৃক তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েও মাজার পূজার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। তিনি উম্মাহকে বিভ্রান্ত সম্প্রদায়গুলোর অন্ধ অনুসরণের দ্বারা সমাজে সংগঠিত বিভিন্ন ভুল ত্রুটি সম্পর্কে সচেতন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। তিনি চিন্তা করেছিলেন যে তার সময়ে মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ ও লড়াই তাদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও অন্ধ অনুসরণ বাস্তবায়নের ফলে হয়েছে। প্রত্যেকে নিজের অনুসৃত চিন্তা-চেতনাকে একমাত্র সত্য বলে জ্ঞান করত এবং অন্যেরটা ভুলের উপর অধিষ্ঠিত বলে দাবী করত।
ইবনুল কাইয়্যিম তার বেশিরভাগ সময় উম্মাহকে একত্রিত করা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের দরুন আপতিত বিপদগুলো থেকে বের করার প্রচেষ্টায় ব্যয় করত। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন মুসলিমের মুক্তমনা হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ, শিক্ষক কর্তৃক বর্ণিত বিষয়গুলোর মধ্যে যা সঠিক ও ভাল এবং কুরআন, সুন্নাহ, আলেমদের ঐক্যমত ও ঈমানের সাধারণ চেতনার সাথে মিল রাখে, একজন মুসলিম সেটাই গ্রহণ করা উচিৎ। তার দর্শনে নিম্নলিখিত কারণে অনুকরণ করা ভুল ছিল:
১. অন্ধ অনুসরণ ঐশ্বরিক শিক্ষাকে লঙ্ঘন করে।
২. অন্ধ অনুসরণকারী ব্যক্তি অন্যকে তার মতাদর্শের দিকে আহ্বান করতে অক্ষম। কেননা, সে নিজেই অন্ধকারে নিমজ্জিত।
৩. অন্ধ অনুসরণ এজন্যই উচিৎ নয়; কারণ আমরা তাদের জ্ঞান নিয়ে সত্যতা যাচাই করতে পারি না।
অন্ধ অনুসরণ আলেমসমাজের মাঝে স্থবিরতা এবং লোকদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু তথাকথিত আলেম প্রকৃতপক্ষে ইসলামের আলেম ছিল না; বরং তারা অন্য মতাদর্শের সাধারণ প্রচারক ছিল। এই লোকগুলোর কাছে তাদের শিক্ষক বা নেতার কথা ও দৃষ্টিভঙ্গি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বাকি রাখার একমাত্র পথ ছিল। এমনকি তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কুরআনের ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যদ্বানীমূলক শিক্ষাকে সংযুক্ত করেছিল যা তারা ভুলভাবে গ্রহণ করেছিল।
ইবনুল কাইয়্যিম অনুধাবন করেছিলেন যে ধর্মীয় জ্ঞানের উৎসগুলো নিম্নলিখিত ক্রমে গ্রহণ করা উচিৎ :
১. কুরআন
২. সুন্নাহ্
৩. সাহাবায়ে কেরামের শিক্ষা
এগুলোর সাথে কেউ বিজ্ঞ আলেমদের ঐক্যমত ও উপমা যুক্ত করতে পারে। গোঁড়ামি ও কুসংস্কার তার কাছে ছিল জ্ঞানের শত্রু। তিনি তার দর্শন প্রচারের জন্য সরাসরি লোকদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রচুর বই লিখেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ইবনুল কাইয়্যিম ছিলেন মুত্তাকী ও ইবাদতগুজার বান্দা। যিনি অধিকাংশ সময় ইবাদত ও কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে ব্যয় করতেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন তপস্বী ছিলেন যিনি কিছু সূফির অপ্রচলিত রীতিনীতি প্রত্যাখ্যান করেন। যারা দাবী করে যে, ধর্মীয় শিক্ষার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিষয় রয়েছে। অর্থাৎ তারা বোঝাতে চাইত ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য না। যেমন: সালাত, রমজানে রোজা রাখা ইত্যাদি।
যেমনটি আগেই উল্লেখিত হয়েছে আমাদের এই আদর্শবান পূর্বপুরুষ সাহসী ও নম্র ছিলেন যার কাছে সত্যই ছিল চূড়ান্ত লক্ষ্য। তার খোলামেলা ও নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি শরিয়াহ (ধর্মীয় আইন) সম্পর্কিত মতগুলোতে প্রতিফলিত হয়। এবং ধর্মীয় মতামতগুলো সময় ও স্থানের পরিস্থিতির বিবেচনায় হওয়া উচিৎ। কেননা, মানবতার মুক্তিই ইসলামের লক্ষ্য। তিনি এই অমূল্য নীতিটি ব্যাখ্যা করার জন্য অসংখ্য বই লিখে গেছেন। ৭৫১ হিজরিতে তার মৃত্যুর পর ছয় শতাব্দীর অধিক সময় যাবৎ আধুনিক সমাজেও তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ দেখা যায়।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৬
যুবায়ের আলিফ বলেছেন: আমীন
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫২
রাজীব নুর বলেছেন: মনে শুধু সন্দেহ জাগে। সাথে তথ্যসুত্র দিলে ভালো হয়।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬
যুবায়ের আলিফ বলেছেন: আচ্ছা এরপর থেকে দিয়ে দিব।
৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৮
মেটালক্সাইড বলেছেন: ইবনে ত্যইমিয়্যা ও ইবনে কাইয়্যুম শিক্ষক ছাত্র দুজনকে একত্রে নিয়ে লেখা উচিত ছিল। ভাল হয়েছে কিন্তু ভালো লাগেনি। এই দুজন ইসলামের মূল তাওহীদ নিয়ে জিহাদ করেছিলেন আজীবন। এদের নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখা আশা করছি।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।
১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭
যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ইনশাআল্লাহ আরও বিস্তারিত দেওয়ার চেষ্টা করব।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:১৬
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাংলার নবাব শায়েস্তা খান, আলীবর্দী খান, এসব শাসনকর্তারা আরবী বেদুইন খলীফা ইত্যাদি থেকে হাজার গুণে ভালো মানুষ ছিলেন, জ্ঞানী ছিলেন।
৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৫০
মেরিনার বলেছেন: উলুবনে (বা উলু খাগড়ার) বনে মুক্তা ছড়ানোর চেষ্টা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!!
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।