![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকায় শহিদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী করিম ও দিয়া বাস চাপায় নিহতের ঘটনার দিন থেকে ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। যদিও পরবর্তীতে এই কর্মসূচী দেশ ব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। যা এখন পর্যন্ত চলমান।
প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা প্রচুর ভাঙচুর করলেও ক্রমেই দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকটা শৃঙ্খলাবদ্ধতা ফিরে আসছে। গত দু-চারদিনে শৃঙ্খলা এতোটাই সুন্দর হয়ে এসেছে যা তাদের কর্মসূচী ও কাজের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। দেখা গেছে যে কাজটি ট্রাফিকের দায়িত্ব সেই কাজ শিক্ষার্থীরা করে দেখিয়েছে। আমি কখনও দেখিনি শিক্ষার্থীরা যা করে দেখিয়েছে তা ট্রাফিক কিংবা প্রশাসন করতে। শিক্ষার্থীরা এখনও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিজেদের দায়িত্ববোধ শিখিয়ে যাচ্ছে।
সড়কে কোনো রকম নিরাপত্ত নেই। যানবাহন চালকদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। কার আগে কে কত যাত্রী তুলতে পারবে সেই প্রতিয়োগিতাই শুরু হয়েছে। সড়কে দূর্ঘটনাগুলোর প্রধান কারণ এটি। ট্রাফিক ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাঁদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে না। দায়িত্ব পালনে কোন জবাবদিহিতা নেই। যে যার মতো দায়িত্ব পালন করছে। করছে দূর্নীতি। টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স বিহীন যানবাহন চলতে সহযোগিতা করছে পুলিশ। দুর্ঘটনায় মানুষের ক্ষতি হলেও পুলিশের আয় বাড়ে। প্রশাসনের জবাদিহিতা না থাকায় প্রভাব পড়ে চালকদের উপর। চালকরাও তাদের ইচ্ছা মতো কোন রকম আইন না মেনে গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
তাঁরা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। লাইসেন্স না থাকলে চাবি নিয়ে চালকদের আসন থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশকে ডেকে আইন অনুযায়ী মামলাও করে দিচ্ছে। তাঁরা প্রতিটি গাড়ির জন্য আলাদা লাইন করে দিয়েছে। রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য বিশেষ লাইনের ব্যবস্থা করেছে। মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমলা, সাংবাদিক, আইনজীবী, সাধারণ পরিবহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা নীতি লক্ষ করা যায়। গণপরিবহনের জন্য যে আইন সে আইন মন্ত্রী, আইনজীবী, বিচারপতিও সাংবাদিকদের জন্যও প্রয়োগ করেছে। মন্ত্রীর গাড়ি বলে স্বজনপ্রীতি বা সম্মানের সাথে ছেড়ে দেয়া হয়নি। যা সাধারণত আমরা খুব একটা দেখতে পাইনা। দেখতে পাই, মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাড়ি আসতে দেখলেই ট্রাফিক সম্মানের সাথে ছেড়ে দেয়। যানজট সৃষ্টি করে হলেও তাঁদের গাড়ি আগে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। সেদিন দেখলাম, মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি উল্টো পথে পেয়ে শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। লাইসেন্স পরীক্ষা করতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টির ফলে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও আটকা পড়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা সেই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যানজট থেকে বের করে নিরাপদে হাসপাতালে যেতে সহযোগিতা করেছে। যা সাধারণ দেখা যায় না। দুই শিক্ষার্থী নিহদের ঘটনার দিন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেছে। সেই ভাঙচুরকৃত গাড়ির কাঁচ রাস্তায় পড়াতে যানবাহন চলাতে অসুবিধে হচ্ছে দেখে ঝাড়– হাতে নিয়ে পুরো সড়ক পরিস্কার করেছে। যানবাহনগুলোতে দেখা যায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রশিক্ষণহীন চালক। তাদের থেকেও শিক্ষার্থীরা চাবি নিয়ে পুলিশের হাতে তুল দিচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রিকশা, বাস, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য আলাদা আলাদা লাইনে গাড়ির সারিবদ্ধতা দেখে হঠাৎ করে মনে হয়েছিলো এটা ইউরোপ আমেরিকার কোন সড়ক হবে। কারণ ইউরোপ আমেরিকার সড়কগুলোতে এমন নিময় শৃঙ্খলা মেনে সারিবদ্ধ ভাবে যানবাহন চলতে দেখা যায়। কিন্তু শুনেছি বা পড়লাম এটা ইউরোপ আমেরিকার ছবি না এটা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ছবি। সত্যি কথা বলতে কি নিজের চোখকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা ঢাকা।
বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এর আগে আমি কখনও দেখিনি সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। কখনও আশাও করিনি এতো তাড়াতাড়ি সীমিত সময়ের জন্য হলেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দেখবো। যেটা এতো বছর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দেখাতে পারেনি, সেটা তারুণ শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে। সরকার চাইলেই সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে পারে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বজায় রাখতে সরকারের প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও চালক, মালিকদের জবাবদিহিতা। সুষ্ঠু জবাবদিহিতা থাকলে সড়কের সঠিক ব্যবস্থাপনা ফিরে আসবে বলে আমার মনে হয়।
যানবাহনগুলোতে দেখা যায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রশিক্ষণহীন চালক। এরা নিয়মনীতি না মেনেই যানবাহন চালাচ্ছে। একজন চালক সঠিক ভাবে গাড়ি চালাতে জানে কি না, নিয়মনীতি বুঝে কি না, তা পরীক্ষা করার কার্যকর ব্যবস্থা আছে কি না তাও জানা নেই। যদি থাকতো তাহলে এতো দুর্ঘটনা, এতো অব্যবস্থাপনা থাকতো বলে আমার মনে হয় না। দেশের ৮০ ভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। পুলিশকে অর্থ দিয়ে তারা অবৈধ ভাবে যানবাহন চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের লাইসেন্স পরীক্ষা কর্মসূচীর ন্যায় পুলিশ লাইসেন্স পরীক্ষা করে ও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলেই সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ফিরে আসবে।
©somewhere in net ltd.