নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ছাত্র৷ সারাজীবন ছাত্রই থেকে যেতে চাই৷ আমি সকলের কাছ থেকে শিখতে চাই৷ এবং যা শিখেছি তা শিখাতে চাই৷

যুবায়ের আলিফ

যুবায়ের আলিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়ের দৃষ্টি

২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০০


এক.

বেলা নয়টায় ঘড়ির এলার্মে ঘুম ভাঙলো সাবিহার৷ গতরাতে ঘুমোতে দেরি হওয়ায় বেশ বেলা করে উঠেছে ও৷ বিছানা গুছিয়ে চোখ ডলতে ডলতে জানালার পর্দা খুলে সূর্যের উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করল৷ উপরের দিক থেকে নিচের দিকে দৃষ্টি ফেরাতেই তার গায়ের সমস্ত লোম কাটা দিয়ে উঠে৷ কোনো এক অতিপ্রাকৃত দৃশ্য কিম্বা বাস্তবেই একটা বিদঘুটে জিনিস ওদের বাড়ির সামনে উঠানে দাঁড়িয়ে আছে৷ ঠিক জিনিস না৷ মানুষই বলা যায়৷ ও দেখতে পেল, মানুষের মতো কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে৷ গায়ে ছেড়া শার্ট প্যান্ট, হাতে চকচকে চামড়ার নতুন মুজা, পায়ে কালো সু। চেহারা বা মাথা দেখলে মোটামুটি সত্তর ভাগ মানুষই চেনা যায়৷ অন্তত আন্দাজ করা সম্ভব৷ এখানেই বাঁধ সাধলো একটা জিনিস৷ মাথাটা পাঠের তৈরি ব্যাগ দিয়ে ঢাকা৷ ঠিক ঢাকা না। মনে হচ্ছে, বস্তা সেলাইয়ের সুঁই দিয়ে কেউ সেলাই করে দিয়েছে কানের দুই পাশ দিয়ে৷

সাবিহা সেই অবয়ব দেখে শুরুতে দুঃস্বপ্ন ভাবছিল৷ নিজের গায়ে নিজেই চিমটি কেটে বুঝতে পারল ব্যাপারটা মোটেও দুঃস্বপ্ন নয়৷ সামনে মূর্তমান একটা বিপদ দাঁড়িয়ে আছে৷ অথবা কেউ বিপদে পড়ে সাহায্য চাইতে এসেছে৷ সে যাইহোক, সাবিহা কালক্ষেপণ না করে ফোনটা তুলেই ওর বাবাকে কল করল৷

ক্রিং ক্রিং...

“হ্যালো, মা? কী হয়েছে?”

“বাবা! তুমি কোথায়? বাসায় কে যেন এসেছে৷ দেখতে অনেক অদ্ভুত৷ ছেড়া শার্ট-প্যান্ট আর মাথায় বস্তা সেলাই করা। আমার খুব ভয় লাগছে৷ জলদি কিছু একটা কর বাবা।” আতঙ্কিত হয়ে একদমে সাবিহা কথাগুলো বলে ফেলে৷

“আমার কথা শোনো, সাবিহা৷ তুমি যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে ওটা দেখতে থাক৷ কোথাও নড়ে-চড়ে কিনা সেটা খেয়াল রেখ। সাবধান ওটার উপর থেকে চোখ সরাবে না, আমি আসা পর্যন্ত৷”

“আমাদের কি পুলিশে খবর দেওয়া উচিত না?”

“না, ওরা কিছু করতে পারবে না। আমি যা বললাম সেটাই মন দিয়ে কর৷ আমি আসছি এক্ষুনি৷”

কথা শেষ করে সাবিহা পুনরায় জানালার পাশে এসে দাঁড়াল৷ মানবমূর্তিটা আগের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে৷ তবে আগের জায়গা থেকে বেশ কিছুটা অগ্রসরমান৷ ওর দৃষ্টি অন্যদিকে চলে যাওয়াতে যে ওটা একটু অগ্রসর হয়েছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না৷ ভয়ে শরীরটা জমে যাচ্ছে ওর৷ এভাবে কোনো ভয়ংকর কিছুর উপর নজর রাখা ওর জন্য সম্ভব না৷ উপরন্তু ঘরের অন্যান্য জানালা দরজা খোলা থাকায় ও অনেকটা অনিরাপত্তায় ভুগছে৷ তাই নিজে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে নিজের ভাইকে ডেকে পাঠায়৷

দুই.

বাসার সব জানালা দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে প্রবেশ করে সাবিহা৷ শীতের মাঝেও প্রচণ্ড ঘাম ছুটেছে ওর৷ হাঁপাতে হাঁপাতে বিছানায় বসে ভাইকে জিজ্ঞেস করল, “ওটা আছে এখনও?”

“হুম, আছে৷ আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে৷”

“একটুও নড়েনি?”

“না, তুমি চাইলে দেখে যেতে পারো।”

সাবিহা সাগ্রহে দেখতে উঠল৷ জানালার কাছে গিয়ে বুঝল কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে৷ এর থেকেও বড় কথা ও জিনিসটা দেখতে পাচ্ছে না; কিন্তু ওর ভাই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। যা দেখে এটা ঠাহর করা যায় যে, ও কোনোকিছুর উপর নজর রাখছে৷ সাবিহা গণ্ডগোল বুঝতে পেরে আতঙ্কিত হয়ে বলল,“সামি! ওটা কি এখনও আছে? আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন?”

“বাজে কথা বলো না তো৷ ওটা এখনও আছে৷ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি৷ এখানে এসে দেখ।”

সাবিহা এক-পা দু-পা করে এগিয়ে সামির কাছে গেল৷ এখন সে স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছে৷ এতক্ষণে গণ্ডগোলটা টের পেয়েছে সাবিহা৷ সামি এসে জানালা খুলে দিয়েছে৷ খোলা জানালা দিয়ে খালি দৃষ্টিতে ঐ অবয়বটা চোখে পড়ছে না৷ জানালার কাচের মধ্যেই সেটা দেখা যাচ্ছে৷ তারমানে এটা যদি চোখের সামনেও কোনোভাবে চলে আসে তাহলে তারা টেরও পাবে না৷ ব্যাপারটা ভাবতেই আঁৎকে উঠে সাবিহা৷

খানিকক্ষণের নিরবতা ভেঙে সামি বলল, “আপু! আমার মনে হচ্ছে, কেউ শয়তানি করছে আমাদের সাথে।”

“শয়তানি কিনা জানি না৷ তবে এটা ভয়ংকর৷”

“আবার মনে হয়, কোনো মহাজাগতিক প্রাণীও হতে পারে৷”

“কেন?”

“তুমি কি খেয়াল করেছ, এই লোকটার দু চোখে ক্রসের মতো কয়েকটা সেলাই?”

“না তো৷”

জানালার গ্লাসে গিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলাতে ব্যাপারটা কিছুটা অনুধাবন করতে পারল ও৷ চোখ দুটো পাটের রশি দিয়ে সেলাই করা তাতে ছোপ ছোপ রক্তও পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ স্বাভাবিক অর্থেই এটা দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন কেউ হতে পারে না৷ এর মধ্যেই একটা দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসল সাবিহার মাথায়।

তিন.

নিজের দেরাজ থেকে আয়না আর পাওয়ারফুল একটা টর্চ বের করে আনল সাবিহা৷ টর্চটা সামির হাতে দিয়ে বলল, “তুই লাইট ধর৷ আমি আয়না দিয়ে ওটার দিকে আলোর ঝলকানি দিচ্ছি৷ দেখি ব্যাটায় চোখে দেখে কিনা?!”

“আপু থাক৷ এটা করো না৷ ওটা এমনিতেও তোমাকে জ্বালাতন করছে না৷ এমন করার ফলে ওটা বিরক্ত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”

“আরে আমি বিরক্ত করব না৷ শোন, ওটার চোখ নেই৷ সুতরাং দেখারও চান্স নেই৷ আমি শুধু নিশ্চিত হতে চাই ওটা আলো বুঝতে পারে কিনা৷”

“যাই করো, কোনো কিছু হলে আমার দোষ নাই৷” সামির মনে হতাশা

“আরে কিচ্ছু হবে না দেখিস৷” ভরসা দিল সাবিহা৷

যেই কথা সেই কাজ৷ সাবিহার হাতে থাকা আয়নায় সামি লাইট ফোকাস করল৷ আয়নাটা এদিক-সেদিক নেড়ে সাবিহা ওটার চোখের উপর ফেলার চেষ্টা করছে৷ আলোর ঝলকানি ওটার চোখে পড়ার সাথে সাথে সামি আঁৎকে উঠে বলল, “আপু ওটা নেই ওখানে?”

“কী নেই?”

“ঐ লোকটা।

“মানে?! থাকবে না কেন?”

“তুমি দেখ ভালো করে৷”

সাবিহা প্রথমে জানালার গ্লাস দিয়ে এবং পরে খোলা জানালা দিয়ে দেখে বুঝতে পারল বিশাল ভুল হয়ে গেছে৷ সম্ভবত দু'জনই লাই আর আয়না নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় কোনোভাবে ওটার উপর থেকে দৃষ্টি সরে গিয়েছিল৷ সেই সুযোগে যা হবার তাই হয়েছে৷ অনেকটা দুঃখ, ভারাক্রান্ত, আতঙ্ক, ভয় আর ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বিছানায় বসল ওরা৷ হা-হুতাশের ফাঁকেই সামির চোখ পড়ল সাবিহার হাতে থাকা আয়নায়। ও চিৎকার দিয়ে বলল, “ওটা আয়নাতে!”

সাবিহা কিছু বুঝে উঠার আগেই আরেকটা চিৎকার দিয়ে আয়নাটা ফেলে দেয়। কংক্রিটের গায়ে সজোড়ে আঘাত লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ওটা৷ আয়নার ভাঙা টুকরোগুলো থেকে আস্তে আস্তে কালো ধোঁয়া বের হয়ে সারা ঘড় এই ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে৷ ধোঁয়া থেকে বাঁচতে যখন তারা দরজার দিকে এগুচ্ছে তখনই একটা অট্টহাসি দিয়ে উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বেরুল। কোত্থেকে ও কীভাবে বের হলো, তা ওরা কেউ বুঝে উঠার আগেই ওটা সাবিহাকে উদ্দেশ্য করে বলত শুরু করল, “ধন্যবাদ আমায় মুক্ত করার জন্য৷ আমার জন্য তোমার সুন্দর চোখ দুটো চাই।”

“তুমি কে? এখানে কী চাও?.... ” ইত্যাদি প্রশ্ন শেষ করার আগেই ওটা দানবীয় আকৃতি নিয়ে সাবিহার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। চকচকে চামড়ার মোজা পরা দুই হাত দিয়ে সাবিহার মাথাটা চেপে ধরল৷ এত শক্তভাবে চেপে ধরেছে যেন মাথা ফেটে মগজ বেরুবে এখনই৷ আস্তে আস্তে ওটা নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দুটো দিয়ে সাবিহার চোখদ্বয়ের উপর চাপ দিয়ে ধরছে৷ এত শক্তভাবে চাপ প্রয়োগ করেছে যে পনের সেকেন্ডের মধ্যে সাবিহার চোখ দুটো চিরদিনের জন্য গলে সর্ব শান্ত হয়ে গেল৷

অসহ্য ব্যথায় সাবিহা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে৷ সামি এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য নিজের চোখের সামনে ঘটতে দেখে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে৷ দেখে মনে হচ্ছে, ওর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও বন্ধ হয়ে গেছে৷ এর মধ্যে ওটা হাসতে হাসতে সামির মাথায় মাথায় রক্তাক্ত হাত বুলিয়ে বলল, “ছোট্ট বন্ধু তোমাকেও ধন্যবাদ৷ তবে তোমার চোখ দুটো আমার চাই না৷ বোনের খেয়াল রেখ৷ যত্ন নিয়ো৷”

সামিকে পরামর্শ দিয়ে ওটা আবার সাবিহার দিকে মোড় ঘুরল ওটা। চোখের কোটরে গলানো মণি দুটো তুলে একদিকে ছুড়ে মারল। ওটা পকেট থেকে পাটের রশি লাগানো বস্তা সেলাই করার সুঁই বের করে সাবিহার চোখ দুটোতে নিজের মতো ক্রস চিহ্ন এঁকে চারটে করে মোট আটটা সেলাই করল৷ সেলাই শেষে উপর দিকে তাকিয়ে একটা স্বর্গীয় হাসি দিয়ে সাবিহার শরীর ধরে ঝাঁকি দিয়ে যায় ঐ মানবাকৃতির দানবটা৷ অতঃপর অন্ধ হয়ে দুনিয়ায় আবার জ্ঞান ফিরল সাবিহার৷ সবকিছুই এখন অন্ধকার৷



“আমারই ভুল ছিল রে। ওটা আসলে উঠানে না; বরং কাচে আটকে ছিল৷ আমিই আয়নাটা ভেঙে ওটাকে মুক্ত করেছি৷” সামির উদ্দেশ্যে বলল সাবিহা৷ সদ্য চোখ হারানোর তীব্র ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদতে চাইলো ও৷ কিন্তু চোখের পানির জন্য যে জায়গাটা দরকার সেটাও তো এখন আর নেই!

।। ভয়ের দৃষ্টি ।।
যুবায়ের আলিফ

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২০

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: দারুন লিখেছেন ভাই।
অসাধারণ!

২১ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৩৬

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ ভোর ৫:৫৭

মিরোরডডল বলেছেন:




একদম অন্যরকম একটা লেখা পড়লাম, ভালো লেগেছে।

২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৫

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: সাবিহা আর সামির গল্প ভালো হয়েছে।

২২ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:২৪

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ে দেখার জন্য।

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২২

জেরী বলেছেন: ভালো লিখছেন ভাই।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৭

যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

প্রথম সারির নিরাপদ ব্লগার বলেছেন: গল্পটা পড়ে ভালো লেগেছে এবং বরাবরের মতোই ভাবানুবাদের অনুভূতি পেয়েছি।
চরিত্রগুলোর নামের কারণে বিষয়টা প্রকটভাবে ধরা পড়েনি যেমনটা অন্যান্য গল্পগুলোর বেলায় ঘটেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.