নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Run for mankind...

মোবারক হোসেন রুবেল

অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দা্উ দাউ দাউ করে জ্বলুক। অন্নগুলো কেড়ে নাও ক্ষুধার জালা বুঝুক।

মোবারক হোসেন রুবেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনকানা

২৯ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৫৯

যখনি লেখালেখি করি তখনি ভাবনার জগতকে প্রশ্ন করি। লেখালেখি করে আর কি হবে? আর কিইবা হয়েছে লেখালেখি করে। নেহাৎ একটি স্বার্থক পন্ডশ্রম। তবুও লিখি। কি এক অজানা উদ্দেশ্য নিয়ে যেন লেখনির মাধ্যমে বলতে চাই আমার অন্তর্গত বিষাদের কথা। বেদনার কথা। যে কথা কেউ শুনেনা। কিংবা শুনার কথাও না। কারণ আমি ভালো গল্প লিখতে পারি না। লিখতে পারিনা নাসির গাজির মতো কেচ্ছা কাহিনী। শুধু পারি ভাবনার প্রতিফলন ঘটে এমন সব বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরতে। প্রতিটি কাজের একটি স্বার্থক উদ্দেশ্য আছে। আমার লেখার উদ্দেশ্য মানব সত্তাকে প্রশ্নের বাণে জর্জরিত করা নয় কিংবা তার অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোনো বিরহকে আন্দোলিত করাও নয়। কেউ যদি আমার লেখাটা পড়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করে তবেই আমার লেখনির স্বার্থকথা।



শুভাকাঙ্খিরা প্রায়ই বলেন, দেশ টেশ নিয়ে লেখালেখি করে কোনো লাভ নেই। এসব ফালতু লেখালেখি ছেড়ে অন্য কিছু করাটাও নাকি ভালো। আমি লেখালেখি ছাড়া অন্য কিছু পারি না। পারি না গাইতে পারিনা বাইতে। পারি না পর-দুঃখ সইতে। বলা চলে সাংসারিক অর্থে আমি এক আমড়া কাঠের ঢেঁকি।



লেখালেখির জগতে আমি একদম নুতন। কারো ভালো লাগলেও লিখি। না লাগলে ও লিখি। পত্রিকায় ছাপা হয়। কেউ পড়ে, কেউ পড়েনা। যারা পড়ে তারা হয়তো চিন্তা করেনা। শুধু সময় কাটানোর অবলম্বন মনে করে। তাই যদি হয় তবে আমার এ লেখাটা না পড়াই ভালো।



রিক্সায় আমার সচরাচর ওঠা হয়না। দু’টো পা-ই আমার সম্বল। যদি কখনো উঠেই পড়ি তবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। অল্প কয়েকদিন আগে সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। ফার্মগেট থেকে তেজগাঁ যাচ্ছিলাম। কেন জানি ঢাকাইয়া ভাষার প্রতি এক বিশেষ দুর্বলতা কাজ করে। যখনই ঢাকায় যাওয়া হয় তখনই একটু আধটু শেখার চেষ্টা করি। তবে নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষকের কাছে সেটা রপ্ত করিনা। যখন যাকেই পাই। সেদিন টার্গেট করেছিলাম আমাকে বহন কারী সেই রিক্সা ড্রাইভারকে। কারণে অকারণে তার সাথে কথা বলতে লাগলাম। কিন্তু তাকে কিছুতেই বুঝতে দিচ্ছিলাম না যে, সে আমার ঢাকাইয়া ভাষার ব্যকরণ শিক্ষক।



সাইদুল ইসলাম। বয়স আনুমানিক ৪০/৪৫। দাঁড়ি গোফে ঢাকা মুখটা বড়ই সুন্দর। তার চেয়ে সুন্দর তার মুখের হাসি। কে জানে এত সুন্দর হাসির পেছনে লোকানো রয়েছে অনন্ত দুঃখ বোধ। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সিতারা বেগম নামক এক ললনাকে। তাদের উভয়ের পৈতৃক ভিটা ছিল পদ্মার পাড়ে। সর্বনাশা পদ্মা তাদের ভিটা ছাড়া করল। তারপর? জীবিকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাড়ি জমানো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তারা ঢাকায় কাওরান বাজার বস্তিতে। সিতারা বেগম একে একে ছয় সন্তানের জন্ম দিলেন। জন্ম দিলেন এক আজন্ম পাপের। সাইফুল ইসলাম গভীর নিঃশাস নিয়ে বললেন- সন্তান জন্ম দেওয়াটাই ছিল তার জীবনের চুড়ান্ত ভুল। যার দ্বায়ভার দিতে হচ্ছে তার বাচ্চাদের। আর্থিক অভাবে তাদের প্রাতিষ্টানিক শিক্ষার দ্বারে পৌছানো পর্যন্ত হয়নি। আর জীবন সঙ্গীনী আজ শয্যাশয়ী। দুই মাস ধরে কি এক অজানা রোগ প্রবেশ করেছে তার বক্ষপিঞ্জরে। মুখটা নিচু করে তাকে প্রশ্ন করলাম - তাহলে ডাক্তার দেখাননি কেন?



ডাক্তার? হা হা হা.....কি কইছেন? ডাক্তার? হা হা হা.... সে আকাশ বাতাস উতলা করে হাসতে লাগল। আবার হাসে আবার থামে। আবার বলে .....ডাক্তার! হাসার প্রাথমিক কারণটা ধরে নিলাম আমি বোকা কিংবা আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা চলছে। হয়তো আমার কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারিনি। মনের সন্দেহ দূর করতে আবার বললাম আপনার বিবিকে ডাক্তার দেখাননি কেন? বেচারা ড্রাইবার আমার সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে প্রশ্ন করল-মামু পৃথিবীতে উৎকৃষ্ট মানুষ কেডা আর নিকৃষ্ট মানুষ কেডা? জানি তার এ প্রশ্নটিতে একটি বিরাট রহস্য রয়েছে। বুঝেও না বুঝার ভান করে মৃদু হেসে বললাম কেন? হঠাৎ এ প্রশ্ন? রিক্সা ছুটছে তার গন্ডি পেরিয়ে। আমরা চলছি ভাব বিনিময়ের জগতে। তার সাথে কথা বললে কথা শুধু বাড়বেই, কমবে না। তবুও বলে যাচ্ছি। জানার তাগিদে। কপালে তার কোনো ঘাম দেখতে পারছি না। তবুও সে গামছা দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে বলল।...........ডাক্তার। পৃথিবীতে নিকৃষ্ট মানুষ ডাক্তার। আমি তার কথার প্রতিবাদ করতে চাইলাম। তার আগেই সে বলে ফেলল- সব ডাক্তার নয়, তবে অধিকাংশ ডাক্তার। আমি জনৈক ড্রাইভারের কথাটিকে সমর্থন না করে পারলাম না।



ডাক্তারী পেশা। এক মহান পেশা। খুব কষ্ট নিয়ে আমাকে বলতে হচ্ছে এই মহান পেশাটিকে আমরা অর্থ উপার্জনের একটি সহজ পদ্ধতি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না। আমরা ভাবনার জগতে গিয়ে অযথা হোঁচট খাই। অথচ এটি মূলত পেশা নয়, ব্যাক্তি মানবতার বহিঃপ্রকাশ।



আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু। বন্ধুটির নাম উল্লেখ করে তার আসন্ন পদ মর্যাদাটাকে আমাদের সমাজে অবহেলিত করার পক্ষে নই। যারা ডাক্তারী পড়াশোনা করে তাদের মনস্তাত্তিক দিক পর্যালোচনা করার জন্য বন্ধুটির কাছে জানতে চাইলাম-হঠাৎ কোনো রোগী এসে যদি বলে তার কাছে টাকা নাই কিন্তু তার চিকিৎসা প্রয়োজন তখন কি করবে? সে চোখজোড়া কপালে উঠিয়ে বললঃ চেম্বারে বসব একটি পিস্তল নিয়ে। যাতে কোনো রোগী এরকম আবদার করতে না পারে। ভুলক্রমে যদি করেই ফেলে তাহলে তাকে গুলি করে মারব। প্রথমে ভেবেছিলাম সে হয়তো দুস্টুমি করছে। পরে আমার ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে সে বলল, এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি কি তাদের জন্য?



আমি অপেক্ষায় আছি। বন্ধুটি যখন পেশাজীবি ডাক্তার হবে তখন আবার তার মনস্তাত্তিক দিক পর্যালোচনা করতে যাব। বন্ধু তখন সময় হবে কি তোমার?



আমি কোনো বিজ্ঞানী নই। যে কারো মন্তব্য নিয়ে ব্যবহারিক গবেষনা করব। আমি লেখক। কল্পনা এবং চিন্তা এ দুটোকে কেন্দ্র করেই আমার লেখনি। বন্ধুটির মন্তব্য নিয়ে চিন্তার ফলাফল আসল। তার অতীত এবং বর্তমান। অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে সে আজকের অবস্থানে। মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা তন্মধ্যে অন্যতম।



ভাবনার পথ হারিয়েও কখনো ভাবিনি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষাও একটি বানিজ্যে পরিণত হবে। চিকিৎসা সেবার মতো একটি পবিত্র পেশা কে নিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ব্যবসা করবে। আমি জানি না। আমি বুঝিও না। মানুষ কতটুকু বিবেকহীন বর্বর ও পাষন্ড হলে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করে। আমি ধিক্কার জানাই তাদের।



আমি কান পেতে অপেক্ষায় আছি। কখন শুনব মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য কোচিং বাণিজ্য বন্ধের শ্লোগান। জানি আমি এরকম শ্লোগান কোনো দিন শুনতে পারব না। কারণ যে সততা ও বিশ্বাসের প্লাটফর্মে চিকিৎসকেরা আজ দাঁড়িয়ে তার ভিত্তি আজ মজবুত নয়। যাদের উপন এ দ্বায়ভার তারাও আজ এক প্রকার ব্যবসায়ী। লোকোচুরি খেলার মতো এতদিন অনেক সত্য গোপন করেছি। কিন্তু আজ সময় হয়েছে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। তাই সোজা সাপ্টা লেখাটাই শ্রেয়। শিক্ষক কিংবা বিশেষজ্ঞ হতে চান? তবে বিশেষ কর্মকর্তাদের পৃষ্টপোষকতা এবং টাকা ছাড়া অসম্ভব। সেখানে টাকা দিয়ে যোগ্যতা মাপা হয়। মেধা দিয়ে নয়। খুব ভালোভাবেই জানি অনেক কষ্ট স্বীকার করে তারা ডাক্তারী নামক মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তাই বলে কি তারা বিবেক নামক যন্ত্রটাকে বন্ধ করে তাদের মনুষ্যত্বকে হারাবে? তবে আমি মনে করি তাদের এ পেশায় না আসাই সকল শুভ।



একজন রিক্সা ড্রাইবার কিংবা একজন দিনমজুর। যে কিনা দিনে আনে দিনে খায়। তার পক্ষেতো আর তিনশত অথবা পাঁচশত টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব নয়। রোগে শোকে একমাত্র সম্বল লতা পাতা এবং অবশেষে হাতুরি ডাক্তার। কিন্তু অনেক জঠিল রোগ নির্নয় করা হাতুরি ডাক্তারের পক্ষে সম্ভব নয়।..এবং এভাবেই তারা আমরা প্রতিদিন বিনা চিকিতসায় মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করি।



দীর্ঘক্ষন লাইনে দাঁড়ানো শেষে সরকারী মেডিক্যাল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হওয়া মানেই বিরাট জঠিলতা। শিক্ষার দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। সবকিছু গুছিয়ে বলতে পারি না। এই ব্যর্থতা যদি কোনো সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের সামনে প্রকাশ পায় তবেই আমরা শুনতে পাই কি সব আবোল তাবোল বলছেন। যা বলার গুছিয়ে বলেন! নয় চলে যান। আমার আরো রোগী আছে। চিঃ! ডাক্তার! চিঃ! এই কি তোমার উচ্চ শিক্ষার প্রতিফলন?



এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ আমাদের বুকের কবরে চাপা পড়ে। শুনেছি রোগীদের সকল প্রকার অভিযোগের জন্য একটি মেডিক্যাল কাউন্সিল রয়েছে। রোগীদের কল্যানে অনেক নীতি মালা প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো নীতি মালা রোগীদের জন্য কার্যকর হতে শুনিনি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.